বিয়ের প্রায় তিন মাস হয়ে গেলো, এখনো নুসরাতের মুখ থেকে আপনি আপনি যায় নি। আমি ব্যাপারটা নিয়ে খুবই বিরক্ত। আমিও কিছু বলি নি, তবে ভাবছি কিছু একটা বলতে হবে। কিভাবে বলি চিন্তা করতে করতেই নুসরাত কফি নিয়ে এলো, আমি নুসরাত কে কিছু বলতে পারি না এই কফির কারণেই, এত সুন্দর করে কফি বানায় যে, এক চুমুক খেলে প্রশান্তিতে মন ভরে যায়, আমিও এত সুন্দর করে কখনো বানাতে পারি নি।
নুসরাতকে কফি বানানো আমিই শিখিয়েছিলাম। নুসরাত কখনই কফি মেকার ব্যবহার করে না, হাত দিয়ে এত ভালো কফি যে বানানো সম্ভব টা আমার জানা ছিল না, সব কিছু নিখুঁত, এই তিন মাসে সকাল বিকেল মিলিয়ে অনেক কফি খাওয়া হয়েছে, কখনো স্বাদে একটুও তারতম্য পাই নি। মাঝে মাঝে মনে হয়, সে একটা রোবট। সে ওয়াশসিং মেশিন ব্যবহার করে না, ওভেন ব্যবহার করে না, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করে না, অথচ আমি তাকে সব কিছুর ব্যবহার খুব আগ্রহ নিয়ে শিখিয়েছিলাম।
অফিসে যাওয়ার সময় প্রতিদিন কি সব পরে ফু দেয়া তার প্রতিদিনের কাজ, আমি বিরক্ত হই না, আমার কাছে ভালো লাগে। একদিন অফিস থেকে ফেরার পথে ভাবলাম তার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাই। আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল, যদি কখনো কাউকে ভালবাসি তাহলে তাকে রেশমি চুরি কিনে দিব। ঢাকা শহরে রেশমি চুরি পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার , পুরাণ ঢাকায় অনেক খোঁজার পরে, চকবাজারের এক দোকানে পাওয়া গেলো, চকবাজারে পাওয়া যায় না এমন জিনিষ নেই।
চুড়ি দেখে নুসরাত এতো খুশি হোল, এই তিন মাসে অন্য কোন কিছু দিয়েই এত খুশি করা যায় নি। আমি মনে মনে ভাবি এখনকার মেয়েরা তো এমন নয়, নুসরাত কেন এমন ?
একদিন নুসরাত আমাকে বলে, "আমার কিছু মাটি লাগবে" আমি অবাক হয়ে বলি মাটি দিয়ে কি হবে, আর ঢাকা শহরে তো মাটির খুব অভাব। তারপরেও দারোয়ান কে দিয়ে কিছু মাটি এনে দিলাম। পরের কয়েকদিন দেখলাম কি একটা কাজে অনেক বিজি, মাঝে মাঝে ছাদে যায়। আমি ভাবলাম কোন ফুলের গাছ লাগাবে হয়তো।
একদিন রাতে হটাত করে নুসরাত আমাকে বলে, "চলোনা ছাদে যাই।"তার "তুমি" কথা শুনে আমি অনেক অবাক হয়েছি, আবার খুশীও হয়েছি।
ছাদে যেয়ে দেখি নুসরাত একটা মাটির চুলা, চুলার উপরে মাটির পাতিল, আর খড়ির আগুনে কি যেন রান্না হচ্ছে। আমি কিছু বলার আগেই, নুসরাত বলল, কোন কথা বলবে না। চুপ করে বসে থাকো।মনে হোল অন্য জগতে চলে এসেছি, আমি বসে থেকে তাকে দেখতে লাগলাম , তাকে দেখতে অন্যরকম লাগছে, আলোর সাথে মানুষের চেহারার যে পরিবর্তন হয় তা এতদিন গল্প উপন্যাস এ পড়েছিলাম। আজ নিজের চোখে দেখলাম।
নুসরাত আমার জন্য কফি বনাচ্ছে। কিন্তু মাটির চুলায় কেন বানাতে হবে তা বুঝার ক্ষমতা আমার নেই। আমি সুধু তার কাজ দেখছি, সবকিছু কত নিখুঁত। মানুষ এতো নিখুঁত হয় কিভাবে তা আমি ভাবতে লাগলাম।
একটি মাটির পেয়ালা, চাঁদের আলোতে আমি আর নুসরাত কফি খাচ্ছি, এক পেয়ালাতেই আমরা কফি খাই। আমি পেয়ালার যে পাশ থেকে খাই, নুসরাতও সে পাস থেকেই খায়, এটাই অলিখিত নিয়ম,আমি মনে করি এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে আর একটিও হতে পারে না। কফিটা আসলেই অন্যরকম হয়েছে, অন্যরকম স্বাদ। আমার কেন জানি মনে হোল, আমিই এই জগতের সবচেয়ে সুখী।
আকাশে অনেক বড় চাঁদ উঠেছে, চাঁদের আলোয় পৃথিবীটা কেমন মায়াময়য় লাগছে, যেন কোন রূপকথার দেশে আমি। আকাশে চাঁদ, সেই আলোতে নুসরাতকে একদম অন্যরকম লাগছে, মনে হচ্ছে কোন একটা দেবী আমার সামনে, মানুষ এতো সুন্দর হয় কিভাবে , ভাবতে ভাবতেই, নুসরাত খিলখিল করে হেসে উঠলো, আমি ভয় পেয়ে গেলাম। সে আমার হাত ধরে বলল, "এমন করে তাকিয়ে আছ কেন ?" আমি বললাম আমার কেন জানি ভয় করছে! "একটু কাছে আসবে"?
নুসরাত আমার কাছে আসলো, একদম কাছে, এর চাইতে বেশি কাছে আসা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৩:১৮