{১}
কাঠদস্যু হানা দিয়েছিলো চন্দন বনে
লুটেরা কুড়োল ঝুলিয়ে রেখেছিলো তারপর রাত্তিরে ডেরায় ফিরে
... সুঘ্রাণে সুঘ্রাণে তার আজ অনিদ্রা রোগ
{২}
দোলনায় দোল দেখে দেখে কিশোর ছন্দ শিখেছে
{৩}
পুষ্প অধীর দেখে,
কার হাসি থেকে প্রজাপতি উড়ে উড়ে যায়
হাসিন পাখায়
{৪}
দক্ষরেখায়
আটকে আছে
কে কে?
{৫}
এবার সব কৃষ্ণপক্ষের কালো তুলে নিতে পারি
দাহকাল অচেনা সময় নয়, এবারও বুকের দাহ
দুর্বহ নয়; এবারও ভবিষ্যত বলে দিতে পারি,
-- মনপুরা দীঘিতে ডুব দিয়ে পারঙ্গম শ্বাসে
তুলে আনব মোহর কলস; অগ্নিযুদ্ধে আমি সেই
রূপকলসে নেব জল। মোহর তোমার।
{৬}
তাপমাত্রা বাড়ছে
ফ্যান, এসি পুরোদমে এবার
হাতে বোনা হাফ সোয়েটার
তুলে রাখি
তুলে রাখি আঙুলের কারুকাজ
কাছের অভয়,
গ্রীষ্ম অসহ্য সময়।
{৭}
কী ভেবে যেন, ঠোঁট ছুঁইয়ে একবার নক্ষত্রে উড়িয়ে দিয়েছিলাম রুপোলি কাগজের প্লেন !
{৮}
আজ এই সবুজতম বৃক্ষ হোল তোর ঘুমের আশ্রয় হিরন্ময় পাখি
...... শ্রাবণ নিবিড় ছিলো
{৯}
আর এইসব সুচরিত বসন্তদিনও একদিন বর্ষামুখর হবে, জানি
{১০}
একটা আলোচিল পথ ভুলে গেছে
তার পিছে উড়ে উড়ে দিন হারিয়েছে
{১১}
দিন যায় দিন মুছে যায়
আমরা চেপেছি শেষ সন্ধ্যার ট্রেন
দেন-দরবার, গল্পকথা, প্রাপ্তি-
অপ্রাপ্তি সব স্থির বসে আছে
টেলিফোন তিন তারে বসা
দোয়েলের চুপ শরীরে;
অন্ধকার হবার আগে
চোখে জমিয়ে নেই পাখির পালক
বহুভংগীর চুপ চুপ শাদা-কালো’র প্রহর
{১২}
রূপকথার দেশ বাদামী টয় ট্রেন; পাহাড়ের নাম সবুজমেঘ
পাখির নাম মুক্তাচোখি, পথের নাম কাশপথ।
পাহাড় দেশের নূপুর নূপুর গাড়ি তার পায়রা জানালায়
ঘুমমেঘ ভোরকুয়াশা। জানালায় মুখ বাড়ালে
আলো হরিণসোনা, ভুলভাঙা ভোর
আর বাৎসল্যের ফুলঝুড়ি
পুনর্বার বার বার মুখরিতার মুখ
{১৩}
দিগন্তরেখা থেকে আকাশে হীরক জ্বেলে মরে গেল লক্ষ আতশ। আমি এক অতি দীর্ঘ ময়দানের মাঝখানে একলা দাঁড়াই। আলোর ঝলকে সুতীব্র নীল হয়ে আসে আকাশের মুখ। খানিক পরের অদৃশ্য হবার শোকে যেন সে গহন ব্যথায় নীল। অদৃশ্য হতে যার আপত্তি আকাশ তারি নাম। আমার নাম আকাশ নয়। ময়দানের সুরেলা বাতাসে আমি দৃশ্যমান, দৃশ্যমান ঘাসে আর পায়ের ছাপে ছাপে। ময়দানের একধারে পুরোনো জমিদার বাড়ি- কী এক করুণার মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! আমি আছি একটি বিধ্বস্ত খেজুর গাছের নীচে। দুই দিক কাটা কাটা গাছ। মধুরস বয় বলে বড় কষ্টও বয়। আমি তারই নীচে দাঁড়িয়ে দেখতে পাই আকাশে মনুষ্য দীপালি। আজ কার বিজয় হোল, নাকি পরিণয়, ধর্ম উৎসব কোনো...? ক্ষণিক দীপালি জ্বেলে মরে গেল লক্ষ আতশ। আকাশের নীল তাই ব্যথায় সুনীল। আমি আমার ডাকনাম ভুলে গেছি...
