মেয়েদের ব্লগে হিট বেশি পড়ে। খুব সত্যি কথা। ব্লগে প্রচুর লুল। এটাও খুব সত্যি কথা। যেনতেন ব্লগ লিখে একজন মেয়ে ব্লগার অনেক কমেন্ট পায়- ছেলেরা পায় না- এইটাও সত্যি কথা।
আমি আমার ব্লগজীবনে মাত্র চারটা মাইনাস দিয়েছি। এরমধ্যে প্রথমটা পেয়েছে একটা মেয়ে। তখন আমি ব্লগে একেবারেই নতুন। একটা মেয়ের ব্লগ ছিল- নাম মনে নেই- বাংলা সিনেমা নিয়ে হাল্কা ধরনের রম্য। মোটেও ফানপোষ্ট বলা যাবে না। কিন্তু সেখানে প্রচুর ব্লগার হাবিজাবি নানা কমেন্ট করছিল। আমার নিজের তখন একটা ব্লগ ফার্স্ট পেজে ছিল। তেমন একটা হিট ছিল না। আমার ব্লগটা (আমার মতে) তারটার চেয়ে ভালো ছিল। কিন্তু কেউ উকি দিচ্ছিল না আমার ব্লগে। আমার খুব রাগ হলো। খালি মেয়ে বলেই সে এত হিট পাবে? আমি জীবনের প্রথম মাইনাস তাকে দিয়ে আসি।
পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারি সেটা ছিল ভুল।
সামু বা অন্য কোন সাইটে যে ভালো মেয়ে ব্লগারের সংখ্যা কম তার কারন কিন্তু এইটা। লুলদের বাড়াবাড়িতে মেয়ে ব্লগাররা হারিয়ে যায়।
ব্যাখ্যা করি একটু।
ধরা যাক আসমানি নামের একটা মেয়ে ফেসবুকের লিঙ্ক থেকে সামুর সন্ধান পেয়েছে। সে ভুল বানানে জীবনের প্রথম ব্লগ লিখেছে। কিছু যুবকের শুভেচ্ছা আর স্বাগতম শুনা শুরু করেছে। জোসের কারনে সে দ্বিতীয় ব্লগও লিখে ফেলেছে। ছোটবেলায় তার পুতুল হারিয়েছিল-সেটা নিয়ে। নতুন ব্লগারদের ব্লগ সাধারনত ছোট হয় আর মানে হয় নিম্ন-শ্রেনীর( কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে)। এই নিম্নমানের ব্লগ লিখেও সে বেশ কয়েকটা প্লাস পাচ্ছে এবং সুন্দর সুন্দর কমেন্টে ভরে যাচ্ছে তার ব্লগ। সে যা বুঝতে পারছে না, তা হল একজন সম্ভাবনায় ব্লগারের মৃত্যু ঘটাচ্ছে লুলেরা।
এই মেয়েটা যখন কোন খারাপ ব্লগ লিখছে- কেউ তাকে সাবধান করে দিচ্ছে না- এটা খারাপ। বিরক্তিকর ব্লগ হচ্ছে- এই কথাটাও তাকে কেউ বলছে না। তার ভিতর ধারনা হয়ে যাচ্ছে – আমি ভালো লিখি পাঠকেরা সেই জন্যেই আসছে। এরপর একদিন সে তার বয়ফ্রেন্ড নিয়ে লিখে বসবে। লুলেরা জেনে যাবে সে খালি নয়। লুলেরা তখন নতুন কোন ফুলবানুর দিকে ঝুকে পড়তে শুরু করবে। আসমানি হঠাৎ আবিষ্কার করবে তার প্লাসের সংখ্যা কম হচ্ছে ইদানীং। হায়দার বা কায়সার নামের তার নিয়মিত পাঠক আর প্লাস প্রদানকারী মাঝে মাঝেই তার নতুন ব্লগ মিস করা শুরু করছে। একসময় সে তাদের কাছ থেকে আর কিছু পাচ্ছে না। এইসময়ে সে আবিষ্কার করবে- সে ভালো ব্লগ লিখে না। কিন্তু কিভাবে ব্লগ আকর্ষনীয় করতে হয়- সেইটা বুঝার জন্য যে শ্রম এবং সময় দিতে হয়- সেটা দেবার অভ্যাস তার নেই। সে ত জানে ব্লগ লিখলেই সবাই ঝাপিয়ে পরে পড়ার জন্য। পাঠকদের কিভাবে টেনে আনতে হয় ক্ষুদ্র তিনমাসের ব্লগ জীবনে সেটা সে জানার চেষ্টাই করে নাই বা করতেই হয় নাই। কিছুদিন হয়ত সে লেগে থাকবে- এরপর হাল ছেড়ে দিবে। ফলাফল ব্লগের প্রতি আগ্রহ শেষ। সে হয়ত একজন ভালো ব্লগার হত। কিন্তু সেই সুযোগ সে পায় নাই।
একটা সময় আমার ধারনা ছিল- মেয়েদের সিনেমার নায়িকা হওয়া সোজা। হয় দেখতে খুব সুন্দর হও নতুবা কাপড় খুলে দাড়াও ক্যামেরার সামনে। কিন্তু কফি উইথ করন নামে একটা অনুষ্ঠানে মল্লিকা শেরওয়াতের সাক্ষাৎকার দেখে আমার ধারনা পালটে গেল। যদিও বোম্বের সিনেমা আমি বলতে গেলে দেখিই না, তবুও মল্লিকাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। আমার রূমমেট যখন হিন্দী মুভি দেখত তখন আমি তাকে বলে রাখতাম হট সীন আসলে ডাকিস। সে আমাকে ডাকত আর আমি শুধু সীনটা দেখে চলে আসতাম। মার্ডার মুভির সময় বারবার নিজের টেবিল আর পিসির সামনে দৌড়াতে হলো।
সেই মল্লিকাকে দেখি উপস্থাপককে প্রানপনে বুঝাতে চাচ্ছে- সে ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে চায়। কিন্তু সে সুযোগ পাচ্ছে না।
সেইদিন হঠাৎ করে আমি বুঝতে পারলাম- মেয়েদের জন্য ফিল্মের জগত আসলে ছেলেদের চেয়ে কঠিন। তোমার চেহারা সুন্দর-খুব ভালো কথা। কিন্তু খুব শীঘ্রই তোমার মত সুন্দর কিন্তু তোমার চেয়ে অল্প বয়স্কা আরেকটা মেয়ে খুজে পাওয়া যাবে। তুমি কাপড় খুলে দাড়াচ্ছো- আরো অনেক মেয়ে পাওয়া যাবে যে আগ্রহ নিয়েই এই কাজ করবে। আমার দ্বিগুন বয়েসী শাহরুখ আমার চেয়ে বয়স কম একটা মেয়ের সাথে খালি গায়ে নাচার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু এই মেয়েটার বয়স হলে সে এই সুযোগ পাচ্ছে না। কাপড় খুলে দাঁড়ানো যেহেতু সোজা- প্রচুর মেয়ে পাওয়া যাবে নায়িকা হিসাবে। মল্লিকার অনেক প্রতিদ্বন্দী। কিন্তু ভালো অভিনয় করা বেশ কঠিন- তাই শাহরুখের প্রতিদন্দ্বীর সংখ্যা কম। ঠিক এই কারনেই একজন টাক মাথার ব্রুস উইলিস দুনিয়া কাপাতে পারে- একজন বিশ্রী চেহারার নায়িকা খুজে পাওয়া যায় না।
ব্লগ পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিক এবং বহুলাংশে ফিল্মের জগত এর মত। এখানে যেসব সিনেমা হয় সেগুলো পর্দার চেয়ে কোন অংশেই কম মজার নয়।
আমি যখন প্রথম ব্লগ লিখি- সেগুলো ছিল নিম্নমানের। ( এখন জাতে উঠেছি তা নয়। তবে আগের চেয়ে ভালো লিখি।) শুধু আমি নই- বেশিরভাগ ব্লগারের প্রথম দিককার ব্লগ নিম্নমানের। এরা আস্তে আস্তে বুঝতে পারে কিভাবে ব্লগ লিখতে হয়- কিভাবে বড় একটা ব্লগের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে ধরে রাখতে হয়। কিভাবে বহু ব্লগ পড়ে আর কমেন্ট করে নিজের রেপুটেশন-পরিচিতি বাড়াতে হয়। এরা আস্তে আস্তে শিখে-শক্তিশালী হয়। একসময় এসে আর পাঠক পাবার জন্য চেষ্টা করতে হয় না। পাঠকেরা নিজেরাই আসে।
কিন্তু হতভাগা নতুন মেয়েরা এই সুযোগ পায় না। এদের পাঠকেরা কেউই সত্যিকারের পাঠক নয়। এরচেয়ে ভয়ঙ্কর কথা হলো- এরা যেসব কমেন্ট পায় তা থাকে মিথ্যায় ভরপুর। এই মিথ্যার জাল ভেদ করে- সত্যিকারের বস্তুর সন্ধান পাওয়া কঠিন।
এই প্রতিকূলতার ভিতর দিয়ে যেসব মেয়ে ব্লগার টিকে থাকে- এরা সাধারনত পুরুষদের চেয়ে শক্তিশালী ব্লগার। শুধু মেয়ে বলেই প্লাস পাচ্ছে বা কমেন্ট পাচ্ছে- এদের ব্লগ সম্পর্কে এই কথা বলা খুবই অন্যায়। এটা নিজেদের ছোট মানসিকতার পরিচয়।
অফটপিক-
আমার নিজের কাছে মনে হয়- লুলামি খুব একটা দোষের নয়। একটা ছেলে একটা মেয়েকে পাবার জন্য চেষ্টা করতেই পারে। এটা খুব একটা খারাপ বিষয় না। যদি ফেসবুকে লুলানো যায় তবে সামুতে করতে দোষ কি? ( বিবাহিত লুলদের কথা অবশ্য আলাদা।)