পাশ্চাত্য সভ্যতার ব্যাস্ত এ নগরে আমার কোন ব্যাস্ততা নেই। হাটছি ফুট পাথ দিয়ে, শাহবাগ মোর পেড়িয়ে গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছি। নগরের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই এলাকাটা একটু ছিমছাম পরিপাটি। এই এলাকার সাইনবোর্ড, প্লেকার্ড, পোষ্টারের, পরিমান ও একটু বেশি, এর মধ্যে আছে- নো পারকিং, ডানে মোড়, সামনে স্কুল, কর্ম খালি নাই। পোষ্টার-আসুন, শিখুন, টাক-মাথায় চুল গজাবে, আরো কতো কি? সব দেখাও হয়না,এসবের মাঝে যে ব্যনারটা সবচেয়ে বেশি কষ্টদেয় তা হচ্ছে কর্ম খালি নাই লেখাটা। চারিদিকে অসংখ্য অগনিত ব্যাস্ত নর নারীর কর্মক্লান্ত মুখ। কেবল আমার টা ছাড়া, আমার কোন কর্তাও নেই কর্মও নেই। নিজেকে আমার এখন একটু বেশি একালাগে, মনে হয় আমি একা, শ্রেফ একা এই বিশাল গ্রহে কেবল একা।
এরপরো আশায় বুক বাধি, দেখিইনা আর একটু কি হয়? জীবনের শোলো আনার দশ আনাই হয়তো পেয়ে গেছি, আবার হয়তো কিছুই পাইনি আমি। হিসেব করতে চেষ্টা করি জীবনের পেয়ে যাওয়া দশ আনায় যতটুকু পেয়েছি তার বেশির ভাগটাই কেবল শুন্যতা, ভারী কিছুই নেই। কেবল আছে সার্টিফিকেট নামক কয়েকটি ঠোংয়ার কাগজ, কতই বা দাম আর? পাঁচ-ছ টাকা, কিন্তু শোলো আনার বাকি ছ- আনা কোথাথেকে আসবে? যা আমি দিন রাত খুঁজছি, হিসেব মেলেনা কিছুতেই। হয়তো বাকি ছ-আনার খোঁজে এখনো “চাকুরির খবর”পত্রিকা কিনি বহু জায়গায় কাগজ পাঠাই, শহুরে ভাষায় যেটাকে বলে বায়ডাটা। মাঝে, মাঝে দু-এক জায়গায় ইন্টার্ভিয়ু দিতে যাই। প্রশ্নের সামনা সামনি হই -"পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে?" উওরে যখন বলি পূর্ব অভিজ্ঞতা পাবার সুজগ জিবনে আসেনি। তখন ইন্টার্ভিয়ু টেবিলের অপার থেকে একটা শব্দ কানে আশে “রাস্কেল”! আমি বুঝিনা “রাস্কেল”কি আমি না আমাদের শিক্ষা ব্যাস্থায় অর্জিত এই সব সার্টিফিকেট গুলো, নিজেকে আমার তখন খুব বেশি এতিম মনে হয়। কাগজ গুলো গুছিয়ে রাস্তায় নামি। আলসেমি করেই পথ হাটি, বড় কষ্ট হয় আমার।
এই শাহবাগ মোড়, শিশু পার্ক, অসংখ্য রিক্সা গাড়ি ভ্যান, আস্ক্রিম হাতে ছোট শিশু, তরুন তরুনী এসব কিছু ছাপিয়ে এখন শেফালীর মুখটা বার বার এসে সামনে দাঁড়ায়। আমার সব কিছু ঝাপ্সা লাগে শেফালীর মুখের সামনে, সকল অস্পষ্টতার মাঝেও আমি শেফালীর মুখটি স্পষ্ট দেখি, ওর মুখ মনে হতেই আমার কেমন যেন একটু খারাপ লাগে, আমি ওর চোখে ক্লান্তি দেখি, আমার এখন অর কাছে জানতে ইচ্ছা করে ‘তুমি কেমন আছো শেফালী?’ কিন্তু জানাহয়না, সবকিছুই কি আর জানাহয় এক জীবনে।
