somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হঠাৎ মৃত্যু; অতঃপর মৃতজীবন

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইত কিছুদিন আগে মারা গেলাম। কিছুদিন মানে কতদিন জানিনা। জানবইবা কিভাবে? বেঁচে থাকাকালীন সময়ের হিসাব আর বর্তমান সময়ের হিসাব এক না। আমার কিছুদিন হয়তবা ব্যস্ত পৃথিবীর কিছু ঘন্টা। আগে সময়ের সেকেন্ডের কাঁটাটা এগুতেই থাকতো; বিরামহীন। আর এখন সময় আস্তে আস্তে একটু এগোয়, তারপর নিশ্চল। নট নড়ন-চড়ন। তারপর এগোয় আবার। হয়তবা পেছায়। মাঝে মাঝে খুব দ্রুতও ছোটে। কিংবা হয়ত কিছুই হয় না। আগায় না, পিছায় না, থেমেও থাকে না। শুধু কম্পিত হয়; কম্পিত হয় আপন কক্ষপথে। কি যেন বলছিলাম। মৃত্যুর পর থেকে এই আরেক সমস্যা। কথাবার্তার ঠিক ঠিকানা নেই। কি বলতে চেয়েছিলাম স্মরন নেই। বেঁচে থাকতেও স্মরনশক্তি খুব একটা ভালো ছিল- এই দাবী করা যাবে না; এখনতো আরো নেই। কিভাবে মারা গেলাম তা বলা যেতে পারে।

কিভাবে মারা গেলাম তা আমার কাছেও খুব একটা পরিষ্কার না। রাতে সবার সাথে বসে ভাত খেলাম। ভালো মানুষ। রাতজাগা অনেকদিনের অভ্যাস। অনেকরাত পর্যন্ত জেগে থাকি। জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে এতোরাত জেগে কি করি (সরি; কি করতাম হবে)। কি করতাম না সেটা বলেন। দেশের অবস্থা নিয়ে চিন্তা থেকে শুরু করে পেন্সিল চোখা করা- সবই করতাম। এখন রাত জাগতে পারি না বলে ভীষন কষ্ট লাগে। সারাক্ষনই জেগে থাকি; রাত জাগার সময় কোথায়? কি জানি বলছিলাম? ।ওও.....রাত তিনটার দিকে ঘুমাতে গেলাম। একটা স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করা যায়। অনেকদিন কোন স্বপ্ন দেখি না। কোন স্বপ্নটা দেখব- ঠিক করতে করতেই ঘুম। সকালে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল একটু তাড়াতাড়িই। ঘুম থেকে উঠে দেখি মারা গেছি। আজব!! এরকম হঠাৎ করে মানুষ মরে নাকি?!

ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলাম। ঢুকেই মনে হল আরে আমিতো মরে গেছি, ফ্রেশ হব কেন? ব্রাশও করলাম না। মৃত ব্যক্তির মুখে গন্ধ থাকলেই কি; আর না থাকলেই কি। অনেক ফালতু কাজ করতে হবে না ভেবে খুশি খুশিও লাগছিল। যদিও এই খুশি ছাপিয়ে গিয়েছিল হঠাৎ মারা যাবার বিষন্নতা।

এতদিন জানতাম মরে যাবার পর দেয়াল ভেদ করে চলে যাওয়া যায়। আমিও দরজা ভেদ করে বেরোতে গেলাম। মাথা ঠুকে গেল। ভাগ্যিস মারা গিয়াছিলাম। নাহলে মাথায় ঠিকই একটা আলু গজিয়ে যেত। অতঃপর দরজা খুলেই বের হতে হল। মার কাছে গেলাম। বললাম, 'মা, মারা গিয়েছি আমি'। মা অবাক হল হয়ত। 'কিভাবে মরলি? কখন মরলি?' সদুত্তর দিতে পারিনি। জানলেই না জানাবো। আমিইতো ঠিকমতো জানিনা কিভাবে মরলাম। কবেইবা মরলাম। হয়ত কাল রাতেই মারা গেছি। হয়ত তুচ্ছ কোন কারনে মারা গেছি।
কোন কবি যেন বলেছিলেন-
"আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।"
ভেবেছিলাম মা ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠবে। কিন্তু মা শান্তই ছিল। তার চোখদুটি অবশ্য দুঃখী ছিল। বাসা থেকে বের হয়ে এলাম।

বাসে ভীষন ভীড়। পা রাখারও জায়গা নেই। মোট সংরক্ষিত সিট বারটা- মহিলাদের জন্য নয়টা আর মৃতদের জন্য তিনটা। তিনটা সিটেই মৃত প্যাসেঞ্জাররা বসে ছিল উদাস উদাস চোখ মেলে। তিনজনের মধ্যে একজনকে আমার পুরোপুরি মৃত মনে হল না।

