১
হাতের সিগারেটটাতে একটা দীর্ঘ টান দিয়ে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষে ফেলল রায়ান। আপাতদৃষ্টিতে যে কেউ ওকে দেখে ক্লান্ত একজন পথচারী ভাববে। কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ করলে বুঝতে পারবে যে ও কারও জন্য অপেক্ষা করছে, অপেক্ষা করছে কিছু ঘটার। সিগারেটটা ফেলেই হনহন করে হাঁটা শুরু সামনের দোতলা বাড়িটার দিকে। সদর দরজায় দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপল ও। লম্বা এক বডিবিল্ডার খুলে দিল দরজা। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে চাইল রায়ানের দিকে। রায়ান বলল,
-আয়রনডোর।
সঠিক কোডওয়ার্ডটা পেয়ে স্যালুট করল বডিবিল্ডার এরিক। রায়ানকে ভাল মতই চিনে সে। কিন্তু রায়ানের রুলস হল যেই হোক, কোডওয়ার্ড ছাড়া ভেতরে ঢুকতে পারবে না! দরজা থেকে সরে দাঁড়াতেই হেড কোয়ার্টারে প্রবেশ করল রায়ান। চোখে হঠাত্ আলো পড়ল। আলোতে চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় আসতেই রায়ান দেখল ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে সশস্র ১৫জন গেটকিপার। এরা সবাই রায়ানের নির্বাচিত। একসাথে এদের সবাইকে দেখলে যে কোন দুর্বল হার্টের মানুষের হার্টফেইল হবে। রায়ানকে এসকর্ট করে ওরা নিয়ে ঢোকাল সিকিউরিটি বক্সে। সেখান থেকে নানারকম স্ক্যানিং করার পর রায়ান গ্রীন সিগন্যাল পেল। এরপর প্রহরীরা ওকে ছাড়তেই প্রবেশ করল লিফট এ।লিফট ওকে নিয়ে গেল সরাসরি ব্ল্যাক ফাইটারস এর হেডকোয়ার্টারে। নিজের অফিসে ঢুকে ইন্টারকমে ওর পিএ রিজনকে বলল জেসনকে পাঠাতে। এরপর ও ফাইলওয়ার্ক করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর দরজায় নক করে প্রবেশ করল জেসন। ওকে বসতে ইঙ্গিত করে হাতের কাজ একদিকে সরিয়ে রাখল রায়ান। বলল,
-বাংলাদেশ। একটা জরুরি কল পেয়েছি আমি রাতে।
চুপ থাকল জেসন। কথা বলতে দিল রায়ানকে,
-একটা টিম লাগবে আমার। এই নাও। এদের মধ্যে যে যেখানেই থাকুক না কেন আমি ওদেরকে ২ দিনের মধ্যে হেডকোয়ার্টারে চাই। তুমি এখন যেতে পার।
এই বলে একটা ফাইল ধরিয়ে দিল জেসনের হাতে।
-ইয়েস স্যার।
বসের অফিস থেকে বের হয়ে নিজের অফিসে ঢুকল জেসন। নিজের পিএ কে কফি দিয়ে যেতে বলল। ফাইলটা খুলেই চমকে গেল জেসন। একটার পর একটা পাতা উল্টে গেল। ৫জন এজেন্টকে রিকল করেছে রায়ান। জেসন, রায়ান সহ এই ৫জনকে নিয়ে রায়ট টিম গঠিত। ব্ল্যাক ফাইটারসের সবচেয়ে জটিল অপারেশনের জন্য ফিক্সড করা আছে এই টিম। আর বস যেহেতু এদেরকেই রিকল করতে বলেছে তখন আর বুঝতে অসুবিধা হল না যে আগামী অপারেশনটা খুবই জটিল কিছু। পিএ ইরার রেখে যাওয়া কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা লক্ষ্য না করে এক চুমুকে শেষ করে ফেলল জেসন। ফোন তুলে একের পর এক ফোন করল।
২
পরদিন রাত ১২টা। সামনে দাঁড়ানো ৪ এজেন্টের চেহারা দেখে ভাবা অস্বাভাবিক না যে ৪জনই কবর থেকে বেড়িয়ে এসেছে! একজন কম কেন তার ব্যাখ্যা দিল জেসন,
-গুলি খেয়েছে এন্ডারসন। পা ঠিক হতে আরও দুসপ্তাহ লাগবে।
চিন্তিত মুখে উত্তর দিল রায়ান,
-আমাদের হাতে অত সময় নেই। ব্যাকআপ হিসেবে কে আছে?