মাঝে মাঝে আমি খুব অবাক হই এ কোন নগর সভ্যতার মাঝে আছি আমরা, এই নগরে নাগরিকতার আড়ালে আমি নগ্নতা দেখেছি তরুন তরুনির কাম লিপ্সা। আসলেই অদ্ভুত প্রেম। কতোসহজ ওদের জীবন যাপন। ওরা কতো সহোজে সবকিছু ছুঁতে পারে। ওরা উচু ইমারতের মাথা ছোঁয় আবার তেমনি Girl friend- এর হাত, বুক,কোমর,গলা।
অথচ আমি গ্রাম্য প্রেমিকার ওড়না ছুতে গেলেও কেঁপে উঠতাম, অবাক লাগে আমার সবকিছু। চিরো চেনা কত কিছুই যে আজকাল অচেনা হয়ে যাচ্ছে, তার কোন হিসেব মেলেনা। এই নগর নাগরিক এরা কি যাদু জানে? বুঝিনা। নাহয় আমর সেই চিরো চেনা কৈশরের খেলার সাথি, গ্রাম্য মেয়ে শেফালী, যে গত দু বছর আগে অসুস্থ এ নগরে এসেছিলো শ্রেফ একটা চাকুরির আশায়। যার চুলে তখনো পুকুরের জলের গন্ধ, যে অবোলিলায় যখন তখন হাসতে পারত, যার চোখে সবময় পাওয়া যেত ঘুম ঘুম নিরবতা, যার অপলক দৃষ্টি আমাকে ভাবাতো, যার ভ্রুতে থাকতো চিরো গ্রাম্যতা, যাকে শহুরেরা বলে “ন্যাচারাল”। ওর অনন্তের মতন দেহ লুকানো থাকতো খাপ ছাড়া জামার আড়ালে।
সেই শেফালী এখন ‘শেফা’ হয়ে গেছে, তার চুল থেকে এখন আর পুকুরের জলের গন্ধ বের হয়না- গন্ধ নামে এখন যা বের হয় তা হচ্ছে, সানসিল্ক,প্যানটিন অথবা হেড এন্ড সোল্ডারের তিব্রতা, তার মাথায় এখন আর তেল মাখা বেনি দোলেনা, চুল গুলো কেমন উস্ক-খুস্ক লালচে থাকে দেখলে মনে হয় ওদের বাড়ীতে তেল নেই। ওর হাসির আয়তন এখন কেমন যেন মাপা হয়েগেছে। আজকাল সে জামা পরেনা, তার পরনে থাকে টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট পায়ের কাছে গোটানো। ওর পায়ে উঠে এসেছে হাই হিল, সে এখন ভ্রু-প্লাগ করে, চোখে রে ব্যান্ড পরে, সিগারেত খায়, হট ডগ খায়, চিয়ারস করে, রাতে নিথর স্বপ্ন হীন ঘুমায় অথবা পাড়ি জমায় নাইট ক্লাবে, নাচে হিপ হপ, লাউড স্পিকারে গান বাজে “ছাইয়া দিল মে আনারে”। ওর বাবা এখন খদ্দ্রের পাঞ্জাবী পড়ে। ওড় ছোট ভাই হোন্ডা চড়ে। আমি বুঝিনা কোথা থেকে আশে এসব, আমি কেবল বুঝি শেফালী বিদলে গেছে।
গুলসানে একবার ওর সাথে দেখা হয় আমার,
বসে ছিলো হোন্ডার পিছনে, Boy friend- এর পিঠের সাথে লেপ্টে ও আমাকে ডেকে জানতে চেয়ে ছিলো, Hey dude what’s up!!আমি উওর দেবার আগেই ওর Boy friend-এর হোন্ডা ওকে নিয়ে দূরে সরে যেতে যেতে এক সময় বিন্দুর মতোন হয়ে দূরে বহু দূরে গিয়ে মিলিয়ে গেলে। আমার কেবল দুঃখ হয়ে ছিলো সেই শেফালী, যার নামের প্রতিমায় এক সময় আমি আকুল হতাম। যে কিনা নামাজ পড়তো দিনে পাচবার, বোরকা পড়ত, হিজাব পড়ত যার মুখের ক্লান্তি এক সময় আমার কাছে সদ্যভেজা শাপলা কলির মতন লাগত, সে কি ভাবে পালটে গেলো? কি ভাবে পালটে দিলো এ নগর ওকে?
এসব ভাবনা পিছনে আমি সানে এগিয়ে যাই আজ আমার ও সবে কোন মাথা ব্যথা নেই। ব্যথা নামে যা আছে তা হচ্ছে বুকের বা পাশে হাড় গোড় ভেদ করে কলজের ডান পাশে ঘেষে একটু বামে মোড় নিলেই যে অনুভুতি, তাই বোধ হয়। আচ্ছা ব্যথার কি কোন রং আছে? লাল নীল সবুজ হলুদ বেগুনি অথবা অন্য কিছু একেবারে অন্য কিছু যেমন বরফ রং বুঝিনা, একে বারেই বুঝিনা...............।
আমি হাটছি শিশু পার্কের পাশের ফুট পাথ দিয়ে, গুলিস্তান হয়ে বংশাল যাব, এর পর সাবের মোল্লার মেস নামক সেই খুপ্রি ঘরটার মধ্যে, যেখানে আমরা তিন জন থাকি বা থাকা যায় যদিও সিরিয়াল চার জনার একটু দেরি করে গেলেই জায়গা পাওয়া যায়না, বয়াপারটা একটু অশোভন তবুও থাকি কারন একটা ঠিকানা তো আছে। যেদিন সিরিয়াল পাইনা সেদিন রুনি নামক এক লাঞ্চীতা পতিতার ঘরে যাই কোন খারাপ উদ্দেশ্য নয় কেবল ঘুমাতে। রিনির সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের স্মৃতি মনে পরলে আমি খুব বিরক্ত হই, খারাপ লাগে আমার। খুব চেষ্টা করি ভুলে যেতে, ভোলা হয়না, সব কি আর ভোলা যায়। আমি তখন মোল্লার মেসে উঠেছি, আমরা দু জন থাক তাম এক রুমে, একদিন গভির রাতে চুরির শব্দে আমার ঘুম কেটে গেল। লাইট ধরালাম, তার লম্বা চুল, ফর্সা কপোল, মসৃন দেহ, আদিম মাদকতা চোখে নিয়ে সে আমার দিকে তাকায়, ভীষন ঘাবড়ে যাই আমি। লাইট বন্ধ করে দেই। মিজান আমার রুমমেট ঝট করে আমার পা-ধরে দোস্ত মাফ করেদে আর হবেনা। অবাক লাগে আমার। কি সুন্দর একটা মেয়ে এই অসুন্দর কাজ করে। এরা এসব করে কিভাবে? মিজানরাই বা এতটা নিচে নামে কি করে, শুনেছি ওর নাকি একটা মেয়েও আছে। গতো ঈদে ও ওর মেয়ের জন্য একটা লাল জামা কিনে নিয়ে গেছিল। আসার সময় ও ওর মেয়ের একটা পুরনো জামা নিয়ে এসেছিল, না ধুয়ে, মাঝে মাঝে দেখতাম জামাটা বের করে নাকের উপরে নিয়ে শুকছে, ওর বৌয়ের দেয়া একটা রুমাল আমাকে দেখিয়েছিল, তাতে লাল-সবুজ সুতোয় লেখা ছিলো ‘ভুলোনা আমায়”। আমি বুঝিনা সেই মিজান কি ভাবে পালটে গেলো, ভুলে গেল ওর বৌকে, এ কোন যাদু? একি নগরের যাদু, আমিওতো এই নগরে আছি, তবে আমি কেন পার ছিনা বদলাতে............?
মিজান বললো দোস্ত খুব ভালো দেখবিনাকি টেষ্ট নিয়ে, দেখনা কিছু হবেনা, আরে আজকাল এসব কোন ব্যাপারইনা।
আমি অন্ধকারে ও বুঝতে পারি মিজান মেয়ে টাকে আমার ইকে ইশারা করে, মেয়েটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, মিজান লাইট জ্বেলে দেয়, আমি মেয়েটার চোখে কামনার আগুন দেখি, সে আমার চুলে হাত ডোবায়, মেসের ছোট খুপরি ঘরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, আমি চোখ বুজি, মিজান কে বলি ওকে চলে যেতে বল, মেয়েটা খিল খিল করে হেসে ওঠে, বিচ্ছিরি রকমের সুন্দর হাসি, আমি সামান্য ম্যানেজড হই মেয়েটাকে সরিয়ে আমি উঠে দাড়াই।
এর পর আমি ওর ঘরে পৌছে দিতে যাই, কেন গিয়েছিলাম সেদিন ওকে পৌছে দিতে আমি তার কোন উওর পাইনা হয়তো তখন আমার মধ্যে কোন বাবা বা ভাইয়ের দায়িত্ব বোধ জেগেছিল, বুঝিনি এ কোন মমতা? ওকে নিয়ে যেতে যেতে জানতে চেয়ে ছিলাম তোমার নাম কি? ও বলেছিল “সাবানা”। এর পর খিল খিল করে হেসে উঠে ছিল, সেই একই বিচ্ছিরি রকমের সুন্দর হাসি, ওকে পৌছে ফিরে আসার সময় আমার হাতে একটা রুমাল গুজেঁ দিয়ে বলে ছিল যার টা তারে একটু পৌছে দিবেন, আর একটা কথা দরকার লাগলে আইসেন, ফিরে আসার সময় রুমাল টা খুলে দেখি তাতে, লাল-সবুজ সুতোয় লেখা ছিলো ‘ভুলোনা আমায়”। মিজান সে রাতেই চলে গিয়ে ছিল, আমি আর ওর কোন ঠিকানা পাইনি, রুমালটা থেকে গেল আমার কাছেই, একটা ঋন থেকে গেল মিজানের বৌএর কাছে, থাকনা একটু ঋন।
এসব চিন্তার ফাঁকে আমি কখন যে মেসের সামনে পৌছে যাই টেরপাইনা, আলসেমি করে ভিতরে ঢুকি, আরিফ বিজয়ির হাসি হেসে বলে মবিন ভাই আজো একটু আগেই এসে গেলাম। আমি পরাজয় মেনে নিয়ে বের হয়ে আসি মেস থেকে, হাটতে ভাল লাগেনা এখন, তবুও পা বাড়াই, রিনির ওখানে যেতে হবে, ভাল লাগেনা আমার যেতে, সন্ধ্যার আযান দিচ্ছে মসজিদে, আর কিছুক্ষন পর রিনি বের হয়ে যাবে। একটু জোরে হাটি আমি, রিনি কি ভাবে আমি গেলে, কারন প্রায় প্রতিদিনি আমাকে পরাজয় মেনে নিতে হয় এবং প্রায়ই আমার দরকার লাগে, যেতে হয় ওর ওখানে, আমি গেলে রিনি একটুও বিরক্ত হয়না, ও প্রথমে হেসে জানতে চাইবে কি মোল্লার মেসের সিট কি বূক। আমি সামান্য হাসি। ও উঠে আমাকে শোবার ব্যাবস্থা করে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফিরে আসবে গভির রাতে, হাতে থাকে একটা প্লেট, এর মধ্যে ভাত। আমাকে ডেকে উঠায় উঠিয়ে বলবে খান, আমি ভাত খাব। আবার সুযোগ বুঝে বলবে আপনি মোল্লার মেসটা ছাইরে দেন। কি দরকার সেইডা রাকপার,
