একদিন, বিটিভির একটি বিজ্ঞাপন নাটিকা দেখেছিলাম। নাটিকাটি একজন তরুণ ইমামের গল্প বলছিল। বয়সে হয়তো ২১ বা ২২, তার দাড়ি, টুপি এবং পরিপূর্ণ ইসলামিক বেশভূষা। ইমাম সাহেবকে দেখা যায় ইন্টারনেট অফিসে। তিনি সেখানে ব্রডব্যান্ড লাইনের জন্য আবেদন করতে যান। পরে, ইন্টারনেট সংযোগ নেওয়ার পর, তিনি বিদেশী ক্লায়েন্টের সাথে অনলাইনে কথা বলেন। সেই মুহূর্তে, ইন্টারনেট অফিসের কর্মীরা বিস্মিত হয়ে জানতে পারে যে ইমাম সাহেব আসলে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার!
এই দৃশ্যটি আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। মসজিদের ইমামগণ আমাদের সমাজে সাহসী ও পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত। তাদের ধৈর্যশক্তি প্রশংসনীয়। তারা হতাশা সহজে গ্রাস করেন না। অথচ, আমরা অনেকেই সামান্য ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে পড়ি। আপনি কি কখনো শুনেছেন কোনো মাদ্রাসার ছাত্র প্রেমে ব্যর্থ হয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়েছে? কিংবা কোনো মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়েকে ইভ টিজিংয়ের শিকার হতে দেখেছেন? আমরা বাস্তবে এমন কিছু দেখি না, কিন্তু অনেকেই শোনা কথায় কান দিয়ে ভুল ধারণা তৈরি করে।
একদিন আমি হাঁটছিলাম, তখন সেই নাটিকার ইমামের কথা মনে পড়লো। আমার মনের ভেতর হঠাৎ একটি গল্পের জন্ম নিলো। গল্পটি এমন—একটি ছোট্ট মসজিদ, যা একটি বিস্তৃত কৃষি জমি পেরিয়ে, নদীর ধারে অবস্থিত। এই মসজিদের ইমাম একজন তরুণ। তিনি মাদ্রাসায় পড়াশোনার সময় কম্পিউটার সার্ভিসিং শিখে ফেলেন। ধীরে ধীরে, তিনি একজন দক্ষ প্রোগ্রামার হয়ে উঠেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে কাজ করেন এবং ফাইবারের মাধ্যমে নিয়মিত অর্ডার সম্পন্ন করে ডলার আয় করেন।
তার এমন প্রতিভা এবং দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও, তিনি ঢাকায় গিয়ে বড় চাকরি বা উন্নত জীবনযাপনের পথে যাননি। ইমামতি করেই তিনি শান্তিতে আছেন। অতিরিক্ত জটিল জীবনে পা রাখতে চান না। তিনি নিজেকে এবং তার সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন এবং সেবামূলক কাজ করতে আনন্দ পান। হতে পারে, ভবিষ্যতে তার নাতি বাংলাদেশের একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী হয়ে উঠবে। হয়তো ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, এবং অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্যের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা স্থাপন করবে।
এই গল্পটি আমাদের শেখায় যে, যে কোনো পেশার মানুষ তার বিশ্বাস ও ধর্মীয় জীবনের সঙ্গে প্রযুক্তি ও আধুনিকতার সমন্বয় করে সফল হতে পারে। সমাজে যারা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন, তারা একদিন আমাদের সামনে উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:৩২