অনেক কিছুই লেখা হলো, অনেক কাথা। মাথার ভেতোরে তেতো স্বাধ বা ছোট থেক বড় হয়ে যাওয়া কত কিছু। কাগজের বুকে আঁকি বুকি বা খাটের নিচে লুকিয়ে ক্যাপ্টেন প্লানেটের ছবি একে ফেলা বা বাবার হাতের রাম থাপ্পর খেয়ে, সেই থপ থপ করে চলা আমি। পাঁচ ফুট সারে চার ইন্চি হয়ে গেলাম। এই পাঁচ ফুটের জীবনের ২৯ বসন্তে মিনিমাম ২৯ টা খুব বড় মাপরে ভুল আছে। শত চেষ্টা করলেও আর হয়তো সেই ভুল গুলোকে সোধরাতে পারবো না। যদি জীবনের রিপিটেশন করা যেতো, তাহলে আর সেই ভুল গুলো হতে দিতাম না। আমি নিজের উপর হাসি, "যা বোকা তা কি হয়!" জীবন গিয়েছে চলে আমার ২৯এর পার। আর কখোন দেখা হবে না তোমার আমার।
বুড়ীগঙ্গার ঘোলা পানিতে সাতার কাটতে কাটতে হঠাৎ যেদিন বড় হয়ে গেলাম, মধ্যবিত্ব্য সংসারে জীবনের এক চরম সত্য কে জানলাম। তার নাম অর্থ কষ্ট। আমার এক মামা পুলিশে চাকরী করেন, উনি যেদিন আমার হাতে পাঁচশ টাকার একটা নোট গুজে দিয়ে বলে ছিলেন, "যাও আর্ট কলেজের বকেয়া বেতন দিয়ে, মনের আনন্দে ছবি আঁকো।" সেদেন মনের ভেতর যে কতটা পুলোক হয়ে ছিলো তা বলে বোঝাতে পারবো না।
ছোট বেলা থেক ধর্ম শিক্ষা আর সংস্কৃতী চর্চার এক মেল বন্ধনে বড়ে হয়ে ওঠা এই আমাকে এক দিন আর্টের টিচার বললেন- "ষ্ট্যাচু বানাতে হবে। নাহলে পরের সেমিষ্টারে প্রমট করবো না।" আমি বানালাম না ষ্ট্যাচু। বাবা পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন- "যা করেছিস ভালো করেছিস। আর্ট মানে মুর্তি গড়া নয়। আর্ট থাকে রক্তে, কে কিভাবে প্রকাশ করবে, সেটা তার ব্যাপার। তোর রক্তে যে চেতনা আছে তা ফুটিয়ে তোল কথায়, ভাষায় বা কর্মে।
প্রিয় পাঠক অনেকই ভাবছেন মেংগো পিপোলের কি হলো! কি সব বলছে? নিজের কথা, বলার কথা দিয়ে ছিলাম। তাই জীবন লিখে যাচ্ছি। খুব অল্পতে জাপিত জীবনের সামন্য কিছু অনুভুতি শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। নানান সময় নানান গল্প বলি আপনাদের। আজ না হয় নিজের কিছু কথা বললাম।
ধর্মের টানে কাবা শরিফের প্রতি এক প্রকারের মমতা আমার সব সময়, আমাদের পাড়ায় একজন শিল্পী ছিলেন শো-পিস বানাতেন। আমার তখন হাফপ্যান্ট পরার যুগ। আমি গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম, তার দোকানের সামনে। তিনি নিখুঁত হাতে গড়ে যেতেন শিল্প। রেপ্লিকা বানাতেন "মসজিদ-উল-হ্যারেমের। রেপ্লিকাটির কোনায় একটা ঘড়ি জুড়ে দিতেন। অসম্ভব মুগ্ধতায় আমি তার শিল্প দেখাতাম। আবেগ ধরা চোখে আমি ভাবতাম ইস্ যদি বানাতে পারতাম! ছোট বেলার সেই আমি যখন বড় হয়ে গেলাম কাবার রেপ্লিকা বানানোর স্বাধ মন থেকে উকি দিলো। আরম্ভ করলাম কাজ। দুই মাস খাটলাম, নানা ভাবে চেষ্টা করলাম আর্টকলেজের অসম্পুর্ন বিদ্যা আর বাবার বলা রক্তের লাফা-লাফিতে বানালাম "হ্যারেমের" রেপ্লিকা। জানিনা কেমন হয়েছে? সেয়ার করলাম কিছু ছবি সেটার।
লাইট জ্বালানো অবস্হায়, লাইট গুলো জ্বলে নেভে।
