সিংহের লেজ ধরা – প্রবাদটির অর্থ , ব্যাখ্যা, উদাহরণ জানার জন্যে আফ্রিকা যাবার কোন প্রয়োজন নেই । চোখ কান খোলা থাকলে আর কপাল আমার মত খারাপ হলে ঘরে বসেও আপনি পেতে পারেন অসাধারণ, অভূতপূর্ব এই অভিজ্ঞতা ।
প্রথমে কিছু ভূমিকার প্রয়োজন আছে । তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ; যার দন্ডমূন্ডের অধিকারীরা শিক্ষা-দীক্ষা মননে মানসিকতায় সাধারনের চাইতে অনেক ‘এগিয়ে’; যারা বিনে পয়সায় সাবমেরিন কেবল কানেকশান পেলেও ফিরিয়ে দেয়; কিংবা দেশের অপার ব্যান্ডউইথ রপ্তানী করে দেশের সকল অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে চায়; আমি এমন একটি দেশের অধিবাসী ।
ভার্সিটিতে পড়ি । নেট দরকার । বাসার কাছেই স্মাইল-বিডিকমের অফিস । এই ঘটনার যখন জন্ম, তখন অবশ্যি স্মাইল আর বিডি-কম আলাদা ছিল । ভার্সিটি হলে সবার স্মাইল । লোকাল সার্ভারটা তখনো চালু হয় নি ; কিন্তু ওদের সার্ভিস অনেক ভাল; স্পিডও বেশ । অতএব স্মাইলই সই।
গেলুম । বাসার ঠিকানা নিয়ে বলল, বিকেলেই লোক গিয়ে দেখে আসবে, সম্ভব হলে কানেকশান দিয়ে যাবে । আনন্দে নীড়ে ফিরে গেলাম । বিকেল হল । ভদ্রলোকেরা এলেন না ।
পরের দিন এবং তারুপরের দিনও যখন এলেন না; একটু মনে করিয়ে দিতে আবার গেলুম । কপাল থেকে চোখ নামিয়ে আমাকে বিভিন্ন কারন দেখিয়ে ( এত দিন পরে আর মনে নেই )জানাল অবশ্যই কালকে আসবে ।
দুঃখজনক ভাবে সেই কালকে পরের তিনদিনেও হল না । এর মধ্যে আমার দোতালায় একভাইয়া , যিনি স্মাইলের গ্রাহক, উনি ত্যক্ত হয়ে লাইন কেটে দিয়েছেন । এখানে স্মাইল একমাত্র ব্রডব্যান্ড ISP হওয়াতে গ্রাহক সমস্যাতে তাদের আগ্রহ নেই ; সিড়িঘরে দাঁড়িয়ে তৎকালীণ ম্যানেজারের ও ম্যানেজারের পুর্বপুরুষদের নিয়ে কিছু মূল্যবান উক্তি করলেন ভাইয়া সেদিন । তবুও আরো সাতটি মূল্যবান দিন অপেক্ষা করে অবশেষে গ্রামীণফোনের আনলিমিটেড ( P2 ) নিয়েই ফেললাম ।
অদ্ভুত ব্যপার হল ; এখন পর্যন্ত আমিই মনে হয় একমাত্র গ্রামীন ইউজার যে (অন্তত ১১ মাস ) নিশ্চিন্তে নির্ভাবনাই , আনন্দের সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে । ডাউনলোড স্পিড পেতাম ২২-২৮ কেবিপিএস; কোন কোন সাইটে চল্লিশের ( ইয়াপ 40 ) উপরেও চলে যেত । তবে সব সুখ ভংগ হল গত্ নভেম্বরে ।
বলা নেই কওয়া নেই; একদিন নেটের স্পিড ৩-৪ কেবিপিএস (সর্বোচ্চ ) । ভাবলাম ‘সাময়িক গোলোযোগ’ ।কিন্তু সারারাত এমন থাকার পরে কল দিলাম সার্ভিস সেন্টারে ।
৫ মিনিট ওয়েটিং + ৫ মিনিট ‘প্রাথমিক’ চিকিৎসা + ১২ মিনিট ওয়েটিং + স্পেশিয়ালাইজড সেকশানে আরো ৫ মিনিট = সিঙ্গাপুরে লাইন সমস্যা দুই দিন অপেক্ষা করেন । ‘স্যরি স্যার , এটা আমাদের হাতে নেই’
দুই দিন পরেঃ ৫ মিনিট ওয়েটিং + ৫ মিনিট ‘প্রাথমিক’ চিকিৎসা + ১২ মিনিট ওয়েটিং + স্পেশিয়ালাইজড সেকশানে আরো ৫ মিনিট =" স্যার আপনার এমাসে ডাউনলোড ৫ গিগাবাইটের উপরে হয়ে গিয়েছে, ইনফ্যাক্ট আপনি ৭ গিবা ডাউনলোড করেছেন ; অতএব ফেয়ার ইউজ পলিসিতে আপনার ব্যান্ডউইথ সীমিত করা হয়েছে । "