ভার্সিটি গেলাম। কুইজ ছিল একটা। কম্পিউটার আর্কিটেকচার। কিছুই পড়িনি অবশ্য। জাস্ট দেয়ার জন্যই দেয়া। আর যদি কারোরটা দেখার সুযোগ মিলে তাহলেতো পাঙ্খা। ক্লাসের সবার মুখে একই কথা। 'কখন মারা গেলি?','কিভাবে মারা গেলি?' এক ফ্রেন্ড আফসোস করল। আমি মারা গেছি সেজন্য না। নিজে এখনও বেঁচে আছে বলে। বেঁচে থাকা মানেই- ক্লাস, ল্যাব,কুইজ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমিও চিন্তা করে দেখলাম কথা মিথ্যা না। মরে গেছি ভেবে নিজেকে কিছুটা হালকাও মনে হল। ক্লাসে স্যার আসলেন। খাতা দিচ্ছিলেন একজন একজন করে। আমি খাতা নেয়ার জন্য হাত বাড়ালাম। স্যার বললেন,'তুমি কবে মারা গেছ?'
সঠিক উত্তর জানা নেই। বললাম,'গতকাল রাতে।'
স্যার বললেন তাহলে আমার কুইজ দেয়ার দরকার নাই। বাসায় যেয়ে রেস্ট নিতে। আমি বেরিয়ে পড়লাম। আসার সময় দেখি আফসোস করা ফ্রেন্ডটার চেহারা কান্না কান্না হয়ে গেছে। বেচারা হয়ত কেঁদেই ফেলবে।

বিকেলে গেলাম ফারিয়ার সাথে দেখা করতে। ও রেগে ছিল।
'তোমার ফোনে রিং হয়। রিসিভ করো নাই কেন?'
'আমিতো মারা গেছি। রিসিভ করবো কিভাবে?'
'আজিব! মারা গেলে ফোন রিসিভ করা যায় না নাকি?'
আমি চুপ করে গেলাম। কথা বলা মানেই ফারিয়াকে আরো রাগানো। ও চোখ তুলে আমাকে ভালোভাবে দেখল।
'সত্যিই মারা গেছ তুমি? কবে?'
'কাল রাতে'
'তাহলেতো আমাদের ব্রেকআপ হয়ে গেছে। তাই না?'
'হু তাই'
ফারিয়াকে দুঃখী বা বিষ্মিত কিছুই মনে হয় হল না। যেন আমি মারা গেছি- এটা নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার। পাঁচ বছরের রিলেশনের ইতিও কোন আহামরি ব্যাপার না। আমি আবার মারা যেতে চাইলাম। রাত হয়েছে। বাসায় ফিরতে হবে।

রাস্তায় হাঁটছি। আমার মৃত্যতে কারো কোন দুঃখ নেই। দুঃখতো পরের কথা; বিষ্ময়ও নেই। বেঁচে থাকলে মনটা বেশ খারাপ হত। মৃত মানুষের মনই নেই; খারাপ হবে কি। এখন একটা সিগারেট টানতে পারলে মন্দ হত না। বুক ভরে নিতাম নষ্ট নিকোটিনে। একটা টঙের দিকে এগোলাম। সিগারেট কিনব।

দোকানদার সরুচোখে তাকিয়ে আছে। 'আপনে কি মারা গেছেন?'
'হু। কাল রাতে।'
'তাইলে আপনে সিগারেট দিয়া কি করবেন? মারা গেলেতো বিড়ি খাওয়া যায় না।'
'কিছু করব না। ফালাইয়া দিব'
'সিগারেট বেচুম না। মরা মাইনষের কাছে সিগারেট বেচি না।'

সারাদিন বেশ ভাব ধরে ছিলাম। ভাব ধরে ছিলাম- মরে গেছি তাতে কি। কিন্তু টঙের ব্যাপারটায় নতুনকরে উপলব্ধি হল- আমি মারা গেছি। আসলেই মারা গেছি। ভরা পূর্নিমার ফিনকি দিয়ে পড়া জ্যোৎস্না আমি দেখব; কিন্তু জ্যোৎস্নারা আমাকে ছুঁবে না। অকৃতজ্ঞের মতো আমাকে উপেক্ষা করে মাটিতে পড়বে। তারা ভুলে যাবে তাদের জন্য লেখা আমার কবিতার ঋন।

মৃতরা কাঁদে না; কাঁদতে পারে না। চোখ দিয়ে অশ্রু না গড়ালেও যে কেউ দেখলে বুঝত আমি কাঁদছি। একজন মৃত মানুষ কাঁদছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:১৭
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×