৯০ এর দশক। কেরনী গন্জের কাঠুরিয়ায় থাকি। মাথার ভেতর নতুন যৌবন, "কাদিরা" সিনেমা হলে "টাইটানিক"। গ্রাম থেকে ছোট চাচার আগামন উনি টাইটানিক দেখবে আমার সাহসে কুলালো না। কি যেন এক সিন আছে । চাচা বললেন তুই আবার আর্টিষ্ট সেটা তো একটা সাধারন ড্রইংয়ের সিন এত লজ্জার কি হলো। ৯০ এর দশকের সেই আমাদের লজ্জা আর তাসলিমা আপার লজ্জা এক না। আমি সত্যিই লজ্জা পেলাম চাচার পিড়া পিড়িতে ঢুকলাম হলে। চলে এলো সেই কাংখিতো বা অনা কাংখিত সিন আমার শ্বাষ ঘন হচ্ছে। যাক বাবা বাচা গেলো, সমগ্র হল হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেলো। চাচা ভীষন খেপেছিলো, সালারা সিন কাটে। টাকা দিয়ে সিনেমা দেখি, হ্যান তেন...। কিন্তু পুরো সিনেমায় নাইকা রোজের রুপ সৌন্দর্যের চেয়েও যেটা আমার মন কাড়লো সেটা "টাইটানিক জাহাজ।" মনের ভেতর এক প্রকার তীব্র টান অনুভব করলাম জাহাজটার প্রতি।
এই ২০১২ তে এসে বানালাম সেই জাহাজের রেপ্লিকা। বাবা পয়সা দিয়েছিলেন এটি আয়না দিয়ে বাধাই করতে। ছবি নিচে দিলাম।
আমি এটার নাম দিয়েছি টাইটানঃ
এটাতেও লাইট জ্বলেঃ
সেরাটনের সামনে ঘোরা ঘুরি করি, বিনা কারনে। শরিরের মধ্যে হিমু ভাবটা থেকে গেছে এখনো। এখনো যখন রাস্তায় একা একা হাটি মনের ভেতর এক ধরনের উদাস ভাব কাজ করে। সেই উদাস ভাব নিয়ে চলে যাই বাসার সামনের সেরাটন হোটেলে। হোটেলের সামনেই বসালো পুরান ঢাকার ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ী। পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় পড়া এই আমি টান অনুভব করলাম গাড়িটার উপর। আবার সেই কাজ, কাজ এবংকাজ। বানিয়ে ফেল্লাম গাড়িটা।
লাইট জ্বালানো অবস্হায়ঃ
প্রিয় পাঠক বোর লাগছে। এই লোক এগুলো কি দেখায়। আমি লিখে গেছি একের পর এক করে এই পোষ্ট নিয়ে ৫০টা লেখা। এই নিকটা আমার মাল্টি নিক। আমার সত্যিকারের নামে খোলা নিকটাতে হয়তো গত ছয় মাসেও আমি লগ ইন করিনি। আমার খুব কাছের একজন আমাকে ডাকে পিপোলি নামে। বন্ধুরা ডাকে মেংগো। সত্যিকারের নামটা হারিয়ে যেতে বসেছে এই ছদ্ম নিকের আড়ালে। তাই সত্যিকারের এই আমি আমার জীবনের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছি ছদ্ম ভাবেই।
এবার গল্পে আসি, অনেকে বলবে কিসের গল্প, আমি বলি কি, এতো জীবনেরই গল্প।
ছোটবেলায় "টিনএজ মিউটেন নিন্জা টার্টাস" দেখতাম, সেখানে কচ্ছপ গুলো ব্যাবহার করতো সামুরাই সোর্ড। ভীষন পেতে চাইতাম ওদের সোর্ড গুলো। বানিয়েছি আমি সেরকম একটা সোর্ড, এটা ছোট ভাইটার দারুন প্রিয়।
সত্যি বলতে কি এই জিনিসটা আমারো ভীষন প্রিয়। ও ভালো কথা ভয়পাবার কিছু নেই, এটা ধারালো না।
এবার চলে আসি প্রিয় একজন মানুষের কথায়। একটা ইংরেজী মুভি দেখছি, মুভির শুরুতে দেখালো ডিজনি ল্যান্ডের, "স্লীপিং বিউটি ক্যাসেলের" ছবি। অতি আবেগ নিয়ে সেই প্রয় মানুষটি আমাকে বললো আচ্ছা তুমি এটা বানাতে পারবেনা! আমি কিছুখন গাই গুই করলাম। আরে যা এই সব জিনিষ বানানো যায় নাকি?! তার অতি আন্তরিকতা বা ভালো বাসার সামনে আমি হার মেনে বানিয়ে দিলাম তার ক্যাসেল। আমি যখন এটা কাজ শেষ করে ওকে ঢেকে এনে দেখিয়ে ছিলাম তখন ওর চোখে মুখে যে এক অপরুপ আনন্দানুভুতি দেখেছিলাম সেটা এখোন ভুলতে পারিনা। বা চাইওনা ভুলতে। তবে সত্য কথা অনেক কষ্ট হয়েছে কাজটা শেষ করতে।
সামনা সামনি ডিজনী ল্যান্ডঃ
চিলের চোখেঃ
ব্যালকুনিঃ
রাতের বেলাঃ
প্রধান ফটকঃ
এটাকে এখোন আয়না করা হয়নি, মা বলেছে টাকা দিবে বাধাবার জন্য, দিচ্ছে না, আমি বাধাতে যা খরচ হবে তার চেয়ে টু পাইস বেশি চেয়েছি