আকাশ থেকে পড়লাম , কারন আমি গড়ে ৬-৭ গিবা ডাউনলোড করি ; কোন কোন মাসে ১০-১২ গিবাও হয়ে যায় ; অবশেষে গ্রামীনের পেইজ থেকে জানলাম , কথা সত্য । মাস শেষ হতে তখনো ১৪ দিন বাকি।
সেই মাস কোন মতে শেষ করলাম । পরের মাসেও অনেক ব্যস্ত , নতুন ISP খোঁজার সময় নেই । কিন্তু পরের মাসেও তথৈবচ । কি করি ! শেষে ঠিক করলাম । নিব বাংলা লায়ন ।
আইটি ফেয়ার এ এক সেলসম্যান ভদ্র লোকের সাথে দেখা হয়েছিল । উনি অনেক যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন কেন কিউবি থেকে বাংলা লায়ন ভাল । অন্যদিকে আমার বন্ধু কিউবি নিয়ে সন্তুষ্ট, তবে রাতের বেলায় নাকি আগের মত আর সার্ভিস পাওয়া যায় না । অন্যদিকে বাংলা লায়ন এর ইউজার আরেক বন্ধু সার্টিফাই করল লায়নকে । অতএব বাংলা লায়নই সই ।
মাঝে আবার স্মাইল-বিডিকমের দোকানে গেলুম । নতুন ম্যানেজার । ইনাকে বেশ মনে হল । আমার বাসার লোকেশান জেনে জানালেন আমার বাসা থেকে বক্স ১০০ মিটারের বেশি । ৬০ মিটারের বেশি হলেই সার্ভিস খারাপ হতে শুরু করে । এত দূরে উনি কানেকশান দিতে পারবেন না ।
অতএব ফোন দিলাম সেই বাংলা লায়নের ভদ্রলোক কে । ধরে নিচ্ছি তার নাম মুন্না । বাসার ঠিকানা নিয়ে উনি জানালেন অচিরেই আমার দুয়ারে পৌছে যাবে বাংলার সিংহ
মুন্না ভাইকে ফোন করেছিলাম ১৬ তারিখ, বিজয় দিবসের দিন । সেদিন ছিল বৃহঃষ্পতি বার । ফোন করে জানতে পারলাম বিশেষ ‘বিজয় অফার’ চলছে । সুতরাং বিশাল ছাড়ে ২৯০০ টাকার মডেম বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকাতে । আহা কি আনন্দ
শুক্র বার মুন্না ভাইয়ের ফোন । হুম । শনিবার তিনারা আসবেন ; তবে আমি যেই প্যাকেজের কথা বলেছি ( ২৫৬কেবিপিএস, আনলিমিটেড ), সেটা নাকি ছাড় দেওয়া মডেমের সাথে পাওয়া যাবে না । বল্লুম কোন সমস্যা নেই , ছাড় আছে সেই তো জানতাম না আগে । আপনি আগে দেখেন বাসাতে নেটওয়ার্ক পায় নাকি ।
শনিবার । দুঃখজনক ভাবে মুন্না ভাই বিট্রে করলেন । এদিকে রবিবার আমার জিপির মেয়াদ শেষ । তাকে ফোন দিয়ে বললাম রবিবার না আসলে আমাকে নেট ছাড়া থাকতে হবে । কেন জানি মাঝে মাঝে লোক-জন অনেক ব্যস্ত হয়ে যায় । আমার না আবার ব্যস্ত মানুষ ভারী অপছন্দ । তাই শেষ মেস ঠিক করলাম মুন্না ভাই আসার আগে আমি বাসার কাছের সেন্টার থেকে ট্রাই দিয়ে দেখি একটা ।
বাংলা লায়নের সেলস সেন্টারে গিয়ে তো জানলাম নতুন কথা । প্রথম মাসে লিমিটেড প্যাকেজ নিয়ে পরের মাসে ঠিকই প্যাকেজ বদলে আনলিমিটেড নেওয়া যাবে । বার বার করে জেনে নিলাম ফেয়ার ইউজ পলিসি আছে কি না, আসলেই প্যাকেজ শিফট করা যাবে কি না ।
মডেম নিয়ে বাসাতে ফিরে দেখি ড্রাইভার পাচ্ছে না । না – না কিছুতেই না । ওদিকে জিপি লিমিটেড হয়ে এমন অবস্থা নেট থেকে ড্রাইভার নামানোর জো নেই । কি করি ! আবার গেলুম সেন্টারে ।
