somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যটা আজকে বলবই ( ভালবাসার গল্প ) ৷"জীবন থেকা নেওয়া"

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকে রাতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বিষয়টা আপনাদের সাথে শেয়ার করব ৷সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কম্পিউারে বসলাম ৷বেশী ভূমিকা না করে মূল কাহিনীতে যাচ্ছি

তখন আমি সবেমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছি ৷নতুন শিক্ষাজীবন,নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক কথায় দারুন উপভোগ করছিলাম ৷আমাদের স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে একটা মেয়ে পড়তো ৷স্কুলের মধ্যেতো সুন্দরী ছিলই,বরং আমি আমার লাইফে ঐরকম সুন্দরী মেয়ে এখন পর্যন্ত দেখি নাই ৷স্কুল ছুটির পর ইংরেজী স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তাম ৷মেয়েটিও পড়তো ৷তবে সমস্যা হল,ব্যাচে সবাই মেয়ে আর আমি একাই ছেলে ৷পড়ার সময় প্রচন্ড লজ্জা লাগতো ৷এজন্য বেশকয়েকজন বন্ধুকে বলেছিলাম আমাদের ব্যাচে পড়তে ৷কিন্তু কেউ রাজী হয় নাই ৷যাইহোক,স্কুল ছুটির পর স্যার আসরের নামাজ পড়ে আমাদের পড়াতে আসতেন ৷নামাযের সময়টুকু আমরা স্যারের জন্য অপেক্ষা করতাম ৷এইসময় খেয়াল করতাম কিছু ছেলে স্কুলের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে ৷উদ্দেশ্য পরিস্কার ৷মেয়েটিই ছিল তাদের উদ্দেশ্য ৷আমি মোটামুটি চার-পাঁচবার অন্যদের প্রেমপত্র বহন করে মেয়েটিকে দিয়েছিলাম ৷কোনবারই সে নেয়নি ৷শেষবার যখন দিতে গিয়েছিলাম তখন সে আমাকে দশ নাম্বার মহা বিপদ সংকেত দিয়েছিল ৷পরবর্তীতে যদি কারও চিঠি তাকে দিতে আসি তাহলে থাপড়াইয়া আমার দাঁত ফেলে দিবে ৷ভয়ে আর কারও পত্র বহন করি নাই ৷কেটে গেল সময় ৷যখন নাইনে উঠলাম তখন মেয়েটি এসএসসি পরীক্ষার্থী ৷বিদায় নিয়েছে স্কুল থেকে ৷আসলে মেয়েটির সাথে আমার তেমন কোন কথাবার্তা হয় নাই ৷যখন চিঠি দিতে যেতাম তখন শুধু ঝাড়ি দিত এইটুকুই ৷সিনিয়র ছিল বলে কখনই অন্য দৃষ্টিতে দেখি নাই ৷একসময় আমিও এসএসসি পাশ করে স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলাম ৷তখন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি ৷কলেজ ছুটি থাকায় বাড়িতে এসেছি ৷বিকালবেলা ঘুরতে বের হলাম ৷হাঁটতে হাঁটতে স্কুলের কাছে চলে এলাম ৷স্কুলের পাশেই বাংলা স্যারের বাড়ি ৷রাস্তায় স্যারের সাথে দেখা ৷স্যার তার বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে থাকলেন ৷স্যারের বাড়ির দিকে তাকাতেই দেখি সামিয়ানা টাঙানো ৷স্যারের চেহারাতেও একরকম খুশি দেখেছি ৷স্যারকে কারণ জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তার বড় ছেলের বিয়ে ৷আমাকে বাড়িতে নিয়ে একজনকে ডেকে আমাকে খাবার দিতে বলে স্যার ভিতরে চলে গেলেন ৷স্যার খুব ব্যাস্ত সেটা তার আচরণেই বুঝতে পারলাম ৷হাজার হোক,ছেলের বিয়ে বলে কথা ৷আমি আসলে অসময়ে খেতে চাচ্ছিলাম না ৷তাই খেলাম না ৷এমন সময় স্যারের ভাতিজার সাথে দেখা যে কিনা আমার স্কুল লাইফের বন্ধু ৷তার মারফত জানতে পারলাম বিয়ে হচ্ছে সেই মেয়েটির সাথে একটু আগে আপনাদের সাথে যার গল্প করলাম ৷বাড়ির ভিতরে গিয়ে বউ দেখে আমরা দুই বন্ধু ঘুরতে বের হলাম ৷বিয়ের ঘটনা এখানেই শেষ ৷ইন্টার পাশ করে সাস্টে ভর্তি হলাম ৷দুই মাসের মতো হয়েছে সাস্টে ভর্তি হয়েছি ৷একদিন রাত বারটার পর আব্বা ফোন করলো ৷ঐ মেয়েটির কথা বলে আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি তাকে চিনি কিনা ৷আমি বললাম,হ্যা চিনি ৷
-কীভাবে চিনো?
-একই স্কুলে পড়তাম এবং একসাথে প্রাইভেট পড়তাম ৷
-মেয়েটির বিয়ে হইছে জানোতো?
-হ্যাঁ জানি ৷ ঐ বিয়ে খাইছি ৷
-ডিভোর্স হইছে এইটা জানো?
এই প্রশ্ন শোনার পর একটু খটকা লাগলো ৷ আব্বা আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছে কেন?আব্বাকে এগুলো বলার কারণ জিজ্ঞেস করলাম ৷ আব্বা যেটা বললেন সেটা শোনার পর মনে হচ্ছিলো আমার পায়ের তলায় মাটি নেই ৷ মেয়েটি নাকি ঐখানে সংসার করবেনা এই অযুহাতে ডিভোর্স নিয়েছে ৷ ডিভোর্সের কিছুদিন পর পাগলামী শুরু করছে ৷ সে নাকি আমায় ভালবাসে আর আমার সাথে বিয়ে না হলে সুইসাইড করবে ৷ আব্বার কথায় যেটা মনে হলো সেটা হচ্ছে,আমার পরিবারের সবাই সন্দেহ করছে যে আমার সাথে হয়তো মেয়েটির সম্পর্ক আছে ৷ আকার ইঙ্গিতে আব্বাকে বুঝিয়ে দিলাম তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই ৷দশ পনেরো দিন কেটে গেল ৷ একদিন আব্বা ফোন দিয়ে বলল মেয়েটির বাবা আমাদের বাড়িতে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ৷ কথাটি শুনে চরম লেভেলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল ৷ আব্বাকে খুব করে বুঝিয়ে দিলাম ভুলেও যেন তিনি রাজি না হন ৷ এক সপ্তাহ না যেতেই আব্বা একই বিষয় নিয়ে আবার ফোন দিলেন ৷ তার কথাতে বুঝতে পারলাম আমি রাজী থাকলে তাদের আপত্তি নেই ৷ এটা শুনে এতোটাই রাগ হলো সেটা লিখে বুঝাতে পারব না ৷ ফোন কেটে দিয়ে ভাবীকে ফোন দিলাম ৷ রাগ ঝাড়লাম ভাবীর উপর ৷ ভাবী তখন বিষয়টা আমার কাছে ক্লিয়ার করলেন ৷ আসলে মেয়েটির বাবা প্রায়দিনই নাকি আমাদের বাড়িতে এসে আব্বার কাছে হাত জোড় করতো ৷ এর আগে একবার মেয়েটি গলায় দড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ৷ একদিন আগে বিষও খেয়েছে ৷ এখন ক্লিনিকে ভর্তি ৷ এই সকল ঘটনা কিছুটা আব্বার মনে প্রভাব ফেলেছে তাই আব্বা রাজী হয়েছেন ৷ আমি তখন ভাবীকে আমার মতামত তুলে ধরলাম ৷ আমি কেবল ফার্স্ট ইয়ার স্টুডেন্ট ৷ ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ সামনে ৷ এই সময় আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না ৷ আর ঐ মেয়েকেতো কখনই না ৷ আমিতো এতোবড় অযোগ্য নই যে একটা ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করতে হবে ৷ আমার কথা শুনে ভাবী আমাকে আশ্বাস দিলেন ৷ ফোন রেখে দিয়ে ভাবতে লাগলাম ৷ নিশ্চিত মেয়েটির মানসিক সমস্যা হয়েছে ৷ তাছাড়া এরকম করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই ৷ আব্বাকে ফোন দিলাম ৷ বললাম,এরপর যদি মেয়েটির বাবা আসে তাহলে তাকে বলবেন তিনি যেন তার মেয়েকে কোন ভালো মানসিক ডাক্তার দেখায় ৷ সুস্থ হয়ে উঠলে সহজেই স্বামীর সংসারে চলে যাবে ৷ মেয়ের সাথে নিজেদেরও পাগল হওয়ার কোন কারণ নেই ৷ কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিলাম ৷ এরপর প্রায় দুইমাস কেটে গেল ৷ একদিন বিকেলবেলা বাসার পার্শবর্তী চা বাগানে হাঁটাহাঁটি করার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম ৷ বের হয়েই রাস্তার পাশে একটা দোকানে মেয়েটির বাবাকে দেখলাম দোকানদারের কথা বলছে ৷ আশ্চর্য হলাম এটা ভেবে যে এই লোক সিলেটে কি করছে? আমি এগিয়ে যেতেই আমাকে দেখে অনেকটা দৌড়েই আমার কাছে আসলেন ৷ এলাকার মানুষ এই খাতিরে তাকে বাসায় নিয়ে আসলাম ৷ তার উদ্দেশ্যও জানতে পারলাম ৷ আমার ঠিকানা ম্যানেজ করে চলে এসেছেন আমার সাথা সরাসরি দেখা করতে ৷ মনে মনে প্রচন্ড রেগে গেলেও কিছু বললাম না ৷ তিনি আমাকে প্রচন্ডভাবে তার কষ্ট বুঝাতে লাগলেন ৷ বুঝতে পারলাম ,বাপ মেয়ে দুজনেই পাগল হয়ে গেছে ৷ অবশ্য তিনি যেভাবে বললেন তাতে সন্তানের এরকম অবস্থায় পিতা-মাতা পাগল হওয়াটাই স্বাভাবীক ৷ তারপরেও আমি আমার মতামত তুলে ধরলাম ৷ এইমূহুর্তে আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ৷ বিয়ে করা কোনভাবেই সম্ভব না ৷ বেচারা কেঁদেই ফেললেন ৷ পুরুষ মানুুষের কান্না সেইদিনই প্রথম দেখলাম ৷ দুইতিন সেকেন্ডের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে গেলেন ৷ আমিতো অবাক ৷ কি হচ্ছে এসব? তাৎক্ষণিক কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেললাম ৷ যখন বাস্তবে ফিরে আসলাম তখন পাশের রুম থেকে একজনকে ডাক দিয়ে তাকে রাগীব আলী মেডিকেলে নিয়ে আসলাম ৷ আমি আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এটা ভেবে যে হয়তো হার্ট এ্যাটাক হইছে ৷ ডাক্তার জানালো হার্ট এ্যাটাক হয়নি ৷ অজ্ঞান হারিয়েছে মাত্র ৷ জ্ঞান ফিরেই আমাকে কিছু না বলে চলে যাচ্ছিলেন ৷ তাকে ডাক দিয়ে থামালাম ৷ ভাবার জন্য কয়েকদিন সময় চাইলাম ৷ আসলে তার চেহারা দেখে খুব মায়া হচ্ছিলো ৷ আমার এই কথা শুনেই তিনি যথেস্ট খুশি হলেন ৷ বিদায় নিয়ে চলে গেলেন ৷ সেদিন রাতে অনেকক্ষণ ভাবলাম ৷ রাত কীভাবে চলে গেল বুঝতে পারলাম না ৷ পরেরদিন ভোরে আব্বাকে ফোন দিলাম ৷ কিছু একটা বলতে গিয়েও বললাম না ৷ এমনিতেই ফোন দিয়েছি বলে ফোন রেখে দিলাম ৷ ফোন দিলাম ভাবীকে ৷ বললাম,এই বিয়েতে আমি রাজী ৷ বুঝতে পারলাম ভাবী প্রচন্ড আশ্চর্য হয়েছে ৷ কিন্তু কিছু বলল না ৷

চলবে......

2nd part
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১৬
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×