somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিরোনামহীন এক মানুষের শিরোনামহীন কোন গল্প

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২৩ শে জুন , ১৯৭১





আমি চোখ মেললাম ।



মাথার কাছে , খুব কাছে সূর্যের মত জ্বলজ্বল করছে একটা বাল্ব । সাথেসাথে চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি । কে যেন স্পর্শ করল চোখ , হাতে সিগ্রেটের গন্ধ । আমার চোখের পাতা দু'আঙ্গুল দিয়ে টেনে খোলার চেষ্টা করা হল । তারপর চোখে ঢেলে দেয়া হল তরল কিছু ।


আমার মাথায় আগুন ধরে গেল নিমিষে । তরলটা সম্ভবত পানি , সাখে মরিচের গুঁড়া মেশানো ছিলো । আমি চোখ খোলা রাখতে পারছিনা , আবার বন্ধ করলেও সারা শরীরে ব্যথার একটা স্রোত বয়ে যাচ্ছে ।


চোয়ালে আঘাত করলো কেউ । লোনা স্বাদে ভরে গেল মুখ । পাশে ঝাপসা একটা আকৃতি , বোঝা গেল না কিছুতেই কে ? সজলের মত লাগলো .... সজল এখানে আসবে কোত্থেকে ?


আমি চিন্তা করতে করতে জ্ঞান হারালাম ।






২৫ জুন , ১৯৭১






সারা শরীরে অসহ্য ব্যথা । বুঝতে পারছিনা ব্যথার উৎসটা কোথায় .... মাথা ভারি লাগছে ..... বমি আসছে ভীষণ ।

কোথাও কেউ যেন ডাকছে আমাকে, আমার নাম ধরে । আমি উত্তর দেবার জন্য মুখ খুলতে চাইলাম .. রক্ত জমে শক্ত হয়ে আছে , কথা বের হল না ।

চোখ খুলতে ইচ্ছা করছে না .... অথচ ভীষণ বমি লাগছে । অনেক কষ্টে চোখ খুললাম .... সামনে ভয়ার্ত এক কিশোরের মুখ ....ঠোঁটের ওপর সদ্য গজানো গোঁফ ।

আমি কি ভুল দেখছি ? কি যেন বলে ... হ্যালুসিশন ..... ?

আমি সশব্দে বমি করলাম , একরাশ জমাট রক্ত পড়ে রইলো ছোট্ট ঘরের কোণায় ।


দুই ঘন্টা পর ।

এথন সুস্থ লাগছে অনেকটা । মাথা ভারি ভাবটা কাটেনি । আসগর অনেক কষ্টে বসিয়ে দিয়ে দেয়ালের সাথে । সেখানেই বসে আছি । একটু পানি খেযেছি খানিকক্ষণ আগে ।

বলা হয়নি , কিশোরের নাম আসগর । বাড়ি মুন্সিগঞ্জ । সে কিছুই জানে না তাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছে ওরা । চারদিন আগে , ওদের বাসায় হঠাৎ ঘেরাও করে আলবদর বাহিনী । তারপর তাকে তুলে আনা হয় , কেন ; সে জানে না । এখানেই আছে গত তিনদিন । এই রুমে ।

মাথাটা ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে আসছে ..... হঠাৎ বাসার কথা মনে পড়ল । কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে এল হার্টবীট , কেমন আছে মা ? জারিফ ? সানজিদা ?

চোখ ফেটে কান্না এল । লোনা পানি ক্ষতে আসতেই জ্বালা করে উঠল .... মুখের বামপাশটা খুব খারাপভাবে কেটেছে ।

" আমনে কানতেছেন বাইজান ? " এগিয়ে আসে আসগর । হাতের আস্তিন দিয়ে পানি মুছে দেয় আমার । " কাইন্দেন না বাইজান , আমিও অনেক কানসি , কিছু অয় না কানলে ; বুকের জোর কইম্যা যায় ।"

একটা গ্লাসে আর একটু পানি নেয় আসগর , " বাইজান , এট্টু পানি লন "





২৬ জুন , ১৯৭১




আমি বাসায় এসেছিলাম একরাতের জন্য । যেরাতে পাকিস্তানী আর্মি আমাকে ধরে নিয়ে আসে এখানে ।

