উমরাহ পালন
যে রাস্তার পাশে আমরা থাকতাম, তার দুপাশে প্রায় সবগুলো বাড়িতে ছিল পাকিস্তানী আর ভারতীয় হাজ্বীদের বাস। প্রতিটা বাড়ির সামনে পতাকা লাগানো। হাঁটলে চারপাশ থেকে হিন্দি আর উর্দু কথাবার্তা ভেসে আসতো। যাহোক, রাত ৯ টার দিকে আমরা প্রায় ২০/২৫ জন রাস্তায় জমা হলাম। আমাদের নেতৃত্বে ছিলেন অভিজ্ঞ হাজ্বী মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান। এই ভদ্রলোকের বাড়ি মনে হয় বাগেরহাট। সদা শান্ত, সাদাসিধা মানুষ। আমার খুব ভাল লাগতো একাধিক বার হজ্জ্ব করতে আসা এই মানুষটাকে।
সারি বেঁধে রওনা দিলাম ক্বাবার পথে। পার হলাম সৌদী বাদশার রাজকীয় প্রাসাদ, মেরিডিয়ান হোটেল। ক্বাবার বাইরের চত্ত্বরের চোখ ধাঁধানো আলোয় এসে পৌছলাম ১৫ মিনিটের মধ্যেই। মসজিদের ১ নং গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। তাওয়াফের জায়গায় পৌছার আগেই ক্বাবার গিলাফ চোখে পড়ল। এক সমুদ্র আবেগ যেন গ্রাস করল মনকে। একমাত্র বিশ্বাসী ব্যাক্তির পক্ষেই এই অনুভূতি বোঝা সম্ভব। মনে হচ্ছিল- হে আল্লাহ, তোমার এই ঘরের দিকে মুখ করেই এত দিন নামাজ পড়েছি, আজ অনেক কষ্ট করে এই ঘর দেখার জন্য এখানে হাজির হয়েছি। আমার উমরাহ তুমি কবুল কর, আমার তাওয়াফ কবুল কর, আমার হজ্ব কবুল কর।
হজ্বের আন্তর্জাতিকতার রূপ উপলদ্ধি করছিলাম চারপাশ থেকে। মানুষের কত বিচিত্র রূপ!! আমরা যারা একসাথে এসেছিলাম, কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লাম। তবে আমি আর তৌফিক একসাথে ছিলাম পুরোটা সময়। আমাদের টাইমিং ছিল চমৎকার, এশার নামাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ভীড় কম ছিল। রাতের ক্বাবা যে এক অদ্ভুত আবহ তৈরী করে তা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছিলাম। তাওয়াফের সময় বিভিন্ন জিকির ও দোয়া পড়ছিলাম, পাশে অনেকে বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ানরা দল বেঁধে সুর করে দোয়া পড়ছিল। অনেকে কোরআন শরীফও পড়ছিল। বার বার ক্বাবার দিকে তাকাচ্ছিলাম, যেন কত চেনা কিন্তু কত দিন দেখিনি। তাওয়াফের সময় একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, কেউ যদি স্রেফ ভীড়ের চাপে গা ভাসিয়ে তাওয়াফ করতে থাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে সে ক্বাবার খুব কাছাকাছি চলে যেতে পারে। তবে আমরা আগেই ঠিক করেছিলাম খুব কাছাকাছি যাবনা (তাহলে ভীড়ের চাপে পড়তে হতে পারে)। এই জন্য মাঝে মাঝেই বাইরের দিকে চলে আসছিলাম। ক্বাবা ঘরের তাওয়াফের জায়গাটা সব জায়গায় সমান প্রশস্ত না, কিছু কিছু জায়গায় বেশ চাপ পড়ে শরীরের উপর। দূর্বল হাজ্বীরা এসময় শক্ত সমর্থ কারো আড়াল নেয়ার চেষ্টা করেন।
তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে ২ রাকাত নামাজ, তারপর সাফা মারওয়ার 'সায়ী'। পাহাড় দুটো এখন প্রায় কেটে ফেলা হয়েছে, শুধু সাফার দিকটা সামান্য উঁচু। সবসময় সেখানে মানুষ বসা থাকে। নীচে, ২ তলায় অথবা ৩ তলাতেও সায়ী করা যায়। সায়ী শেষে মাথা মুড়িয়ে এহরাম ভেংগে ফেলতে হয়। মারওয়া পাহাড়ের কাছেই বেশ কিছু পাকিস্তানী সেলুন আছে। তবে আমরা সেখানে না গিয়ে মিসফালায় এক বাংলাদেশী সেলুনে গেলাম। প্রায় ১৫ বছর পর মাথা মুড়াবার অভিজ্ঞতা হল। তৌফিক তার সাধের লম্বা চুল গুলো এত তাড়াতাড়ি ফেলতে চাচ্ছিলনা। ও শুধু চুল খানিকটা ছেটে ফেলল (সেটাও জায়েজ আছে)।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৪২