একটা অস্পষ্ট স্বপ্ন নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে আছে। যে স্বপ্ন এগিয়ে যায়....! কখনো আবার স্বপ্নের মৃত্যু হয়। কখনো জ্বলে উঠে। জ্বলে উঠে প্রতিশোধের আগুনে। আবার হয়তো স্বপ্নেরা এক হয়......! যেখানে জমাট বাঁধা কষ্টগুলো তার অদৃশ্য আলোছায়ায় ভেসে উঠে।
জনি । এক বছরের একটি শিশু। যে শিশুর স্বপ্নের মধ্যমণি তার মা। শিশুটি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে খোঁজে তার মাকে। মাঝে মাঝে অস্পষ্ট সুরে মা বলে ডুকরে ডুকরে কাঁদে। কান্নার প্রতিধ্বনি ভেসে উঠছে আকাশে-বাতাসে। ক্ষিদের জ্বালায় বারবার চেষ্টা করছে মায়ের দুধপান করতে। ঠেলে বুকের উপরিভাগে উঠেও পড়ে যাচ্ছে শিশুটি। কিন্তু পারছে না। মা-যে আর এই পৃথিবীতে নেই এটুকু বোঝার বয়স হয়তো তার হয়নি। এভাবেই কিছু সময়········কিছু অদৃশ্য স্বপ্ন ছুঁয়ে যায়·······ছুঁয়ে যায় বাস্তবতার নিরিখে।
একটি গল্পের সামান্যতম উপাখ্যান জন্ম দিলাম মাত্র। এর কালরেশ এখনও বলা হয়নি।
এইতো কয়েকদিনে আগে ফলাও করে পত্রিকায় প্রকাশ হলো আমার এলাকার এই ঘটনাটি। সিলেটের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী রাজনগর উপজেলার মরিচা গ্রামের গৃহবধু রুবি বেগমকে গত ৯ অক্টোবর রাতে নির্মম ভাবে শ্বাষরোদ্ধ করে হত্যা করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকরা। তিন সন্তানের জননী গৃহবধু রুবি বেগমকে হত্যা করে নদীর পাশে রেখে যায় তার ১ বয়সের জীবিত কন্যা শিশু কন্যা জনিকে । পরদিন গ্রামবাসী ক্ষেতে আসলে শিশুটির কান্না শুনে এগিয়ে এসে দেখতে পায় মৃত গৃহবধু রুবি ও তার জীবিত শিশুটি মৃত মায়ের বুকের দুধ খাচ্ছে ও কান্নাকাটি করছে।
হিসেবটা এমন.......শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার! অতঃপর একটি মৃত্যু! কিন্ত...........এখানেই শেষ নয়। একটি মৃত্যুর জন্য আরেকটি মৃত্যুর অপেক্ষা ।
নির্বাক জনি
আশিউর্দ্ধো বৃদ্ধা। শিশু জনির নানি। জীবনের শেষ অধ্যায়ে পাড়ি দিবেন এই বৃদ্ধা । অথচ মা হারা শিশুকে নিয়ে কোথায় যাবেন এই বৃদ্ধা। মায়ের বুকের দুধ থেকে বঞ্চিত শিশু জনি সর্দি ,কাঁশি,জ্বর ও পেটের পীড়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারের চিকিৎসাধীন রয়েছে। অসহায় বৃদ্ধার দু'চোখ দিয়ে বইছে অশ্রূর ধারা, দেখলে মনে হয় বৃদ্ধা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। একদিকে মেয়ে রুবির নির্মম মৃত্যু ঘটনার শোক, অন্যদিকে এক বছর বয়সের নাতি জনি গুরুতর অসুস্থ।
জনির নানি সিতারা বেগম
সম্প্রতি সারাদেশে ঘটা করে পালন করা হল কন্যা দিবস। কিন্তু জনির মতো কন্যা শিশুদের ভাগ্য বদল হয়না। দিন দিন বাড়ছে জনিদের সংখ্যা।
বন্ধ হয়নি নারী নির্যাতন। বরং দিন দিন এর মাত্রা ও ধরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া পত্রিকার পাতায়ও সবার কথা আসেনা। অনেক নির্যাতনের ঘটনাই থেকে যায় খবরের অন্তরালে। খবরওয়ালা মানুষ হয়েও আর কত খবর দিব জনিদের। মাঝে মাঝে নিস্তব্দ পাঠক হয়ে নিস্তব্দতার ভঙ্গিমায় শুধুই পড়ে যাই। পত্রিকার এ পাতা থেকে সে পাতা। পড়া আর শেষ হয়না। আর কতকাল পড়বো ওদের খবর ? ওদের ভাগ্যের কি হবে ? ওদের ভাগ্যের কি পরিবর্তন হবে···?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৮