উপরের ছবিটা দেখে কি মনে হচ্ছে? ওয়্যারউলফ? ভৌতিক কোন প্রাণী? মানুষখেকো? নাকি অন্য কোন হিংস্র প্রাণী? যা ইচ্ছে মনে করতে পারেন, আমার কোন আপত্তি নেই। এ প্রাণীটির ব্যাপারে কল্পনার সব রঙ মিশিয়ে ফেলুন। কারণ, আপনার আগেও অনেকেই রঙ চড়িয়েছেন এই গল্পে। আজ আপনাদের শোনাবো রহস্যময় এক মানুষখেকোর কাহিনী। ওপরের ভয়াবহ ছবিটি আদতে মানুষখেকোটাকে আমি কিভাবে কল্পনা করি তার ছবি। কিন্তু আমি নিশ্চিত, গল্পটি শুনলে আপনারা সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন, আসল মানুষখেকোটি এর ভয়াবহতাকেও হার মানিয়েছে। আসুন, শোনা যাক সেই গল্পঃ
জেভুডু'র রহস্যময় মানুষখেকোঃ
জেভুডু, ফ্রান্স। ১৭৬৪ সালের জুনের এক পড়ন্ত বিকেল। গ্রীষ্ম সবে শুরু হয়েছে। ছোট্ট লিলিয়ানের খুব তাড়া, সুতরাং আশেপাশের জুনিপারের ঝোপের নীলচে ফল কিংবা পথের ধারে ফুটে থাকা নাম না জানা হলদে ফুলের দিকে ওর নজর নেই। বুড়ো বাপটা খনিতে কাজ করে। প্রায়ই দুপুরের খাবার নিতে ভুলে যায়। মা নেই লিলিয়ানের, জন্মের সময়েই মারা গেছে। সুতরাং, বুড়োর দিকে তাকেই সবসময় খেয়াল রাখতে হয়। কোনদিন দুপুরে বাবা খাবার না নিলে লিলিয়ান নিজেই চলে যায় খনিতে। বাবাকে খাইয়ে-দাইয়ে ফিরে আসে। আজকেও তাই হয়েছে। খনির ফোরম্যান লাঞ্চের সময় দেরী করে ঘোষনা করায় দুপুরের খাবারটা বিকেলের দিকেই খেতে হয়েছে শ্রমিকদের। লিলিয়ান ফিরছে। যে করেই হোক সন্ধ্যা নামার আগেই পোড়ো দূর্গটা পেরোতে চায় ও। কিন্তু আকাশের অবস্থা দেখে খুব একটা ভরসা পাচ্ছে না সে। একসময় লিলিয়ানের আশংকাই সত্যি হলো। ভেঙ্গে পড়া প্রাচীন দূর্গটার কাছে আসতেই জেঁকে ধরলো তুমুল বৃষ্টি। ইউরোপের ঝোড়ো বৃষ্টি সম্পর্কে যাদের ধারণা নেই তাদের বলছি গ্রীষ্মের বৃষ্টিও কিন্তু প্রচন্ড ঠান্ডা, আর সাথে হীমের মতন ঠান্ডা হাওয়া থাকলে তো কথাই নেই। একবার ভিজলে নিউমোনিয়া নিশ্চিত। বাধ্য হয়েই লিলিয়ান আশ্রয় নিলো শতবছরের ভেঙ্গে পড়া প্রাচীন দূর্গটার চত্বরে। কিন্তু লিলিয়ান জানতো না, হয়ত বৃষ্টিতে ভিজে নিউমোনিয়া বাঁধানোই ওর জন্যে মঙ্গলজনক ছিলো।
চত্বরের কাছটা শাণ বাঁধানো। নিরাপত্তারক্ষীদের উঁচু টাওয়ারটা ক্ষয় হতে হতে ইট বেরিয়ে পড়েছে। ন্যাড়া দাঁত বের করে যেন হাসছে। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো লিলিয়ানের। ভেবে চিন্তে টাওয়ারের নীচেই আশ্রয় নেবার কথা চিন্তা করলো সে। টাওয়ারের নীচটা অন্ধকার হলেও শুকনো। চটজলদি টুপী খুলে জল ঝরিয়ে নিলো লিলিয়ান, যতটুকু সম্ভব শুকনো থাকতে চায়। ভূতের ভয়ে কতই না এড়িয়ে গেছে এই দূর্গকে, আর ভাগ্যের ফেরে এখন এখানেই আশ্রয় নিতে হয়েছে তাকে। