আজকে রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিষয়টা আপনাদের সাথে শেয়ার করব ৷সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কম্পিউারে বসলাম ৷বেশী ভূমিকা না করে মূল কাহিনীতে যাচ্ছি
তখন আমি সবেমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি ৷নতুন শিক্ষাজীবন,নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক কথায় দারুন উপভোগ করছিলাম ৷আমাদের স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে একটা মেয়ে পড়তো ৷স্কুলের মধ্যেতো সুন্দরী ছিলই,বরং আমি আমার লাইফে ঐরকম সুন্দরী মেয়ে এখন পর্যন্ত দেখি নাই ৷স্কুল ছুটির পর ইংরেজী স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম ৷মেয়েটিও পড়তো ৷তবে সমস্যা হল,ব্যাচে সবাই মেয়ে আর আমি একাই ছেলে ৷পড়ার সময় প্রচন্ড লজ্জা লাগতো ৷এজন্য বেশকয়েকজন বন্ধুকে বলেছিলাম আমাদের ব্যাচে পড়তে ৷কিন্তু কেউ রাজী হয় নাই ৷যাইহোক,স্কুল ছুটির পর স্যার আসরের নামাজ পড়ে আমাদের পড়াতে আসতেন ৷নামাযের সময়টুকু আমরা স্যারের জন্য অপেক্ষা করতাম ৷এইসময় খেয়াল করতাম কিছু ছেলে স্কুলের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে ৷উদ্দেশ্য পরিস্কার ৷মেয়েটিই ছিল তাদের উদ্দেশ্য ৷আমি মোটামুটি চার-পাঁচবার অন্যদের প্রেমপত্র বহন করে মেয়েটিকে দিয়েছিলাম ৷কোনবারই সে নেয়নি ৷শেষবার যখন দিতে গিয়েছিলাম তখন সে আমাকে দশ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত দিয়েছিল ৷পরবর্তীতে যদি কারও চিঠি তাকে দিতে আসি তাহলে থাপড়াইয়া আমার দাঁত ফেলে দিবে ৷ভয়ে আর কারও পত্র বহন করি নাই ৷কেটে গেল সময় ৷যখন নাইনে উঠলাম তখন মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষার্থী ৷বিদায় নিয়েছে স্কুল থেকে ৷আসলে মেয়েটির সাথে আমার তেমন কোন কথাবার্তা হয় নাই ৷যখন চিঠি দিতে যেতাম তখন শুধু ঝাড়ি দিত এইটুকুই ৷সিনিয়র ছিল বলে কখনই অন্য দৃষ্টিতে দেখি নাই ৷একসময় আমিও এসএসসি পাশ করে স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলাম ৷তখন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি ৷কলেজ ছুটি থাকায় বাড়িতে এসেছি ৷বিকালবেলা ঘুরতে বের হলাম ৷হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের কাছে চলে এলাম ৷স্কুলের পাশেই বাংলা স্যারের বাড়ি ৷রাস্তায় স্যারের সাথে দেখা ৷স্যার তার বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকলেন ৷স্যারের বাড়ির দিকে তাকাতেই দেখি সামিয়ানা টাঙানো ৷স্যারের চেহারাতেও একরকম খুশি দেখেছি ৷স্যারকে কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তার বড় ছেলের বিয়ে ৷আমাকে বাড়িতে নিয়ে একজনকে ডেকে আমাকে খাবার দিতে বলে স্যার ভিতরে চলে গেলেন ৷স্যার খুব ব্যাস্ত সেটা তার আচরণেই বুঝতে পারলাম ৷হাজার হোক,ছেলের বিয়ে বলে কথা ৷আমি আসলে অসময়ে খেতে চাচ্ছিলাম না ৷তাই খেলাম না ৷এমন সময় স্যারের ভাতিজার সাথে দেখা যে কিনা আমার স্কুল লাইফের বন্ধু ৷তার মারফত জানতে পারলাম বিয়ে হচ্ছে সেই মেয়েটির সাথে একটু আগে আপনাদের সাথে যার গল্প করলাম ৷বাড়ির ভিতরে গিয়ে বউ দেখে আমরা দুই বন্ধু ঘুরতে বের হলাম ৷বিয়ের ঘটনা এখানেই শেষ ৷ইন্টার পাশ করে সাস্টে ভর্তি হলাম ৷দুই মাসের মতো হয়েছে সাস্টে ভর্তি হয়েছি ৷একদিন রাত বারটার পর আব্বা ফোন করলো ৷ঐ মেয়েটির কথা বলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি তাকে চিনি কিনা ৷আমি বললাম,হ্যা চিনি ৷
-কীভাবে চিনো?
