১০-৬-২০১৩
আজ সকাল থেকেই নিজেকে খুব অদ্ভূত
অদ্ভূত লাগছে।মাঝরাতে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে
ঘুমটা ভেঙে যায় আমার।স্বপ্নে দেখেছি আমি
এক্সিডেন্ট করে মারা গেছি।গুরু জনদের কাছে শুনেছিলাম,নিজে স্বপ্নে দেখলে নাকি
সেটা নিজের উপর দিয়ে যায়না।তাহলে তো আমার খুশি হওয়ার কথা!কিন্তু এমন লাগছে কেন আমার? আমি কি সত্যিই এক্সিডেন্ট করে মারা যাবো?
কেমন লাগে বলুন তো?এতক্ষন যাবত বকবক করছি,আমার পরিচয়টাই এখনো আপনাদের দেইনি।আমার নাম হাঁফীজ।
কিছুদিন আগে পড়া লেখা শেষ করছি।মামু খালু নেই বলে এখনো বেকার বসে ডিম পারছি।জানিনা আর কতদিন এভাবে বেকার বসে থাকতে হবে।হয়তো আরো অনেকদিন।
ততদিনে আমার সার্টিফিকেটের বয়স হয়তো শেষ হয়ে যাবে।বেকার থাকার কারনে লেখক হবার সুপ্ত বাসনাটা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।পুরোদমে লেখা লেখি শুরু করলাম অনলাইন জগতে।
১৬-৬-২০১৩
সকালে ফেসবুকে লগিন করেই বড় ধরনের
একটা হোচট খেলাম আমি।৭৬টা নোটিফিকেশন আমার ফেবুতে। নোটিফিকেশন চেক করে দেখলাম।সবগুলিই নাহিয়া রহমান নামে একটা মেয়ের।আমার
পোষ্টে ফার্ষ্ট লাইক,১২.২৩ am আর লাষ্ট
লাইক ৪.৪৯ am.তার মানে আমার লেখা
সব গুলো গল্পই সে পড়ে শেষ করে ফেলেছে।
সাথে একটা ছোট্র মেসেজ দেওয়া,চিনতে
পারছেন আমাকে?
মেসেজটা দেখে নামটা কেমন যেন পরিচিত
পরিচিতমনে হচ্ছে।বাট মনে করতে পারছিনা।
সন্দেহ দূর করার জন্য মেয়েটার আইডীতে
প্রবেশ করলাম,প্রোফাইল পিক দেখে
আরেকবার হোচট খেলাম,আরে এটাতো সেই চাঁর চোখওয়ালা চশমিস মেয়েটা,যার সাথে বসে ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছিলাম।এই দস্যি মেয়ে আমাকে খুজে পেল কেমনে?
মাথায় কিছু আসতেছেনা।
.
মেয়েটার সাথে পরিচয় ইন্টার পরীক্ষার সময়,
হলে আমার আর মেয়েটার সিট একই টেবিলে পড়েছিল,মেয়েটা যতটা মেধাবী ছিল আমি ছিলাম ঠিক ততটাই গাধা।তবে মহা পুরুষরা বলে গেছেন,নারীরা নাকি পাথরেও ফুল ফুটাতে পারে।মেয়েটার সাথে প্রথম দিনেই খুব ভাল বন্ধুত্ব করে ফেললাম।
মেয়েটার একটা সমস্যা ছিল,সেটা হল ঘুমকে
কন্ট্রোল করতে পারতোনা,তাই মজা করে ঘুম
পেত্নী ডাকতাম।যেহেতু আমি একটু চিকন ছিলাম,সে জন্য আমাকে পুঁটি মাছ ডাকতো।
যতদিন পরীক্ষা ছিল ততদিন আমার একটাই
দায়িত্ব ছিল,রাত্রে একটু পর পর ঘুম পেত্নী
জেগে আছে কিনা সেটা দেখা,আর নিজে
পড়া।যদি জেগে না থাকে তাহলে স্বজাগ করে
দেওয়া।পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পর আমার ফোনটা হারিয়ে যায়।আর আমিও ঘুম পেত্নীর বাসা চিনতামনা।তাই আর দেখা করার সুযোগ হয়নি। আজ অনেক দিন পর ঘুম পেত্নীকে দেখলাম,আগের চেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট আর সুন্দর হয়েছে। এক কথায় অসাধারণ,যা ভাষায় বলে বুঝানো যাবেনা।
আমিও ছোট্র করে মেসেজটার উত্তর দিলাম,
আরে তুমি সেই ঘুম পেত্নী না?