আমরা পনের জন ছিলাম । বাঁশবাড়িতে মারা গেছে তিন জন ; গন্জে চা খাবার সময় এক রাজাকার দেখে ফেলায় মারা যায় শফিক । বাকি এগার জনকে বলা হয়েছে দুই দিনের মধ্যে চাঁদপুরের দিকে রওনা দিতে । আমি মিশু ভাইকে বললাম , আমি বাসায় যেতে চাই ।

মিশু ভাই চুপ থাকলেন কিছুক্ষণ । তারপর হাত বোলানেন সদ্যগজানো ফিনফিনে দাড়িতে ... , যাবি ? , জানিসই তো , ঝুঁকিটা .....

' আমার বাবা নাই , মিশুভাই । মা , ছোটভাই আর বোনটা কেমন আছে জানিনা । আমি শুধু একরাতের জন্য যাবো । মিশুভাই , সকাল হবার আগেই চলে আসব ।'

' আচ্ছা , যেতে চাস যখন যা ; কিন্তু সাবধানে থাকিস ।'

সেই ছিলো মিশুভাইয়ের সাথে শেষ কথা । তারপর বাসায় আসার পথে হঠাৎ চারজন সৈনিক ঘিরে ফেলে চারপাশ থেকে । রাইফেলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে পেছন থেকে । অন্ধকার হয়ে আসে সবকিছু ।

আমার জ্ঞান ফেরে একটা চেয়ারে হাত- পা বাঁধা অবস্থায় । সামনে একটা টেবিল । টেবিলে একজন সুদর্শন লোক বসে বসে সিগ্রেট টানছে ।

' হাউ ওয়াস দ্য স্লীপ , মি. জাহিদ ?' প্রশ্নটা করা হয় আরেকপাশে তাকিয়ে ।

আমি কিছু বলি না । মাথাটা টনটন করছিলো ।

' স্যরি টু বদার ইউ লাইক দিস , মি. জাহিদ । ' একরাশ ধোঁয়া ছাড়ে আকাশের দিকে লোকটা । 'য়্যাম মেজর সাহিদ '

' নাইস্ টু মিট ইউ,মেজর' - দাঁতে দাঁত চেপে জবাবটা দেই আমি ।

' ওয়েল , নাইস টু মিট ইউ টু ... লেটস্ কাম টু দ্য বিজনেস শার্প । ' সিগ্রেটটা আমার বাম গালে চেপে ধরে মেজর , ' হোয়্যার আর ইউর আদার ফ্রেন্ডস্ , মি.জাহিদ ? '

আমার মনে হতে থাকে কেউ লক্ষকোটি ছুরির তীক্ষ ফলা একসাথে আমার বামগালে ঢুকিয়ে দিচ্ছে .... তীব্র ব্যথায় আমার জ্ঞান হারাবার উপক্রম হয় আমার । আমি চিৎকার করে উঠি , ' আই ডোন্ট নো .. মেজর ... '

নিভে যা্ওয়া সিগ্রেটা মেঝেতে ফেলে দেয় মেজর । একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে । তারপর হাসতে থাকে নিঃশব্দে ... ' ইউ নো , দ্যাট এ্যানসার ওয়াজ সো এক্সপেক্টেড ' ...'ওয়েল , গলা খাঁকাড়ি দেয় মেজর ' আই নিউ ইউ গোনা অ্যানসার দ্যাট .. মি.জাহিদ .... বাট ফর গডস সেক , ইউ হ্যাভ নো ইমাজিনেশন , হাউ ফার ক্যান আই গো । আনলেস ইউ টেল আস , হোয়্যার ইউর ফ্রেন্ডস আর হাইডিং , এ্যান্ড হোয়াটস্ দেয়ার নেক্সট মুভ .... আই প্রমিস্ ইউ , এভরি সেকেন্ডস্ অফ হেল ।'

আমি রক্তমেশানো একরাশ থুথু ফেলি মেঝেতে ।

প্রচন্ড চড়ে আমি চেয়ারসহ মেঝেতে পড়ে যাই । চোখে অন্ধকার হয়ে আসে , তবুও আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে থাকি ।

এবার মৃদু হাসির শব্দ শুনি , 'থার্সটি ? মি.জাহিদ ?'

আমি বুনো পশুর মত তাকিয়ে থাকি মেজরের দিকে । মেজর হাত ইশারায় একজন সৈনিককে ডাকে , আমার দিকে ইশারা করে ।

প্রস্রাবের গন্ধে ভরে আসে আমার মুখ , লোনা তরল আগুন ধরিয়ে দেয় গালের ক্ষতে ।




২৭ জুন , ১৯৭১






আজ সকালে আমাকে খাবার দেয়া হয়েছে । দুইটা রুটি আর একগ্লাস পানি ।

আমি খেতে চাইনি , আসগর জোর করে খাইয়ে দিয়েছে । ওকে বাধা দেবার মত শক্তি অবশিষ্ট নেই দেহে ।

ঘরটা টিনের , বৃষ্টি পড়লে ঝমঝম শব্দ হয় । প্রতিটি বর্ষায় আমার মায়ের কথা খুব মনে পড়ে , মা'র হাতে খিচুরী খাওয়া , ছেলেবেলায় কলাগাছের নৌকা বানিয়ে নদীতে সারাবেলা , আর স্কুল বন্ধ - বর্ষা বরাবরই আমার অনেক প্রিয় একটা সময় ।

প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে ডোবায় রাইফেল নিয়ে বসে থাকার সময় এসব কথা মনে হত ভীষণ । মাঝে মাঝে কাঁদতাম লুকিয়ে লুকিয়ে । মিশু ভাই দেখলে কড়া ধমক লাগাবেন , ' সোলজার্স নেভার ক্রাই" ..... একদিন দেখি কাঁধে কারও হাত ... চোখের পানি মোচার সময় পাইনি , মিশু ভাই কষে চড় মারলেন গালে । দেখি , মিশু ভাইয়ের চোখে পানি ।

' নে , বিস্কুট খা ....' মিশু ভাই জমানো একটা নোনটা বিস্কুট তুলে দেন আমার হাতে ।

যুদ্ধের বড় একটা দিক , যুদ্ধের সময় একজন মানুষ আর একজন মানুষকে যতটা ভালোভাবে বুঝতে পারে , আর কখনোই পারে না সেটা । কাউকে কিছু বলেতে হয় না , সবাই , মজুর , ছাত্র , সরকারী চাকুরে - সবাই যেন সব খোলস ছেড়ে এক পরিচয়ে একাকার হয়ে যায় -- যোদ্ধা ।

তাকিয়ে দেখি , ফুলে ফুলে উঠছে মিশু ভাইয়ের প্রশ্বস্ত বুকটা ।





২৮ জুন ,১৯৭১





চোখ বেঁধে রাখা হয়েছে আমার । মুখের উপরে ঢালা হচ্ছে গরম নোংরা পানি ।

অনেক পুরনো এবং কার্যকরী একটা টর্চার । নাকে , মুখে পানি ঢুকে যায় ... নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এবং একসময় মানসিক দূর্গ ভেঙে পড়ে , স্বীকার করতে বাধ্য হয় বন্দী ।

' নো মোর ' - নির্দেশ আসে মেজরের ।

খুলে দেয়া হয় চোখের বাঁধন । আবার সেই চেয়ার , মুখোমুখি আমি আর মেজর।

' এনিথিং ইউ হ্যাভ টু সে .. মি.জাহিদ' সাপের মত হিসহিস করে উঠে মেজর ।

' আই হ্যাভ সেড অলরেডি , আই ডোন্ট নো হোয়্যার দে আর '

' মি.জাহিদ , লেট মি বি ভেরি ক্লিয়ার ।' চেয়ার কাছে টেনে বসে মেজর । ' আই ডোন্ট লাইক দিজ থিংস্ । আই রিয়েলি ওয়ানা বিহ্যাভ গুড উইথ ইউ । আই লাইক ইয়োর স্পিরিট , দ্য স্ট্রেংথ ইউ সোড ওয়াজ আউটস্ট্যান্ডিং । বাট মাই ফ্রেন্ড , দিস ইজ এ ওয়ার এ্যান্ড উই আর অন অপোজিট সাইড । ইউ হার্ডলি হ্যাভ এনি অপশনস লেফট । সো , টেল মি হোয়াট আই ওয়ান্ট , মি.জাহিদ '


'ফাক ইউ'