{১৪}
চোখ দর্শন মন দর্শন মিললে বাঁধন হবে
তবু চোখের দেখার পাগলামী ছেড়েছে কে, কবে?
{১৫}
সমুদ্র জমিয়ে রাখে
কত শত দুপুরের স্নান
অনুনয়ে চোখে রাখে
ধীর নদীর অভিমান
{১৬}
রঙ জমিয়ে এসো শব্দমেঘের দল
এই মৃত আকাশের খোলা চোখ
বন্ধ করে দিতে অথবা প্রাণ এনে
দিতে তাতে বুকে ধোরো এক নদী
জল, সজল হোক মন-কবিতানগর
{১৭}
আশৈশব হাঁটছি, দৌড়ুচ্ছি, পড়ে যাচ্ছি
আবার উঠে পড়ে বাটারফ্লাই স্ট্রোকে পেছনে
ঠেলে দিচ্ছি বুড়িগঙ্গার কোলেস্টরেল, এগিয়ে যাচ্ছি
পেছনে মিলিয়ে যাচ্ছে কায়দার ল্যান্ডস্কেপ, প্লাস্টিক শহর
এগিয়ে আসছে অব্যর্থ ডাকের কার্নিভোরাস বাগান
{১৮}
কিশোর এক সন্ধ্যা নদীর তীরে উদাসী হওয়ার সুর সেধে সেধে ঘুমিয়ে গেছে
{১৯}
মুহূর্তগুলো
এলোমেলো ছিলো দিক ভুলে,
আজ এক হয়ে ঝিলমিল
তোর নাকফুলে।
{২০}
এখন ফসলের মাঠ ধুধু, ফসল চিহ্নবিহীন। বাগান তবু ফুলরঙমাতাল। প্রকৃতিও সংসারের কাজ ছেড়েছে। বাসন্তী হয়েছে।
{২১}
রূপান্তর শেখো
সন্ধ্যার কাছে এসো,
ইতিহাস পাতার ভয়ংকর সব আততায়ীর মত
তারপর অদৃশ্য হয়ে যেও
রক্তাক্ষর দেখে মানুষ বলুক,
‘কবিতা... কবিতা’
{২২}
জুড়তে জুড়তে অন্ধ হয়ে গেছে রূপপুরের ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি।
{২৩}
রাত্রি তোর চুলের ফিতেয় অঙ্গ বেঁধে রাখি, রুখে দেই চন্দ্রছোবল।
{২৪}
কিশোরের পাহাড় ভ্রমণকবিতা এমনইতো, পিচ্ছিল সর্পিল পথের শেষে সোহিনীর ডাক। হরিৎ আলোর ঘর পাহাড় চূড়ায় দেখে দেখে কিশোরের নিশিপাওয়া সবুজমাতাল চোখে শোভনসন্ধ্যা বসে যাওয়ার রাইম। ইশারা সমেত সোহিনীর হারিয়ে যাবার ছন্দ।
{২৫}
ক্রসিং ছিলো দুই ট্রেনে
একটা ভ্রমণ জমে আছে অল্প একটা স্থির ক্ষণে
লালমাই স্টেশনে
{২৬}
একটা পথের আজ নিলামের ডাক। ঝড়ের পাতারা সব শ্বেতপাথরের দোয়েল হয়ে তার বাঁকে মুগ্ধমুখ। একটা পথের পলিতে গাভীর চোখের জল, ধুলো মিশে তার সাথে প্রতিমার মাটি। পথের হাওয়ায় ওড়ে সুমাত্রা ল্যাভেন্ডার, বনমৌরির ঘ্রাণ। তার দুইধারে কৃষ্ণকালো ফুল, নাম না জানা ফুল। একটা পথের শয্যায় শিশিরের ঘুম, হরিতকি-বয়ড়া ফল, যষ্টিমধু। একটা পথের আজ নিলামের ডাক। সেই পথ আমার ঘর ছিল। আমি চরম অসভ্যতায় তাকে নিলামে তুলেছি।
