somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নামের গল্প

০৮ ই মে, ২০১০ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্মের পরে শিশুদের নাম রাখার ক্ষেত্রে শিশু-মানবটির কোন ‘উল্লেখযোগ্য’ ভূমিকা থাকে না । অথচ এই নামের উপর মানুষের কত মোহ ! নামকে বড় করার জন্যে কত কিছুই না করে মানুষ – তা সে নাম বাবলু মিঞা হোক আর পঁচা হোসেনই হোক । মানব-জীবনের এত বড় একটা সিদ্ধান্তে কোন রকম ব্যক্তিগত অনুমতির তোয়াক্কা করা হয় না ; শুধু তাই না , জন্মের পরে নেওয়া সিদ্ধান্তটা বহন করা লাগে সারা জীবন , এমনকি মৃত্যুর পরেও এপিটাফে লেখা থাকে নাম ।

আমার জন্মের পরেও স্বাভাবিক ভাবে আত্মীয়-স্বজন এর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না । অথচ আমার এ নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা ছিল না তা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি ! তবে আমার দুশ্চিন্তা না থাকলেও অন্যদের যে থাকতে পারবে না এমন তো কথা নেই ।

বিড়ম্বনাঃ

কিছু মানুষ এর চেহারায় বোধ হয় নাম লেখা থাকে । রেদওয়ান নামে আমি যে কয় জনকের দেখছি , তাদের সবার স্বাস্থ্য ভাল – গোলগাল মুখ – সহজ সরল চেহারা ।


তখন স্কুলে পড়ি । আমাদের মাঠের গ্যালারীতে বসে আড্ডা দিয়ে বের হতেই দেখি এক পৌঢ় ভদ্রলোক দাড়িয়ে আছেন মাঠের বাইরে । তখন লক্ষ্য করি নি , কিন্তু এখন মনে পড়ল উনি বেশ কিছুক্ষন ধরেই এখানে দাঁড়িয়ে আছেন – হয়ত অপেক্ষা করছেন কারো জন্যে ।
হঠাৎ আমাকে থামিয়ে বললেন , ‘আচ্ছা বাবা, তুমি কি জিতু ?’

মাথা নাড়িয়ে ওনাকে জানালাম , আমার বাবা-মা এই নামটি বিবেচনা করেন নি । ভদ্রলোক কিছুটা হতাশ হলেন ।



এরপরের ঘটনা কলেজের । তখন আমি ঢাকাতে । বন্ধু রক্তিমের বাসার সামনে অপেক্ষা করছি । আমার পাশ দিয়ে বাজার ব্যাগ নিয়ে বিল্ডিং এ ঢুকে পড়লেন এক আংকেল । কি মনে হতে আবার বের হয়ে আসলেন । আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জানতে চাইলেন, ‘তুমি কি অর্পনার ভাই , জিতু ?’ …

কোথাকার কোন অর্পনা , অচেনা একটা মেয়েকে না দেখেই বোন বানাবার কোন ইচ্ছা আমার নেই । ভদ্রলোককে স্পষ্টকরে বললাম, জিতু নামের সাথে আমার কোন প্রকার সম্পর্ক নেই , থাকলেও তা নেহায়েত কাকতাল মাত্র –অনভিপ্রেত এই ঘটনার দায়িত্ব্ব আমি নিতে পারব না ।



টার্মের শেষ পরীক্ষা । চারিদিকে উৎসবের আমেজ । স্টারে খেতে গেলাম সবাই মিলে । দোতলায় এ সময় অনেক ভীড় , আমাদের এগার জোড়া চোখ খালি টেবিল খুঁজছে । এমন সময় একজন ওয়েটার এসে আমাকে জানাল , এক ভদ্রলোক আমার সাথে কথা বলতে চান ।

ভদ্রলোককে আমি চিনতে পারলাম না । কিছু দিন আগে আমার কাজিনের বিয়ে হয়েছে , ইনি নতুন কোন আত্মীয় কি না , সেটা মনে করার চেষ্টা করতে করতে ওনাদের টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়ালাম । এমনিতেই আমার মানুষের নাম – চেহারা মনে থাকে না – একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির জন্যে আমি প্রস্তুত ।

কিন্তু যে প্রশ্নটা আমাকে শুনতে হল সেটার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । ‘এই তুমি জিতু না ?’

আমি এ দফা আর অবাক হলাম না । বললাম , ‘স্যরি আংকেল, আমি জিতু না ।’ যেন জিতু না হওয়াটা আমার কোন বিশাল অপরাধ ! ভদ্রলোকের চোখে অবিশ্বাস নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন ।




বন্ধুরা অনেক হাসাহাসি করল । কর্নেল মাহবুব (আসলে বাবার নাম) এর মতে আমার জীবনে number 23 কাহিনী আছে । আরেকজনের মতে ছোট্ট বেলাতে হারিয়ে যাওয়ার আগে আমার নাম ছিল জিতু !

সে যাই হোক । এর পরে নাম পরিবর্তনের সময়ে জিতু নামটিকে বিশেষ ভাবে বিবেচনা করব । এভাবে মুরুব্বিদের ‘না’ বলে বলে আর কত অভিশাপ কুড়াব !



তবে আমার নাম রাখার ছোট্ট একটা গল্প আছে ।



জন্মের পরে আব্বুকে আম্মু জিজ্ঞেস করল, তা নাম কি রাখা হবে ? আব্বু কিন্তু আমার নাম জন্মের আগেই নাম ঠিক করে রেখেছেন , উওর দিতে দেরি হয় না , ‘ ইব্রাহীম ।’ কিন্তু একটু পুরোনো ধাঁচের এই নাম পছন্দ হল না আম্মুর । নানুভাই এর কাছে গিয়ে বললেন , ‘তা নাতির জন্যে একটা নাম দেন ।’

একটু ভেবে নানু বললেন , ‘ ইব্রাহীম । ’

নাম নিয়ে আর কোন কথা ওঠে নি । তবে এত ছোট নাম না রেখে নামের সাথে ইবনে মান্নান যোগ করে দেওয়া হল ।

একটু বড় হলাম । সারাদিন ভাবনা চিন্তা করা ছাড়া বিশেষ কাজ ছিল না । বই পড়তে ভাল বাসতাম । একদিন হঠাৎ বুঝতে পারলাম , আমার নামে একটা সমস্যা আছে ।

মান্নান হল আল্লাহর নাম । নামের অর্থ হয়ে যায় আল্লহর ছেলে ইব্রাহীম । হুম , চিন্তার বিষয় । ইমিডিয়েটলি পিতৃ-প্রদত্ত নামের লেজটুকু খসিয়ে ফেললাম । ক্লাস নাইনে রেজিস্ট্রেশনের সময় আমার নামটা বর্তমান রূপ পেল ।

বন্ধু সুমনের গল্প আরো ভয়াবহ । চাইলে এইখানে দেখতে পারেন ।



শেষ কথাঃ

নামে কি আসে যায় ! কর্মহীন মানুষের নাম - সে তো হারিয়ে যাবে মৃত্যুর সাথে সাথেই । নামের সৌন্দর্যের চাইতে কাজের মূল্য অনেক বেশি । এই উপলদ্ধিটা আসুক সবার মাঝে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১০ সকাল ৭:৩৪
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Dull Friday !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৭


ইদের ছুটি শেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে যায়। আমার ক্ষেত্রে বরবার উলটো ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছি ঈদের ছুটিতে এবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিটিংয়ের জন্য কেন এত তোড়জোড়?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১২



অর্থাৎ চীনের সহায়তায় লালমনিরহাটের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এয়ার বেইস চালুর চেষ্টা, তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীনকে নিয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও চীনে গিয়ে ডক্টর ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কিত বক্তব্য ভারতের ভালো লাগেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা এবং বাংলাদেশে এর প্রতিফলন

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:১৮



গত বছরের মতো এবছর আর কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা জানাননি। রোজার শুরুতেও “রামাদান করিম” শুভেচ্ছাবচনটি কেউ পাঠায়নি। আগে যখন ট্রুডো ঈদের ঠিক আগে আগে সরকারি দপ্তর থেকে কানাডার মুসলিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

ছবিসহ মিনি পোস্টারটি এআই দিয়ে তৈরিকৃত।

থেঁতলানো চোয়াল, ভেঙ্গে গেছে দাঁত, রক্তাক্ত অবয়ব—তবু ৪০ কিমি বাস চালিয়ে যাত্রীদের বাঁচালেন! এই সাহসী চালকই বাংলাদেশের নায়ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর পর যা হবে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪২



বেহেশত বেশ বোরিং হওয়ার কথা।
হাজার হাজার বছর পার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। দিনের পর দিন একই রুটিন। এরচেয়ে দোজক অন্য রকম। চ্যালেঞ্জ আছে। টেনশন আছে। ভয় আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×