মেসেজটা দিয়ে কিছুক্ষণ উত্তরের অপেক্ষা
করলাম,কিন্তু উত্তর পেলামনা।মনে হয় চ্যাটে
ছিলনা।তারপর আমি লগ আউট দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
২৬-৬-২০১৩
আজ অনেকদিন পর ফেবুতে লগিন করলাম।সেদিন সকালে ফেসবুক থেকে বের হওয়ার পর একটা কাজে দোকানে যাওয়ার সময় আমার বাইকের সাথে আরেকটা বাইকের এক্সিডেন্ট হয়।সেই কারনে ১৫দিন ফেসবুকে আসতে পারিনি।ফেসবুকে লগিন করেই দেখি ঘুম পেত্নীর অনেক গুলো মেসেজ।কোথায় আছো?এফ বিতে আসোনা কেন?আমাকে কি ভুলে গেছ?এমন প্রায় ৩০টার মত মেসেজ।কোনটা রেখে কোনটার এনসার দিবো ঠিক বুঝতে পারছিলামনা।
এমন সময় আবার ঘুম পেত্নীর মেসেজ।
>ঐ পুটি মাছ,এতদিন কই ছিলা?(ঘুম পেত্নী)
>ঐ ঘুম পেত্নী?আমাকে খুজে পেলে কেমনে?
(আমি)
>সেটা অনেকটা নাটকীয় ভাবে।সেদিন আমি
ফেসবুকে একটা গল্প পড়ার পর দেখলাম
সেখানে তোমার নাম লেখা।পরে সার্চ দিয়ে
দেখলাম সত্যিই তুমি।(ঘুম পেত্নী)
>ও,তা কেমন আছ ঘুম পেত্নী?
>আমি কেমন আছি সেটা পরে বলবো,আগে বল পরীক্ষার পর কোন দিন ফোন দিলানা কেন?আর এতদিন কই ছিলা?
তারপর সব কিছু বিস্তারিত ভাবে খুলে
বললাম নাহিয়াকে।
৯-৭-২০১৩
দিন যত যাচ্ছে,আমি ঘুম পেত্নীর প্রতি আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে যাচ্ছি।আচ্ছা ঘুম পেত্নী কি এটা জানে?
ঘুম পেত্নী একদিন ফেসবুকে না আসলে আমি
পাগলের মত হয়ে যাই।ঘুম পেত্নীর সাথে ফোনে কথা বললে আমার গলা ধরে আসে।
আমি তন্ময় হয়ে ঘুম পেত্নীর কথা শুনি।আচ্ছা
ঘুম পেত্নীর গলার স্বরটা এত ভাল লাগে কেন
আমার কাছে?তাহলে কি সত্যিই আমি ঘুম পেত্নীকে ভালবেসে ফেলেছি?
