কিভাবে পাবো ধারনা ছিলোনা, আগে কখনো পরিকল্পনাও করিনি, তবে হ্যা দরকার ছিল সবসময় ই। তাই বলে এভাবে পেয়ে যাব এটা কখনো ভুলেও মাথায় আসেনি। যার জন্ন্যে সবাই ক্ষেটে মরছে, সারাক্ষণ মারমার কাটকাট লেগেই আছে, মোটের ওপর বলতে গেলে এই জগত সংসারের যাবতীয় সকল সমস্যার কারন ও অবশ্যই তার সমাধান যেই নির্দিষ্ট মুল্লবান কাগজের মদ্ধে নিহিত, তা যে এতো সহজে আমার মতো তুচ্ছ অতি সাধারন মানুষএর কাছে এসে আশ্রয় খুঁজবে তা ভেবেই আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে।
যাজ্ঞে যেভাবেই হোক আমাকে বিশ্যাস করতেই হচ্ছে, না করে উপায় নেই, আমার চোখের সাম্নেই পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। জীবন এর অর্ধেককাল, না না অর্ধেককাল কেন বলছি, বাবা মারা যাবার পর তো দারিদ্রতা এমনভাবে আস্টেপিস্টে বেঁধে ফেলেছিলও যে টাকা নামে যে কোন বস্তু এই মহান জগত সংসারে বিদ্যমান তা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। আজ অনেকদিন পর আবার বাবার কথা মনে পরল, বাবা যখন বেঁচে ছিলেন তখন বোধ করি আমরা এতো দরিদ্র ছিলাম না, কিন্তু হঠাত কি হল, পারিবারিক ঝামেলায় বাবা চিরনিদ্রায় চলে গেলেন আর তার সৎ ছোট ভাই বড় ভাইয়ের রেখে যাওয়া সকল সহায় সম্পত্তির ভার তার নিজের কাঁধে নিয়ে নিলেন, শুধু আমরাই তার কাঁধে জায়গা পেলাম না। তারপরের কাহিনী এখন আর মনে করতে ইচ্ছা করছে না। আজ এতোদিন পর বাবার সেই সৎ ভাই সত্যি সত্যি কেন জানি না সৎ হয়ে আমার কাছে হাজির এই এতগুলো টাকা নিয়ে, কত সহজেই মানুষ সৎ থেকে সৎ হয়ে যায়, হায়রে পৃথিবী, হায়রে তার অপরাধ, কত সহজেই মুক্তি!!
যাজ্ঞে সেসব কথা, এখন এতকিছু চিন্তা করে তেমন কোন লাভ দেখছি না, কিভাবে টাকাগুলো খরচ করব সেটাই মনে করছি এখনকার জন্য মুক্ষ চিন্তার বিষয় হউয়া উচিত অন্তত আমার জন্য। আসলেই তো, কত কিছু করার আছে, আশ্চর্য বিষয় দারিদ্রতা আমার সব কেড়ে নিল, মাকে নিল, ছোট একটা বোন ছিল তাকেও বেশিদিন রাখতে পারিনি, কিন্তু কেন জানিনা আমার ইচ্ছাগুলো এখনো নিতে পারল না। অনেক কিছু করার আছে, অনেক। একবার বলিভিয়া জাওয়ার ইচ্ছা, শুনেছি সেখানে নাকি ইউনি নামে কোন এক জায়গা আছে, পুরোটাই লবন আর লবন। কিন্তু বর্ষাকালে সেই লবন আর পানি এক হয়ে হয়ে যায় আয়না। অদভূত সেই আয়না, এত্ত বড় একটা আকাশ আমার পায়ের কাছে এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে এর চেয়ে বিশ্বয়ের আর কিছু আমার কাছে নেই। ধরে নিচ্ছি যা টাকা পাওয়া গেছে তাতে বলিভিয়া দেখা হয়ে যাবে।
দেশ ছাড়ার কথা মাথায় আসতেই মনি মিয়ার কথা মনে পরে গেল। মনি মিয়ার ভাতের দোকান। গত ৬ মাস তার দোকান থেকে বাকিতে খাচ্ছি। মনি মিয়া ভাল লোক, বিনা পয়সায় খাওয়াচ্ছে সেই জন্নে নয়, উনি আশাবাদী লোক, উনার ধারনা একদিন না একদিন আমি তার টাকা ফেরত দিবয়ই। লোকটাকে এতদিন বোকা ভাললোক ভাবতাম, তবে আজ তার প্রতি আমার ধারনার কিঞ্চিৎ উন্নতি হয়েছি, আজ মনা মিয়াঁকে বিরাট বোকা মনে হচ্ছে। এই বিরাট বোকা লোকটার বেবসা ও সংসার কিভাবে চলছে আজ হঠাত ই আমাকে চিন্তিত করছে। টাকা আজব এক বস্তু !!!! যাজ্ঞে দেশ ছাড়ার আগে এই বিরাট বোকা লোকটার টাকা সুদ সমেত ফেরত দেয়া দরকার।
মনা মিয়াঁর দোকানে আজ তেমন ভীর নেই, কারন জানি না, জানার তেমন আগ্রহও অনুভব করছি না। মনা মিয়াঁ দোকানেই ছিল, আমাকে দেখেও তেমন কোন আগ্রহ নেই চেহারায়-
-কি মনা ভাই, কেমন আছেন?
-আজকে ভাত হবে না, হোটেলে রান্না হয় নাই।
-( আগ্রহও নিয়ে জিগ্যেস করলাম ) রান্না কেন হয় নাই?
-ধুর মিয়াঁ সব কথা কি আপনেরে বলতে হইব? যান অন্য দোকানে যান, আজকে দোকান বন্ধ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি মনা মিয়াঁর চোখে পানি! কাছে গিয়ে জিগ্যেস করতেই তার কষ্টের বাঁধ যেন আর বাঁধা মানল না, একেবারে সুনামির মত সব ভাসিয়ে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে চিতকার-
-ভাই আমার ছেলেটা মনে হয় আর বাঁচব না, আজকে ডাক্তার বলছে অপারেশন করাইতে হইব, অনেক টাকা লাগবো, এত টাকা আমি কই পামু, তাই সকালেই হাসপাতাল থিকা বাসায় নিয়া আইছি। আমার কাছে বাজার করার টেকা নাই, আমি পোলার অপারেশন কেমনে করাম।
(এই কথা বলেই মনা মিয়াঁ অঝোরে কান্না শুরু করে দিল। এমন পরিস্থিতিতে আমার মনাকে সান্ত্বনা দেয়া উচিৎ, তা না করে আমার কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে, আমার চিৎকার করে হাসতে ইচ্ছা করছে।)
-মনা ভাই, এই ব্যাগে কত টাকা আছে আমার ধারনা নেই, তবে মনে হয় তোমার ছেলের চিকিৎসা এতে হয়ে যাবে, আর তোমার ছেলে সুস্থ হলে ওকে লেখাপড়া করিও। ও যখন মস্ত বড় কিছু হয়ে যাবে, ওকে একদিন ইউনি ঘুরে আসতে বোলো।
(সেদিনের পর আমি আর মনা ভাইয়ের দোকানে যাইনি। তবে আমি এখন আর ইউনি যেতে চাইনা।)