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। আকাশে যেন কালিগোলা অন্ধকার। ক্ষণে ক্ষণে কড়াৎ শব্দে বাজ পড়ছে। আকাশ চিরে দিচ্ছে নীলচে বিদ্যুতের শিখা। হঠাৎ করেই যেন কেমন যেন লাগতে শুরু করলো লিলিয়ানের। বমি পেতে লাগলো ভীষণ। টের পেলো তীব্র এক ধরণের ঝাঁঝালো দূর্গন্ধে ভরে গেছে জায়গাটা। বাইরে তাকিয়ে হঠাৎ আঁতকে উঠলো কিশোরী মেয়েটি। কিছু একটা দেখতে পেয়েছে সে। বিদ্যুতের আলোয় একঝলক নজরে পড়েছে। কি ভীষন কুৎসিত আর ভয়ংকর মুখ। ভয়ে গুটিসুটি হয়ে রইলো ও। হ্য়তো প্রাণীটি তাকে দেখতে পাবেনা এই আশায়। পরেরবার বিদ্যুচ্চমকের সাথে সাথে লিলিয়ান আবিষ্কার করলো ওটা দেখতে পেয়েছে তাকে। এবং দাঁত মুখ খিঁচিয়ে এগিয়ে আসছে। আতংকে ডুকরে কেঁদে উঠলো কিশোরী। দ্রুতপায়ে উঠতে লাগলো টাওয়ারের উপরে। ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসছে জানোয়ারটাও। ওর শ্বাসের শব্দ আর ক্রুদ্ধ গর্জন শুনতে পাচ্ছে লিলিয়ান। নিকষ কালো অন্ধকারে কেবলই ফোঁপানীর শব্দ আর রক্তহীম করা ভৌতিক হাসি। লিলিয়ান একেবারে পোঁছে গেলো টাওয়ারের চূড়ায়। আর জায়গা নেই। গুড়ি মেরে এগিয়ে আসছে কুৎসিত জীবটা। লকলকে জিভ বের করে যেন উপহাস করছে কিশোরীর অসহায়ত্বকে। এগিয়ে আসছে মানুষখেকোটা।
জীবন বাঁচাতে অনেক উঁচু টাওয়ার থেকেও লাফিয়ে পড়তে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনি কিশোরী লিলিয়ান। স্থানীয় ডাক্তারদের ভাষ্য অনুযায়ী তার মৃত্যু নিশ্চিত হবার আগেই তাকে খাওয়া শুরু করেছিলো মানুষখেকোটা। তার দেহাবশিষ্ট উদ্ধার করে সেই খনির শ্রমিকেরাই, যারা কাজ শেষে ঐ পথ দিয়েই ফিরছিলো। খুব দ্রুতই মানুষখেকোটার সংবাদ মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লো। ভয়ে সবাই দূর্গের আশেপাশেই ঘেঁষতে চাইতো না। জায়গাটা ধীরে ধীরে মৃত্যুপুরী হয়ে উঠলো। ১৭৬৪ থেকে ১৭৬৭ পর্যন্ত টানা চার বছর চললো মানুষখেকোটার দৌরাত্ন। এ সময়ে প্রায় ২১১জন তার শিকারে পরিনত হলো। এদের মধ্যে মাত্র ৯৮ জন মারাত্নক আহত হয়েও বাঁচতে পেরেছিলো। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী জানোয়ারটি নেকড়ের চাইতে অনেক বড় আকৃতির এবং খানিকটা লালচে রঙের। এর দাঁতগুলোও স্বাভাবিক নেকড়ের চাইতেও অনেক বড়। শরীরে অসহনীয় মাত্রার দূর্গন্ধের উপস্থিতির স্বীকার করেছে সবাই। আক্রমনগুলো এতটাই দ্রুতগতিতে করা হত যে কেউ বিন্দুমাত্র প্রস্তুতির সময়ই পেত না। অনেকেই কিছু বোঝার আগেই হ্য়ত মারা পড়তো। হয়ত জানোয়ারটার উপস্থিতির দুর্গন্ধটা টের পেতো একেবারে শেষমূহুর্তে যখন আর কিছুই করার থাকতো না। অনেকেই অবশ্য দুটো জানোয়ার দেখবার কথাও জানিয়েছে। সংখ্যায় যে কটিই হোক, কারো কারো ভাষ্য অনুযায়ী এটা ঈশ্বরের প্রেরিত অভিশাপ, আর কেউবা একে ওয়্যারউলফ বলতে পছন্দ করতো।