{২৭}
প্রতিদিন নিয়ম করে রেডিওর নব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভিনদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনি। হাওয়ার গতিবেগ, তাপমাত্রা, ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা, দিন-রাতের পরিধি... এইসব। ছেলেবেলাতেই পড়া ছিল, আবহাওয়ার সাথে মনের সম্পর্ক আছে।
{২৮}
সেই হেমন্ত বিকেলের আলো নিজে নিজে
ছাপ রেখে চলে গেছে আড়িয়ালখাঁর কাঠব্রীজে।
{২৯}
ঘোলা চোখে ঠিকরে ওঠে রোদের চিবুক
ভ্রু-পল্লব অরণ্যে উড়ানের ঘ্রাণ রেখে যায়
হরিদ্রানগরের ঝাঁক ঝাঁক সবুজ বাবুই
তিলচিহ্নে জড়ো করো জীবনানন্দের সকল নক্ষত্র...
......করাতের সিম্ফনি শুনি, মৌ
মাতাল মিথ্যে বলে না...
{৩০}
পুষ্প বিমর্ষ কিনা বোঝা দায়। সে যখন বিমর্ষ হয় তখন তার মরে যাবার সময়। ওটা মন খারাপ কিছু নয়, শেষ যাত্রার চিহ্ন। মনে রেখো, কোনো কোনো কবিরও আছে পুষ্পধর্ম।
{৩১}
দূর আমাজানের পথে বরষার ধারা
এইখানে সাহারার পথ, হারানো অর্কিড
আচমকা মুখ ফিরে চাও
বৃষ্টি দেখি
{৩২}
শিমুল আমার শিমুল বন্ধু ভালো
মুগ্ধরঙ পুষ্প বৃক্ষ ঋষি,
সেলুলোজে বন্ধুত্ব কোমল নিবিড় তোমার
ব্যথা জানো না বন্ধু
উষ্ণতা জানো...
নিদ্রা দিতে জানো
{৩৩}
কার হস্তরেখায় জেগে উঠছে অরুণলেখা, আমার জাজ্বল্যমান
বর্তমান!
{৩৪}
সন্তর্পণে নিভে গেছে আলো। উনুনে হরিমতি রাতের রান্না চাপায়। পাটখড়ি পুড়ে যাচ্ছে দ্রুত। ছড়িয়ে যাচ্ছে অঙ্গার হাওয়ার তোড়। দূরে বসে রামকানাই। তার চোখে পুরো দৃশ্যটা অসাবধানী আলোর মত খেলে যাচ্ছে...
{৩৫}
করবি স্নান?
করবি পান?
মরীচিকা, মরূদ্যান
জানরে প্রাণ
{৩৬}
ফুটেছিল ব্যালকনিতে অচেনা রোদ্দুরে
সমস্ত দিন পরে ফুল ঘুমিয়ে পড়ে
{৩৭}
বন বলতেই গদ্যসুন্দর ঋজু অরণ্যবিন্যাস আর
পার্ক মানেই কি হারানো দিনের কবিতা?
সিমেন্ট বেঞ্চিতে ঘাড় বাঁকানো চড়ুই
বাদামের খোসা, সিগারেট ফিল্টার
বেলীর ঝাড়ের ধারে উচ্ছিষ্ট,
ক্লোরোফিলে রোদ সঞ্চয়
বাতাসে পাল্টে যাওয়া যাবতীয় রঙ,
তার বহুবিধ শেড, গন্ধরাজের অংকুরপাতায়
শিশির প্রিজম, তার গোড়ালিতে খোলা
কনডমের প্যাকেট...
