ঈদের ছুটিতে শুক্রবার বলেই শাহবাগ থেকে মূহুর্তেই পৌছে যেতে পারলাম আহসান মন্জিলের কাছে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে।
ফিল্মবোদ্ধাদের সাথে কথা বলা, সবকিছু ঠিকঠাক করার অত ব্যস্ততার মাঝেও আন্তরিকভাবে আমাদের নিয়ে সব দেখালেন। লাল'ভাইয়ের ফিল্মটাই পুরোটা দেখা হলো।
অন্য একজনের বানানো "গঙ্গাপূজা" 'টা দেখতে ভালো লেগেছে। বাকি ছবিগুলো টুকটাক ভাবে দেখা হয়েছে, পাশাপাশি ভেন্যু দেখাতেই ব্যস্ত ছিলাম আমরা, বাফা'র সুক্ষ কারুকাজের কাঠের সিড়ি তাতে খুটির মূর্তি, কড়িকাঠের ছাদ.... দারুন। এক বিদেশীনিকে বাফা'র দালানটার কথা বোঝাচ্ছিলেন একজন তা থেকেই জানলাম পর্তুগিজ আমলের দালান এটা।
বাফা'র উঠানে বাচ্চাদের হাতে আকাঁ ছবি, পুতুল সাজানো দেখেছিলাম, বুঝিনি কি ওগুলো, পরে লাল'ভাই জানালেন সকালে পাপেট শো হয়েছে ওখানে, দেরি করে আসায় মিস করেছি আমরা ...
বাফা থেকে সামান্য পায়ে হাটা পথেই দলবেধেঁ সবাই গেলাম ঘাটে ষ্টিল ফটোগ্রাফী আয়োজন ছিলো ঘাটে। পাশ দিয়ে চলছিলো এক মোটরবাইক, যত না অদ্ভুত সেই মোটরবাইক ততোধিক অদ্ভুতদর্শনধারী তার আরোহী। উদ্ভট হেলমেট, গ্যাস মাস্ক, চা'য়ের ছাকনি সদৃশ্য চোখের চশমা!! অবাক হয়ে যাবার কিছু পরে বুঝলাম, ইনি প্রদর্শনীর একটা অংশ, এই শব্দ-বায়ূ-পানি দূষনের নগরীতে অদূর ভবিষ্যতে পথ চলার উপায়।
যদিও বিকট দুগন্ধে ভরা কিন্তু ঘাটটা বেশ সুন্দর। "বিনা স্মৃতি স্নানঘাট" নাম দেখে ভাবছিলাম, আহা, নাম রাখার মতোন কাউকে পায় নাই, নইলে সবার মতের মিল হয় নাই কোন নির্দিষ্ট নাম রাখতে! পরে শুনলাম ওটা হবে "বীনা" বানান ভুলে হয়ে গেছে "কিচ্ছু না ...বিনা"
মনে পড়লো কিছুদিন আগে দেখা রাস্তার এক ঘর ভাড়ার বিজ্ঞাপনবোর্ড - "যোগাযোগ করেন নিচে বেছেলার ভারা দেয়া হবে"
ছবি দেখার পাশাপাশি সবাই ঘাটে অপেক্ষা করছিলো বিশেষ এক নৌকার। কিছুপরে হাজির হলো পানির বোতল বেধেঁ বেধেঁ তৈরী করা সেই নৌকা, তিনজন তা বেয়ে আনলো নদীর ওপার থেকে, ঘাটে এসে তাতে আবার নীল রঙের পলিথিনের পাল তোলা হলো।
বিদগ্ধজনেরা কেউ ব্যস্ত সেই নৌকার শৈল্পিকতা জানায়, কেউ তাতে চড়ে ছবি তোলায়... আর আমরা শুরু করলাম শিল্পকলা আসলে কি তা অনুধাবনের আলোচনায়। যদিও সেই আলোচনা শেষ হইছিলো সাগরকলা আর নেপালি কলা কে ভালো চিনতে পারে তাতে!!