আধুনিক বিশেষজ্ঞদের গবেষণা প্রাপ্ত ফলাফল থেকেও জানা যায়নি প্রাণীটি আদতে কি ছিলো। এটা নিশ্চিত যে এর আকার কোনভাবেই সাধারণ ইউরোপিয়ান নেকড়ের সঙ্গে মানানসই নয়। বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই ধারণা এটা সম্ভবত বড় আকৃতির কোন হায়েনা। হয়ত কোন অভয়ারন্য (তৎকালীন সময়ের চিড়িয়াখানা) থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছিলো জেভুডু'তে। যদিও হায়েনাকে আমরা ভীতু এবং স্ক্যাভেঞ্জার (মৃত প্রাণীর মাংস ভক্ষণকারী) হিসেবেই চিনি তবুও হায়েনারা কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী শিকারী। আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেক জায়গাতেই হায়েনার মানুষখেকো হয়ে ওঠার কথা শোনা গেছে। সম্প্রতি মালাওয়িতে এক মানুষখেকো হায়েনার ভয়ে অন্তত শ'খানেক লোক গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে বলেও শোনা গেছে। জেভুডুর রহস্যময় মানুষখেকোর মতন হায়েনাও গায়ের তীব্র দূর্গন্ধ এবং বড়সড় দাঁতের জন্য সুপরিচিত। তাছাড়া আকারের দিক থেকেও এরা গড়পড়তার ইউরোপিয়ান নেকড়ের থেকে বড়।
যাইই হোক, আমাদের রহস্যময় মানুষখেকোটি কিন্তু অত্যন্ত চতুরতার সাথে সেনাবাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছিলো। জ্বী হ্যাঁ, ভুল পড়েন নি। মানুষখেকো দমনে শেষপর্যন্ত সেনাবাহিনীও তলব করতে হয়েছিলো। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অত্যন্ত ধূর্ত এই জানোয়ারটিকে শেষপর্যন্ত মঁসিয়ে জ্যঁ চ্যাসেল নামের এক ধর্মপ্রান শিকারী গুলি করে হত্যা করেন। অবসান হয় জেভুডু'র চার বছরের অভিশাপের। কথিত আছে চ্যাসল একটি সিলভার বুলেট ব্যবহার করে প্রাণীটিকে হত্যা করেন। সাধারনতঃ প্রেত বা ডাইনী হত্যার কাজেই সিলভার বুলেট ব্যবহার করা হ্ত। প্রাণীটির পেটে মানব দেহাবশেষ পাওয়া যাবার পর সবাই বিশ্বাস করেছিলো জেভুডু সত্যিকার অর্থেই শাপমুক্ত হয়েছে।
নিউজার্সির হাঙরঃ
স্টিভেন স্পিলবার্গের "জস" ছবিটার কথা মনে আছে? অতিকায় এক হাঙর যে ত্রস্ত করে রেখেছিলো নিউ ইংল্যান্ড উপকূল। ছবির গল্পকার পিটার বেঞ্চলী কিন্তু বাস্তব কাহিনীর ছায়া থেকেই লিখেছিলেন গল্পটি। শুনতে চান সে কাহিনী? আসুন, শুরু করা যাক।
জুলাই ১৪, ১৯১৬। রারিতান বে'তে জেলেদের জালে ধরা পড়লো অতিকায় এক মাদী গ্রেট হোয়াইট শার্ক। হাঙর ধরে পেট চিরে নাড়িভূড়ি বের করে প্রসেস করা হয়, আর সেটা করতে গিয়েই বাঁধলো বিপত্তি। হাঙরের পেটে পাওয়া গেলো "হিউম্যান রিমেইনস" বা গলে যাওয়া কিংবা আধ-হজম হওয়া মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। পিলপিল করে মানুষ এলো ভিড় জমিয়ে দেখতে। বেরিয়ে এলো লোমহর্ষক এক কাহিনী।
নিউজার্সি উপকূলে ছুটি কাটাতে এসেছে কিশোর চার্লস ভ্যানস্যান্ট। পরিবারের সবাই আছে সাথে। সদ্য সাঁতার শেখা চার্লসের বরাবরই সার্ফিং-এ দারুন আগ্রহ, কিন্তু বাবা গভীর পানিতে যেতে দিতে সাহস পান না। কিন্তু ছুটিতে এসে কিছুতেই তর সইছে না চার্লসের। অনেক আবদার আর বায়নাক্কার পরে মন গললো বাবার।
"ঠিক আছে, জলে নামতে পারো কিন্তু অগভীর জলে। আর সাথে অবশ্যই নিতে হবে ফ্রেডিকে (চার্লসের পোষা কুকুর)"।