এ মুহূর্তে পার্কে ঢুকছে দু'জোড়া মুগ্ধ চোখ
{৩৮}
মুক্তি দিলেনা
প্রাণে বন্দিনী
{৩৯}
বিউটিপার্লার এর নাম দিলাম রূপঘর
- কবিতারা সাজকথা
{৪০}
আমার ডায়েরিতে বৃক্ষের কাছ থেকে চেয়ে নেব জীবনের শেষ অটোগ্রাফ
...... কবিতা মানেই নিজের সাথে কথা
{৪১}
যুগলসাঁতারে ঐ পাড়ে যাচ্ছি
দৈর্ঘ পরিমাপ সর্বদা বিভ্রান্তিকর
স্থলচারীতা অসহ্য
{৪২}
এই বেলা
তীব্র ছুটে যাচ্ছে আলোর চিতা
এই আলো আলো সোনার কাছে সঙ্ঘচারী শীত
এই বেলা
ওষ্ঠ বিবশ করা চাঁপাগন্ধ মদ মৌতাত
আমি চুর
... যদিও দুপুর
{৪৩}
একলা সরল আলো-মন,
না জেনে পেরোল কার মনের প্রিজম
{৪৪}
এইসব সময়ের জানা নাই কিছু
তার কিছু জানা নাই কোথায় হারালো
কাঁচপোকা ঝিলমিল পাখনাটা তার
- কপালে জ্বলেছে কার
নিভছে ভীষণ
দেখা নাই তার - বিনতা আপেলগাছ,
হরিতাভ মেঘের আদল;
কার হাতে লিপিকলা,
ঝর্নাধারার অক্ষর...
ধাত্রীবিদ্যা আজ অবিশ্রুত নাম
{৪৫}
নীল দরিয়া ছেড়ে দিল -
দেখি সারেং কেমন মুক্তি পাস
{৪৬}
অন্ধকারের গুল্ম-লতাও আলোরেখা চেনে -----
{৪৭}
বিদ্ধ আছে একটা শোক, চুলের আবছায়ায় হাসিচোখ ফুল।
{৪৮}
আমি তার সব কথা সে আমার চুপ।
{৪৯}
কালার ব্যাংক-এ খুঁজে পাবো এক বৃন্দাবন রঙ?
{৫০}
চিঠি দিও
খামে বন্দী এক টুকরো
তুমি
{৫১}
ডায়েরির যত অক্ষরে ফুটে আছে খুনটানা পপি
না না ডায়েরিতে কবিতা লিখো না
{৫২}
ঘুমের মাঝি
সাঁতার শিখিনি
ঘুমের মানে কী
চক্ষু খুঁড়ে
স্থান দিয়েছি
একটি গোমতী
{৫৩}
আমি তো মুখর সব কবিতার কথা
আমাকে নিয়েই তার যত মৌনতা
{৫৪}
ঘুম সুরে কেনো জাগে নাচের নূপুর
সেই নূপুরে ভাঙ্গে যে ঘুম
যেন একটা একটা করে ভেলিয়াম...... পদ্যহরফ হয়ে জাগে
{৫৫}
সন্ধ্যাকিশোরী, রাতের বয়েস হলে তোমারও কি মনে পড়ে কৈশর?
{৫৬}
তার প্রিয় কোন বাগানে ফুল জ্বেলে দিতে আকাশও বৃষ্টি হয়ে ঝরে, সজল চোখ দূরের বার্তা কিছু নয়।
{৫৭}
পৃথিবীর প্রায় সব আয়নার পারদ প্রলেপে কিন্তু ভুল প্রতিবিম্ব।
{৫৮}
সাত সুরে বয়ে গেলে ঐ চোখকে ঝর্না বলি আমি।
{৫৯}
কুয়াশাআড়াল এই হুহু টান ভোর
তোমাকে দেখিনি আমি ডুবে গেছি মধুমতি
নদী
{৬০}
নীরবতা এলে শেষমেশ, আমরা সবাই বুঝি আমরা যে কে...
{৬১}
দিনে চেনা বহুজন
রাতে এক জেগেছে আপন
{৬২}
তীব্র শীত...
কার নামে ওম কুসুম?
কার নামে ভুল প্রসূন?
