প্রথম ভালোলাগা
বৃষ্টি ভেজা নায়িকা দেখে অহরহই নায়ক ধুপ করে প্রেমে পড়ে, সত্যিকার জীবনেও যে তেমনি খুবই সাধারন দর্শন ছেলেকে দেখে এমনটা হবে তা চিন্তাই আসেনি কলি'র। জ্বর ছিলো বলে মন ভার করে ওদের আড্ডার বারান্দায় বসে বসে ঝুমবৃষ্টিতে দলবলে বন্ধুদের ছোটাছুটি দেখছিলো আর সব্বার প্রয়োজনীয় জিনিষ আগলে বসেছিলো। কোথা থেকে চোখ ঝাপসা করা বৃষ্টির মাঝ দিয়ে অনু যখন এগিয়ে আসছিলো ওর দিকে, কি ঘোর যে চোখে লাগল আশপাশ সব সিনেমা স্টাইলে স্লো মোশনে চলতে লাগল। কাছে এসে হাত বাড়িয়ে কি কি সব বলছিলো ও পুরোটা মাথায়ই ঢুকেনি, অবাক হয়ে ভাবছিলো স্লো মোশনের ব্যাপারটা ঘটলো কি করে!! সেদিনের পর থেকে মনটা ধপাস করে আছাড় খেলো ওঠার আর নামই নাই।
মনের কথা আছে মনে, সেদিনের জ্বর কেটে গেছে কিন্তু সেই ঘোর আর কাটেনা। বন্ধুদের আড্ডায় লতায়পাতায় পরিচয় হয় অনেকের সাথে তবে বন্ধুত্বতা হবার মতো চেনাজানা হয়ে ওঠে কমজনের সঙ্গেই। কেউ যেন বুঝতে না পারে তাই ধীরস্হিরে খোজঁখবর করতে লাগল, কার মাধ্যমে ওদের আড্ডায় যোগ দিয়েছে, মানুষটা কেমন - ইত্যাদি।
বাড়ী থেকে আজ বের হয়েছে অনুকে মনের কথা জানাবে স্হির করে। কলি'র জন্মদিনের হই-হুলোড়ের আয়োজনে আজ আড্ডা সরগরম, কিন্তু অনু'র দেখাই নেই। অন্যদের সাথে নানান কথায় সবার ব্যাচ নিয়ে কথা উঠতেই জানলো অনু ওর কয়েক ব্যাচ ছোট!! বন্ধুদের জানানো জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিচ্ছিলো আনমনে, হতবাকের নাকি কষ্টের ঘোর কাটছিল না ওর, এরই মাঝে কখন অনু পাশে বসেছে টেরই পায়নি। ঘোরটা কাটল যখন ধাক্কা দিয়ে বলল - "কিহে খালাম্মা, কততম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবো তোমাকে?"
প্রেম
- "কিরে, তোর এখনও কারো গলা কাটতে পারলি না?? হবে না তোরে দিয়া কিচ্ছু হবে না"।
অনেকদিন পর সব বন্ধুদের গেটটুগেদার চলছে। প্রানের বন্ধুগুলো দৈনন্দিন ব্যস্ততায় দেখা সাক্ষাতের সুযোগই পায়না, কত জমানো সুখ, হাসি কান্না, এক ফুৎকারে সামনে আসছে। গ্রুপের প্রেম বিশারদ(!!) মুনিমের পুরানো অভিজ্ঞতার ঝুলি ঝাড়া শুরু করলো।
- "শোন কলি, তোরে কিবা যাদের এখনো কোন সম্পর্ক নাই, তাদের দিয়ে আর প্রেমভালোবাসা হবে না। তোরা হলি ডেট এ্যাক্সপায়ার্ড"।
সবাই তেড়ে এলো, - "ওই, আমরা কি মেডিসিন নাকি জুস, যে ডেট এ্যাক্সপায়ার্ড ?"
- "দোস্তরা রাগিস না। আমার কথার মানে হলো, ভার্সিটি লেভেলের সময় যে আগপাশ চিন্তা না করে কারো জন্য বেতাল হই আমরা, ওটা হলো সত্যিকার কিছু। ওই লেভেল পার করার পর এখন যেটা হবে, তা কিন্তু অনেক বিষয়আশয় বিবেচনা করে, ওটা কি অনেক কিছুর সঙ্গে
সমঝোতার সম্মেলন না? "
- " তোদের দিয়েও হবে না, কারন একটা এ্যাফেয়ার হবার জন্য দুই বেহায়ার প্রয়োজন। ভালোবেসেছি- এই কথাটা জানানোর জন্য নানান ভাব করতে লাগে, কে আগে বলবে বসে না থেকে নিজে সরাসরি বলতে হয়। এক বেহায়ার বেহায়াপনার ফ্রিকোয়েন্সির সাথে অন্য আরেকজনেরটা মিলে গেলেই একটা সফল এ্যাফেয়ার হয়। কি পারবি তোরা?"
মুচকে হাসি নিয়ে ভাবছিলো কলি, তার কিছুই যেন প্রচলিত ধ্যান-ধারনার সাথে চলে না। সারাজীবনে নাক উচাঁ বলে পরিচিত সে, মুনিমের থিউরীর উল্টো মতে হয়ে, ও আকাশ পাতাল ওল্টানো প্রেমে পড়ল কোন সমঝোতা কিবা বিষয়আশয় ভেবে না। "পৃথিবী"'র কথার মমতা যে কি মায়ার বাধঁনে কলিকে জড়িয়েছিলো। চালচুলোহীন, বয়সে মিলে না, স্ট্যাটাসে মিলে না - মানুষটার অন্যের প্রতি মমত্ববোধটা যে তিরতির অনুভূতি এনে দিয়েছিলো, তাতে কোন কিছু চিন্তা না করেই একদিন হুট করে বলে বসেছিলো ওকে। বেহায়াপনার চুড়ান্তই করেছিলো, কিন্তু নিতান্ত ভদ্রলোকের সামনে!
অত:পর ...
আজ কলির বিয়ে। বন্ধুমহলে বাজি ধরাধরি ছিলো, সবসময় বয়সে ছোট কারো না কারো সাথে জড়িয়ে পড়ে কলি, দেখা যাবে বিয়েও করবে ওমন কাউকে। বিয়ের কথাবার্তা যখন চলছিলো, এই ব্যাপারটা আগেই জেনে রেখেছে, নাহ, ছেলে ওর চেয়ে সাড়ে তিন বছরের বড়। তাই বাজিতে ওদের হার নিশ্চিত জানিয়ে বন্ধুদের সাথে অনেক হাসাহাসি।
বিয়েবাড়ির গেটধরাতে তুমুল হৈ চৈ-এর পর বরপক্ষ মাত্র আসতে পারলো স্টেজে। কাজী সাহেবের ভীষন তাড়া, এখানকার কাজ সমাধা করে তাকে আবার ছুটতে হবে অন্য কমিউনিটি সেন্টারে। বরপক্ষ একটু সুস্হির হয়ে বসতেই তিনি শুরু করলেন তোড়জোর। রেজিস্ট্রি খাতায় প্রয়োজনীয় তথ্যাদি লিখছেন, পাত্রেরটা পূরন করে মেয়েটা তথ্য লিখে কপাল কুচঁকে ফেললেন, তাড়াহুড়ায় কি ভুল লিখলেন? মেয়ের মামাকে জিজ্ঞাসা করলেন আবার। উনি বুঝিয়ে দিলেন বিষয়টা, মেয়ের বয়সে বড়ই পাত্র, তবে সার্টিফিকেট এজ অনুযায়ী ছ'মাসের ছোট!!!