দারুন খুশি চার্লস ফ্রেডিকে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো সমুদ্রে। কেউ জানলো না অল্প জলেই ঘোরাফেরা করছিলো সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। পরিবারের সবার সামনেই ঘটলো ঘটনা। চার্লসকে সজোরে কামড়ে ধরতেই তার পায়ের মাংস খুলে এলো। ছিঁড়ে গেলো ফিমোর্যাল আর্টারীগুলো। গলগল করে বইতে লাগলো রক্ত ধারা। কিশোরের চেঁচামেঁচিতে লাইফগার্ড ছুটে এলেও ব্যাপক রক্তপাতের ফলে হাসপাতালে নেবার আগেই মারা গেলো চার্লস।
এখানেই শেষ নয়। দিন পাঁচেকের মাথায় আরেক লোক, চার্লস ব্রুডারকে আক্রমণ করে বসলো সেই হাঙরটি। প্রত্যক্ষদর্শী একজন প্রথমে লালরঙা একটি নৌকা একা একা ভাসছে বলে জানালেও লাইফগার্ড সেখানে গিয়ে দেখতে পায় নৌকাটা সাদাই। চার্লস ব্রুডারের রক্তে আশেপাশের জায়গটাই লাল টকটকে হয়ে আছে। সাদা নৌকায় লাল রক্তে মাখামাখি। হতভাগ্য ব্রুডার নৌকায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছে। তার একটি পা যেন ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে সুনিপুন ভাবে কেটে ফেলা হয়েছে। চটজলদি তাকে তীরের কাছে টেনে আনা হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। লাইফগার্ডদের একজন জানান ব্রুডারের দেহ আক্রমনের তোড়ে এতটাই বিকৃত হয়ে গিয়েছিলো যে কোন মহিলা দেখলে নির্ঘাত মূর্ছা যেতো।
কিছুদিন আগ পর্যন্তও বৈজ্ঞানিকদের ধারণা ছিলো হাঙর একেবারেই নিরীহ গোছের মাছ। দু/একটি দূর্ঘটনা যাও বা ঘটেছে তা নিতান্তই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মানুষখেকো হবার সাথে সেটার কোন সম্পর্ক নেই। এখন পর্যন্ত অনেক মেরিন বায়োলজিস্টই সেটাই মনে করেন। ঠিক এই ভুলটিই করেছিলেন নিউজার্সির বৈজ্ঞানিকরা। তাদের যখন হাঙরের ব্যাপারটা বলা হলো, প্রথমটায় তারা হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাদের ধারণা ছিলো ব্যাপারটা কিলার হোয়েল অথবা সী টার্টলের কাজ। কিন্তু জুলাই এর ১২ তারিখে যখন সবার সামনেই ১১ বছর বয়সি একটা ছেলেকে হাঙর টেনে গভীর জলে নিয়ে গেলো তখন আর অবিশ্বাস করবার কোন কারণ থাকলো না। শহরবাসীর অনেকের সামনেই ঘটলো ঘটনাটা। ছেলেটার দেহাবশেষ উদ্ধারের আশায় স্ট্যানলি ফিশার নামের এক ডুবুরী যখন পানিতে নামলো, তাকেও আক্রমণ করে বসলো হাঙরটি। প্রচুর রক্তক্ষরণে মারা গেলো স্ট্যানলি। এ ঘটনার ত্রিশ মিনিটের মাথাতেই আবার আরেকজন ছেলেকে আক্রমণ করলো হিংস্র হাঙরটি। ঘটনা স্থল থেকে বেশ খানিকটা দুরে। এ যাত্রা ছেলেটিকে বাঁচালো সম্ভব হলেও বাকী জীবন চিরতরে পঙ্গু হয়ে থাকতে হয়েছিলো তাকে। তার ঠিক দুদিন বাদে যখন ধরা পড়লো হাঙরটি তখন একে একে বেরিয়ে এলো করুণ কাহিনী গুলো। ভীড় করে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের কেউই চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি।
মাইসোরের ভালুকঃ
আগের পর্বেই আমি কেসাগাকের ভালুকের কথা বলেছিলাম। ভালুক মানুষখেকো হলে যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, ঐ পর্ব না পড়লে বিশ্বাস করা কঠিন। পোস্ট খুব বড় হয়ে যাচ্ছে বিধায় খুব সংক্ষেপে মাইসোরের এক শ্লথ ভালুকের কাহিনী দিয়ে এবারের পোস্টের ইতি টানছি।
