এক বনে এক হামবড়া, মিথ্যাবাদী শেয়াল বাস করত। নিজেকে সে সবার চেয়ে সেরা ভাবত, এমনকি বনের রাজা বাঘও তার কথার আক্রমণ হতে রক্ষা পেত না। সব সময় বাঘের শিকারের অবশিষ্ট খেয়ে বেঁচে থাকলেও জোর গলায় দাবী করত, সে একাই আস্ত বুনো মহিষ মেরে ফেলতে পারবে।
এসব শুনে বনের রাজা বিরক্ত হয়ে শেয়ালকে ডেকে পাঠিয়ে বলল- আমার শিকার খেয়ে বেঁচে থাকিস আবার বড় বড় কথা বলিস, আজ থেকে তুই আর কোন খাবারের ভাগ পাবিনা।
শুনে শিয়াল বলে- তাহলে তো না খেয়ে মারা পড়ব মহারাজ, দয়া করুন।
এরপর নাকে খত দিয়ে বাঘের কাছে ভুল স্বীকার করে বিদায় নিল ধূর্ত শিয়াল। কিন্তু ফিরে গিয়ে সারা বনে প্রচার করতে লাগল, বাঘ শিয়ালের কাছে হার মেনে আধিপত্য স্বীকার করে নিয়েছে আর এখন থেকে বাঘের শিকারের অর্ধেক অংশ শিয়ালকে দেওয়া হবে।
এ কথা বাঘের কানে পৌঁছালে, রাগে ছুটে গিয়ে এক থাবার আঘাতে শিয়ালকে হত্যা করল।
সারকথাঃ যেসব কথা পাগলের মুখে শোভা পায়, সেসব কথা দায়িত্বশীল মানুষের জন্য বিপদ বয়ে আনে।
উপসংহারঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে কিছু বলা হতে বিরত থাকুন।
২। নেকড়ের ছলা-কলা
একবার নদীর পাড়ে এক নেকড়ে পানি খেতে এসেছে, হঠাৎ দেখল সামান্য দূরে এক মেষশাবক পানি খাচ্ছে। নাদুস নুদুস মেষ ছানাটিকে দেখে নেকড়ের জিভে পানি এসে গেল, কিন্তু কি অজুহাত দিয়ে এটিকে হত্যা করা যায়, তাই নিয়ে চিন্তায় পড়ল।
নেকড়ে এগিয়ে গিয়ে মেষ শাবককে বলল- ওই বেটা জঙ্গি, তুই এই বনে কি করিস?
শুনে আশ্চর্য হয়ে মেষ শাবক বলল- জনাব, আমি হলাম এই বনের অতি সাধারণ প্রাণী। আমার তো নখ, দাঁত কিছুই নেই; আমি জঙ্গি হলাম কিভাবে!!
নেকড়ে শুনে বলল- তুই জঙ্গি না হলেও আমার পিতাকে হত্যা করেছিলি।
মেষ শাবক বলল- হুজুর, তখন তো আমার জন্মই হয়নি; আমি কিভাবে হত্যা করলাম??
তখন নেকড়ে বলল- তুই সবসময় স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে কথা বলিস।
ছোট্ট মেষ ছানা উত্তরে বলল- এদের জ্বালায় তো আমিই বনে স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতে পারি না, সুযোগ পেলেই আমাকে মারতে চায়; আমি কোন দুঃখে এদের পক্ষ নিতে যাব!!
সব যুক্তি ব্যর্থ হয়ে নেকড়ে শেষে বলল- তুই তোর ফেসবুকে আমার নামে বাজে কথা বলেছিস।
এবার মেষশাবক বলল- আশ্চর্য! আপনার কথা কখন বললাম? আমি তো শুধু বলেছি এক ভয়ঙ্কর রক্তলোভী পিশাচের কথা।
এই কথা শুনা মাত্রই নেকড়ে এক লাফে মেষ শাবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলল- এই বনে রক্তলোভী পিশাচ কে তা সবাই জানে। বলেই মেষ শাবকের গলায় দাঁত বসিয়ে দিল।
সারকথাঃ দুর্জনের ছলা কলার অভাব হয়না। বিপদ এড়িয়ে চলতে শান্তি কন্যা, ডিগ্রি কন্যা, নোবেল কন্যা ব্যতীত অন্য কোন উপাধি প্রদান হতে বিরত থাকুন।
উপসংহারঃ বাঘে ধরলে বাঘে ছাড়ে, কিন্তু নেকড়ে ধরলে ছাড়ে না।
৩। ধূর্ত শেয়ালের গপ্পো
এক বুড়ো শেয়াল অন্য শেয়ালদের গল্প শুনাচ্ছে, সে যখন গ্রামে কৃষকের বাড়িতে মুরগি চুরি করতে যায় বাড়ির কুকুরগুলো তাকে বাঁধা দেওয়ার বদলে স্বাগত জানায়। কুকুরগুলো খুবই সম্মান করে বুড়ো শেয়ালকে।
এই শুনে অন্য শেয়ালরা তাকে মিথ্যাবাদী বলতে লাগল। শুনে বুড়া শেয়াল রেগে গিয়ে বলল, চল তাহলে আমার সাথে, রাতের বেলায় গ্রামে ঢুকলেই প্রমাণ পাবি তোরা।
রাতের বেলায় গ্রামের কাছে গিয়ে শুনা গেল, কুকুরগুলো থেমে থেমে টানা ডাক দিচ্ছে। শেয়াল বলল, ঐ যে শোন, কুকুরগুলো খালুউউউউউউ... বলে আমাকে ডাকছে। কুকুররা যে তোদের মাসতুতো ভাই সেটা জানিস তো! আমাকে তাই তারা খালু বলে। তবে আমি তাদের কাছে ঘেঁষতে দেইনা, কুকুরের জাত কখন কি করে বসে তার তো কোন ঠিক নেই।
তাই তাদের ডাকলে পাত্তা না দিয়ে উত্তর দেই- মুই কার খালু রে!!(কুকুরের উত্তরে শেয়াল এটাই বলে, যদিও আমরা ভুল করে হুক্কা হুয়া শুনতে পাই)
বুড়ো শেয়ালের এমন কৃতিত্ব দেখে বাকি শেয়ালগুলোও খুশি মনে বনে ফিরে গেল।
সারকথাঃ দলের শেয়ালগুলোকে ফাঁপা বুলি দিয়ে সন্তুষ্ট করা গেলেও, দেশবাসীকে করানো যাবেনা।
উপসংহারঃ ..................নেই।