somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আড়াল

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেফা জেনারেল স্টোর।
দোকানটা আমার বেশ পরিচিত।কিন্তু দোকানদার মামার সাথে খাতিরটা এখন অব্দি যুতসই পর্যায়ে নিয়ে ঠেকাতে পারিনি।
দোকানের একমাত্র কাঠের চেয়ারটাতে বসে তাকে আটার বস্তা খুলতে দেখা যাচ্ছে।তাই একটা পটেটো ক্র‍্যাকার্স খেতে খেতে মামার সাথে আলাপ জমানোর চিন্তাটা তৎক্ষণাৎ বাদ দিতে হলো।
দোকানের সামনে সিঁড়ির মতো একটা জায়গায় বসা একজন বয়স্ক লোকের দিকে অধমের চোখ পড়লো। আজকাল বাঙালী জাতির সহ্যশক্তির তারিফ করতে হয়।এই গরমেও গলায় মাফলার পেঁচিয়ে তিনি দিব্যি বসে আছেন।চোখে বেশ পুরনো ডিজাইনের মোটা কালো রঙের চশমা,ক্লিন শেভড।কাবু হাতে আলগোছে একটা প্যাকেট ঝুলছে।আপাদমস্তক দেখলে বেশভূষার কারনেই হয়তো লোকটাকে কিম্ভুতকিমাকার বললেও ভুল কিছু বলা হবে না।
ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো হয়তো কারো জন্যে অপেক্ষা করছেন।আগ বাড়িয়ে কিছু বলা ঠিক হবে কিনা ভাবছি ঠিক এমন সময় হঠাৎ তাঁকে উঠে দাঁড়াতে দেখলাম।তাঁর ইতস্তততা নিয়ে অতো ঘাঁটিয়েই বা আমার কি লাভ।
পাশের ইলেক্ট্রিক পোলে ঠেস দেয়া লাঠিটা নিয়ে হাঁটা আরম্ভ করলেন।এই দৃশ্যপটে আমি নতুন কিছু খুঁজতে গিয়ে আশাহতই হলাম বলা চলে।
যাহোক,আবারো পোল মহাশয়ের কাছে ফিরে আসি।নেই কাজ তো খই ভাজ এরকম একটা প্রবাদ প্রায়ই শোনা যায়।খই এর বদলে আমি ইলেকট্রিক পোলটার দিকে মনোযোগ দিলাম।
এখান থেকে গলির মুখ পর্যন্ত নাহয় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা যাক।আপেক্ষিকতার হিসেবে ধরলে সময়টা বেশিই মনে হবে।কাজেই নিজ স্বার্থেই যথেষ্ট ধীরে হাঁটছি।নচেৎ কাঁটাচামচ এর কাঁটার প্রস্থের সাথে হুবহু মিল খাওয়া এমন অলিগলি রাস্তায় নিজেকে কচ্ছপ বানানো খুনজাতীয় অপরাধের শামিল।
এভাবে কতক্ষণ পার করলাম ধারনা করার আগেই তিন চার হাত দূরে রেহান এর অবয়ব স্পষ্ট হতে লাগলো।পরনের শার্টটা নতুন নাকি।যদিও হাঁটার ধরন পরিচিত থাকায় ছেলেটাকে চিনতে বেগ পেতে হলো না।
'কিরে বাকিরা কই?' ইতিউতি তাকিয়ে রেহানের প্রশ্নের তীর স্বাভাবিকভাবেই আমার দিকেই আসলো।
'মন অলরেডি সাজেকে,খালি প্ল্যান না কি হ্যান ত্যানের জন্যেই ঢাকাই পইড়া আছি রে..’আমার কাঁধের ওপর অতল এর হাত পড়ল।
'আচ্ছা,শোন, টিকিট কনফার্মড।তোরা খালি...’ দীর্ঘ প্রতিক্ষীত ট্যুর নিয়ে মাথায় যা কিছু টুকে রাখা ছিলো তার সবকিছু আমি উগলে দিতে থাকলাম।
২.