-এজেন্ট রিয়াদ স্যার। প্রত্যেক পরীক্ষায় এন্ডারসনের সমান মার্কস পেয়েছে। কিন্তু এক্সপেরিয়েন্স না থাকায় এতদিন ব্যাকআপ হিসেবে ছিল।
-ওকে খবর দাও।
দরজার বাহিরে যেয়ে ২০-২২ বয়সের এক তরুনকে নিয়ে আবার প্রবেশ করল জেসন। চেহারা দেখে যে কোন মেয়ে ওর প্রেমে পড়ে যাবে বলে ধারণা জেসনের। যাই হোক, রিয়াদের আপাদমস্তক একবার নজর বুলিয়ে দেখে কাজের কথা শুরু করল রায়ান,
-আমাদের বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামি নামের পাকিস্তানের যে দালালরা আছে সেটা তোমরা আগেই জান, ব্যাপার হল ইদানিং তারা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।সংক্ষেপে বলা যায়, তাদের এক নেতা দীর্ঘদিন আমাদের দেশের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিজ্ঞান কেন্দ্রে ছিল ছদ্মবেশে। আমাদের কিছু তরুন বিজ্ঞানি দিনরাত খেটে এমন একটা প্রযুক্তি আবিস্কার করে যার দ্বারা বিজ্ঞানের এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। বলতে পার ঐ প্রযুক্তি দিয়ে বাতাসের বিভিন্ন উপাদান থেকে বিদ্যুত্ উত্পন্ন করা যায়। কাজটা শেষ করার পরদিন ঐ ছদ্মবেশী পাকিস্তানের দালাল ঐ ফর্মুলা নিয়ে পালিয়ে যায়। আমাদের সন্দেহ সে ঐ ফর্মুলা পাকিস্তানের হাতে তুলে দেবে। তাই আমাদের যে কোন মূল্যে ফর্মুলাটা উদ্ধার করতে হবে। কথা বলল এজেন্ট রিচার্ড,
-স্যার আমাদের বিজ্ঞানীরা ফর্মুলাটা আবার দ্রুত লিখে ফেললেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
-প্রতিটা বিজ্ঞানীকে খুন করা হয়েছে।
-ও মাই গড!
-এছাড়াও ঐ বিজ্ঞান কেন্দ্রেই শুধু ঐ রাজাকাররা হানা দেয়নি। এরা দেশের প্রায় সকল গুরুত্বপুণ ডিফেন্স সেকশনে ছিল। এবং ২৫শে মার্চে রাতে ৫টি জায়গা থেকে খুবই গুরুত্বপূণ কিছু তথ্য চুরি যায়। সেগুলো হল আর্মির কিছু সিক্রেট ফাইল; এয়ারডিফেন্সের বিভিন্ন তথ্য; নেভির চার্ট, একটি সাবমেরিনের নকশা এবং এই নতুন আবিস্ককৃত কনভার্টারের ফর্মূলা।
জেসন জানতে চাইল,
-স্যার দেশের ডিফেন্স রেজিমেন্টগুলো কি করছে এ ব্যাপারে?
-প্রতিটা ডিফেন্স সেকশনে ঘুষখোর লোকের অভাব নেই। তাই কাজটা আমাদেরকেই নিতে হবে।
সামান্য বিরতি দিয়ে আবার বলল,
-আমরা সার্চ এন্ড কিল অপারেশন চালাব। কাল রাতে ফ্লাইট। তোমরা সবাই তৈরি?
৬টা কন্ঠ চেঁচিয়ে উঠল,
-ইয়েস স্যার।
কিছু ব্যাপারে ওদের সাথে আলাপ করে তারপর বিদেয় দিল রায়ান।
পরদিন বারটা। ব্ল্যাক ফাইটারসের প্রাইভেট এয়ারফিল্ড এ হাজির সবাই। প্রত্যেককে নিজের গিয়ার চেক করে নেওয়ার অর্ডার দিল রায়ান। প্রত্যেকের ভাগে পড়েছে একটি করে
হ্যান্ডগানঃ এফ এন ৫৭
সাবমেশিনগানঃএমপি৫এসডি৩
এসল্ট রাইফেলঃএম১৬এ২।
স্নাইপার রিয়াদ পেয়েছে হ্যান্ডগান, সাবমেশিনগান
এবং একটি স্নাইপার রাইফেলঃ ব্যারেট এম৮২।
সবার গিয়ার চেক হওয়ার পর বলল রায়ান,
-সবাই যার যার গিয়ার আর্মার্ডকারে রেখে দাও। সাথে শুধুমাত্র হ্যান্ডগানগুলো রাখবে।
সবাই যার যার গিয়ার এককোণে রাখা আর্মার্ড কারে রেখে দিয়ে প্লেনে উঠল। ৩ঘন্টা পর ওরা বাংলাদেশের আকাশসীমায় প্রবেশ করল। ককপিট থেকে প্যাসেন্জার কেবিনে এল রায়ান। বলল,
-আমি, নেহাদ, রেমার নেমে যাব এখন। জেসন বাকিদের দায়িত্বে থাকবে। আমার টিমের নাম আলফা ১, জেসনের টিম ব্লুবার্ড। আমরা নামছি ঢাকায়, আর ব্লুবার্ড যাবে কক্সবাজারে আমাদের বর্তমান সেফ হাউজে। আর্মার্ড কার ২টো আগেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারে। আমরা তথ্য যোগাড় করব ঢাকায়। নির্ভরযোগ্য তথ্য পেলেই তোমাদের সাথে কনট্যাক্ট করা হবে। তোমাদের কনফার্ম করার সাথে সাথে আমাদের সাথে জয়েন করবে। ওকে?