আমার মায়ের দখল করা এই ঘরেই থাইকেন, আপনি তো দিনে ঘরেই থাকেন না তহন আমি থাকপো। আর যখন আমি রাইতে থাকবনা, তখন আপনে থাইকেন। বড় মায়ালাগে আমার রিনির জন্য। ওর আর আমার মধ্যে পার্থাক্য কিছুটা বিপরীত। আমি দিনে চাকুরি খুঁজি ও রাতে খদ্দের খোঁজে, আমি রাতে ঘুমাই ও দিনে ঘুমায়, ওর একটা চাকরি আছে আমার নেই, কোষ্ট হয়।
আমি রিনির ঘরের দরজায় কড়া নাড়ি, রিনি দরজা খুলে দিয়ে সামান্য হাসে। আমি ভিতরে ঢুকি,
ও বেরিয়ে যায়, সস্তার মেকাপে মুখ ঢেকে। আমি ওকে ফেরাতে পারিনা আমিইতো অর্ধ ভাসমান, ওকে ফিরাব কি ভাবে? রিনি আমার কাছে একটা রহস্যই থেকে গেল। আমি কখন জানতে চাইনা ও কিভাবে এল এই পথে, ও ও কখোন বলেনা ওর অতীত, বহু বার ভেবেছি জানতে চাইব, শেষ মুহুর্তে আর হয়না, সংকোচ হয়।
আমার অবাক লাগে, সেই গ্রামের আমি, আজ রিনি নামের এক বিচ্ছিরি রকমের সুন্দ পতিতার ঘরে রাতে ঘুমাই, দিন রাত বেচেঁ থাকতে চাই, বেচেঁ থাকার জন্য কতকিছু করতে হয়? আহারে জীবনের প্রয়োজন। রিনিকে আমার শরীর আন্ত আনবিক শক্তি, মহাকর্ষ শক্তি সব কিছু ছাপিয়ে আকর্ষন করে কিন্তু হয়না, কারন আমি ওর রাতের অচেনা খদ্দের না, ভাবি-তবে আমি ওর কি? মাঝে মাঝে ওর জন্য আমার মন কেমন করে, খুব মায়া লাগে, সমাজ ওকে ব্যাবহার করছে স্রেফ ব্যাবহার আর কিছুনা, আমি ও কি ওকে ব্যাবহার করছি? আমার বেচেঁ থাকার জন্য। নিজেই নিজের প্রশ্নের সম্মুখীন হই, উওর খুজিনা, ভয় হয় যদি উওর হ্যা হয়। তবে আমি ছোট হয়ে যাবনা, রিনির কাছে। সভ্য নাগরিকদের কি ছোট হতে আছে? আহা!! নাগরিক এবং সভ্যতা।
রিনির কাছে আমার ঋন ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে, ও আমাকে ক্রমাগত ঋনের ভেতর ফেলে দিচ্ছে, আমি জানি ওর ঋন কখনো শোধ করা হবেনা, এই রিনি আমার ভরন পোষন দিচ্ছে, রাতে মুখে অন্য তুলে দেয়, আমাকে কেবল বাচিয়ে রাখতে চায় যুদ্বাহাত যোদ্বার মতন, কিন্তু রিনি কি জানে? আমি আর বেশি দিন নেই। আমার বুকের বা পাশটা ব্যাথা করে, রিনি জানেনা আমি আর বড়জোর দু মাস আছি, ডাক্তার বলেছে আমার লান্স ক্যান্সার, রিনি আমি তোর জন্য কিছুই করতে পারলামনা, তুই আমাকে ক্ষমা করিস ভাই। আমি এ নগরে উপনিবেশিক নাগরিক। আমি ব্যার্থ এখানে আমি আমার কলনী গড়তে পারলাম না। আমার ভাবতে একটু খারাপই লাগে, আমার বেদনা, আমার অস্তিত্ব, আমার স্মৃতি, স্বপ্ন, কষ্ট সব বিলীন হয়ে যাবে আমার পূর্ব পুরুষদের মতন। কউ মনে রাখবেনা আমাকে। পলোক হীন চেয়েথাকি আকা বাকা করে খাটান নীল মশারির প্রাচীর ভেদ করে ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে। ধীরে ধীরে চোখ মুদে আশে, আয় ঘুম আয় বলে কে যেন ঘুম পাড়িয়ে দেয়। অতঃপর কুয়াশা কুয়াশা ঘুম। এর পর সাদা কালো একটি রাত শেষ হয়ে আরম্ভ হয় রংধনু রঙ মাখা নতুন সকাল।
দুই মাসরঃ