-একই স্কুলে পড়তাম এবং একসাথে প্রাইভেট পড়তাম ৷
-মেয়েটির বিয়ে হইছে জানোতো?
-হ্যাঁ জানি ৷ ঐ বিয়ে খাইছি ৷
-ডিভোর্স হইছে এইটা জানো?
এই প্রশ্ন শোনার পর একটু খটকা লাগলো ৷ আব্বা আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছে কেন?আব্বাকে এগুলো বলার কারণ জিজ্ঞেস করলাম ৷ আব্বা যেটা বললেন সেটা শোনার পর মনে হচ্ছিলো আমার পায়ের তলায় মাটি নেই ৷ মেয়েটি নাকি ঐখানে সংসার করবেনা এই অযুহাতে ডিভোর্স নিয়েছে ৷ ডিভোর্সের কিছুদিন পর পাগলামী শুরু করছে ৷ সে নাকি আমায় ভালবাসে আর আমার সাথে বিয়ে না হলে সুইসাইড করবে ৷ আব্বার কথায় যেটা মনে হলো সেটা হচ্ছে,আমার পরিবারের সবাই সন্দেহ করছে যে আমার সাথে হয়তো মেয়েটির সম্পর্ক আছে ৷ আকার ইঙ্গিতে আব্বাকে বুঝিয়ে দিলাম তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ৷দশ পনেরো দিন কেটে গেল ৷ একদিন আব্বা ফোন দিয়ে বলল মেয়েটির বাবা আমাদের বাড়িতে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ৷ কথাটি শুনে চরম লেভেলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ৷ আব্বাকে খুব করে বুঝিয়ে দিলাম ভুলেও যেন তিনি রাজি না হন ৷ এক সপ্তাহ না যেতেই আব্বা একই বিষয় নিয়ে আবার ফোন দিলেন ৷ তার কথাতে বুঝতে পারলাম আমি রাজী থাকলে তাদের আপত্তি নেই ৷ এটা শুনে এতোটাই রাগ হলো সেটা লিখে বুঝাতে পারব না ৷ ফোন কেটে দিয়ে ভাবীকে ফোন দিলাম ৷ রাগ ঝাড়লাম ভাবীর উপর ৷ ভাবী তখন বিষয়টা আমার কাছে ক্লিয়ার করলেন ৷ আসলে মেয়েটির বাবা প্রায়দিনই নাকি আমাদের বাড়িতে এসে আব্বার কাছে হাত জোড় করতো ৷ এর আগে একবার মেয়েটি গলায় দড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ৷ একদিন আগে বিষও খেয়েছে ৷ এখন ক্লিনিকে ভর্তি ৷ এই সকল ঘটনা কিছুটা আব্বার মনে প্রভাব ফেলেছে তাই আব্বা রাজী হয়েছেন ৷ আমি তখন ভাবীকে আমার মতামত তুলে ধরলাম ৷ আমি কেবল ফার্স্ট ইয়ার স্টুডেন্ট ৷ ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ সামনে ৷ এই সময় আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না ৷ আর ঐ মেয়েকেতো কখনই না ৷ আমিতো এতোবড় অযোগ্য নই যে একটা ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করতে হবে ৷ আমার কথা শুনে ভাবী আমাকে আশ্বাস দিলেন ৷ ফোন রেখে দিয়ে ভাবতে লাগলাম ৷ নিশ্চিত মেয়েটির মানসিক সমস্যা হয়েছে ৷ তাছাড়া এরকম করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই ৷ আব্বাকে ফোন দিলাম ৷ বললাম,এরপর যদি মেয়েটির বাবা আসে তাহলে তাকে বলবেন তিনি যেন তার মেয়েকে কোন ভালো মানসিক ডাক্তার দেখায় ৷ সুস্থ হয়ে উঠলে সহজেই স্বামীর সংসারে চলে যাবে ৷ মেয়ের সাথে নিজেদেরও পাগল হওয়ার কোন কারণ নেই ৷ কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিলাম ৷ এরপর প্রায় দুইমাস কেটে গেল ৷ একদিন বিকেলবেলা বাসার পার্শবর্তী চা বাগানে হাঁটাহাঁটি করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম ৷ বের হয়েই রাস্তার পাশে একটা দোকানে মেয়েটির বাবাকে দেখলাম দোকানদারের কথা বলছে ৷ আশ্চর্য হলাম এটা ভেবে যে এই লোক সিলেটে কি করছে? আমি এগিয়ে যেতেই আমাকে দেখে অনেকটা দৌড়েই আমার কাছে আসলেন ৷ এলাকার মানুষ এই খাতিরে তাকে বাসায় নিয়ে আসলাম ৷ তার উদ্দেশ্যও জানতে পারলাম ৷ আমার ঠিকানা ম্যানেজ করে চলে এসেছেন আমার সাথা সরাসরি দেখা করতে ৷ মনে মনে প্রচন্ড রেগে গেলেও কিছু বললাম না ৷ তিনি আমাকে প্রচন্ডভাবে তার কষ্ট বুঝাতে লাগলেন ৷ বুঝতে পারলাম ,বাপ মেয়ে দুজনেই পাগল হয়ে গেছে ৷ অবশ্য তিনি যেভাবে বললেন তাতে সন্তানের এরকম অবস্থায় পিতা-মাতা পাগল হওয়াটাই স্বাভাবীক ৷ তারপরেও আমি আমার মতামত তুলে ধরলাম ৷ এইমূহুর্তে আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ৷ বিয়ে করা কোনভাবেই সম্ভব না ৷ বেচারা কেঁদেই ফেললেন ৷ পুরুষ মানুুষের কান্না সেইদিনই প্রথম দেখলাম ৷ দুইতিন সেকেন্ডের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে গেলেন ৷ আমিতো অবাক ৷ কি হচ্ছে এসব? তাৎক্ষণিক কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেললাম ৷ যখন বাস্তবে ফিরে আসলাম তখন পাশের রুম থেকে একজনকে ডাক দিয়ে তাকে রাগীব আলী মেডিকেলে নিয়ে আসলাম ৷ আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এটা ভেবে যে হয়তো হার্ট এ্যাটাক হইছে ৷ ডাক্তার জানালো হার্ট এ্যাটাক হয়নি ৷ অজ্ঞান হারিয়েছে মাত্র ৷ জ্ঞান ফিরেই আমাকে কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলেন ৷ তাকে ডাক দিয়ে থামালাম ৷ ভাবার জন্য কয়েকদিন সময় চাইলাম ৷ আসলে তার চেহারা দেখে খুব মায়া হচ্ছিলো ৷ আমার এই কথা শুনেই তিনি যথেস্ট খুশি হলেন ৷ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ৷ সেদিন রাতে অনেকক্ষণ ভাবলাম ৷ রাত কীভাবে চলে গেল বুঝতে পারলাম না ৷ পরেরদিন ভোরে আব্বাকে ফোন দিলাম ৷ কিছু একটা বলতে গিয়েও বললাম না ৷ এমনিতেই ফোন দিয়েছি বলে ফোন রেখে দিলাম ৷ ফোন দিলাম ভাবীকে ৷ বললাম,এই বিয়েতে আমি রাজী ৷ বুঝতে পারলাম ভাবী প্রচন্ড আশ্চর্য হয়েছে ৷ কিন্তু কিছু বলল না ৷
চলবে......
2nd part
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৬