-ইয়েস স্যার।
৩
কিছুক্ষন পর ওদের প্লেন ল্যান্ড করল ঢাকার বিমানবন্দরে। নেমে গেল আলফা ১। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে সোজা ঢাকায় মিরপুরের সেফ হাউজে গিয়ে উঠল ওরা। রাত তখন প্রায় শেষের দিকে। তাই ওরা ৩ জন একটু ঘুমিয়ে নিল। একঘন্টা পর এলার্মের শব্দে সবার ঘুম ভাঙল। দ্রুত ব্রেকফাস্ট শেষ করে রাস্তায় নামল আলফা ১। রায়ান বলল,
-আমাদের ঢাকার এজেন্ট খোঁজখবর নিয়ে জামায়াতের এক নেতার লোকেশন বের করেছে। এখন আমরা সেখানেই যাচ্ছি। ঐ রাজাকার মুখ খুললে অনেক কথাই জানা যাবে।
নেহাদ আর রেমার কিছু না বলে মাথা ঝাঁকাল। বেশ কিছুক্ষণ পর ওরা হাজির হল গুলশানের এক জমকালো বাড়ির সামনে। বাড়িটার অবস্থা দেখে মনের মধ্যে এক ধরণের ক্রোধ উপলদ্ধি করল রায়ান। যে মানুষেরা ৯মাস নিজেদের জীবণ বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল তাদের পেটে লাথি মেরে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটানো রাজাকারেরা বিলাসবহুলভাবে চলাফেরা করে। আর বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেকেই দারিদ্রের তাড়নায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটায়। রাগের একটা শীতল নদীর প্রবাহ শুরু হল রায়ানের শরীরে। বাড়ির ব্লুপ্রিন্ট বের করে সবাইকে দেখাল রায়ান। এছাড়া রায়ানের এজেন্ট আরও জানিয়েছে যে বাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়েছিটিয়ে আছে ১০ জন গার্ড। বাড়ির মালিক কালেম রাজাকার কুকুর ভীষণ ভয় পায়। তাই বাড়িতে সে কোন কুকুর রাখেনি। এই কথা শুনে সশব্দে দম ফেলল বিশালদেহী নেহাদ। এমনিতে সে নির্ভিক এজেন্ট হলেও কুকুরকে ভীষণ অপছন্দ করে। কুকুরকে ভয় পায় বললেও চলে। যাই হোক বাড়িটা ছিল বিশাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। কীভাবে ভেতরে ঢোকা যায় তা নিয়ে ভাবতে লাগল ৩ জন। নেহাদ প্রস্তাব দিল,
-ঐ প্রাচীর টপকে ঢুকে যাই! গাড়িতে তো মই আছেই।
এক কথায় ওর প্রস্তাব নাকচ করে দিল রায়ান। একে তো ওদের গাড়িতে রাখা ১০ফুটের মই দিয়ে ঐ ২০ফুটের প্রাচীর টপকানো অসম্ভব। তার উপর প্রাচীরের উপর ঘনভাবে পাতা ইলেকট্রিক কাঁটাতারের অস্তিত্ব ভালভাবেই বুঝা যাচ্ছে। তো এরপর রেমার প্রস্তাব দিল,
-সামনের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে যাই। সবাইকে একটা চমকের মধ্যেও ফেলা যাবে।
আইডিয়াটা ভেবে দেখল রায়ান। ভুল বলেনি রেমার। ওরা ঠিক করল যে সামনের দরজা ভেঙ্গেই ভিতরে ঢুকবে ওরা। ভিতরে ঢুকার পর রায়ান বাড়ির সামনের দিক দিয়ে ঘরে ঢুকবে আর অন্যরা পিছন দিক দিয়ে। সব কথা ফাইনাল হওয়ার পর গাড়ি স্টার্ট দিল রেমার। পিছিয়ে নিয়ে গেল গাড়িটাকে। গেটের দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখল। বলল,
-রেডী?
