নদীতে গুটি কয়েকটা নৌকা। মনি খালাম্মা দৌড়ে গিয়ে একটা নৌকায় উঠে পড়লেন। জোর গলায় বললেন, এই নৌকা আমাদের রিজার্ভ করা ! আমরা সবাই আটসাট হয়ে সেই নৌকায় গিয়ে বসলাম। অন্য নৌকা গুলোও দ্রুত ভর্তি হয়ে গেছে। আমাদের নৌকা ছেড়ে দিয়েছে, এ যাত্রায় বুঝি বেঁচে গেলাম।
নৌকা মাত্রই ওপার ভিড়েছে, ওমনি গোলাগুলি শুরু হয়ে গেলো। পাকিস্তানী আর্মিরা নদীর ওপার থেকে গুলি ছুড়ছে আমাদের দিকে। নদীর দু'পাড়ের মানুষ উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালাচ্ছে। কয়েকজন সেখানেই শেষ। নৌকা থেকে অনেকে ঝাপ দিয়ে পড়লো মাঝ নদীতে। আমি ছোট্ট সেলিম কে এক হাতে আর অন্য হাতে সুটকেস নিয়ে দৌড়ে পালালাম। শত মানুষের ধল সেখানে। এক মহিলাকে দেখলাম চিৎকার করে কাদছে, গোলাগুলির সময় সে তার বাচ্চা কে কোথায় যেন ফেলে আসছে।
কত মাইলের পর মাইল যে হেটেছি তার কোন হিসাব নাই। পথে আমাদের সাথে এস.এম হলের এক ছাত্রের দেখা। 25 মার্চের সেই কালরাতে সে হলের ম্যানহোলের ভিতর লুকিয়ে ছিল। ম্যানহোলের ঢাকনার উপর দিয়ে কত বুটের আওয়াজ যে কানে এসেছে। প্রতিটা ক্ষণ তাকে মৃতু্যর প্রহর গুনতে হয়েছিল। পড়ে গভীর রাতে কিভাবে যেন পালিয়ে আসতে পেরেছে। সে কখনো আমাদের ব্যাগ বহন করে কখনো ছোট্ট সেলিম কে কোলে নিয়ে অনেকখানি পথ এগিয়ে দিয়েছে। আরেক লোক সদর ঘাট থেকে এসেছে। সে দেখেছে লঞ্চ টার্মিনালে রক্তের বন্যা আর লাশের স্তুপ।
শহর থেকে হাজার হাজার মানুষ গ্রামে আসছে। গ্রামের মানুষরা কেউ মিষ্টি আলু, রুটি, ভাত, বাচ্চাদের জন্য দুধ দিয়ে আমাদের মত ঘর ছাড়া মানুষদের সাহায্য করছে। আমাদের ব্যাগে রুটি ছিল কিন্তু খাওয়া হয়নি। আসলে ঐ সময়ে খাওয়া যায় না।
সন্ধ্যার দিকে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌছালাম। আমাদের দেখে নানা দৌড়ে আসলেন, চোখের পানি মুছে বললেন "তোরা বেঁচে আসোছ ! আমি মনে করছি তোরা সবাই শেষ" মা কে জিজ্ঞেস করলো, জামাই কই? কিন্তু, আমরা জানি না আব্বা কোথায় ?
- অসমাপ্ত -
[link|http://www.somewhereinblog.net/jhorohowa/post/28704598| gv