১৬ মে ফারাক্কা দিবস। তো কী হইছে! বিজি আছি অন্য ইস্যু নিয়ে!!
১৬ মে ফারাক্কা দিবস। আর দশটা দিনের মতো এটাও ২৪ ঘণ্টার একটি সাধারণ দিবস। এ দিবসের উপর তেমন আলোকপাত করা হবে না কারণ এই দিবসটি বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতিতে কোন গুরুত্ব বহন করে না। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এই দিবসের পেছনে কোন ভৌগলিক ও ভূ-রাজনৈতিক আবহ নেই। নগন্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আমাদের ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ভূমিকা খেয়াল করলে এ বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
সীমানার ওপারের বড়দাদা-র অঅঅনেনেনেককক পানি প্রয়োজন। তার বপু বিশাল – তাই পানি-পিপাসাও বেশী। কৃষি, সেচ, মৎস্য, নাব্যতা, পরিবেশ ইত্যাদি অনেক কিছুর প্রতি ওর সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি! তাই গায়ের জোরে বড়দাদা আমাদের প্রাকৃতিক পানি-সংস্থানকে থোরাই কেয়ার করল। বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডে প্রবাহিতব্য পানিকে জোর করে ওরা নিয়ে গেল পরীক্ষামূলকভাবে “পাললিক পাপ” মোচনের জন্য। কূটবুদ্ধিতে পারদর্শী এই দুরাত্মা বড়দাদার এই পরীক্ষা শেষ হবে না কোন দিনদিন।
ক্ষমতার পালাবদলে আমাদের ভাগ্যে শুধু নতজানু সেবাদাসই জুটেছে। বিগত সরকারগুলো আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি তুলে ধরতেই পারেনি – কোন লিয়াজো বা লবিং তো দূরের কথা। অবশ্য আমাদের শীর্ষ-পর্যায়ে যারা আছেন তারা তো পানির কোন অভাব বোধ করেন নি! কাজেই কী দরকার বাপু দাদাকে বেজার করে!
পানি বন্টন চুক্তির বেশীর ভাগই ওদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। ওরা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক আর আমরা ওদের বন্ধুত্বের দায় মেটাই সবটুকু দিয়ে! আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের আমলারা পানি বন্টন চুক্তির অধিকাংশ শর্ত, ধারা-উপধারার কিছুই বোঝেন না অথবা তাদের ভুল বোঝানো হয়। এসব চুক্তির ভাষাগত মারপ্যাঁচ বোঝার মতো বোদ্ধা আমাদের আছে কিনা সন্দেহ।
আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি কোন না কোন নদীর পাশে। ১০ – ১৫ বছর আগের সাথে এখনকার নদীগুলোর চেহারা একটু মিলিয়ে দেখলেই বুঝবেই কী নিরব নদী-হত্যা চলছে। অথচ আমাদের কোন বিকার নেই। স্লো-মোশনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের কৃষি, মৎস্য, বনজ, শিল্প, নৌ পরিবহন, পানি সরবরাহ সর্বোপরি আমাদের জীবন। ১৬ কোটি মানুষের জীবনকে এভাবে বিপন্ন করা এক ধরণের নিরব জেনোসাইড ছাড়া আর কিছুই নয়। অভিন্ন সকল নদীর পানিপ্রবাহকে ওদের অনুকূলে নেবার সব প্রকল্প একের পর এক বাস্তবায়িত হচ্ছে।
অনৈক্যে ও তাবেদারীর সুযোগ নিয়ে ওরা বাংলাদেশের ন্যায্য প্রাপ্য পানি ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা কেউ এর প্রতিবাদ করছি না! পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মালদ্বীপ পানির তলায় তলিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলিয়ায় জমি ক্রয় করছে যাতে আগামীতে “গণ-অভিপ্রয়ান” করতে পারে। আগামী শতাব্দীতে হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব-সৃষ্ট মরুভূমি বাংলাদেশ থেকেও মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে। তখন জায়গা পাওয়া যাবে তো? তিনদিকে ইন্ডিয়া – তাহলে বঙ্গোপসাগর ছাড়া আমাদের আর কোন যাবার জায়গা থাকবে না!
কোন প্রতিবাদ না করার জন্য আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের অভিশাপ দেবে না তো?
ক্রমাগত তাবেদারীর জন্য আমাদের ক্ষমতাসীনরা আগামীতে ধিক্কার পাত্র হবে না তো?
নাকি আমরা শুধু বিধাতার বিচার চেয়ে নিরবে দিন গুজরান করব?
অথবা “প্রকৃতির প্রতিশোধ”-এর (backlash of nature) অপেক্ষায় বসে থাকব?
প্রকৃতির প্রতিশোধ কিন্তু পাত্র-মিত্র ভেদ জানে না!