এমনিই নিজেদের মাঝে কথা হচ্ছিলো কাছে ধারেই না বিউটি বোর্ডিং সময় হলে দেখে আসা যায়। যেন মুখের কথা না পড়তেই লাল'ভাই এসে হাজির, তাড়া দিলেন গাড়িতে ওঠতে, সবাই বিউটি বোর্ডিং যাবে অন্য শো দেখতে!!
যাবার পথে রাস্তা না চেনা ড্রাইভার ঘুরে ঘুরে এগলি ওগলি করে আর গাড়ির একেক জনের একেক পথপ্রদর্শনের চেষ্টার মাঝে আমি "পুরান ঢাকায় নতুন" মজা করে আশপাশ দেখি ...
বিউটি বোর্ডিং -এর বদলে আমরা গেলাম লালকুঠি। জায়গাটা সবচেয়ে দারুন লেগেছে, অনেক সুন্দর। লাল-সাদা দালানটা কালোরঙের কাঠের কারুকাজ করা সদর দরজাটা, পুরো জায়গাটাতে জ্বলজ্বল করছে যেন। এখানকার অডিটোরিয়ামটা অনেক গুছানো। তবে বিচ্ছিরি লাগলো দেখতে লালকুঠি'টার দু'পাশ চেপে গড়ে ওঠা আধুনিক বিয়েবাড়ি আর পিছনের উঠান জুড়ে তাদের বিশাল রান্নাঘর!! লালকুঠি'র পেছনদিকের অডিটোরিয়ামের শো'টা ছিলো এক বিদেশীর। তাতে আগ্রহ হয়নি, কিন্তু ওটা দেখতে গিয়ে পেলাম এক সাজঘর। দর্শকদের জন্য সাজানো ছিলো সেটা ফুল দিয়ে, কলাকুশলীদের সাজ-পোষাক দিয়ে, যেন এক্ষুনি কেউ আসবে তার সাজ ঠিক করতে! তবে যেটা বেশি ভালো লাগলো তা ছিলো ওই সাজঘরে বাজতে থাকা একটা সুর, মন্দিরা-আজানের ডাক-উলুধ্বনি মেশানো এক সুর... দারুন। লালকুঠির দেয়াল তাতে মাঝে মাঝে খষে পড়া কারুকাজ দেখতে দেখতে অনেক সময় লাগাইলাম খেয়ালই নাই, কিছুপর দেখি সব ফাকাঁ দু'জন ছাড়া দলবলের কেউ নাই, ভয়ে দে দৌড় আমরা বিউটি বোর্ডিং এর দিকে....
বিউটি বোর্ডিং এর শো'টা দেখতে বসেছিলাম কিন্তু ছোট্টরুমের কারনে চোখ জ্বালা শুরু হওয়াতে আবার আমাদের পারিপাশ্বিক পরিভ্রমন শুরু .... বিউটি বোর্ডিং বলে কথা, ছোট ছোট কত কিছু আছে দেখার। এখানেও চলছিলো এক স্টিল ফটোগ্রাফীর শো, কাপড় কাগজ দিয়ে বানানো নদী-দূষনের উপস্হাপনা।
বিউটি বোর্ডিং এ মাছ আর পাখির সহাবস্হানের ব্যবস্হাটা ভাল লাগছে, ওটাকে কি এক্যুরিয়াম বলা যায়?
সব দেখার পর মজার খাবার খেয়েই বিউটি বোর্ডিং থেকে আহসান মন্জিলের শো'তে এসে দেখি যান্ত্রিকতার কারনে জানি কিছু সময়ের জন্য শো বন্ধ। তাতে কি আমরা রথ দেখা বাদ দিয়ে কলা বেচাঁতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, আহসান মন্জিলে ফটোসেশন করে।
সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে বাকি শো গুলো না দেখেই রওনা দিলাম বাড়ির দিকে। ধন্যবাদ লাল'ভাই সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা নেবার সুযোগ করে দেবার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:৩৪