পিঁপড়ে।
ছোট্ট একটি প্রাণ।
লাল পিঁপড়ে, কালো পিঁপড়ে, একটু বড় পিঁপড়ে, মাঝারী পিঁপড়ে। কোনটা কখনও কামড়ায় না, কোনটা একটু কামড়ে দিলেও উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া হয়না আবার কোনটা নিজেই একটু বাড়তি প্রতিক্রিয়াশীল। কামড়ে দেবার তেমন কোন কারণ না থাকলেও। তবুও এই পিঁপড়ে প্রজাতির একটি অসাধারণ গড় বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। এরা খুব সংগঠিত এবং সংবেদনশীল। এমন কি দেখা যায়, লাল পিঁপড়ে কালো পিঁপড়েকে কিংবা কালো পিঁপড়ে বড় বা মাঝারী পিঁপড়ে একে অন্যকে প্রাণপনে সাহায্য করছে 'খাদ্য সঞ্চয়' সংক্রান্ত কাজে। এটা সবার এমন চেনা একটি দৃশ্য যে সাধারণত তা নিয়ে প্রতিনিয়ত বিশেষ কোন ভাবনা যোগায় না।
খুব ছোটবেলায় নেহায়েত মজার দৃশ্য হিসেবেই এই দৃশ্যটি আমাকে খুব আনন্দ দিত। একটি ছোট্ট মুড়ি, মিষ্টি খাবারের কণা বা খাদ্য হিসেবে কোন মৃত পোকামাকড়ের শরীর সম্মিলিতি শক্তি দিয়ে মাথায় করে টেনে নিয়ে ছুটছে পিঁপড়ের দল। পথে মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যায় অপর দিক থেকে ছুটতে থাকা আরেকটি দু'টি পিঁপড়ের সাথে। লাল, কালো সে যাই হোক। মুখোমুখি হয়ে কথা (?) হয় কি যেন। এরপর সেও যোগ দেয় 'বোঝা' বওয়ার কাজে। এভাবে একে একে অনেকে একত্র হয়। কি অসাধারণ সংগঠন। লক্ষ্যে পৌঁছবার নিশ্চিত এবং নিশ্চিন্ত যুথবদ্ধতা। ভবিষ্যত নিশ্চয়তায় অপূর্ব সহাবস্থান।
সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি হিসেবে আজকে, এখন আমি বুঝি ঐ সম্মিলনের একটি মূল্যবান অর্থ আছে। আজকে, এখন আমি জানি, যে কোন মঙ্গলে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আছে। আজকে, এখন সেই দৃশ্যটি আমাকে ভাবায় নানাভাবে। একত্রিততার মায়া, শিক্ষার দহন, হৃদয় ভাঙার কষ্ট আর রক্তক্ষরণের অনুভূতির সাথে বিবেচনা বোধ তো মানুষেরই আছে। মানুষের 'বোধ'এর দরজাতো অন্তত ততটাই খোলা থাকবার কথা যার সবটুকু বন্ধ হবার কোন উপায় নেই।
আচ্ছা, পিঁপড়েদের কি পঞ্চ ইন্দ্রীয় বলে কিছু আছে? কিংবা পাঁচটির অন্তত একটি? ওদের কি 'বিবেক' আছে? কিংবা নিদেন পক্ষে নিজের ভাল-মন্দ, স্বার্থ সংক্রান্ত অনুভূতি? তবে ওরা কেন, কিভাবে লালে-কালোয়, ছোটয়-বড়'য় এমনভাবে যুথবদ্ধ?
আমি মানুষ। আমি বিবেচনা করি, আমি বিভেদ করি। আমি যুক্ত থাকি, আমি বিভক্ত হই। আমার হাত আগুন আর পানির তফাৎ জানে। ঘুরেফিরে সেই 'বোধ' আমাকে কখনও না কখনও দংশন করে বৈকি। কোমল বা কঠিন যাই হোক এর দায়িত্বটা যেমন আমাকেই নিতে হয় সিদ্ধান্তটাও তেমনি। আমাদের 'বোধ' এর দরজায় যে কড়ানাড়ার শব্দ তা আমাদের প্রত্যককে আলাদা আলাদা করেই সচকিত করে। জাগ্রত রাখে।
তাই আমি, আপনি আর সে/তিনি মিলে আমরা। আমরা যখন বিবেকের কাছে পরিষ্কার তখন সামাজিক যাবতীয় অন্ধকার রুখতে বিবেচনাবোধ ও দায়বদ্ধতাকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারিনা। যাবতীয় সুস্থ ও স্বাভাবিক এবং মানবিক চর্চা বাঁচিয়ে রাখতে আসুন একত্রিত হই।
বাংলাদেশ আমার দেশ। এদেশের স্বাধীনতা- সার্বভৌমত্ব আমার গৌরব।এদেশের মাটি , জল, আকাশ-বাতাস আমার। এদেশের প্রতিটি অর্জন- বিসর্জন, দুঃখ-বেদনা আমার। এদেশের প্রতিটি প্রাণ আমার। এদেশের প্রতিটি প্রাণের সমম্বয়ে একটি মূল্যবান শব্দ 'আমরা'। এই 'আমরা'কে শক্তিশালী করতে 'আমাদের' যুথবদ্ধতার কোন বিকল্প নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:২৪