গিয়ে তো চক্ষু চড়ক গাছ । বাংলা লায়নের আরেকজন কর্মকর্তা এসে হম্বি-তম্বি করছেন , কখনোই লিমিটেড প্যাকেজ আনলিমিটেড হবে না , হাবি জাবি । অতএব রিফান্ড করে দিলাম মডেম ।
বাসায় ফিরে আবার প্রতীক্ষা । মুন্না ভাই । রবিবারেও আসলেন না । সোমবার অবশেষে বাংলা লায়ন থেকে মুন্না ভাইয়ের প্রক্সি দিতে এলেন রফিকুল আলম ( এটাও ছদ্ম-নাম ) । বাসাতে এসে কানেকশন দিয়ে দেখলেন । নেটওয়ার্ক বেশ ভাল । CINR 20 । কিন্তু যাবার বেলাতে তিনি সেই ১৩০০ টাকার ছাড় দেওয়া মডেম এর সাথেই ২৫৬ কেবিপিএস আনলিমিটেড দিয়ে গেলেন ।
দুই ঘন্টা পরে চালু হবার কথা । কিন্তু তার আর নাম নেই । অতএব ফোন করতে যাচ্ছি , আর ফোনটা বেজে উঠল । রফিকুল ভাই ফোন করে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন তিনি এক ভুল করেছেন ; সেই ছাড় দেওয়া মডেমের সাথে কোন ভাবেই আনলিমিটেড দেওয়া যাবে না । বিকেলে এসে মডেম বদলে বাকি টাকা নিয়ে গেলেন ।
রাতে চালু হল মডেম । আহা কি স্পিড !! সবাইকে অনেক ভাব নিয়ে জানালাম , ঘরে এখন সিংহ আছে
ভাব দূর হতে সময় বেশি লাগল না । ফেসবুক বাংলা লায়ন গ্রুপ ( যেই গ্রুপ কিনা আবার ক্লোজড ) গিয়ে দেখি ইউজাররা শাপ-সপান্ত করে চলেছে । বাংলা লায়ন ফেয়ার ইউজ পলিসি দিয়েছে । ১০ কি ১২ গিবা ডাউনলোড করলেই হয়েছে । আর নে্ট ব্যবহার করা লাগবে না । এদের নাকি এক এক সময় এক এক রকম কাজ করে । কেউ কেউ বলছে নেট কখনো থাকেই না আবার থাকলেও ৬-৭ কেবি এর বেশি থাকে না । শুধু কি তাই ! ঘন্টা চারেক ডাউনলোড করলেই নাকি নেট স্পিড কমে যায় !
মেজাজ অতিমাত্রায় খারাপ হয়ে গেল । কত বার করে জিজ্ঞেস করলাম ফেয়ার ইউজ আছে কি না !! এমন না ১০-১২ গিবা কম । কিন্তু তাই বলে জানাবে না ! এতো পরিষ্কার চিটিংবাজী ।
এর পরে আরেক কাহিনী । রাতে হঠাৎ নেট নাই । ফোন দিলাম সার্ভিস সেন্টারে । এক এক বার এক এক কথা ; মডেম আনস্টল করে ইন্সটল করি , হাবিজাবি আরো কত কিছু ! এক বার দুই বার তিন বার কল করার পরে জানতে পারলাম তাদের নাকি সেন্টারে সমস্যা । সেই নেট আসল পরের দিন সকাল আটটায় । তবে এর মাঝেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি । সিংহ মামার এখানেই ইতি ।
সোজা চলে গেলাম এখানে ওদের হেড কোয়ার্টারে । সোজা ভাষাতে জানালাম আমি ২০ তারিখ কানেকশান পেয়েছি , কিন্তু ফেয়ার ইউজ পলিসি দেওয়া হয়েছে এর আগেই অথচ আমাকে আপনাদের সেলস ডিপার্টমেন্ট এ নিয়ে কোন তথ্য দেয় নি । শুধু তাই না , আপনাদের কাস্টোমার কেয়ারেও এ নিয়ে পরিষ্কার কোন তথ্য নেই । আই হ্যাভ হ্যাড এনাফ অফ বাংলা লায়ন । প্লিজ রিফান্ড ।
সিংহের লেজ ছেড়ে শেষ পর্যন্ত এখন আবার জিপি । ভাবছি বিটিসিএল নেট নিয়ে দেখব । আল্লাহই জানেন সে নিয়ে আর কি ভোগান্তি আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৯