শীতের সকাল। কাজিন কল দিল। কিরে তোরা কই, আসবিনা, যাবিনা জিশানের বিয়েতে? আমি বললাম আসছি। জিশান আমার ভাতিজা। বড় জেঠার বড় নাতি। জেঠাতো ভাই এককালের দোর্দন্ড প্রতাপশালী শিপিং মার্চেন্ট। এখন সুর্য কিছুটা অস্তমিত হলেও পুরানো ঝাল কমেনি, ছেলেদের নিয়ে আবার ব্যাবসায়ী জগতের হারানো গৌরব পুনুরুদ্ধারে নেমে সফল হচ্ছেন। যাহোক পরিচয় দিলাম নিজেকে উপরে তোলার জন্য না। জেঠাতো ভাইয়ের হেডাম প্রকাশের জন্যই পরিচয়ের অংশ। তো তিনি তার মেয়েদের নোয়াখালীর বিখ্যাত ব্যাবসায়ী গ্রুফ আলআমিন-পারটেক্স এর বংশধরদের সাথে বিয়ে দিয়েছেন, সেই সুত্রে বড় ছেলেকেও তিনি সেখানে বিয়ে দেবার সিন্ধান্ত গ্রহন করলেন যদিও তিনি চিটাংগ্যা।
যাহোক সকালেই নগরীর অভিজাত পাঁচলাইশ এলাকায় হাজির হলাম বিয়েতে অংশগ্রহনের জন্য নোয়াখালী যাত্রার উদ্দেশ্য। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। বাস রিজাভ করছে সেটা জানি তবে বাসটির কোয়ালিটি নিয়ে শংকিত ছিলাম। ওয়াও এ দেখি গ্রীন লাইনের ভলভো। ভাবভেব না জিবনে না ছড়ায় ওয়াও করছি।

যাক সবাই বাসে আহোরণ করলাম। প্রায় ৪০ সিটের বাসে আমরা মাত্র ২২ জন লোক। উল্লখ্যে এর আগেরদিন বড় বিশাল বহর নিয়ে চলে যাওয়ায় লোক সংখ্যা কম হবে সেটা আগেই অনুমান করা হয়ছিল। তব বাসটা ভরবেনা সেটা কেউ আশা করেনি। যাক বাস খালি হওয়ায় কেউ শুয়ে কেউ আয়েশী ভংগীতে নোয়াখালীর ডেস্টিনেশন চৌমুহনী চৌরাস্তার দিকে চললো। ৪ ঘন্টা পর টের পেলাম জেঠাতো ভাইয়ের ভলভো বাস নিয় যাওয়ার আসল উদ্দেশ্য। যেই ভলভো বাস চৌমুহনী ভিতর দিয়ে চলতে লাগলো আশে পাশের লোকজন হা করে তাকিয়ে কি যেন বলাবলি করছিল। আর সরু রাস্তায় রাজকীয় এই বাহনটি পুরা সড়ক দখল করায় সেখানে জ্যামের সৃস্টি হয়। যাক জ্যাম অতিক্রম করে যেই আমাদের বাস চৌমুহনী চৌ-রাস্তার একটু পরে বিয়ের ক্লাবে প্রবেশ করলো সেই লোকজন বাসটি একনজর দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লো।
আমরা নেমে দেখলাম লোকজন বাসটিকে ধরে দেখছে....এক লোক বাসের ভিতর গিয়ে বলে,"বাউরে ভিতরে কি সুন্দর...তয় জানালা খুলুন যায়না....নিয়াশ কেমনে হালায় কে জানে..."আরেক পিচ্ছি বলে..কি ঠান্ডারে..."আরেক্কানা ভিতরে থাইকলে আই মরি জামুগোই"..

.যাক বাস নিয়ে এমন অনেক মন্তব্য শুনে হাসছি আর জেঠাতো ভাইয়ের ভলভো বাস নিয়ে আসার আসল কারন বুজতে শুরু করলাম।
এবার ঢুকলাম বিয়ের ক্লাবে। সকালে যাত্রা শুরু করায় অনেকে আমরা চট্টগ্রাম থেকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়।


তাই ক্লাবে ঢুকে আমরা বাথরুম খুজতে থাকি। পেয়ে গেলাম বাথরুম। ক্লাবের মত আলিশান তার বাথরুম। টাইলস...ইংলিশ কমোড...ওয়াও। বয়স্ক ফুফাতো ভাই পিছনে দাঁড়ানোয় সৌজন্যতার জন্য তাকে প্রথমে ঢুকতে দিলাম। তিনি আমেরিকা থেকে এসেছেন বিয়েতে এটেন্ডের জন্য। তিনি কাজ সেড়ে বের হয়ে আমার আপন বড় ভাই তনিও আমেরিকা থেকে বিয়েতে এটেন্ডের জন্য এসেছেন।
তো ফুফাতো ভাই বাথরুম থেকে বের হয়ে আমার বড় যে ভাই উনার সাথে ইউএসএ থেকে এসেছেন তাকে বলে..."তোরা সবসময় আমেরিকায় আমাকে বলতি আমি কেন খালি সারাক্ষন নোয়াখালিয়ানদের গালি দেই...ভিতরে গিয়ে দেখ...ইংলিশ টয়লেট দিয়েছে....কিন্তু ফ্লাশতো নাই...বদনাও নাই....ওয়াশের জন্য দিয়েছে পারটেক্স পানির বোতল ...এবার প্রামন পেলিতো কেন নোয়াখাইল্যাদের গালি দেয়....."



.....
আরো মজারু আর শিহরণ জাগানো অভিজ্ঞতার জন্য শৈল্পিক ভাবনার সাথেই থাকুন......
পরের পর্ব- "বোরহানী নিয়ে নোয়াখালীর লোকজনের মজার সব কান্ড এবং কনের বান্ধবীদের শুদ্ধ বলার সেকি চেষ্ট্রা
"
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৬