'নারে,ছেলেটারে আজকাল মানাতে পারিনা। ভয় হয় জানিনা এভাবে কতোটা আগলে রাখতে পারবো....’রেহনুমা কথা শেষ করতে পারলেন না। লাইন কেটে গেলো।
টেলিফোনে কথা বলতে বলতে ঠিক পেছনেই ছেলের উপস্থিতি টেরই পাননি।
'কখন এলি?তা তোদের ট্যুর কদ্দূর কি হলো রে বাবা?"উৎসুক কন্ঠে ছেলের কাছে রেহনুমার জিজ্ঞাসা।
'পরশু রওনা দিচ্ছি, হোপ সো" রেহানের সোজাসাপ্টা উত্তর।
'কেনাকাটা কিছু লাগবে নাকি?'
'না,বাবা করে দিয়েছে।'তাচ্ছিল্যের সাথেই রেহনুমার প্রশ্নের উত্তর করল রেহনুমাপুত্র।
'রেহান!আমি যেটা চাইনা সেটা তুমি করতে যেয়ো না।ওই লোকটা,ওই লোকটা....’ক্ষনিকের মধ্যেই রেহনুমা প্রচণ্ড রাগে কথার খেই হারিয়ে ফেললেন।
'হি'জ মাই ফাদার,মা।আই কান্ট ডিনাই হিম....।'বলেই গটগট করে রেহান পিসির মনিটরে চোখ রাখলো।
যেন বিকল্প কোন সিদ্ধান্ত শোনার ইচ্ছা তার একেবারেই নেই।
৩.
বিকাল চারটা বেজে সতেরো মিনিট।সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড।
আমাদের কাউন্টার থেকে কয়েক গজ দূরে সিগারেট ফুঁকছি।আজ অবশ্য পরশুর সেই চিপাগলির বিচিত্র কিছুর সাক্ষী হতে আমার সাথে অতল আগেভাগেই এসে পৌঁছে গেছে।সাজেকের টান বলে কথা।
চারটে ত্রিশে সামনে যে বাসটা রয়েছে ওটার ইঞ্জিনের ঘন্টি বাজার কথা। ইতিমধ্যেই যযাত্রীদের কেউ কেউ পপকর্ণ, ঝালমুড়ি দিয়ে মুখের ঘন্টি বাজানো শুরু করে দিয়েছেন।সাধে কি আর বাঙালী জাতি ভোজনরসিক এর খাতায় নাম তুলেছে।
বাসা থেকে বের হবার সময়ে বিটিভির তিনটের সংবাদ এর নিরপেক্ষ দর্শক ছিলাম।না,নিউজ প্রেজেন্টার একজন সুন্দরী মেয়ে বলে নয়,মূল উদ্দেশ্য ছিলো হাতঘড়ির সময় কাটায় কাটায় মিলিয়ে নেয়া।কোন ভুলচুক হওয়া চলবে না।
আর তাই যদি হয়,তবে বলতে পারি,পরের ছয় মিনিটে রেহানের দেখা না মিললে ওর সিটটা খালি রেখেই স্টারলাইনের ইঞ্জিন স্টার্ট হবে।
'ওই দ্যাখ রেহান আসছে...'
অতল এর কনুই এর গুতো খেয়ে আমার রাজ্যের কুচিন্তায় সমাপ্তি টানতে বাধ্য হলাম।
মিনিট দুয়েকের মধ্যে অতল রেহান দুজনেই কাঁধ মিলিয়ে আগে চলতে শুরু করলো।
আমি এক হাত পেছনে থেকেই ওদের সঙ্গ দিচ্ছি।সামনে শেফা স্টোরে সেদিনের বুড়ো লোকটার পষ্ট অবয়ব অতল এর পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×