২৯ জুন ,১৯৭১






আজকে আসগরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সকালে । মেজরের কামরায় ছিল সে ঘন্টাখানেক । আমি রুমে থেকেও ওর চিৎকার শুনতে পেয়েছি । মেজরের নাকি অল্পবয়সী কিশোরদের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে ।

আমার সারাদেহে সিগারেটের পোড়ার দাগ , দগদগে ঘা হয়ে গেছে চোয়ালে , চোখ দুটো ফোলা , জিহবায় কোন সাড়া পাচ্ছি না । সিলিং এ ঝুলিয়ে রড দিয়ে পিঠে মারা হয়েছিল অনেকক্ষণ , থেঁতলানো মাংসের ভাঁজে ভাঁজে জমে আছে শক্ত হয়ে যাওয়া রক্ত ।

আজ সকাল থেকে একবারও প্রস্রাব হয়নি । আমি টের পাচ্ছি , হাতে বেশি সময় নেই আমার ।

নিয়ে এসেছে আসগরকে । ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদছে ছেলেটা ।

আমি জানি না , যুদ্ধ আমাদের পশু করে দেয় কিনা । আমি এটা্ও জানি না , মানুষের ভিতরে কোন পশু লুকিয়ে থাকে কিনা , যেটা যুদ্ধ হলেই বেরিয়ে আসে .... পশু? পশুরা কি এত নির্মম হয় ।

সায়েদাবাদে স্তন কেটে ধর্ষণ করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল একরাশ মেয়েদের । ট্রাকের ভেতরে পুরনো কাপড়ের মত ফেলে রাখা সেইসব লাশের সারি কবর দিতে গিয়ে নিজের ছোট বোনটার কথা খুব মনে পড়ছিলো আমার । সারি সারি নগ্ন লাশ , ছিন্নভিন্ন যৌণাঙ্গ , খুবলে তুলে নেয়া স্তন ..... চোখের জলে ঝাপসা হয়ে এসেছিলো সবকিছু ।


কিছু বলতে চাইলাম ছেলেটাকে , গলা দিয়ে কোন স্বর বের হচ্ছে না আর । শ্বাস আটকে আসছে । চোখের সামনে মা'র চেহারা দেখছি । তুমি কেমন আছো , মা ? জানো , তোমার আদরের ছেলেকে ওরা কি করেছে ?






৩০ জুন , ১৯৭১






বাইরে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে । আমার সামনে মেজর ছাড়াও আরো একজন লোক .... দাড়িওয়ালা , চেহারা দেখে বাঙালি মনে হয় । অবশ্য না হলেও কিছু যায় আসে না । আমি জানি , আমার পরিণতি কি .... আর আমার কোন প্রত্যাশা নেই ।

' জাহিদ , খানকির পুলা , মালাউনের ছাও ...... তোর কলিজা কত বড় তুই কথা কস না ?' চিৎকার করে উঠলো দাড়িওয়ালা লোকটা ।

আমি ক্লান্ত চোখ মেলে দেখলাম । কিছু বলার নেই ।

'স্যার , আপনি আমারে দেন আধাঘন্টার জন্য । আমি দেখতাসি শালা কতক্ষণ কথা না কইয়া থাকে ।'

মেজর শ্রাগ করে , ' দেখো .... বাট , টাফ গাই ..আই টেল য়ু '

দাড়িওয়ালা ঘুরে তাকায় আমার দিকে । পান্জাবীর পকেট থেকে সুপুরি কাটার ছোট , নিরীহদর্শন যন্ত্রটা বের করে ... টেবিলে সশব্দে রেখে দেয় যন্ত্রটা । পৈশাচিক একটা হাসি খেলা করে তার মুখে ।

' বল , নাহলে একটা একটা করে .... হে হে হে ....'

আমি বুঝতে পারলাম কি ঘটতে চলেছে । প্রচন্ড ভয়ে আমার হৃদপিন্ড থেমে গেল , চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করল আমার সহযোগিদের নাম , ঠিকানা ...... যা শুনতে চায় ওরা , সব ।

আমি আঙ্গুলকাটা অনেক লাশ পেয়েছি পাকিস্তানী ক্যাম্পগুলোয় , আমি জানি , হয়তো আমার কোন সহযোদ্ধা আমার লাশও একদিন খুঁজে পাবে এমনিভাবে ....... আমি এমন মৃত্যু চাইনা ।

চোখের সামনে একটা লাশ পড়ে আছে , স্তন কাটা ..... আমি সবিস্ময়ে দেখলাম আমার বোনের মুখ .....

