কি আর করা, কত প্লান ছিল, কোন কিছুই করতে পারলাম না। এর মধ্যে আবার ২২ তারিখে বুসানে একটা কনফারেন্স ছিল। ১৬ তারিখের ঘটনার পরে আমি আমার অধ্যাপক কে বলেছিলাম, আমি আর কোথাও যেতে পারবো না, তুমি পারলে অন্য কাউকে পাঠাও। অধ্যাপকের সাথে কিছু মান অভিমান পর্ব চলছিল... উনি আমাকে ডেকে বুঝালেন, তোমার নিজের পেপার অন্য কেউ গেলে হবে? তোমার নিজেকেই প্রেজেন্ট করতে হবে।
মন না চাইলেও অগত্যা যেতেই হলো... সাথে আমার সাথে এক জুনিয়র বাংলাদেশী ছেলে। আমার শহর থেকে বুসান বাসে যেতে ৩ ঘন্টা লাগে। প্লান হইলো এক রাত থাকবো সেখানে। পরের দিন হবে আমার প্রেজেন্টেশন। তো যেদিন দুপুরে বের হব, হটাৎ করে আমার এক কোরিয়ান ল্যাব মেট বললো, তোমাকে মিস করবো... আমরা আজ়কে রাতে ক্যারাবিয়ান পাইরেটস মুভি দেখতে যাবো ৪ডি!! ওরা তখন অনলাইনে মুভি টিকিট বুকিং দিচ্ছিল। টিকিটের খুবি ক্রাইসিস, কারন, আজকেই মুভিটা কোরিয়াতে মুক্তি পেয়েছে। তার উপর ওরা ৪ডি তে দেখবে, সিট খুবি কম টোটাল ৪০ টা সিট মাত্র। কি আর করা, আমিও ছাড়ার পাত্র নহে, আমার কোরিয়ান বন্ধু কে বললাম, বুসানে আমি যেখানে যাবো, ওর আশে পাশে দেখ IMAX 4DPlex মুভি থিয়েটার আছে কিনা। পাওয়া গেল, আমার মোটেল থেকে প্রায় ৭/৮ কিমি দূরে। আমি বললাম কোন ব্যাপার না, তুমি লাস্ট শো রাত ১১ টার টিকিট কাটো, আমরা রাত ৮ টার মধ্যে পৌছে যাবো বুসান। মাত্র ৫ টা সিট বাকী ছিল, তাই ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেলাম ২ টা।
IMAX 4DPlex সিনেমা হল:



৪ডি তে মুভিটা ছিল, সেইরাম... এখানে আর মুভির গল্প বলবো না। মুভি শেষ করে মোটেলে ফিরতে ফিরতে রাত ২ টার বেশি বেজে গেল, এইদিকে আমার সকাল ১০ টাই প্রেজেন্টেশন, বুঝেন অবস্থা। আসলে আমি ১৬ তারিখে প্রফেসরদের কাছ থেকে ঝাড়ি খেয়ে এখন কেয়ারলেস হয়ে গেছি... যাইহোক, রাতে ঠিক মত ঘুম হইলোনা, কারন স্বপ্নে বার বার মুভিতে দেখা মারমেইড দের দেখতেছিলাম...
পরেরদিন প্রেজেন্টেশন শেষ করে বুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক বাংলাদেশীর সাথে দেখা করার কথা। ও আমাদের নিয়ে বুসানের বিখ্যাত হিয়েনদে বিচ ঘোরাতে নিয়ে যাবে। যাইহোক ওকে ফোন করলাম, ও আসলে তারপর খেলাম দুপুরের খাবার একসাথে। তারপর বের হইলাম বিচের উদ্দেশ্যে... পাতাল রেল, লাইন নাম্বার ২ এর একেবারে শেষের আগের স্টেশন। প্রায় ৪০ মিনি ট্রেনের মধ্যে ঝিমুনি শেষে পৌছায়লাম। এবার আমি সত্যি অবাক হইলাম যখন গত রাতে মুভিতে এবং স্বপ্নে দেখা মারমেইড বুসান বিচে জলকেলী রত অবস্থায় স্টাচু হয়ে বসে আছে। স্বপ্ন কল্পনা এবং তারপর বাস্তব হোক সেইটা স্টাচু... অন্য্রকম এক ভাললাগা কাজ করতে লাগলো... প্রায় ৩ ঘন্টা এইদিক ওইদিক ঘোরাগুরি করতে লাগলাম আর আমার ছবি তোলার কার্য সমাধা করতে থাকলাম... এবার আর বেশি কথা না বলে আসেন আমরা কিছু ছবি দেখি। বুসান থেকে রাত ৮টার বাসে করে আবার আমার শহরে ফিরে আসি এক রাশ ক্লান্তি নিয়ে।
বুসানে আমাদের সস্তা মোটেলের রুমের অবস্থাঃ

বুসান বিচে বসে একটা মেয়ে একাকী টিভি দেখে, কি সুখ এদের!!

একজন আবার কুকুর নিয়ে বসে আছে!

বুসান বিচ





সেই মারমেইড! একাকী নীরবে বসে আছেঃ


প্রফেশনাল ছবি তোলা রত অবস্থায় ফাজিল বাংলাদেশী জুনিয়র ছেলেটা আমার এই ছবি তুলেছিলঃ

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:১৪