পিছন সাইডঃ
এবার আসি ব্লগের কথায়। গেলো সপ্তায় এক সহব্লগার পোষ্ট দিলেন কাঠের বানানো নানান জিনিষ নিয়ে। অনেকে কমেন্টস দিলো ছবি গুলোয়। এর মধ্যে কাঠের একটা ঘড়ির ছবিও দিয়েছিলো,
মনে ধরলো ঘড়িটা। বানাবো বানবো উস্খুস করছিলো মন। কাকতালিয় বা টিয়া তালিও কিছু একটা হবে, সত্যজিৎ এর একটা গল্প পড়লাম যেটায় এই রকম একটা ঘড়ির বর্ননা ছিলো, আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো বানানোর ইচ্ছাটা, বানিয়ে ফেল্লাম। আমারটা কাগজের।
এখন এমনি আমার বাননো কিছু টুকটাক জিনিসের ছবি দেই। জানিনা কেমন লাগবে।
একলা বক পাখি বা কানা বগির ছাঃ
কলা গাছ, ছোট বেলা গ্রামে গেলে কলা গাছের ভ্যালায় ভাসতামঃ
আমার মাকে একটা ছবি একে দিয়েছিলাম, অনেক দিন আগে। মা মাঝে মঝে বলে যখন ওনার মন খারাপ হয় উনি এই ছবির নাদীতে গিয়ে কল্পনায় গোসল করেন, তাহলে নাকি মন ভালো হয়ে যায়। ঢাকার এই ইটের জংগলেতো আর নদী নেই।
বোতলের ভেতরে জাহাজ বানানোটা এমনি- এমনি করেছিলাম, ঈদের ছুটির প্রজেক্ট হিসেবে।
অনেকে ভাবছেন আমি তো বেস আছি। ছবি আকি শিল্প নিয়ে বেচে আছি। খারাপ কি? গল্পটার শেষ এখানেই নয়। আমি এখন সেকেন্ড ক্লাস মেডিক্যাল অফিসার। দেশের একটা খুব বড় হসপিটালে চাকরী হয়েছে আমার। মাথার ভেতর শিল্পকে চেপে রেখে কাট খোট্টা কাজ করি। তার পরো মনের ভেতরে এক প্রকারের আনন্দ পাই। মনুষের সেবা করে ভালোই আছি। রক্তে বওয়া আর্টিষ্ট হবার বাসনাকে পিছনে ফেলে আমি এখন মেডিক্যাল ম্যান।
শেষ কথা বা মুখ বন্ধঃ
এই গল্পের পুরাচরিত্র বাস্তব, সেটা আমি আপনাদের ম্যাংগো পিপোল। অনেকই ভাবেন কিছুই বললোনা লোকটা নিজের সম্পর্কে, তাদের কে বলছি লেখাটা পড়লেই দেখবেন, আমি বড় হয়েছি বুড়িগণ্গার ওপারে জিন্জিরায়। স্কুল জীবন কেটেছি আরমানীটোলা স্কুলে। আর্ট কলেজে ভর্তি হয়েও শেষ করিনি পড়াটা। এর পর ডাক্তারী পড়ার হাত ধরে এখন আমি রোগি বাচানোর দারোয়ান। বিয়ে করেছি আমার প্রিয় মানুষ টি আমার সহধর্মিনী। মা বাবা আছে এক ভাই আমার। আমি জানি এতেও অনেকের মন ভেরেনি। আমি আড়াল করেছি আমার ব্যাক্তি পরিচয়। যদি কোনদি ১০০ তম পোষ্ট লিখি এই ব্লগে কথা দিচ্ছি সেদিন যানিয়ে দিবো এই অভাগার মুখ। ভালো থাকবেন সাবাই, খুব ভালো। ওহ আর একটা ছোট গল্প বলা বাদ থেকে গেছে, শুনেছি বড় লোকের ঘোড়া রোগ হয়, কিন্ত আমার মতন একজন হতদরিদ্রের যে সেরকম একটা রোগ হবে ভাবতে পারিনি, সেই ঘোড়া রোগের পাল্লায় পরে
এই ক্যামেরাটা কিনে ফেল্লাম, আপলোড করা ছবি গুলো এই ক্যামেরায়ই তোলা। তবে এটা দিয়ে ফটো গ্রাফি যে করি তার একটা ছবি আপলোড দেই।
যদি কোন দিন সময় পাই তাহলে হয়তো বাকি ছবি গুলোও আপলোড দেবো কোন একদিন।
ও ভালো কথা প্রচুর বই পড়ি আমি, আমার বইয়ের র্যাকের এক অংশঃ
উৎসর্গঃ লেখাটা উৎসর্গ করলাম আমার লেখা গুলো যারা কষ্ট করে পড়েন তাদের কে এবং যে সবসময় আমার কাজ গুলো করতে সহায্য করে একফোটাও বিরক্ত না হয়ে। এবং আমার লেখার প্রথম পাঠিকা, মা তাকে আদর করে ডাকে মিস্তিরির বৌ।
ফেইস বুকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link
আমার রিসেন্ট একটি লেখাঃ
ভালোবাসা আসোলেতে পিটুইটারীর খ্যালা, আমরা বোকারা বলি প্রেম। It's a game.