শোল্ডার হোলস্টার থেকে এফএন৫৭ বের করে হাতে নিল অন্য দুজন, সিটবেল্ট ঠিক করল। এরপর মাথা ঝাঁকাল। এক্সিলারেটর গাড়ির মেঝের সাথে চেপে ধরল রেমার। আর্তনাদ করে দেয়ালের দুপাশ থেকে খুলে চলে এল ভারী দরজাটা। গেটের কাছাকাছিই ছিল দুজন গার্ড। এভাবে হঠাত্ করে দরজা ভেঙ্গে জলজ্যান্ত একটা হাফট্রাককে ঢুকতে দেখে গুলি করার কথাও ভুলে গেল ওরা। নিজেদের সামলে নিয়ে হাতের একে৪৭ তুলল এবং সাথেসাথে মৃত্যুবরণ করল। বিদ্যুতের গতিতে পরপর দুটো গুলি করল রায়ান। একটা একজনের বুকে আরেকটা আরেকজনের ২চোখের মাঝখানে ঢুকল। সাথে সাথেই মৃত্যুকে বরণ করল দুজন। ততক্ষণে নিজেদের সামলে নিয়েছে নেহাদ আর রেমার। নিজেদের অস্ত্র নিয়ে বাড়িটা ঘুরে পিছনের দরজার দিকে ছুটল। সামনের দরজার দিকে ছুটল রায়ান। দরজা ভিতর থেকে তালা দেওয়া। সময় নষ্ট না করে বুটপরা পা দিয়ে ভয়ানক এক লাথি ঝাড়লো তালার নিচে। ঠাস করে তালাভেঙ্গে দরজা খুলে গেল। দরজায় লাথি মেরেই একপাশে সরে গিয়েছিল রায়ান। তাই ভেতর থেকে আশা অবিরাম গুলি থেকে মুক্তি পেল। একসাথে গুলি শুরু করেছে ৩টি একে৪৭। ব্যাপারটা উপলদ্ধি করে হাসি পেল রায়ানের। হঠাত্ সবগুলো রাইফেল একসাথে গুলি শেষ হওয়ায় থেমে গেল। ঝট করে একবার উঁকি দিয়ে দেখে নিল রায়ান ঘরে আর কেউ আছে কিনা। কেউ নেই দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। আবার গুলি শুরু হল একসাথে। এক হাতে কমান্ডো নাইফ আরেক হাতে পিস্তল নিয়ে প্রস্তুত হল রায়ান। গুলি থামতেই নাইফটা ছুঁড়ে দিল দরজা থেকে সবচেয়ে কাছের লোকটার দিকে। আর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় লোকটাকে পরপর দুটো গুলি করে শেষ করল। এরপর রওনা হল পেছনের দরজার দিকে। ওখানে তখন বাকি ৫ শত্রুর সাথে লড়ছে নেহাদ ও রেমার। গুলির আওয়াজে বুঝতে পারল রায়ান যে ঐ শত্রুরা প্রথম ৩ জনের মত বোকা না। নেহাদ বা রেমার দরজায় উঁকি দিলেই গুলি করছে ওরা। ব্যাপারটা ইজি হয়ে গেল রায়ানের জন্য। ঐ রুমের দিকে এগুল ও। কিন্তু হঠাত্ রেমার পকেট থেকে একটা গ্রেনেড বের করে ছুঁড়ে দিল ঘরটার ভিতর। গ্রেনেডটাকে আসতে দেখেই লাফ দিয়া দরজার আড়ালে লুকাল রায়ান। বিকট শব্দে ঘরের ভিতর গ্রেনেডটা ফাটল। শত্রুরা মারা গেছে বুঝে ভেতরে ঢুকল ওরা। দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে এল রায়ান। ওর কালিঝুলি মাখা চেহারা দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া বাকি রাখল অন্য দুজন। রায়ানের অগ্নিদৃষ্টি দেখে হাসি থামাল ওরা। সিঁড়ি বেয়ে সাবধানে উপরে উঠতে লাগল। দোতলায় উঠে সার্চ শুরু করল। একটা বন্ধ দরজা পেয়ে ওদের ডাকল রেমার। রায়ানের ইঙ্গিতে পিছিয়ে গিয়ে দরজার উপর ঝাঁপ দিল নেহাদ। কাঁধের ভয়ংকর ধাক্কায় দরজাসহ ভূপাতিত হল। কিন্তু ঘরের কোথাও ঐ কালেম রাজাকারকে দেখা গেল না। তাকে পাওয়া গেল টয়লেটে। ইঁদুরের মত ঘাড়ে ধরে ওকে ঘরের ভিতর ছুঁড়ে ফেলল বিশালদেহী নেহাদ। রায়ানের সামনে মাটিতে বসে হাউমাউ করে কাঁদা শুরু করল রাজাকারটা। রায়ান বলল,
-তোমার পলাতক দোস্তরা কোথায়?