“এক সকালে চাকরির খবর পত্রিকা” কিনতে গিয়ে অন্য একটি দৈনিকে চোখ যায় মবিনের। সে অবাক চোখে দেখে, সেখানে শেফালীর ছবি ছাপা হয়েছে, নিচে লেখা, “রাজধানীর কয়েকটি হোটেলে সাড়াশি অভিযান”। মবিনের ভিষন কষ্ট হয়, সে ভাবে কেমন Give and take, ও ভাবতে থাকে শেফালীর সেই Boy friend আজ কোথায়, সে? কেন এই ছবিতে নেই? মবিন দেখা করতে যায় শেফালীর সাথে, শেফালী কিছুই বলেনি কেবল কেঁদেছিল, অঝরে। মবিনের হাতে গাল রেখে, মবিন শেফালীর চোখ মোছার জন্য একটি রুমাল দেয়। এরপর চলে আসে নিরবে, সেফালির চোখ মুছতে গিয়ে দেখে তাতে লাল সবুজ রঙের সুতায় লেখা “ভুলনা আমায়”।
রুমাল টা দিয়ে ফিরে আশার সময় মবিনের খুব কষ্ট হয়েছিলো, রুনি কি পেয়েছে? অসৎ হয়ে। ওর বাবা ভাই কি আর মাথা উচু করে চলতে পারবে? সমাজে। আর যে সব চক্র এই সব গ্রাম্য অসহায় মেয়েদের শরির বেচে টাকা ইনকাম করে কোটি পতি হয়, ফ্লাট কেনে উত্তরায়, বনানীতে। তারা কি পারবে? বিবেকের হাত থেকে রক্ষা পেতে। জানি পারবেনা, ক্ষমা তাদের করবেনা আল্লাহ ও। তবে সাময়িক সুখের ফাদে যাদের পা আটকা পড়ে, টাকার বেড়িতে। তারা এক দিন ছিটকে পড়বে ডাষ্টবিনে, টিকে থাকবে ধর্ম, ধর্মিয় মুল্য বোধ। যারা নারী কে বেপর্দা করে নারী কে পন্য বানাচ্ছে, যারা নারীদের চোখের সামনে জৌলুসের রংয়ীন ধোয়া উড়িয়ে বেড়াচ্ছে, তাদেরও একদিন জায়গা হবে কোন এক অন্ধ গলিতে। কারন সত্য এসে যখন মিথ্যার সামনে দ্বাড়ায় মিথ্যা বিলুপ্ত হয়।
মবিনের মৃত্যুর সময় জানতে চেয়েছিলো রিনি, আপনি সব জানতেন তার পরও কেন দিনের পর দন চাকুরি খুঁজতেন? উওরে মবিন বলে ছিল, আমি মরতে চাইনি ,বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে। আমি হেরে গেলাম রুনি, হেরে গেলাম, আমি পরাজিত...............।।
এর কিছুদিন পর, এক ঝড়ের রাতে। রিনি মারা যায় ট্রাকের তলায় পড়ে, সেটা কি? নিছক র্দুঘটনা না আত্মহত্যা। তা বোঝা যায় নি।
মুখ বন্ধঃ এই পল্পের সব গুলো চরিত্রই কাল্পনিক, জীবিত, মৃত, অর্ধমৃত, জন্ম নেবার অপেক্ষায় রত কারো সাথে কোন প্রকারের মিল খুজে পেলে সেটা কেবল কাক তালিয়ই নয় টিয়া তালিয়, ময়না তালিও বটে। লেখাটায় অনেক বানানের ভুল আছে, টাইপো তে আমি এখনো দুর্বল, আপনারা যারা কষ্ট করে আমার লেখা পড়েন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ও ভালো কথা বরা বরের মতন ছবি গুলা ভিজু্যা লাইজেসনের সুবিধার জন্য দেয়া হয়েছে। ধন্যবাদ।
আমার রিসেন্ট একটি লেখাঃ
চুমু এবং হাতের তালু (আমি জানি আমি লোকটা সুবিধের নই)
হিমু (থুরি থুরি মহিলা হিমু)
ফেইস বুকে আমাকে আমার পেইজ দেখতে চাইলে নিচের লিংকে যানঃ
View this link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:০৯