ভারতে ভালুক আক্রমনের ঘটনা খুবই বেশী। অনেক পরিসংখ্যান অনুযায়ী তো প্রতি হপ্তায় অন্তত একজন ভালুকের আক্রমনের শিকার হন। অবশ্য প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালুক তার শিকারকে মারে না। বলা ভালো, মারার উদ্দেশ্যই থাকেনা। যাও বা দু/একজন মারা পড়ে, ভালুক তাদের ছুঁয়েও দেখে না। আসলে শ্লথ ভালুক মাংস পছন্দই করে না। বাঁশপোকা, ফল কিংবা মধুতেই তাদের রুচি। কিন্তু মাইসোরের এই ভালুকটি কুখ্যাতি পেয়েছিলো মানুষের মাংসে তার দুর্বার রুচির জন্যে। অন্যান্য সব মানুষখেকোর মতন এ ভালুকটি নিয়েও বেশ কিছু গল্প চালু আছে। তার একটি হচ্ছে, ভালুকটি আদতে একটি অতিকায় পুরুষ ভালুক। গাঁয়ের একটি মেয়েকে সে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তার নিঃসঙ্গতা কাটাবার জন্যে সে একটি সঙ্গি খুঁজছিলো। কিন্তু গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা একযোগে ভালুকের ডেরায় হানা দিয়ে জীবিত উদ্ধার করে আনে মেয়েটিকে। পরবর্তীতে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে মানুষ মারা শুরু করে ভালুকটি।
সন্দেহ নেই, এসব গাঁজাখুরিতে খুব কম পাঠকই বিশ্বাস করবেন। বরঞ্চ, আমি তুলনামূলক বিশ্বাসযোগ্য আরেকটি ঘটনা তুলে ধরি।
অনেকের মতে ভালুকটি একটি মাদী ভালুক। ঘটনাচক্রে মানুষের হাতে তার বাচ্চাগুলো মারা পড়বার পর থেকেই প্রতিশোধের তাড়নায় পাগল হয়ে মানুষ মারা শুরু করে সে। অবশ্য বর্তমানে বেশীরভাগ বিশেষজ্ঞই মনে করেন, ভালুকটি কোনভাবে মানুষের হাতে আহত হয়ে "অ্যাবনরম্যালি অ্যাগ্রেসিভ" হয়ে ওঠে। এ ভালুকটি মাইসোরেই অন্তত তিন ডজন লোককে আক্রমণ করে। টিপিক্যাল শ্লথ ভালুকের মতন সে দাঁত আর ধারালো নখ ব্যবহার করে শিকারের মুখমন্ডল খুবলে ফেলতো। কখনো কখনো চোখ উপড়ে নিতো। অধিকাংশ সময়েই বেঁচে যাওয়া হতভাগ্য শিকারকে চেহারা দেখে আর কোনদিনই চেনা যেতো না। ভালুকটির আক্রমনে ১২ জন মারা গিয়েছিলো। চিরতরে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলো আরো ৩ জন।সবাই একরকম ধরেই নিয়েছিলো শেষ হবে না এ সন্ত্রাস। তাদের ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়েছিলো যখন বিখ্যাত শিকারী কেনেথ অ্যান্ডারসন পর্যন্ত তিন তিনবার ভালুকটিকে মারতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নাটকের শেষ অংকে অবশ্য তিনিই মারতে সমর্থ হয়েছিলেন মাইসোরের ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেওয়া কুখ্যাত এই জানোয়ারটাকে। বন্ধ হয়েছিলো দীর্ঘদিন ধরে চলা রক্তের হোলীখেলা।
(পাঠক প্রতিক্রিয়ার ওপর পরবর্তী পর্ব নির্ভরশীল)
তথ্যসূত্রঃ লিস্টভার্স এবং উইকি
যারা আগের পর্ব পড়েন নি তাদের জন্য লিংকঃ
দুনিয়া কাঁপানো কয়েক'টি মানুষখেকোর কাহিনী (১ম পর্ব)
উৎসর্গঃ এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল স্বর্ণা
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩২