টম মাটিতে হাটু গেড়ে বসে আছে , তার গলায় একটা বেল্ট বাধা। বেল্ট টার আর এক মাথা সুজানার হাতে, সে আয়েশি ভংগিতে হাফ প্যান্ট পরে বসে আছে। টম সুজানার লম্বা সেইভ করা পা দুটো চাটছে। সুজানা টমের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। টমের মাথার মধ্যে কিছুটা ঝিম ঝিম করছে। বাহিরে অন্য কুকুরেরা খেলা করছে। তার মনিব কেনো তাকে নিয়ে ঘরে বসে আছে সেটা তার বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। অসুবিধা টম নামটা নিয়েও আছে এই নামটা তার খুব একটা পছন্দ না। "টম এন্ড জেরী" নামে একটা কার্টুন আছে, সেখানে "টম" একটা হুলো বিড়ালের নাম, একটা হুলো বিড়ালের নামে তার নাম হবে, সেটা তার জন্য জথেষ্ট বিরক্তি কর বা কিছুটা অপমান জনকও। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই, তার। মনিবের ইচ্ছাই সব। সে বড়জোর খেউ-খেউ টাইপের শব্দ করতে পারে। টম সুজানার পাচাটা বন্ধ করে দেয়। সুজানা টমের দিকে ঘুড়ে তাকায়। সে টমের দিকে একটি কুকি ছুড়ে দেয়, টম সেটা মুখে নিয়ে ঘড় ঘড় টাইপের একটা শব্দ করে।
সুজনার ধারনা টম খুশি হয়েছে কুকিটা পেয়ে। টম খুশি হয়নি সে খুব বিরক্ত সে জানে কুকিটার মধ্যে একটা লাল ট্যাব্লেট দেয়া আছে। যেটা খেলে টমের ঝিমুনিটা উত্তজনায় পরিনত হবে। সুজানা টমের দাড়ির নিচে মুখের কাছে চুলকে দেয়। টম সুজনার হাতের তালুতে মাথা এলিয়ে দেয়। সুজনার কোন বয় ফ্রেন্ড নেই। তার বাবা মারা গেছেন অনেক আগে, মা বিয়ে করেছেন, ওর কোনো ভাই বোনও নেই। থাকলেও কেউ কাউকে চেনে না, সে নিঃসংগ। তার সাথে আছে তার এই কুকুর। সে একে নিয়েই ঘুমায়, একে নিয়ে খেতে যায় একে নিয়ে গোসল করে। টমের আগে তার একটা "এ্যালসেসিয়ান" ছিলো সেটার নাম ছিলো "বুল"। "বুল" টা শেষর দিকে কিছুটা পাগলাটে হয়ে গিয়ে ছিলো। কথা নেই- বার্তা নেই বিছানায় একদিন সুজানাকে আচড় মেরে দিল। সে অবস্য সেফটি গার্ড ব্যাবহার করতো কুকুরের পায়ে, কিন্তু সেদিন যেনো কিভাবে সেটা খুলে গিয়েছিলো! সুজানা কুকুরটাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। হাসপাতাল কর্তিপক্ষ বলেছে কুরটার মাথা ঠিক নেই। তারা অবস্য সুজনাকে চার্জ করতে চেয়েছিলো। কুকুরটার শরিরে নাকি অতিরক্ত যৌন উত্তেজক ঔষধ পেয়েছে। অবস্য কুকুরের পক্ষে কোন ল-ইয়ার না পাওয়ায় সে যাত্রা বেচে গেছে সুজনা।
সুজানা দাড়িয়ে আছে ছোট্ট ব্রিজটার উপর। বিকেলের সচ্ছ আলোর এই অদ্ভুত বাতাস সুজানার শরিরে কাছে কি জেনো বলেযায়? সে চোখ বন্ধ করে। হাতের মুঠয় লাল ট্যাবলেটার দিকে তাকায় সে। টম দুরে অন্য কুকুর গুলোর সাথে খেলছে। সে টমকে ডাকে। টম অন্য কুকুর দের সাথে খেলা বন্ধ করে দিয়ে সুজানার দিকে দৌড়ে আসে। সুজান টমের মুখে একটা কুকি ঠেলে দেয়। টম কোন শব্দ করেনা কেবল খেয়ে নেয় কুকিটা, টমেরও আজকাল আর ট্যাব্লেট সহ কুকিনা খেলে ভালো লাগেনা। দুরে সূর্য ডুবে যাচ্ছে, সুজানা টমকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে। গাড়িটা চতে থাকে সুজানার বাড়ীর দিকে। নিউইয়র্কের হিম শিতেও টমের গরম লাগে সে গাড়ির জানালা দিয়ে গলা বের করে থাকে, সুজানা হাত বোলাতে থাকে টমের পিঠে, ঘাড়ে, উড়ুতে।
সুজানা টমকে নিয়ে তার বেডরুমে যায়, তার বেড রুমের বন্ধ দরজার ওপার থেকে, এক প্রকারের ভোতা শব্দ আসতে থাকে। কিছুটা বিষাক্ত ফনাতোলা সাপের নিঃস্বাস ওঠানামা করার মতন।
রাত দেড়টায় নিউইয়রক শহরটা ধুষরতার অদ্ভুক এক আলোকছটায় জেগে ওঠে। মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কি এক অদ্ভুত চোখে এরা কামনা খোজে। খোজ দি সার্চ চলতে থাকে অন্ধকার গলিতে, হাইওয়েতে, সিন সিটিতে বা হলিউড পাড়ায় সব জায়গায়। যে ভাবে আমরা রাতের আধারে কাম খুজি বেইলি রোড, রমনা, বনানী বা উত্তরার অভিজাত হোটেলে। হ্যা আমিই টম বলছি আমার আসল নাম সিদ্দিক। বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে আমি। ডি, ভি পেয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বর্ডার দিয়ে আমেরিকা এসেছি, কাজের খোজে। কি করিনি আমি? গাড়ী ধুয়েছি, বাসুন মেজেছি। ময়লার ডাস্টবিন থেকে খাবার নিয়ে খেয়েছি। ডলারের জন্য কতকিছু যে করেছি তার হিসেব নেই। হিসেব মেলাতেও চাইনা। সিদ্দিক থেকে টম হয়ে আমি এখন এক মেমের পালিত কুত্তা। বা দাস। মুলত যৌন দাসত্বই এখানে মুখ্য। মাস শেষে কিছু ডলার এখন দেশে পাঠাই। মা মাঝে-মাঝে জানতে চায়- "বাবা তুই কেমন আছিস।" আমি কিছু বিলিনা মাকে, কি বলবো আমি বুঝিনা? আমার চুপ সুনে মাও কিছু বলেনা। কেবল বলে "রেনু"টা বড় হয়েছে, এখন তো বিয়ে দিতে হবে। রেনু আমার বোন ওকে বিয়ে দেবার টাকা নেই আমার। আহারে আইবুড়ো হচ্ছে, বোনটা।
শেষ কথার আগের কথাঃ
আমি নিউইয়র্কে ছিলাম প্রায় তিন বছর। আমি দেখেছি সেখানে আমাদের মতন দরিদ্র দেশের মানুষ গুলো কতটা কষ্টকরে জীবন চালায়। মাস শেষেই মায়ের ফোন বা স্ত্রীর মিস্ড কল। বাবা কিছু টাকা পাঠা আর তো পারি না। টাকা পাঠায়ও প্রবাশিরা, কিন্তু টাকাটা কিভাবে পাঠায় সেটা আমরা কেউ ভেবে দেখিনা। আমরা সেই প্রবাশিদের পাঠানো রেভিডেন্স লুট করে খাই। কার্যত কাজ হীন আমাদের এব্মাসি গুলো কেবল চেয়ে- চেয়ে দেখে আমাদের দুঃখি-দুঃখি চেহারা। যাক উপদেশ বা নীতি কথা বলে কোন লাভ নেই, নিতী কথা মূল্যহীন হয়ে গেছে এই সমাজে। গল্পে চলে যাই।
সিদ্দিকের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো নিউইয়র্কের এয়ারপোর্টের বাইরে। সে গাড়ী মুছছিলো চেনা দেশি মুখ আর সদ্য দেশে ছেড়ে আমেরিকায় নামা- আমার ভেতর এক প্রকার দেশপ্রেম জেগে ওঠে, এ এক অদ্ভুত আবেগ। মনখারাপ করে গাড়ি মোছা ছেলেটাকে কাছে ডেকে জানতে চেয়েছিলাম, তোামার নাম কি ভাই। ও কেবল গোমরা মুখে বলেছিলো সিদ্দিক।
