ছোটবেলায় টিভিতে দেখতাম শাহরুখের পেপসীর এড "এই দিল মাংগে মোর".... তখন এই ধরনের বিদেশী শীল্পিদের এড ছিল খুবই কম এবং হাতেগোনা। কিন্তু সময় পাল্টেছে। দেশে বেড়েছে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সংখ্যা এবং তাদের ব্যবসা। ব্যবসার প্রসারের সাথে সাথে বেড়েছে গ্রাহক আকৃষ্ট করার বিভিন্ন কৌশল এবং মাধ্যম। আর সেই কৌশলের সবচেয়ে কার্যকরী ও পুরোনো মাধ্যম বিজ্ঞাপন। সেই বিজ্ঞাপনকে ঘিড়ে ধিরে ধিরে বাংলাদেশে গড়ে উঠেছে বিশাল একটি বিজ্ঞাপন ইন্ড্রাস্টি। আর তার সাথে জড়িত হয়ে পরেছে হাজারো মডেল-নির্মাতা-কলাকুশলীরা এবং বিশাল ইনভেস্টমেন্ট। আর তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় বর্তমানে এটি একটি বিশাল ইন্ড্রাস্টিতে পরিনিত হয়েছে। বিদ্যমান টিভি চ্যানেলগুলোর রেটকার্ড (প্রতি সেকেন্ডে বিজ্ঞাপন হার) অনুযায়ী দেশে বাৎসরিক বিজ্ঞাপন বাজারের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার মত। যদিও প্রকৃত বিজ্ঞাপন বাজার ৬০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। সাম্প্রতিক সময়ে এর হার দ্রুত বাড়ছে।
মুলত এই লেখার আইডিয়া মাথায় এসেছে, গত কিছুদিন আগে এটিএন নিউজের এক সাক্ষাৎকার থেকে। যেখানে লাক্স সুপারস্টার বিদ্যা সিনহা মীম বলছিল..."বর্তমানে হটাৎ করে যে হারে বিদেশি শিল্পীদের করা বিজ্ঞাপন ডাবিং করে চালানো হচ্ছে আমরা যারা বিজ্ঞাপনে স্থানীয় মডেল হিসেবে কাজ করি তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে ভেবেই পাচ্ছিনা"।
সত্যিই একটি বিশাল আশংকার কথা মীম স্মরণ করিয়ে দিল সবাইকে। সাধারনত এককভাবে পত্রিকা এবং টিভি উভয় ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বিজ্ঞাপন দেয় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো। এরপর এককভাবে বেশি টাকার বিজ্ঞাপন দেয়ার তালিকায় আছে ইউনিলিভার। এরপর খাদ্য দ্রব্য উৎপাদনকারী, রিয়েল এস্টেট এবং হাউজিং কোম্পানি, এনার্জি ড্রিংক, বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।
কিন্তু বর্তমানে ইউনিলিভার তাদের প্রায় ৯০% বিজ্ঞাপনই ডাবিং করে চালায়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ক্লিয়ার শ্যাম্পু, বলিউড স্টার ঐশ্বরিয়া-ক্যাটরিনা-প্রিয়াংকার লাক্স, হালের গজনী খ্যাত নায়িকা আসিনের ফেয়ার & লাভলীর এড প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে প্রচারিত হচ্ছে আমাদের সরকারী-বেসরকারী চ্যানেলগুলোতে যা কারো চোখ এড়িয়ে যাবার কথা নয়। এছাড়া বিভিন্ন গুড়া দুধ এবং অন্যান্য বিদেশী কোং এর বিদেশী মডেলের করা এড আমরা প্রায়শই দেখতে পাই। অথচ এখানে আমাদের মডেলদের বিশেষ করে ফিমেল মডেলদের জন্য বিশাল একটি সুযোগ ছিল।
তবে অতি সম্প্রতি সবচেয়ে যেটা আশংকাজনক ভাবে সবাইকে নাড়া দিয়েছে সেটা হলো টাকার অংকে সর্বাধিক বিজ্ঞাপন দানকারী খাত মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানের বিদেশী এড প্রচার নিয়ে। সাধারনত এতদিন এই খাতে দেশীয় এডফার্ম এবং মডেলদের করা বিজ্ঞাপনই প্রচারিত হতো। কিন্তু হটাৎ করে একটি কোং(ভারতী এয়ারটেল) এখাতে বিদেশে(ভারতে) করা শিল্পীদের এড প্রচার শুরু করেছে টিভি এবং পত্রিকায়। যা রীতিমত উদ্ধেগজনক। কারন তাদের পদাংক অনুসরণ করে যদি অন্য বিদেশী অপারেটরও এমন প্রচার শুরু করে তাহলে আমাদের অধিকাংশ মডেল-নিমাতা-কলাকুশলীরা যে বেকার হয়ে পড়বে সেটা এখনিই বলে দেয়া যায়।
আমি জানিনা বিদেশী শিল্পীদের এমন এড কোন নীতিমালায় চলে, যদি নীতিমালা এমন উদার হয় তবে সেই নীতিমালাকে সংশোধন করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর জন্য একটা কোটা নির্ধারন করে দেয়া যেতে পারে। আর তা না হলে ধিরে ধিরে গড়ে উঠা এই শিল্পের অগ্রযাত্রা যেমন থেমে যাবে তেমনি আমাদের মডেল-নির্মাতা-কলাকুশলীরা হারাবেন তাদের আয়ের এই অন্যতম মাধ্যম। সুতারাং এ ব্যাপারে এখনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে সোচ্চার হতে হবে, বিশেষ করে শিল্পী সমাজ থেকেই জোরালো প্রতিবাদ আসতে হবে। না হলে মডেল-নির্মাতা-কলাকুশলীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের সংস্কৃতি কারন অধিকাংশ বিজ্ঞাপনই আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক।