somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হিমুরাজ রিয়াজ
একজন আগন্তুক এবং সাথে এক এক্সিডেন্টাল ইন্জিনিয়ার। ধার করা নয়, উপলব্ধিজাত অপছন্দের সত্য প্রকাশ করছি। ৭০০কোটি বুভুক্ষুর মাঝে একজন উদাস পথিক। দিনরাত সহস্র অকাজে ব্যস্ত। অনেকের কাছে উন্মাদ। ভালোবাসতে ভালেবাসি..

ব্যাচেলর ছেলেগুলো

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হুট করে পরিবার ছেড়ে দূরে কোথাও পড়তে আসা ছেলেমেয়েগুলোর গল্প ; হঠাৎ বদলে যাওয়া কোনো জীবনের গল্প ।
মা-বাবার আদরের ঘর ছেড়ে হঠাৎ এই ছেলেমেয়েগুলো একসমুদ্র বাস্তবার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ হিমশিম খায়। কেউ সহজেই মানিয়ে নেয়, কেউবা দিনের পর দিন না জানা কোনো গল্পের চরিত্র হয়ে নিজেকে মানিয়ে ফেলে একসময় । এদের মানিয়ে নিতে হয় ।

সেই ছোটবেলায় কেড্স পায়ে দিয়ে স্কুলে পড়তে যাওয়া থেকে শুরু ; সকালের অরুচিটায় জোর করে খাইয়ে দিতে মায়ের কতো চেষ্টা!!
এই ছেলেগুলোই এখন একটা ১০টাকার বন মুখে গুজে পানি দিয়ে গিলতে-গিলতে ভার্সিটির সকাল ৮টার ক্লাস করতে দৌড়ায়। কেউ হয়তো তাও করতে পারেনা দিনের পর দিন।

কলেজে যাবার সময় যেই ছেলে/মেয়েটা খুঁজলেই বাবার কাছে একশটাকার বা তারও বেশি নোট পেয়ে যেতো,
তারাই হুট করে খেয়াল করতে শুরু করে, দিনের পর দিন শুধু মাত্র যাওয়া আসার রিকশা ভাড়াটুকু অথবা শুধু পায়ে হেটেই ক্লাস করে তারা রুমে এসে দুপুরের খাবারটুকু খেয়ে নিচ্ছে। কারো ল্যাব থাকে-কারো বা কুইজ থাকে। সন্ধ্যা হয়ে যায় ফিরতে অনেকের। দুপুরের খাওয়াটুকু সেই সন্ধ্যে বেলায় হয়তো সেরে নিতে হচ্ছে। অনেকে হয়তো তাও আর পেরে উঠেনা। তাতের পেট পুরিয়ে দেয় অন্য কোনো দশটাকার একটা বন অথবা দুটো পরটা আর একবাটি ডালভাজি।

এই ছেলেমেয়েগুলো হুট করে খেয়াল করতে শুরু করে, দিনের পর দিন হাত খালি থাকা সত্ত্বেও এরা ফোন করে একটাবার বলতে পারছেনা, "বাবা ৫০০ টা টাকা দরকার। সকালে নাস্তা খাইনা গত এক সপ্তাহ। "
বরং দিনের পর দিন বাবা-মা থেকে দূরে থাকা ছেলেমেয়েগুলো মেকি হাসির অভিনয় করে চলে, "আলহামদুলিল্লাহ্। ভালো আছি আম্মা। এমনি ফোন দিলাম। কেমন আছো তোমরা??"। দু-তিনবার ফোন করেও বলতে পারেনা, পকেটটা একেবারে শূন্য।

মেসে থাকা ছেলেগুলোর জীবন যেন বাস্তবতায় আরো পদদলিত হবার অভিশাপ। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাবার অভিশাপ।

দিনের পর দিন রান্না না হওয়া সত্ত্বেও, যখন রাতে মা ফোন করে জিজ্ঞেস করে, "বাবা কি খেয়েছিস? " । গলার কাছে কে যেন তাদের একদলা কাদা এঁটে দেয়, আর বলে দেয়, " এইতো আম্মা, মুরগি ছিলো আজ। সাথে সবজি আর ডাল। নতুন বুয়ার রান্না অনেক ভালো আম্মা। পেটপুরে খেতে পারি। "

রাতে খেতে যার একসময় ইচ্ছে করতো না, সেই ছেলেমেয়েগুলোই হুট করে দুটো বিস্কিট খেয়ে রাত পার করে দেয়া শিখে যায়।

একসময় আলসে লাগতো বলে যেই মা মশারি টানিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো, সেই জীবনটা আজ একটা শক্ত চৌকিতে ঘুমানোর অভ্যেশ করে ফেলেছে । মশার কামড়,পোকামাকড় আর বাতাসহীন ফ্যানের ঘটর ঘটর আওয়াজে কিভাবে ঘুমাতে হয়, তা তারা শিখে ফেলে একদিন।

ক্লাস-ল্যাব-কুইজ-প্রেজেন্টেশন-রিপোর্ট দিনের পর দিন এসবে শূন্য বা মোবাইলের ডিজিট সম নম্বর পেতে-পেতে, ক্যারি ক্লিয়ারেন্স বা ব্যাকলগের খাতায় দুচারখানা সাবজেক্ট এড করা প্রচন্ড ডিপ্রেস্ড এই ছেলেমেয়েগুলো বালিশে মুখ চেপে কান্না লুকিয়ে একসময় ভাবতে শেখে, "আমরা কি বাবা-মায়ের সাথে বিট্রে করছি?? নাকি জীবনের সাথে? "

এমনই এক একটা বদলে যাওয়ার গল্প বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এই ছেলেমেয়েগুলোর।
দিনের পর দিন ঘুমকাতর আর কালি পড়ে যাওয়া চোখ নিয়ে ফোনের ওপাশটায় বদলে যাওয়া ছেলেমেয়েগুলো বলে , "ভালো অাছি, মা। "
এমনই নিরবে বদলে যাচ্ছে প্রতিটা ছেলেমেয়েগুলোর জীবন। যিনি নিরবে এসব গল্পের সাক্ষী হয়ে আছেন, তিনি যেন নিরবেই একদিন প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়ের জীবন খুব ভালোভাবে বদলে দিয়ে যান।
.
- হিমুরাজ রিয়াজ
২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৮
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×