'না'

প্রচন্ড ব্যথায় ডান হাতটা অবশ হয়ে আসল .....

মেঝেতে আমার ডানহাতের তর্জনিটা পড়ে গেল .... এই তর্জনি উচিয়ে কত তর্ক করেছি বন্ধুদের সাথে .... কত রাতজাগা সিগারেট , কত লেখা চিঠির একমাত্র সাক্ষী .....

'এখনও সময় আছে , বল ' ...

মিশু ভাইয়ের চেহারা চোখের সামনে চলে আসল .... নিজের সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীর , নিজের বৃদ্ধ বাবার লাশ দাফন করে যুদ্ধে এসেছেন ..... মনে পড়ল মইনুল , সাহিদুল , বিপ্লবের মুখ .......

আমি দাড়িওয়ালার চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট স্বরে বললাম .... 'না'






১ জুলাই ১৯৭১





আমার লেখার ক্ষমতা নেই , আমি বলছি , আসগর লিখছে ।



আমার এ লেখা যে পড়ছো । তোমাকে বলছি ....




আমি জানি , আমরা একদিন স্বাধীন হবো । নিশ্চয়ই হবে । এতগুলো মানুষের রক্ত বৃথা যাবে না কখনো । যদি যায় , তাহলে বুঝবো আল্লাহ বলে কোথাও কেউ নেই , ছিলো না কখনো ।

তোমরা যারা কখনো যুদ্ধ দেখোনি .... শুধু আমাদের মত মানুষদের কাছে গল্প শুনবে যুদ্ধের .....

আমি জানি , তোমরা কখনোই এটা বিশ্বাস করবে না , এমন কিছু কখনো ঘটেছিলো । তোমরা সেই আশ্চর্য সময়ের কথা ভেবে বিস্মিত হবে , কখনো শিউরে উঠবে ..... যেগুলো এখন সত্যি সেগুলো একসময় শুধুই গল্প হয়ে যাবে , এটাই নিয়ম ।


কিন্তু , আমরা যারা তোমাদের জন্য আজকে যুদ্ধ করে যাচ্ছি .... আমরা চাই তোমরা যেন গল্প ভেবে তাদের দূরে ঠেলে না দা্ও .... হয়তো আমরা একসময় থাকবোনা আর কেউ .... তবুও আমি চাই , তোমরা সারা বিশ্বকে আমাদের পক্ষ থেকে বলো , পৃথিবীতে স্বাধীনতার জন্য আর কোন জাতিকে এত রক্ত দিতে হয়নি ।

আমাকে কিছুক্ষণ পরে নিয়ে যাবে বধ্যভূমিতে , আমি গর্বিত , আমি নিজের কাছে হেরে যাইনি .... যে মাটির জন্য যুদ্ধ করেছি , সেই মাটিতে ঘুমুব , এই সৌভাগ্য সবার হয় না ।

ঠিক কেমন লাগবে আমার . যখন আমি মারা যাবো ? আমার কি মা'র কথা খুব বেশি মনে পড়বে । কলেজের যে মেয়েটিকে কখনো ভালোবাসি বলার সাহস হয়নি , তার কথা কি মনে পড়বে আমার ? শহীদুলের কথা মনে পড়বে , যার লাশ কাঁধে নিয়ে নদী পেরিয়ে কবর দিয়েছিলাম ?

আমি জানি না ।

দুজন সৈনিক এসে দাঁড়িয়েছে দরজায় ....


আমি জানি আমার হাতে আর সময় বেশি নেই । বন্ধু , তুমি ভালো থেকো , ভালো থেকো তোমরা .........
আমার অপূর্ণ ইচ্ছাগুলি পূরণের জন্য আমি তোমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবো । আকাশের ওপারের কোন আকাশ থেকে ।










উৎসর্গ : আমার বাবা , ডা: আব্দুল আজিজকে .... যার মুখে শোনা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি গল্প ।


সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ২:৪৮
১৮৩টি মন্তব্য ১৭১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×