[মুখবন্ধ: এটি মূলত: একটি পুন:প্রকাশিত পোস্ট। গতকাল অফিস থেকে বেরোবার ঠিক আগমুহূর্তে পোস্ট করে দেখি ছবি আপলোড হয়নি। ভেবেছিলাম বাসায় গিয়ে ঠিক করবো। কিন্তু ঠিক করতে গিয়েই বাঁধলো বিপত্তি। আমার মূল পোস্টটি কিভাবে যেন মুছে গেলো। আর সঙ্গে গেলো সবেধন নীলমনি গুটিকতক মন্তব্য। দু:খ ভারাক্রান্ত মনে আমি আবারো পোস্ট দিচ্ছি, তবে একটু পরিমার্জিত আকারে]
ব্লগে আমার লেখা বড় একটা পড়েনা কেউ। এমনিতে আমার লেখার মান “প্রকাশ করিবামাত্র হুমড়ি খাইয়া পড়িব” টাইপের কিছু নয় কিন্তু বংশগত ভাবেই আমার আত্নশ্লাঘাবোধ আমাকে এ জাতীয় ব্যাপারে বিচলিত হতে বাধা দেয়। তবে এখন বিচলিত না হয়েও অবশ্য উপায় নেই। ব্লগে আমার আসার উদ্দেশ্যই সচেতনতা সৃষ্টি করা। আমার লেখাই যদি কেউ না পড়লো তবে সচেতনতা বাড়বে কিভাবে? আমার এক হিতাকাঙ্ক্ষী আমার লেখা পড়ে দিব্যি একটা শব্দ বলে ফেললেন, “আঁতেল”।
আমি আঁতকে উঠি। বরাবরই কথা বেশী বলা আমার অভ্যাস। আমার মেয়েবন্ধুরা, ছোটবোন এবং তার বান্ধবীদের সবারই প্রায় একই ধারনা। প্রথমবার পোস্ট করবার সঙ্গে সঙ্গেই জনৈক ব্লগারেরও একই মন্তব্য। এতগুলো লোকের ধারনা মিথ্যে হবার কথা না। বিশেষতঃ যখন স্বল্পবচনা(?!)নারীকূল যখন অভিযোগ তোলেন তা কর্ণপূটে না তুলে উপায় থাকে না। তবে আঁতেল উপাধি কিন্তু এই প্রথম। যাই হোক, হিতাকাঙ্ক্ষী উপদেশ দিলেন, প্রথমে পাঠক আকৃষ্ট করবার মতন কোন বিষয় নিয়ে লিখুন। আপনার ব্লগে লোকজনের আনা-গোনা বেড়ে গেলে তারপরেই সচেতনতা বাড়াবার বিষয় নিয়ে লিখবেন। একশ ভাগ খাঁটি কথা। কিন্তু পাঠক কিসে আকৃষ্ট হবেন সেটা তো বুঝতে হবে। আমার কলমের জোর কম, পাঠক নিজগুনে সেটা হয়ত ক্ষমা করবেন কিন্তু বিষয়টাই যদি পছন্দের না হয় তাহলে? আমার কাছে কিছু বিষয় একদমই আকর্ষণ করে না, যেগুলো পাঠকেরা গোগ্রাসে গেলেন। যেমন ধরুন, রাজনীতি অথবা অর্থনীতির সমসাময়িক বিষয়গুলো, ধর্মকে পুঁজি করে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে লেখা কিংবা ধর্মকে আঘাত করে কোন লেখা (ধর্ম খুবই সংবেদনশীল বিষয়), টেকনিক্যাল কোন লেখা ইত্যাদি। এখানকার ব্লগারদের রুচিবোধ খুবই উন্নত কিন্তু আমি এই বিষয়গুলো ঠিক উপভোগ করি না। মহা সমস্যা। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী উপদেশ দিলেন, “আপনি তো ম্যালা জায়গায় বেড়িয়েছেন। দু-এক কলম লিখে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়”। কি করে বোঝাই যে ভ্রমন-কাহিনী লেখা মুখের কথা না। তুরস্কে একবার পানি কিনতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম, ওখানে লিরা চলে। আমার কাছে ছিল ইউরো। পানি কম খেলে আমার আবার কোমরে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। আমার ফ্লাইট অনেকক্ষণ লেট ছিলো। কাউকে পারছিলাম না কিছু বলতে। আমার লজ্জাবোধ খানিকটা বেশীই। পরে হঠাৎ এক তুর্কী ভদ্রলোক আমাকে এক বোতল ঠান্ডা পানি কিনে দিলেন। এটা নিয়ে লেখার পরে দেখি সেটা বরং অসহায় এক পানিপ্রার্থী লোকের কাহিনী হয়ে গেছে। আবার, প্রথমবার যখন ইস্তাম্বুল যাই, বিমানে এক মেয়ের সাথে দেখা হয়েছিলো। গল্পে গল্পে সময় পার করে দিয়েছিলাম। পরে সেটা নিয়ে লিখতে গিয়ে দেখলাম সেটা চটকদার রোমান্টিক গল্প হয়ে গেছে। আমার দ্বারা ভ্রমন কাহিনী যে লেখা হবে না সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম। আসলে ট্রাভেলার আর ট্যুরিস্টের মধ্যে খানিকটা তফাৎ আছে। আমরা অনেকেই বুঝি না। যাই হোক, গল্পে গল্পে বলে ফেললেও আমি কতশত জায়গায় বেড়িয়েছি সেটা বলবার উদ্দেশ্যে লেখা শুরু করিনি। আমার উদ্দেশ্য খুবই সাধারন। আমাদের দেশটা তো খুবই সুন্দর, তারপরেও কেন আমরা নোংরা থাকি? সচেতনতা বাড়ানোর জন্যেই আমার লেখা। এই লেখা পড়ে ভালো লাগলে আমার অন্য লেখাও পড়ে দেখবার অনুরোধ রইলো। বুঝতে পারছি আবার বিরক্তিকর বিষয়গুলোর দিকে পাঠককে ঠেলে দিচ্ছি। ঠিক আছে, আসুন দেখি নতুন কিছু চেষ্টা করি।
এয়ারক্র্যাফটের ব্যাপারে অনেকেরই দেখি আগ্রহ আছে। কোন একটা বিজ্ঞাপনে একবার দেখেছিলাম “প্রায় প্রতিটি শিশুই পাইলট হবার স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়”। আমাদের সবারই বোধহয় আকাশ ছোঁবার স্বপ্ন থাকে। হ্যাঁ, কালের বিবর্তনে হয়তো সেটার রঙ ফিকে হতে শুরু করে। তবু বিমানের ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ কারো চাইতেই কোন অংশে কম নয়। আচ্ছা, একটা মজার প্রশ্ন করা যাক। পৃথিবীর সবচাইতে বড় বিমান কোনটি? জানি সব্বাই এয়ারবাস এ-৩৮০র কথাই বলবেন। অবশ্য বলারই কথা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সবচেয়ে বড় বিমানের নাম হলো আন্তোনভ ম্রিয়া এ.এন-২২৫। রাশান এই এয়ারক্র্যাফটটি তৈরী হয় ১৯৮৮ সালে ইউক্রেনের আন্তোনভ ডিজাইন ব্যুরো-তে।
মূলতঃ সোভিয়েত স্পেস প্রোগ্রামের আওতাভূক্ত স্পেস শাটল “বুরান”-এয়ারলিফটিং-এর জন্যেই ম্রিয়ার জন্ম। প্রথমে দুটো বানাবার অর্ডার থাকলেও শেষপর্যন্ত একটি ম্রিয়ারই জন্ম হয়। প্রথমটি তৈরী হবার কিছু পরেই ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায়, ফলশ্রুতিতে বন্ধ হয়ে যায় বুরান স্পেস প্রোগ্রাম। আর পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান হিসেবে ঢুকে যায় ম্রিয়ার নাম। এবার আসুন এক নজরে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক ম্রিয়ার আকার-আকৃতিতে।
২০০১ সালে একটু পরিবর্ধন করবার পর ম্রিয়ার ওজন বইবার ক্ষমতা এখন ১৪ লাখ পাউন্ডেরও বেশী।
লম্বায় প্রায় ২৭৬ ফুট আর উইংস্প্যান (ডানা ছড়ালে যে বিস্তৃতি) ২৯০ফুট।
উচ্চতা ৬০ ফুট।
ফুয়েল ক্যাপাসিটি ৩ লাখ লিটার।
সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৫০ কি.মি./ঘন্টা।
ল্যান্ডিং গিয়ার ৩২টি চাকার ওপরে অবস্থিত। মাল ওঠাবার কিংবা নামাবার সময় ম্রিয়াকে খানিকটা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখা যায়। মাল ওঠাতে বা নামাতে সুবিধা হয়।
ভেবে দেখুন সেপ্টেম্বর ২০০১ এ চার/চারটে রাশান ট্যাঙ্ক উঠিয়ে ২ কিলোমিটার ওপর দিয়ে ৭৫০ কি.মি. গতিতে ছুটে গিয়েছিলো ম্রিয়া। রেকর্ড পরিমান ওয়েট নিয়েছিলো সেবার। অবশ্য ম্রিয়ার এমন কীর্তি খুঁজলে বহু পাওয়া যাবে। প্রথম দিকে সামরিক কাজের জন্য ব্যবহার করলেও ম্রিয়ার এখনকার কাজ ওর নামের মাহাত্নের পরিচয় বহন করে। শুনেছি ম্রিয়ার এখনকার কাজ হলো জরুরী ত্রান এবং ঔষধ পরিবহন করা। "ম্রিয়া" মানে জানেন তো? "স্বপ্ন"
পাঠকদের জন্য রহস্য: পৃথিবীর সবচাইতে বড় বিমান কোনটি সে ক্লাস তো শেষ। এবার বলুন দেখি নিচের ছবিটা কিসের? এবার বোঝা যাবে কার ঘটে কত বুদ্ধি ধরে।