-স্যার আমি জানি না। বিশ্বাস করেন হুজুর! আমি সত্যিই জানি না।
রায়ান নেডের দিকে তাকিয়ে বলল,
-নেহাদ, ভাবো একাত্তরে আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের কিভাবে হানাদারদের হাতে তুলে দিয়েছিল এরা, ভাবো কীভাবে মা-বোনের ইজ্জত নিয়ে খেলেছে, ভাবো কীভাবে এই পাকিস্তানের দালালগুলো এখনও আমাদের বাংলাদেশের ক্ষতি করছে। এরপর তোমার যা করতে ইচ্ছে হয় করো।
নেহাদের চোখে আগুন দেখতে পেল রায়ান। পেশীবহুল একটা হাত ঠাস করে কালেমের গালে পড়ল। ৪/৫টা দাঁত খুলে পড়ে গেল। চেয়ার থেকে তুলে দেয়ালে ছুঁড়ে ফেলল ওকে নেহাদ। ব্যাথায় গলা ফাটিয়ে চিত্কাার করে উঠল শয়তানটা। নেহাদকে আবার ওর দিকে এগুতে দেখে বলে উঠল,
-আমি জানি! আমি জানি ওরা কোথায় আছে।
-কোথায়?
-সুন্দরবনে।
-হুম।
রেমারকে ওর কাছ থেকে ডিটেইলস জেনে নিতে বলল। ওর কাজ শেষ হতেই নেহাদকে বলল রায়ান,
-ঝামেলা শেষ কর।
হা হয়ে গেল কালেম, কিন্তু কিছুই করতে পারল না। নেডের গুলিতে মারা গেল কুখ্যাত রাজাকার কালেম। বাংলাদেশের মাটি থেকে মুছে গেল একটি ঘৃনিত পশুর নাম।
৪
পরদিন। রাত দুটো। চিটাগাং থেকে ব্লুবার্ড টিম এবং আলফা ১ টিম জয়েন করল মংলায়। ব্লুবার্ড টিম এতদিন চুপচাপ বসে ছিল না, ওরাও এক ভন্ড প্রভাবশালী রাজাকারকে ধরেছিল। ঐ রাজাকারও সুন্দরবনের কথা কনফার্ম করেছে। ২ টিমের পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে জানা গেল সাতক্ষীরার সুন্দরবনের বেশ গভীরে রয়েছে বর্তমানে রাজাকার বাহিনী। ওরা ওখানে পাকিস্তানীদের আশার অপেক্ষা করছে। এলে পাকিস্তানীরা সহ চুরি করা তথ্যসহ দেশ থেকে পালিয়ে যাবে। রাজাকারদের লোকবল আছে প্রায় ৩০ জনের মত। সবাই অস্ত্রধারী। তারা বনের মাঝামাঝি এক জায়গায় গাছপালা কেটে নিজেদের সাময়িক হেডকোয়ার্টার বানিয়েছে। রায়ান কিছুক্ষণ চিন্তা করে ব্ল্যাক ফাইটারসের একটা স্যাটেলাইটের মুখ এদিকে ফেরানোর অর্ডার দিল। কিন্তু স্যাটেলাইটের আউটপুট দেখে কিছু বুঝা গেল না। তাই ঠিক করা হল ওরা নিজেরাই বনে ঢুকে সার্চ করবে। কিছুক্ষণ পর আর্মার্ড কার দুটো বনের বাহিরে রেখে ওরা নিজেদের গিয়ারসহ বনে ঢুকে পড়ল। রাজাকার কালেমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সাহায্যে ওরা জানে যে হেডকোয়ার্টারের চারপাশ ঘিরে রেখেছে রাজাকারদের সুগঠিত ট্রেইন্ড আর্মি। তাই খুব সাবধানে মুভ পড়ল ওরা। ইতোমধ্যেই সকাল হয়ে গেল। তবে দিনের আলো ঘন গাছপালা ভেদ করে ঢুকতে পারছে না বললেই চলে। তাই ব্ল্যাক ফাইটারসের টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্টে ডেভেলপড করা নাইট ভিশন গগলস পরে নিয়েছে সবাই। তবে এই গগলসের বিশেষ সুবিধা হল এটা থার্মাল ইমেজিং সিস্টেম রয়েছে। ফলে শত্রুরা ওদের দেখতে পাওয়ার বহু আগে ওরাই শত্রুদের দেখতে পারবে। কিছুদূর এগুনোর পর হঠাত্ রায়ানকে প্রশ্ন করল এজেন্ট রিচার্ড,
-বস রিয়াদকে কোথায় পাঠালেন?