{৬৩}
এখন শহরের সব আইসক্রিম পার্লারে শীত এসে ঘুমিয়ে পড়েছে
{৬৪}
ঘোর কুয়াশায় হঠাৎ কমলারোদ কারো কাছে আহ্লাদী উষ্ণতা নিয়ে আসে তো আসুক। আমার কাছে এ আলো অযথা হল্লার মত মনে হয়, অস্পষ্ট মগ্নতার কোকুনে মনে হয় আলোকীট !
{৬৫}
সব ঘুম ফেরানো রাত ঘিরেছে আজ ঘুম ঘুম রাত
{৬৬}
দিনে ছোটা, রাত ধীর - স্বপ্নেরা ভালো
দিন ছোট রাত বড় শীত তাই ভালো
{৬৭}
কৃষ্ণচূড়া কেন অভিযোগ কানে তোল না?
পুষ্প ফোটালে দেহে, রক্ত জাগা্লে না!
{৬৮}
অস্পর্শী মদে মাতাল তৃষ্ণান্ধ চোখ
{৬৯}
আলো নিভে যাচ্ছে ...
হায় রাত্রি নিঠুর, তোমাতে বিলীন হবে বলে খানিক নাহয় বসেই ছিল সন্ধ্যা শ্যামল তোমার কিনারে
{৭০}
সকাল বিকেল খোঁজ খবর, যত্নআত্তি। রক্তপ্রসাদ ভোগ। পিঞ্জর খাঁচায় বৃষ্টিবনের মুক্তির উল্লাস। ভুল নামে ডাক দিও না ময়না।
{৭১}
২০১০ – ২০১১ -২০১২...
এভাবেই সময়সংখ্যা তার নিয়মে বেড়ে চলবে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে পুরু হয়ে আসবে অবগুণ্ঠনের ভাঁজ। আমাদের প্রকাশ থেকে ধীরে ধীরে হারাতে থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত সব অক্ষর। ধাবমান সময়ের কাছে এ আমার সবথেকে বড় অভিযোগ।
{৭২}
কারো কারো তো গন্তব্যই থাকে না
অথচ দেখো কী শক্তিই না ধরে শরীরে!
এই ধরই না হাওয়া, আগুন...
আরো বলতে পারি আঙ্গুল গুনে গুনে
তুমি আমার পায়ে চলার পথ
আমারও কোন গন্তব্য নেই
{৭৩}
শরীরে শরীর লাগে না যেন বিপরীত অতিক্রমের ডিঙা
শুধু চলনের ঢেউয়ে থেকো নৃত্যমুখর
{৭৪}
তুমি দেখছো জানালায় মেঠোপথ, ঐ মাঠের সিঁথিরেখায় ছন্নছাড়া খুশিতে ছুটে যাচ্ছে সকাল। তার পেছনে পেছন ছুটে চলেছে একঝাক শাদা হাঁস, হাতে কাশফুল সবুজিনী মেয়ে তার ঝাঁকে, আর এক কৃষ্ণকিশোর। তোমাদের বাড়ি, তোমার জানালা, তোমার ঘরটি এখন প্রক্ষেপণ প্রকোষ্ঠ...
{৭৫}
মুখ ছুঁয়েছে রাত আবির
সাতটি তারার এই তিমির
রাতের কালো তীব্র ছুটে
তার মত এক মুখ ছুঁয়েছে,
- তাকিয়ে আছে খুব অধীর
সাতটি তারার এই তিমির
{৭৬}
সন্ধান দাও
গেরুয়া বৃন্ত শাদা শেফালীর বন খুঁজে দাও
নাহয় দেখাও নীল উড়ানের ম্যাগপাই
দেখাও আঙ্গুল তুলে ইশান ঝড়,
ঝিলিক তড়িৎ
বজরার দোলে নিয়ে নাও -
তার গলুইয়ে ময়ূরাক্ষী, বুকে শাদা সফেনের পাল
শুধু দেখাও, তাড়াও...
আমি তাকিয়েছি চৈত্রের চোখ
স্থির
তুমি বৃষ্টির রিমঝিম ঝড়ফুলদোল;
এসো, স্পন্দিত কর
{৭৭}
কবিতারা শিশুকথা আধো আধো বোল। কবিরা অবুঝ।
{৭৮}
অক্ষর খুঁজে দেখো, অন্ত্যমিলেও নোনাজল লেগে থাকে।
{৭৯}
একটা সকাল দেখে কারো শৈশবের কথা মনে হতে পারে।
রাত্রিতে মৃত্যু নয় -
মায়ের স্নেহের কথা মনে পড়ে যায় কারো কারো
---এরকম বালকবেলায় পড়ে থাকে মানুষ
{৮০}
জাহাজের কম্পাসে অজানা কুহক,
চৌম্বক ক্ষেত্রের বিভ্রান্তি নিয়ে
অবিরাম ঘূর্ণায়মান কাঁটায় ছিলো
ঠিকানার অথবা হারিয়ে যাওয়ার নির্দেশ।
একটা নিঃসঙ্গ লাইট হাউজের আলো সংকেত পেয়ে
এই জাহাজের অ্যাংকরে এখন
দারুচিনি অথবা সর্প দ্বীপের মাটি......
.......................................
...................
{৮১}
স্নান শেষে স্নানঘরের আয়নায় সব মুখই সুন্দর
{৮২}
ভোরের রাস্তায় মিন্টু রোড -
বুড়ো বুড়ো গাছ পাতাদের শিশির সমেত ছড়িয়ে দিয়েছে মিন্টু রোড
ভোর হাঁটা মানুষের নিঃশ্বাসে আরো কিছু বাঁচার তাগিদ
বেলা বাড়তেই মানুষগুলো ডানে শাহবাগ, বাঁয়ে কমলাপুর, সোজা মতিঝিলে
ঝাঁপিয়ে পড়ে, নিংড়ে দেয় বুক থেকে ভোরের বাতাস
বেলা বাড়ে - ম্যারাথন ট্র্যাফিকের ভিড় সামলে নেয় সুঠাম সড়ক
অপেক্ষা করে থাকে আবার সকালে কখন
সে বুকে নেবে নাগরিক পায়ের আওয়াজ
{৮৩}
ভোর কখনোবা বিমূর্ত ছাপ নিয়ে ফোটে
বাস্পের ছাঁটে মিস্টিক স্নানঘরের আয়নায়
যেমন আধফোটা হয়ে থাকে
রোদেলার চোখের লেগুন
ভোর কখন হবে অপেক্ষার শেষ
এথেরিয়্যাল মেলোডির
টুংটাং ডোরবেল...
{৮৪}
চোখের নজরে বড় ক্ষয়
নদীর এপাড়ে আমি
ঐপাড়ে শ্যামরেখা গ্রাম
সারাদিন বসে আছি
চোখে চেয়ে রেখাটির
নাচ তোলা বাঁক...
চিরকাল এইদিকে শ্যামসাথে আলোর বিরোধ
কে কার নেবে পরিচয়!
প্রহরে প্রহরে তাই ক্ষয় - চোখের নজরে ধরে ক্ষয়।
{৮৫}
নীল পাউচে রেখেছো পাসপোর্ট
ব্লু তোমার প্রিয় রঙ, আরিয়ানা?
সদ্য রঙ করা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে খুব যে হাত নাড়ালে!
ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁয়ে আকাশে উড়িয়ে দিলে তিনবার আর বিমর্ষ হয়ে গেল একা পাম বন
{৮৬}
ভূমি চাই ইচ্ছেফসলের
কে চায় উপেক্ষার ছিটমহল
{৮৭}
আজকে এমন উলের কাঁটায়
আপনের জন্যে কিছু উষ্ণতা
বুনে রেখো। আজকেটা খুব
কাগজের বিশেষ সংখ্যায় চোখ,
চনমনে চুমুক- লিপটন ধোঁয়ায়।
বিকেলে বেড়িয়ে পড়ার প্ল্যান
সিনেপ্ল্যাক্স নয় বানিজ্যমেলা।
অথবা চুপচাপ পকেট ভরিয়ে তোল
শব্দের মাল্টি কালার মার্বেল...
আজ কিছু করে ফেল, উচিৎ অনুচিত
আজ ছুটি।
{৮৮}
দুই হাতে তুলেছে মুদ্রা
বেলোয়ারি অন্ধ ঝিলিক...