২১-৭-২০১৩
আজকের দিনটা অনেক আনন্দময় আমার
কাছে।জানো বন্ধুরা?মামু খালু ছাড়া একজন ভাল মানুষের সহায়তায় একটা ব্যাংকে চাকরী হয়েছে আমার।আজকে থেকে রাস্তা দিয়ে হেটে গেলে কেউ আর বলতে পারবেনা,
দেখ ছেলেটা কত বড় হয়েছে,তবুও মা বাবার ঘাড়ে বসে খাচ্ছে।কিছু ভাল মানুষ আছে বলেই দুনিয়াটা এখনো টিকে আছে।না হলে অনেক আগেই ধ্বংষ হয়ে যেত।
ঘুম পেত্নীকে সবার আগে খবরটা দিতে হবে।
এই খবর শুনলে নিশ্চই অনেক খুশি হবে।
২৯-৭-২০১৩
ফেসবুকে লগিন করেই দেখলাম ঘুম পেত্নী
অনলাইনে আছে। আচ্ছা ঘুম পেত্নীকে কি বলে দেব?তার জন্য আমি রাতে ঘুমাতে পারিনা?ওর কথা মনে হলেই আমার
হার্টবিট দ্রুত চলতে শুরু করে?নাহ!এভাবে না বলে ওর জন্য একটা কবিতা লিখে তারপর
প্রপোজ করি।ঘুম পেত্নী আবার কবিতা খুব পছন্দ করে।
.
তুমি চাইলেই বৃষ্টি হব,মেঘ হব আকাশে,
তুমি চাইলেই নামবো আমি,অঝোর ধারায় মাটিতে।
♪
তুমি চাইলেই পাখী হব,উড়ে যাবো আকাশে,
তুমি চাইলেই পাড়ি দেব,সাত সমুদ্রের উপাড়ে।
♪
তুমি চাইলেই কষ্ট হব,হব তোমার সুখ,
তুমি চাইলেই মিটিয়ে দিব,তোমার যত দুখ।
♪
তুমি চাইলেই মরবো আমি,রাখবো জীবন বাজি,
তুমি চাইলেই হয়ে যাবো,আকাশের তারকারাজি।
♪
তুমি চাইলেই করবো আমি,বিদ্রোহ আর যুদ্ধ,
তুমি চাইলেই বানিয়ে দিবো,দুনিয়াটা রণক্ষেত্র।
♪
তুমি চাইলেই হাসবো আমি,কাঁদবো তোমার দুখে,
তুমি চাইলেই বিলিয়ে দেব,জীবন হাসি মুখে।
'
একটু ভালবাসবে আমায়?
.
মেসেজটা কাপা কাপা হাতে সেন্ড করলাম।
আর অপেক্ষা করতে লাগলাম,ঘুম পেত্নীর
উত্তর আসার।নাহ,মেসেজ সিন করে রেখে দিছে উত্তর দিচ্ছেনা।প্রায় দু ঘন্টা অপেক্ষা করলাম,কিন্তু কোন রিপ্লাই পেলামনা।
তাই মনটা খারাপ করে লগ আউট দিয়ে বের
হয়ে আসলাম।
২-৮-২০১৩
আজ তিন দিন পর ঘুম পেত্নীকেঅনলাইনে পেলাম।আচ্ছা ঘুম পেত্নী কি আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালবাসে?না হলে আমি সেদিন প্রপোজ করার পর ফোনটা অফ করে রেখেছিল কেন? আমি মেসেজ দিলাম ঘুম পেত্নীকে।
>এতদিন ফেসবুকে আসোনি কেন?জানো
তোমার জন্য কত চিন্তা হচ্ছিল আমার(আমি)
>তোমার প্রপোজের কি উত্তর দিবো সেটা
ভাবতে ভাবতেই জ্বর এসে গিয়েছিল তাই
আসতে পারিনি (ঘুম পেত্নী)
>তাহলে তুমি আমাকে ভাল বাসোনা?(আমি)
>আমি কি সেটা বলেছি?আমিও তোমাকে
ভালবাসি (ঘুম পেত্নী)
>সত্যিই তুমি আমাকে ভালবাস?(আমি)
>হুম,সত্যিই তোমাকে খুব ভালবাসি (ঘুম পেত্নী)
৪-৮-২০১৩
আজকে আমার জানের সাথে দেখা করলাম,
অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম দুজন দুজনের
দিকে।ওর চোঁখের দিকে তাকিয়ে কোথায় যে
হারিয়ে গিয়েছিলাম সেটা নিজেই জানিনা।
একটা অদ্ভূত রকমের ফিলিংস হয়েছিল আমার মাঝে।যার সাথে আগে কখনো পরিচিত হইনি আমি।
১৩-৯-২০১৪
আজকে আমার আর ঘুম পেত্নীর ভালবাসা
সফল হল।ঘুম পেত্নীকে বিয়ে করে আপন করে নিয়ে যাচ্ছি বাড়িতে।ঘুম পেত্নী আমার কাধে মাথা রেখে বসে আছে।শক্ত করে দুটো হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে রেখেছে আমায়।
মনে হচ্ছে হাতটা ছেড়ে দিলেই বুঝি আমাকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাবে।আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে,সেই চাঁদের আলোতে আমি আমার জানটাকে দেখছি।লাল শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে ওকে।মনে হচ্ছে আকাশ থেকে
নেমে আসা কোন এক ডানা কাটা লাল পরী।
আচ্ছা ড্রাইবারটা আজকে এভাবে বেখেয়ালী ভাবে গাড়ী চালাচ্ছে কেন?কোন সমস্যা হয়েছে কি?কয়েকবার সাবধান করার পরও কোন পরিবর্তন পেলামনা।
১৪-৯-২০১৪
আচ্ছা সবাই কাঁদতেছে কেন?কি হয়েছে
আমার?আমার জান পাখীকে দেখতেছিনা কেন?আমার গায়ে সাদা কাপড় জড়ানো কেন?তাহলে গতকাল রাত্রের এক্সিডেন্টে আমি কি মারা গেছি?
ওই তো আমার জান পাখী?ওকে আমার কাছে আসতে দিচ্ছেনা কেন?
আমরা কি আর এক সাথে জীবন কাটাতে
পারবোনা?ওকে সবাই অপয়া বলছে কেন?
ওর তো কোন দোষ নেই।সব দোষতো ড্রাইবারের।সে যদি ভাল ভাবে গাড়ি চালাতো,
তাহলেতো আর গাড়িটা খাঁদে পড়তোনা।
আর আমিও মরে যেতামনা।
১১-১২-২০১৫
আজ আবার নতুন করে সেজেছে আমার
জান পাখীর বাড়ি।সবাই তাড়াহুড়ো করছে বর এসে পড়েছে বলে।
হুম ঠিকই ধরেছেন,আজ আমার জান পাখীর
বিয়ে।আমি চলে যাওয়ার পর ও একেবারে ভেঙে পড়েছিল।সেই বিপদের মুহুর্তে পাশে এসে দাড়ায় ওর বন্ধু নিলয়।ওর ভালবাসা একটু একটু করে দূরে ঠেলে দিয়েছে আমায়।
আচ্ছা সত্যিই আমার জান পাখী আমায় ভুলে
গিয়েছে?নাহ্ এখনো ভুলতে পারেনি।আজও গভীর রাতে আমায় মনে পড়লে দুচোঁখ দিয়ে পানির বন্যা বয়ে যায়। আজও মাঝে মাঝে এফ বিতে পুরুনো মেসেজ গুলো পড়ে।
আজও প্রতি শুক্রবার নীল শাড়ি পড়ে
অপেক্ষা করে সেই কাশঁফুলের বনে।যেখানে প্রথম সরাসরি আই লাভ ইউ বলেছিলাম আমি।কিন্তু পাগলীটা এটা বুঝেনা যে,আমি আর কখনো ফিরে আসতে পারবোনা।আমার আর পাগলীটার মিলন বিধাতা দুনিয়ায় লিখে রাখেনি।লিখে রেখেছে ঐ তাঁরার দেশে।তাই আমি অপেক্ষায় আছি সেই মিলনের।যেখানে মিলন হলে সেই মিলন ভাঙবেনা আর কোনদিন।