প্রশ্নটা শুনে এদিকে মনোযোগ দিল জেসন। ও নিজেও ব্যাপারটা খেয়াল করেছে, কিন্তু বসের আলাদা কোন প্ল্যান আছে বুঝতে পেরে কিছু বলেনি। জবাব দিল রায়ান,
-ও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই ফেরত পাঠিয়েছি।
মাথা ঝাঁকাল রিচার্ড। জেসন একটু বিরক্ত হল রিয়াদের উপর। এই ধরণের বনে স্নাইপার ছাড়া কমান্ডো মিশনে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। ব্যাপারটা মনের ভিতর খচখচ করতে লাগল জেসনের। তবুও ভাল ব্যাপার হল ওদের সার্চ এন্ড কিল অপারেশন চালাতে হবে। যদি সার্চ এন্ড রেসকিউ অপারশেন চালাত তাহলে সফল হওয়ার চান্স ছিল না বললেই চলে। একাধারে বন্দিদের দিকে নজর রাখা আর নিজেদের সামনে পিছনে স্নাইপার ছাড়া কাভার দেওয়া অসম্ভব ব্যাপার। জেসন উপলদ্ধি করল ওদের আরও সতর্ক থাকতে হবে। সবাই হাতে সাইলেন্সড সাবমেশিনগান নিয়ে আবার সামনে এগুলো। অনেক পথ যাওয়ার পর বিকেলের দিকে লান্ঞ্চ ব্রেক দিল রায়ান। সবাই কাছাকাছি এক জায়গায় বসে লান্ঞ্চবক্স খুলল। বলা ভাল সবাই বাংলাদেশী খাবার এনছে। এনায়েত, রায়ান, জেসন,নেহাদের পাশাপাশি অন্যরাও বাংলাদেশী খাবারের ভক্ত হয়ে গিয়েছে। এইকদিনেই তারা পরোটা-মাংস, ভাত-মাছ ছাড়া অন্য কিছু খাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। লান্ঞ্চ ব্রেক শেষ হতেই উঠে পড়ল সবাই। আবার এগুতে লাগল। একসময় সন্দেহ হতে লাগল জেসনের, ওরা একই জায়গায় ঘুরছে না তো ? হঠাত্ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন ভেসে আসল। কাঁপিয়ে দিল পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ব্ল্যাক ফাইটারসের রায়ট টিমকেও। গর্জনটা শুনার প্রায় সাথে সাথেই রায়ানের শ্রবণশক্তিতে ধরা পড়ল একটি চিত্কার। চিত্কারটা যে মানুষের তাতে কোন সন্দেহ নেই ওর। অন্যদেরকে ফলো করতে ইংগিত দিয়ে বিড়ালের মত নিঃশব্দে এগুল এজেন্ট রায়ান। কিছুদূর এগিয়েই সবাইকে থামার ইংগিত দিল। সবাই থেমে দাঁড়াতেই ক্রল করে সামনের একটা ঝোপের দিকে এগিয়ে গেল। হঠাত্ কাল আলখেল্লা পড়া এক সোলজার বেরিয়ে এল ঝোপের আড়াল থেকে। ব্ল্যাকফাইটারসদের দেখে হাতের উজি তুলতে গেল কিন্তু পিছনে দাঁড়ানো রায়ান তার ঘাড়ের উপর একটা রদ্দা মারতেই ঢলে পড়ে গেল। এর জ্ঞান ফিরার অপেক্ষা না করে কাঁধে তুলে আড়ালে নিয়ে গেল রায়ান। নিজের ক্ল্যামোফেজ কমান্ডো ইউনিফর্মের উপর পড়ে নিল শত্রুর কালো আলখেল্লা। আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসতেই ওকে শত্রু মনে করে গুলি করল নেহাদ। পৈতৃক প্রাণটা বাঁচাতে অসম্ভব দ্রুত গতিতে একপাশে গাছের আড়ালে ডাইভ দিয়ে পড়ল রায়ান। খেঁকিয়ে উঠল,
-বলি চোখের কি মাথা খেয়েছ! শেষমেষ আমাকেই গুলি ?
ওর কন্ঠ শুনে সবাই অবাক। নেহাদ জবাব দিল,
-আপনার জামার ময়লাটা পরিস্কার করছিলাম বস। আর কিছু না। বেড়িয়ে আসুন।
সাবধানে ওদের দিকে এগিয়ে এল রায়ান। ছদ্মবেশ নিঁখুত হয়েছে বলে জানাল জেসন। তবে নেহাদের গুলি সেটার নিশ্চয়তা আগেই দিয়েছে। ওর দিকে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে আবার বলল রায়ান,
-এখান থেকে ফিরে তোমার একটা ছবি আমি শুটিং এরিনায় টার্গেটে লাগিয়ে দেব মনে রেখ। আর তোমাকে অবশ্যই আবার আই এক্সাম দিতে হবে।
হাসতে হাসতে জবাব দিল নেহাদ,
-জো হুকুম জাহাপনা। এবার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা যাক?
ওর দিক থেকে অগ্নিদৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে জেসনকে বলল রায়ান,
-বুঝাই যাচ্ছে ছদ্মবেশ ঠিক আছে। আশা করি নেডের মত চোখের সমস্যা শত্রুদেরও আছে। তাই আমি এখন আলখেল্লাওয়ালার ট্র্যাক অনুসরণ করে এগিয়ে যাব। ভিতরে ঢুকে যা পারি করব। যদি ধরা পরি কোড রেড সিগন্যাল দেব আমি, নিরাপদে কাজ শেষ হলে কোড গ্রীন, আর ঝামেলা হলে ইয়েলো কোড। কোড রেড জানানো হলে তুমি চার্জে থাকবে এবং যা ভাল মনে হয় করবে, তবে আমার মতামত যদি জানতে চাও আমি বলব সরাসরি এসল্ট এটাক করাই ভাল। গ্রীন সিগন্যাল পেলে শুধু আমার ফিরে আসার অপক্ষা করবে। আর ইয়েলো সিগন্যাল পেলে শত্রুদের দিকে একটা পজিশন নিয়ে গুলি শুরু করবে। আমার একটা ডাইভারশনের প্রয়োজন হলেই আমি ইয়োলো কোড পাঠাবো। তবে জাস্ট শুট টু কিল! এবার চলি। অল ওকে?