আমার ভাগ্য ভালো ছিলো তাই মুটামুটি একটা চাকরী জুটে গিয়েছিলো আমার। সিদ্দিক থাকতো আমারদের ব্লকের শেষ বাড়িটার বেজমেন্টে। ওকে দেখলে টুক টাক কথা হতো। আমাকেও বলেছিলো স্যার একটা চাকরীর ব্যাবস্হা করেন। আর পারতেছিনা। আমি একটা চাকরীর ব্যাবস্হাও করালাম। কিন্তু, সিদ্দিক উধাও। পরে জানতে পেরেছি পত্রিকায় পাওয়া একটা চাকরী সে লুফেনিয়েছি। এক ম্যামের কুকুর সেজে থাকতে হবে। ম্যাম যেভাবে বলবে তাকে তাই করতে হবে। কুকুরের মতন অভিনয় করতে হবে। ম্যাম তাকে পেটাতে পারবে। তাকে খেতে হবে কুকুরের খাবার। আমাদের সিদ্দিক - টম বনে গেলো। কেবল পেটের জন্য।
শেষ কথাঃ
সিদ্দিকের বোন রেনুর খুব বড় ঘড়ে বিয়ে হয়েছে। সিদ্দেকের এখন একটা বাড়ী আছে নিউইয়র্কে। সে এখন হ্যামবার্গার খায়। দামি গাড়ী চড়ে উইক এন্ডে ভটকার পার্টি দেয়। সে এখন রিচম্যান। সেদিন হাতে একটা ঘড়ি দেখেছিলাম। সিদ্দিক হেসে বলেছিলো একুশ ক্যারট। সুজানা মরে গিয়েছিলো কার এক্সিডেন্টে। সে মারা জাবার আগে তার সব সম্পত্যি উইল করে রেখেছিলো তার পোষা টমের নামে। সদ্দিককে তেমন কিছু করতে হয়নি, কেবল তার নামটা আইনি ভাবে পাল্টে চিরস্হাই টম করে নিতে হয়েছে।
নিউইওর্ক থেকে টরেন্টোতে যাবার পথে সিদ্দি এসে তার ঘাড়ি নিয়ে পাসে দাড়াল। বলল উঠেন আমিও যাবো টরেন্টো। যাবার পথে আমি সিদ্দিকের হাত ধরে বলেছিলাম-
ভালো আছো সিদ্দিক তুমি। ওর চোখে জ্বল ও বলেছি - বহুদিন পর নিজের সত্যিকারের নাম টা সুনলাম, স্যার। টম নামের একটা কুত্তার বাচ্চা হইয়া বাচতে আর ভাল্লাগেনা স্যার। আর পারিনা।
মুখবন্ধঃ
আরো চাই- আরো চাই বা ডিপার, ডিপার এই কথা গুলো এখন পশ্চিম ভুখন্ডের এক নিত্য কথা। বাসনা বা কামনার সহজ লভ্যতায় এরা ধিরে ধিরে পার্ভার্ট হয়ে যাচ্ছে। লেখাটার কিছু অংশে পার্ভাট এ্যাটেচুড আছে, সেক্ষেত্রে অবশ্য আমার কিচ্ছু করান নেই। এটাই এখন চরম বাস্তবতা, স্বপ্নের আমেরিকায়। ওরা স্বাভাবিক যৌনতায় আর সুখপায়না, সুখ খোজে না আর লিখবোনা এই ব্যাপারে।
আমেরিকানরা ধর্মকে আধুনিক বানাচ্ছে, নানান ভাবে। বানাতে থাকুক ওদের দেশ ওদের ধর্ম আমাদের কি? আমার বুকটা ছ্যাত করে ওঠে যখন জমুনা টিভি'র তালাশ টাইপ অনুষ্ঠানে দেখায় আমাদের তরুন-তরূনীরা গ্রুপ এফ পার্টি করা আরম্ভ করেছে। আমেরিকানরাও এভাবে সুরু করেছিলো। এখন ওরা পারভার্ট বা ওদের সভ্য ভাষায় ওদের কাজ গুলো ট্যাবু।
আমি জানিনা ধর্ম হীনতা কিভাবে আধুনিকতা হয়। আমাদের ধর্ম আছে। ধর্মের দেয়া নীতি নৈতিকতা আছে। আমরা সে সব ছেড়ে আধুনিক হচ্ছি ধর্ম হীন হয়ে। তাহলে তো পষুরা সবচেয়ে বড় আধুনিক ওদের কোন ধর্ম নেই, তাই ওর গ্রুপ এফ পর্টি বা যেখানে-সেখানে কামে লিপ্ত হয়। যে সব মানুষ গুলো ধর্ম হীন হয়ে আধুনিক হয়ে পষু সমাজে নাম লেখাচ্ছে, তাদের জন্য আফসুস হয়, আহারে মানুষ।
গল্পের চরিত্র গুলো কাল্পনিক ইভেন আমার চরিত্রটা সহ। ছবিঃ গুগল। টাইপো থাকার জন্য দুঃখিত।
ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
Click This Link
আমার রিসেন্ট একটি লেখাঃ
F(বিপ) পার্টি