somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার হজ্বের দিনগুলি- ০৬ (হজ্ব ২০০৭)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উমরাহ পালন

যে রাস্তার পাশে আমরা থাকতাম, তার দুপাশে প্রায় সবগুলো বাড়িতে ছিল পাকিস্তানী আর ভারতীয় হাজ্বীদের বাস। প্রতিটা বাড়ির সামনে পতাকা লাগানো। হাঁটলে চারপাশ থেকে হিন্দি আর উর্দু কথাবার্তা ভেসে আসতো। যাহোক, রাত ৯ টার দিকে আমরা প্রায় ২০/২৫ জন রাস্তায় জমা হলাম। আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন অভিজ্ঞ হাজ্বী মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান। এই ভদ্রলোকের বাড়ি মনে হয় বাগেরহাট। সদা শান্ত, সাদাসিধা মানুষ। আমার খুব ভাল লাগতো একাধিক বার হজ্জ্ব করতে আসা এই মানুষটাকে।

সারি বেঁধে রওনা দিলাম ক্বাবার পথে। পার হলাম সৌদী বাদশার রাজকীয় প্রাসাদ, মেরিডিয়ান হোটেল। ক্বাবার বাইরের চত্ত্বরের চোখ ধাঁধানো আলোয় এসে পৌছলাম ১৫ মিনিটের মধ্যেই। মসজিদের ১ নং গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। তাওয়াফের জায়গায় পৌছার আগেই ক্বাবার গিলাফ চোখে পড়ল। এক সমুদ্র আবেগ যেন গ্রাস করল মনকে। একমাত্র বিশ্বাসী ব্যাক্তির পক্ষেই এই অনুভূতি বোঝা সম্ভব। মনে হচ্ছিল- হে আল্লাহ, তোমার এই ঘরের দিকে মুখ করেই এত দিন নামাজ পড়েছি, আজ অনেক কষ্ট করে এই ঘর দেখার জন্য এখানে হাজির হয়েছি। আমার উমরাহ তুমি কবুল কর, আমার তাওয়াফ কবুল কর, আমার হজ্ব কবুল কর।

হজ্বের আন্তর্জাতিকতার রূপ উপলদ্ধি করছিলাম চারপাশ থেকে। মানুষের কত বিচিত্র রূপ!! আমরা যারা একসাথে এসেছিলাম, কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম। তবে আমি আর তৌফিক একসাথে ছিলাম পুরোটা সময়। আমাদের টাইমিং ছিল চমৎকার, এশার নামাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ভীড় কম ছিল। রাতের ক্বাবা যে এক অদ্ভুত আবহ তৈরী করে তা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছিলাম। তাওয়াফের সময় বিভিন্ন জিকির ও দোয়া পড়ছিলাম, পাশে অনেকে বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ানরা দল বেঁধে সুর করে দোয়া পড়ছিল। অনেকে কোরআন শরীফও পড়ছিল। বার বার ক্বাবার দিকে তাকাচ্ছিলাম, যেন কত চেনা কিন্তু কত দিন দেখিনি। তাওয়াফের সময় একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, কেউ যদি স্রেফ ভীড়ের চাপে গা ভাসিয়ে তাওয়াফ করতে থাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সে ক্বাবার খুব কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তবে আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম খুব কাছাকাছি যাবনা (তাহলে ভীড়ের চাপে পড়তে হতে পারে)। এই জন্য মাঝে মাঝেই বাইরের দিকে চলে আসছিলাম। ক্বাবা ঘরের তাওয়াফের জায়গাটা সব জায়গায় সমান প্রশস্ত না, কিছু কিছু জায়গায় বেশ চাপ পড়ে শরীরের উপর। দূর্বল হাজ্বীরা এসময় শক্ত সমর্থ কারো আড়াল নেয়ার চেষ্টা করেন।

তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে ২ রাকাত নামাজ, তারপর সাফা মারওয়ার 'সায়ী'। পাহাড় দুটো এখন প্রায় কেটে ফেলা হয়েছে, শুধু সাফার দিকটা সামান্য উঁচু। সবসময় সেখানে মানুষ বসা থাকে। নীচে, ২ তলায় অথবা ৩ তলাতেও সায়ী করা যায়। সায়ী শেষে মাথা মুড়িয়ে এহরাম ভেংগে ফেলতে হয়। মারওয়া পাহাড়ের কাছেই বেশ কিছু পাকিস্তানী সেলুন আছে। তবে আমরা সেখানে না গিয়ে মিসফালায় এক বাংলাদেশী সেলুনে গেলাম। প্রায় ১৫ বছর পর মাথা মুড়াবার অভিজ্ঞতা হল। তৌফিক তার সাধের লম্বা চুল গুলো এত তাড়াতাড়ি ফেলতে চাচ্ছিলনা। ও শুধু চুল খানিকটা ছেটে ফেলল (সেটাও জায়েজ আছে)।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৪২
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×