-ইয়েস স্যার।
রওনা হল এজেন্ট সৌরভ রায়ান।
৫
আলখেল্লাওয়ালার পায়ের ছাপের দিকে লক্ষ রেখে হাটতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর হাজির হল রাজাকারদের হেডকোয়ার্টারের প্রবেশমুখে। পুরো হেডকোয়ার্টার ইলেকট্রিক ফেন্ঞ্চ দিয়ে ঘেরা। গার্ডপোস্ট আছে গেটের সামনে। স্বাভাবিকভাবে হেঁটে এগুল রায়ান। গেটের কাছে ওর আলখেল্লা দেখে কেউ আর কোন প্রশ্ন করল না। বাধাহীনভাবে ভেতরে ঢুকে পড়ল ও। ওর মত কাল আলখেল্লা পড়ে আছে সবাই। সব মিলিয়ে ১৫জন লোক আছে ভিতরে। বাকিরা সবাই বাহিরে পাহারা দিতে ব্যস্ত। ভিতরে একটা টিনের ঘর ছাড়া আর কিছু নেই। তাই সরাসরি লম্বা টিনের ঘরটার দিকে এগুল রায়ান। ভেতরে ৩ জন লোক বসে আড্ডা দিচ্ছে। স্বস্তির সাথে লক্ষ করল রায়ান যে ওদের অস্ত্রগুলো সব দরজার পাশের র্যা কে রাখা। অস্ত্রের কাছে পৌঁছানোর আগেই যা ঘতানর ঘতিয়ে ফেলতে পারবে রায়ান। আস্তে ওদের পাশে গিয়ে বসল রায়ান। ওদের মধ্যে নেতাগোছের লোকটা ওকে প্রশ্ন করল,
-কি মিয়া? নতুন আইসো নাকি?
-হুম। নতুন আইলাম।
-বয়স কত?
জবাবের অপেক্ষা না করে আবার বলল,
-এই বয়সেই বেহেস্তে যাওয়ার ব্যবস্থা কইরা ফেলাইস তো মিয়া! ঈমান মানেই আমাগো জামাত! আর দেশ আমাগো পাকিস্তান।মান তো এইসব ?
-কাকা আপনার জন্ম কই হইসে ? এইখানে নাকি পাকিস্তানে ?
-এইখানেই আর কি! এই নাপাক জায়গায়। যুদ্ধের সময় কত চেষ্টা করলাম এই বিধর্মীগুলারে শেষ করার কিন্তু শেষ হইল না। সব শালার কপাল! যাইব কই! শেষে দেশ একটাই হইব আমাগো। পাকিস্তান...
মাথার তালু জ্বলছে রায়ানের। তবুও আরও কিছু কথা শুনার আশায় নিজেকে সামলাল। বলল,
-তাইলে কাকা এই দেশ থেকা এইসব জিনিস নিয়া যাইতাসেন ক্যান? এইসব নাপাক না?
-নাহ! নাপাক তো এইদেশের মানুষ! আর তাছাড়া এরা এইসব জিনিস দিয়া কি করব? জন্মইতো হইসে আমাগো খিদ্মত করার জন্য। এখন আমাগো পাকিস্তানি ভাইয়েরা আইব আর আমরা এইসব নিয়া এই নাপাক দেশ ছাইড়া চইলা যামু।
এই বলে সামনে রাখা ফাইলগুলো দেখাল ঐ লোক।
আস্তে পকেটে হাত দিয়ে একটা সুইচ টিপল রায়ান। বনের মধ্যে এইম করে বসে থাকা জেসনের ঘড়ির হলুদ লাইট জ্বলে উঠল। বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে অর্ডার দিল জেসন,
-ফায়ার!
একসাথে সবগুলো সাবমেশিনগান থেকে গুলি বের হল। গেটের কাছে এবং আশেপাশে দাঁড়ানো ১৩জন রাজাকার ৫ মিনিটেই খতম হয়ে গেল। ভিতরে গুলির শব্দ পৌছতেই লাফিয়ে উঠল টিনের ঘরের সবাই। ঘুরে দরজার পাশের রাইফেলের দিকে দৌড় দিল রায়ানের ডান পাশের জন। পিছন থেকে রায়ান ল্যাং মারল। ধরাম করে মাটিতে পরে গেল সে। অপর দুজন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ২ পাশ থেকে রায়ানকে ধরতে এগুল। ঘাড়ের এক পায়ে ভর দিয়ে আরেক পা তুলে একপাক ঘুরল রায়ান। ওর পা ২ জনের চিবুকে পালাক্রমে আঘাত করেছে। ২ জনেই মাটিতে পরে গেল। গা থেকে আলখেল্লা ছিঁড়ে নামাল রায়ান। শোল্ডার হোলস্টার থেকে এফএন৫৭ বের করে হাতে নিল। ঠাণ্ডা মাথায় ২টো গুলি করল রায়ান। এরপর ফিরল নেতার দিকে। লোকটা প্রান ভিক্ষা চাইল। রায়ান বলল,
-তোমরা যাকে নাপাক জায়গা বল সেটা আমার দেশ, আমার মা। এই পবিত্র দেশে তোমার মত নাপাক বস্তুদের কোন ঠাই নেই। তোমাদের একজনকেও এই দেশের মাটিতে পা রাখতে দেব না আমি। এখন মরার পর তোমার নরকের সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়ো কোনটা পাক আর কোনটা নাপাক। জয় বাংলা।
পুরো ম্যাগাজিন খালি করল রায়ান রাজাকারটার উপর। এরপর ফাইলগুলো ব্যাকপ্যাকে ঢুকিয়ে বাহিরে বেরিয়ে এল। এক জায়গায় কিছু বাক্সের আড়ালে দাঁড়িয়ে জেসনদের দিকে গুলি করছে ৭ জন লোক। কাধে ঝুলানো সাবমেশিনগান তুলে ব্রাশফায়ার করল রায়ান। ৭জনই ঢলে পরে গেল। সোজা গেটের দিকে ছুটল রায়ান। গেট পার হয়ে বনে টিমের সাথে এক হয়েই ছুটতে বলল সবাইকে। সবাই বনের বাহিরে যাওয়ার জন্য ছুটল। ওদের পিছনে পায়ের আওয়াজ শুনে বুঝতে পারল ১০-১৫জন পিছু নিয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে ফায়ার করল নেয়ামত। তবে কার গায়ে লাগলো বলে মনে হল না।হঠাৎ পিছন থেকে গুলি শুরু হল। জেসনের পায়ে লাগলো একটা গুলি। ওর পাশে দাঁড়ানো নেহাদ ওকে কাধে তুলে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো। এরপরের গুলি লাগলো নেহাদের পায়ে। হুমড়ি খেয়ে জেসনকে নিয়ে পরে গেল নেহাদ। হঠাৎ শত্রুদের একজন লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল গুলি খেয়ে। অথচ ওরা কেউ গুলি করে নি। আরেকজন শত্রু গুঙিয়ে উঠল গুলি খেয়ে। ১ মিনিটের মধ্যে একের পর এক গুলি খেয়ে শেষ হয়ে গেল শত্রুরা। দূর থেকে একটা গাছের উপর থেকে রিয়াদকে নামতে দেখে অবাক হয়ে গেল সবাই। জেসন জিজ্ঞেস করল,
-ব্যপার কি হে ? এত দ্রুত সুস্থ হয়ে গেলে ?
হেসে বলল রিয়াদ,
-আসলে আপনাদের এভাবে বিপদে ফেলে চলে যেতে ভাল লাগছিল না। তাই কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার ফিরে আসি। দেখা যাচ্ছে এসে ভুল করিনি।
এই বলে চোখ টিপল রিয়াদ। সবাই ওকে ধন্যবাদ জানাল। এরপর বন থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে চলে এল ওরা সাতক্ষিরায়। সেখানে নেহাদ আর জেসনের ট্রিটমেন্ট করিয়ে সোজা ঢাকায়। ঢাকায় জেনারেলের কাছে উদ্ধার করা ফাইলগুলো জমা দিল রায়ান। এছাড়া আর্মি, বিমানবাহিনী আর নেভিতে ব্ল্যাক ফাইটারস এর কিছু এজেন্টকে এন্ট্রি করিয়ে নিল। ওদের সহায়তায় এক মাসের মধ্যে ডিফেন্স সেকশন থেকে সবগুলো জামায়াত, শিবির তথা রাজাকারগুলোকে বের করে বিচার করা হল। এরপর আবার উধাও হয়ে গেল এজেন্ট রায়ান, তার ব্ল্যাক ফাইটারসদের নিয়ে। হঠাৎ কোথাও কোন অপরাধের খোঁজ পেলেই সেখানে হাজির হয়ে যেত সে। আর দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন ? সেখানে অবিশ্রান্ত প্রহরায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সে। অপরাধ আর অপরাধী এর কোনটাই রায়ানকে নত করতে পারে না। প্রতিনিয়ত সে লড়ে যায় অপরাধ নির্মূলের জন্য। সে লড়াই করে সত্য, সুন্দর ও ন্যায় এর পক্ষে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৫:০৭