যাদের বাড়ি আছে তাদের জন্য যন্ত্রণার একটি প্রতিশব্দ হলো বাড়ির ছাদ। বিশেষ করে যারা একদম ওপরের তলায় থাকেন তাদের জন্য রীতিমত এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এই ছাদ কেন্দ্রিক। শীতে এই তাপ আরামদায়ক হলেও আসছে গরম এ ওপরতলার বাশিন্দাদের জন্য বাড়ির ছাদ এক অসহনীয় যন্ত্রণার নাম।
এখন কথা হচ্ছে এত টাকা দিয়ে বাড়ি বানিয়ে শুধু গরম এর জন্য তো আর বনে গিয়ে থাকা সম্ভব না, আবার অনেক অনেক টাকা খরচ করে প্রতি রুমে রুমে এসির বেবস্থা করে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা কারেন্ট বিল দেয়াও কষ্টকর। তাহলে সাধ আর সাদ্ধের সমন্নয় কেমন করে হবে?
তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এত বড় সমস্যার খুবই সহজ কিছু সমধান রয়েছে। তবে সেসব সমাধান সম্পর্কে জানার আগে সমস্যার কারন সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন।
তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেই আমাদের বাড়িগুলো কেন গরমকালে অতিরিক্ত গরম হয়। তবে ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই আমরা এখানে কোন তত্ত কথা বলব না, সহজ করে বলার চেষ্টা করব।
------------------------------------------
১। বাড়ির ছাদঃ সূর্যের তাপ সরাসরিভাবে প্রায় পুরটাই বাড়ির ছাদের উপর পরে। ফলে যেটা হয় বাড়ির ছাদ পুরো তাপ টাই শোষণ করে এবং একইভাবে নিচের ফ্লোর গুলোতে তা প্রবাহিত করে। এবং এইভাবেই চলতে থাকে যতক্ষণ না তাপ তা পুরপুরিভাবে মাটিতে পৌছায়। আর এই কারনেই বাড়ির ছাদ সব থেকে বেশি গরম থাকে এবং একদম নিচের তলা থাকে তুলনামুলকভাবে কম গরম।
২। দেয়ালঃ বাড়ির দেয়ালের সম্মুখভাগের ওপর তাপ চলাচল নির্ভর করে। আমাদের দেশে পশ্চিম দিক থেকে সবচেয়ে কড়া রোদ এসে পরে দেয়ালের ওপর। ফলে দেয়াল উত্তপ্ত হলে ঘরের ভেতরের বাতাসও গরম হয়।
৩। এছাড়াও ঘরের ভেতরের কিছু সাজসজ্জার কারনেও ঘরের ভেতরের পরিবেশ গরম হয়। যেমন ফ্রিজ, এসি ইত্যাদি ভুল জায়গায় বসানোর কারনে এগুলে থেকে যেই গরম বাতাশ বের হয় তা ঘরের পরিবেশকে গরম করে।
বিশেষ করে গরম এর সময়টাতে আমাদের দেয়ালের রঙ, আসবাবপত্রের রঙ সম্পর্কে সচেতন হতে হয়, কারন গাঢ় রঙের দেয়াল, চাদর ও বাড়ির ভিতরে আসবাবপত্র থেকে আরও তাপ বৃদ্ধি হতে পারে।
---------------------------------------------
এখন সমধান নিয়ে কিছু কথা।
১। বাড়ির ছাদে ও বারান্দায় গাছ লাগানোঃ এটা সর্বজন স্বীকৃত ও সবচেয়ে সহজ সমাধান। গাছের উপকারিতা নতুন করে বলার কিছু নাই। এক্ষেত্রে গাছপালায় ব্যবহার করা কাদা মাটি একটি অন্তরক বা ইন্সুলেটর হিসেবে কাজ করে, সূর্য থেকে সরাসরি তাপ শুষে নেয়, যার ফলে ছাদ শীতল থাকে. বাগানে প্লাস্টিকের চাদর ব্যবহারে জল ফুটো হয়ে কোন ধরনের পানির প্রবাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।
২। ছাদের উপর সাদা চুনকাম বা সাদা টাইলস বসানোঃ সাদা রঙ একটি প্রতিফলক এর মত কাজ করে এবং ছাদ গ্রীষ্ম জুড়ে ঠাণ্ডা থাকতে সাহায্য করে. এখন কথা হচ্ছে চুনকাম বৃষ্টির মধ্যে দূরে ধুয়ে যায়, তাই প্রতি গ্রীষ্মে নতুন চুনকাম প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে সাদা টাইলস ব্যবহার করা যায়।
৩। ক্রস ভেন্টিলেসন- সকাল ও সন্ধ্যায় সময় জানালা যতক্ষণ সম্ভব খোলা রাখুন, প্রায় ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮ টা এবং সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা। তবে জানালার উপর মস্কিউটো নেট লাগাতে ভুলবেন না।
৪। জানালায় গাছ লাগানোঃ যখন জানালা দিয়ে তাজা বাতাস আনার জন্য খোলা রাখা হয় তখন খুব ভালো হয় যদি জানালার বাইরে গাছ লাগানো থাকে। গাছ বাতাস থেকে তাপ শোষণ করবে এবং শুষ্ক বাতাস আদ্র করতে সাহায্য করবে।
৫। এছাড়াও আরও কিছু সহজ বিষয় আছে যেগুলো প্রয়োগ করে খুব সহজেই আমরা ঘরের ভেতরের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখতে পারি। যেমন গরম এর সময় আমরা ঘরের ভেতরের জন্য হাল্কা রং ব্যবহার করব। যেমন - বিছানার চাদর, সোফা, পর্দা ইত্যাদির ক্ষেত্রে হালকা রং ব্যাবহার ঘরের তাপ অনেকটাই সহনীয় করবে। জানালায় পর্দার সাথে যদি আমরা বেম্বো চিক ব্যবহার করি তাহলে আমাদের প্রাইভেসি বজায় রেখে বাতাশ চলাচলের বেবস্থা করতে পারি খুব সহজেই।
আশা করছি আসছে গরমে এই সহজ কিছু কাজ আপনার বাড়িকে করে তুলবে আরও আরামদায়ক
সুন্দর থাকুন এবং আপনার চারপাশ সুন্দর রাখুন।
ধন্যবাদ, https://www.facebook.com/azarchitect