somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিণতি (গল্প)

১০ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিস থেকে সাধারণত বাসায় যাই। বাইরে ঘোরাঘুরির অভ্যাস একদম নেই। বাসায় যাব মনে করেই অফিস থেকে বের হলাম। কিন্তু বাদ সাধল একটা মোবাইল কল। এই কলটা অন্য যেকোন কল থেকে আলাদা।

রফিক সাহেব অনেকদিন থেকে অসুস্থ। অসুস্থতার প্রথম দিকে তাকে দেখতে যেতাম। কিছুদিন আগে অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় উনাকে উত্তরার একটা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। তার এখন অন্তিম সময় চলছে। অনেকটা সেই কারণেই, আমাকে অনেক করে যেতে বললেন ভাবী।

রফিক সাহেব আর আমি একই সাথে বিমানবন্দরের চাকুরীতে জয়েন করি। দুজনেরই তখন তরুণ বয়স। অনেক মজার মজার স্মৃতি আছে তার সাথে। মাসের আয় তত বেশি না হলেও ব্যাচেলর হওয়ার কারণে ভালই চলে যেত আমাদের। অনেকবারই রফিক সাহেবের গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছি। আপনি আপনি করে কথা হলেও আমাদের বন্ধুত্ব ছিল স্কুলের বন্ধুদের মতোই ঘনিষ্ঠ।

রফিক সাহেব বিয়ে করলেন, আমিও। দুইজনের বাসা খুবই কাছাকাছি। দুইজনেরই ছেলে সন্তান হয়েছে। ওরা পড়াশুনা করছে। ওদের জন্য প্রাইভেট টিউটর রাখতে হয়। কম বেতনের চাকরীতে পোষাতে পারছি না। তখনও রফিক সাহেব আমার কাছে আপন ছিল। দুই জনে অফিস শেষে রাস্তায় হাঁটতে যেতাম । বিভিন্ন ধরনের কথা বলতাম। কি করা যায়? এতো অল্প পয়সা দিয়ে তো আর চলা যায় না।

এরপর অনেকটা হঠাৎ করেই রফিক সাহেব বদলে গেলেন। তার সাথে আমার সেই সুন্দর সম্পর্কটাও পাল্টে গেল। আমার কাছের মানুষটি আমার থেকে দুরে সরে গেল। প্রিয় বন্ধুর সাথে আর দেখা হয় না। রফিক সাহেব এখন অনেক ব্যস্ত। চোরাচালানী দলের লোকদের সাথে বিভিন্ন কাজে সহায়তা করেন। এতে তার কিছু উপরি ইনকাম হয়। আর আমি আছি আমার আগের অবস্থাতেই। তিনি উত্তরায় বাড়ি কেনেন। ছেলেকে রাজউক কলেজ মোটা বেতনে ভর্তি করান। আর আমি টাকার অভাবে সরকারী কলেজে আমার ছেলেকে পাঠাই। দুই পরিবারের মধ্যে যাতায়াতটা কোনও অংশে কম ছিল না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ করে বিভিন্ন ঈদে তাদের বাসায় পুরো পরিবার নিয়ে যাওয়া হত।

আমার মিসেসকে দিয়ে রফিক সাহেব এর মিসেস কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই টাকা উৎস নিয়ে উনাদের মতামত কি? অবৈধ টাকা ইনকাম করা তো ঠিক না। তার মিসেস যে উত্তর দিলেন তা হল এই রকম - আমার হাজব্যান্ড বিভিন্ন কর্মচারীর রোষ্টারিং এর দায়িত্ব পালন করেন। এই রোষ্টারিং এ কেউ যদি খুশি হয়ে কিছু দেয়, সেই টাকা নেয়াটা দোষের কিছু না। আর আমার হাজব্যান্ড কারো কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছেন না।

আমার ছেলে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তি কোচিং করতে থাকে আর রফিক সাহেব এর ছেলে কোন কোচিং না করে টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। আমি দেখি কিছুই বলি না, বলতে পারি না। ওনাদের টাকা আছে তারা ছেলেকে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করাবেন। আর আমার এত কম টাকা পয়সা যে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি নাম নেওয়াও আমার জন্য অন্যায়।

