টঙের দোকান থেকে পান নিয়ে চিবাতে চিবাতে রাস্তায় হাঁটছি, গন্তব্য বই মেলা যাওয়া। যাওয়ার কথা ছিল রুপার সাথে, কিন্তু রুপার সাথে দেখা করা খুব জরুরী, ওর বাসায়ও যাওয়া যাচ্ছে না, নতুন বাসার ঠিকানা জানিনা। আমাকে এত কিছু জানতে হয় না। মহাপুরুষের জীবন হবে সাধারণ জীবন থেকে আলাদা।
বাবার কথাটা এখনও স্পষ্ট মনে পড়ছে,
হিমালয় তুমি অতি তুচ্ছ ব্যাপার লইয়া চিন্তা করিয়ো, জগতের মানুষ তুচ্ছ ব্যাপার তাচ্ছিল্য করে বিধায় সত্য অবলোকন করতে পারে না।“
রুপার সাথে দেখা হওয়ার কারণ খুব তুচ্ছ, তাকে একটা বই দিতে হবে , এবারের বই মেলায় আমার একটা বই প্রকাশিত হয়েছে, যদিও লেখকের নাম এর জায়গায় লেখা “শূন্য” মানে আমার মামাতো ভাই বাদলের নাম দেয়া।
আজকাল অনেকেই আমাকে চেনে, রাস্তায় দেখলেই সালাম দেয়। সালামের উত্তরে আমি শুধু মাথা ঝাঁকাই। একবার তো এক ভদ্রলোক কি বলতেছে আমি মাথা ঝাঁকাচ্ছি, তিন চারবার ঝাঁকানোর পর মনে মনে ভাবছি এত সালাম দেয় কেন? পরে দেখলাম ভিক্ষা চাচ্ছে।
ঢাকা শহরে ফকির জা ইনকাম করে, অন্য পেশাজীবী কেউ এত করে কিনা সন্দেহ আছে, রাজনীতিবিদদের কথা আলাদা, তবে তারাও এক প্রকার ফকির।
ফার্মগেটে এক ফকির এমন ভাবে ধরল, পাঞ্জাবী আর ছাড়ে না। এখন আমি কি করবো ? আমার পাঞ্জাবীর পকেট নাই, দেখালাম তারপরেও ছাড়ে না। এখন কি করি!
ভাই আমার কাছে ভাংতি নাই।
-আমার কাছে আছে কত টাঁকা ভাংতি লাগবো কন ভাই।
-দেখো তোমার কাছে কত আছে, গুনতে থাকো।
সাথে আমিও ফকিরের টাঁকা গুনেছি, সব মিলিয়ে ৩৭০ টাঁকা, বাজে সকাল ১০ টা , বাকি দিন তো পরেই আছে। ফকিরটা একটা একটা করে টাকা গুনে আমার হাতে দিতে দিতে এখন সব টাকা আমার হাতে, মনে মনে ভাবছি এই টাকা গুলি নিয়ে ভেগে গেলে কেমন হয়, এমনিতেই হাতে একদম টাকা নেই, চিন্তা করতে করতেই আরেক ফকির এসে হাজির। টাকাগুলি নতুন ফরিকের হাতে ধরিয়ে দিলাম, প্রথম ফকির কিছু বুঝে উঠার আগেই স্থান ত্যাগ করলাম।
বই প্রকাশ করে আমি এক প্রকার ভাষাবিদ হয়ে গেছি। বইমেলায় যাওয়ার আগে বাংলা একাডেমীতে যাওয়া লাগবে, হরতাল শব্দের আভিধানিক অর্থ কি জানতে হবে। এবং আরও একটা শব্দ যুক্ত করতে হবে লবতাল, যেদিন হরতাল থাকবে না সেদিন হবে লবতাল।
এইযে মিস্টার আপনার কাছে ১০০০ টাকা ভাংতি হবে? একটা সোনালী কণ্ঠের মেয়ে পিছন থেকে ডেকে উঠলো। আমি পিছন ফিরে তাকালাম, দেখলাম লম্বা নীল ড্রেস পরা একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে, চোখে কাজল দেয়া, দেখতে মার্জিত লাগছে।
এখন ভাবছি ভাংতি বলতে মেয়েটি কি বোঝাচ্ছে? ভাংতি মানে তো ভেঙ্গে দেয়া, সেই হিসেবে জগতের সব কিছুই ভাঙ্গা সম্ভব। ১০০০ টাকা তো অতি তুচ্ছ ব্যাপার। আমি টাকার নোট টা ছিঁড়ে দুইভাগে ভাগ করে তারপর মেয়েটিকে দিলাম।
বইমেলায় রুপার সাথে দেখা হয়ে গেল। রুপার সাথে একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে, ছেলেটার কাঁধে একটা বিশাল সাইজের ক্যামেরা। মনে হল ছেলেটার চেয়ে ক্যামেরার লেন্স বড়। সাধারণত এত বড় লেন্স দিয়ে মুভি অথবা নাটক এর কাজে ব্যবহার করা হয়। শুধু ছবি তোলার জন্য হলে অপচয়।
রুপা বিভিন্ন এঙ্গেল এ ছবি উঠছে, আমাকে দেখে তার ভাবের কোন পরিবর্তন হল কিনা বোঝা গেল না। রুপা আমার সাথে কয়েকটা ছবি উঠালো।
রূপাকে রূপকথার মতই সুন্দর লাগছিলো। কিছু মানুষের দিকে তাকালেই সৌন্দর্য বাড়তেই থাকে। বই এর কথা রূপাকে বলা কোন অর্থই হয় না, সে বিশ্বাস করবে না, বরং সে হেসেই উড়িয়ে দিবে।
আমি হাঁটতে থাকি অজানা পথে, যে পথ কখনো ফুরায় না। গন্তব্যহীন পথের শেষ দেখার বড় ইচ্ছা আমার...