সুন্দর জাগ্রতকারী, নিদ্রাকর কখনো নয়।
বিনোদীর স্বেদবিন্দুর চিহ্ন দেখে শুধু চিনি
-এখন সে কত রাত !
{৮৯}
এই পথ সুদীর্ঘ, সাগরিকা
যাকে তুমি ভাসিয়েছো অন্তর্জলী যাত্রায়
সেই জলে মেশালো সে শেরি মদঘুম, লেবুঘাস সন্ধ্যা নিজন।
সমুদ্র চিরকাল ক্ষমাবতী
জেনো, সে এক উদার পথিকশালা।
{৯০}
মনের দ্রোহিতা বড় নির্মম
সে তুরন্ত ফিরতে চায় দ্রাবিড় দীঘল ভূম
সমুদ্র পুরান
তার চারপাশে উড়ে যায় অবোধ্য কসমিক কণা
আজকাল মন বৈরী ভীষণ
তোমাদের অভয় কথা অপ্রবেশ্য, নিতান্ত সান্ত্বনাহীন
{৯১}
বাঁশিসিদ্ধ জাদুই আঙ্গুল খেলে... এবার অধরে সন্ধ্যা ঘনায়
রোশনির ফুল হয়ে ফোট অয়ি বন্ধা সময় -
দেখ, উপড়ে যাওয়া নখে লেগে আছে পরিখার মাটি, যাবতীয় আত্মরক্ষা...
{৯২}
পুরাণ মতে তিলোত্তমাও অনভিজ্ঞা হলে ফুটতে পারে
ভুলের প্রসূন – কুণ্ঠার হাত থেকে ছিটকে পড়তে পারে
জমানো কসমেটিক, আদরের সাজবাক্স... ওকিছু নয় ...
আজ হঠাৎই খুলতে পারো পুরনো ডাকটিকিটের অ্যালবাম
আর আমারও মধ্যমায় ভার্জিনিয়ার ঘ্রাণ –
ক্ষয়ের রোমান্স...
{৯৩}
তুমি ছুঁয়ে দাও আরও একবার
তুমি ছুঁয়ে দাও ভূমি
আজ প্রাণ ফসলে হেসে উঠি
তুমি ছুঁয়ে দাও আক্রান্ত জনপদ
উঠে আসুক এপিটাফে লেখা মোহন শোভন নাম
ঐ আত্মারা ছড়িয়ে পড়ুক আত্মায় আত্মায়
তুমি ছুঁয়ে দাও
ছুঁয়ে দাও এই ভূমি
ছুঁয়ে দাও আরও একবার যীশু তুমি
{৯৪}
একটা ব্লু রিবন বোতলে পুরে এনেছিলাম শীত পাহাড়ের ঝিম.........
{৯৫}
জিরো পয়েন্ট থেকে ছুঁড়ে দিয়েছি বুমেরাং
{৯৬}
অগ্নি দহন
ছাই প্রমাণ
তুই পোড়ালে
নাই প্রমাণ
{৯৭}
তোর কাজলটানে জমে ওঠা জলবিন্দু ছুঁয়ে দেখেছি প্রিয়দর্শিনী, ভোর ওঠে নি
{৯৮}
ফিরে যেতে চাই
খুব বাড়ি যেতে চাই,
এই নিয়ন আলোর চেয়ে আরো বেশি চাই -
ধ্রুবতারা হও, আমি আকাশে তাকাই
{৯৯}
দূর শাদা পালে যাও ঈর্ষার নাও
আমারে নিও রে মাঝি- মায়াবী
ঘাতক আছে বলে রাখি, ঐখানে
মেঘলার দ্বীপ, পথে ডুবোচর
শব-ডুবুরী আমি পথ চিনি;
নিয়ে যাও যেইখানে এত ভোর
ভাসিয়েছি আহির ভৈরব
{১০০}
অভিশাপ, তীব্র সন্তাপ আর অশ্রু অনুশোচনায় দুঃখ পেও না। দেয়ার আর হানড্রেডস অফ ওয়েস টু নিল ডাউন এন্ড কিস দ্যা গ্রাউন্ড।