বিভিন্ন সময় বিপদে আপদে তার থেকে ধার নিয়ে আমি চলতাম। মানুষটি আজ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত । তাকে দুই বার ইন্ডিয়া নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছূ হয়নি। তার কাছে যেয়ে তার গত দিনের ভুলের কথাগুলো স্মরণ করিয়ে দেব। আমি রিক্সায় করে যাচ্ছি আর ভাবছি মানুষটির কথা।

রফিক সাহেবের ছেলে শাহীনের সাথে যখনই দেখা হত তখনই দেখতাম সে মাথার এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করছে। অনেকটা জড়তা নিয়ে বলত, আংকেল স্লামালাইকুম। তার বড় চুল আর হাতের ব্রেসলেট দেখে বোঝাই যেত, কতটুকু পেকে গিয়েছে ছেলেটি। একবার দেখলাম তার হাতে অনেক বড় একটি মোবাইল। আমি জিজ্ঞাসা করাতেই বলল, আংকেল এটা আইফোন। আমার ফ্রেন্ড এর কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি। কি বলব নিজের ছেলেকে ভর্তি কোচিং এর জন্য ৮ হাজার টাকা দিতেই আমার খবর হয়ে গেছে সেখানে এই ছেলে ব্যবহার করছে অর্ধলক্ষ টাকা দামের মোবাইল!! নিজের ছেলে হলে কিছু বলা যেত, অন্যের ছেলে সহ্য করে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছুই করার নাই আমার।

উত্তরা মেডিক্যালে আমি রিক্সা থেকে নামলাম। কেবিন নাম্বার আগেই জেনে নিয়েছিলাম। চলে গেলাম সোজাসুজি তার কেবিনে। ভাবী আমাকে দেখে জায়গা খালি করে দিলেন। একটা চেয়ার টেনে বসলাম। রফিক সাহেব শুকিয়ে গিয়েছেন। বলা যায়, একবারে শুকনা কাঠ। তার রক্ত নিয়মিত পরিবর্তন করতে হচ্ছে। শাহীন তাই হাসপাতালের বাহিরে। বাবার জন্য রক্ত জোগাড় করছে। বিভিন্ন বিষয় এ তার সাথে কথা বলছি। কথায় কথায় জানতে পারলাম, তার ছেলের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় অ্যাডমিশন এর ব্যবস্থা করছেন। বিশদিনের মধ্যেই ছেলে চলে যাবে অস্ট্রেলিয়া। তার কাগজপত্র নিয়ে এত দিন টেনশানেই ছিলেন। আজকে সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এই তো বিশ দিন পর চলে যাবে ছেলেটি।

কথা বলার মাঝামাঝি ভাবীর মোবাইলে কল আসল। ভাবী বাইরে চলে গেলেন । আমি রফিক সাহেব এর হাতটা ধরে বসে রইলাম। কত আপন মানুষ আজকে বিদায় এক বারে দ্বারপ্রান্তে। ভাবী ওপাশ থেকে মোবাইলে কান্নায় ভেংগে পড়লেন। আমি দ্রুত বাইরে চলে গেলাম। মোবাইলটি কানে দিয়ে জানতে পারলাম। শাহীনের বয়সী একজনের লাশ রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছেন পুলিশ। তার পকেটে ডাইরী থেকে তারা এই নাম্বারটি পেয়েছে। আমরা কেউ থানায় যেয়ে যেন লাশটি শনাক্ত করি। সম্ভবত ছিনতাইকারীর হাত থেকে দামী মোবাইল বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে ছেলেটি।

দ্রুত থানার উদ্দেশ্যে যাচ্ছি। আবারও রিক্সা নিলাম। যাওয়ার সময় ভাবছি, পুলিশের করা ফোনটি যেন মিথ্যা হয় । আল্লাহ আমি যেন লাশ ঘরে যেয়ে শাহীনকে না দেখি। আমি দেখতে চাই শাহীন বেঁচে আছে। রিক্সায় বসে থাকা আমার দু’চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে অশ্রু। আমি বলছি আল্লাহ তুমি আমার সহায় হও..............

http://sonarbangladesh.com/article.php?ID=3762
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×