যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়েত-শিবির নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হয়ে কি পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে তা নিয়ে সমঝোতার লক্ষ্যে আলোচনা শুরুর জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি সিপিবির আহ্বান
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিমন্ডলী, যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়েত-শিবিরের নিষিদ্ধকরণের প্রশ্নে একমত হওয়ার জন্য এবং এই ইস্যুর সাথে বিযুক্ত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ আগামী নির্বাচন কি ব্যবস্থায় অনুষ্ঠিত হতে পারে সে বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছার উদ্দেশ্যে দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক আলোচনা শুরুর জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সভাপতিত্বে আজ অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের জরুরি সভায় সিপিবি দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিকে দুর্যোগপূর্ণ ও বিপদজনক বলে আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয় যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করার জন্য ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিপদাপন্ন করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী মুরুব্বিদের মদদে জামায়েত-শিবির দেশব্যাপী চরম সন্ত্রাসী তাণ্ডব শুরু করেছে। জামায়েত-শিবিরের সহিংস তৎপরতায় দেশবাসীর জানমালের নিরাপত্তা আজ চরম হুমকির মুখে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বাড়ি-ঘর, দোকানপাটে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট ইত্যাদির ফলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সামরিক অভিযানের কায়দায় পরিকল্পিত নীল-নকশার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার মতো ঘটনার জন্ম দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের হত্যা, মন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলা, রেলস্টেশন-রেল ওয়াগন-রেললাইনে আগুন ও ভাংচুর, বিজিবির গাড়িতে হামলা, বিদ্যুৎ স্টেশন ধ্বংস ইত্যাদি ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সংঘাতের পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত করে দেশকে অচল করে দেয়ার দ্বারা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতাকে ক্ষুন্ন করার পথ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়েত-শিবির নিষিদ্ধ করার বিষয়টি রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় অথবা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় দরকষাকষির ইস্যু হতে পারে না। এই ইস্যুতে সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির এক হওয়া অত্যাবশ্যক। রাজনৈতিক বিতর্কের অপরাপর সব ইস্যুকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়েত-শিবির নিষিদ্ধ করার ইস্যুর সাথে না মিলিয়ে পৃথকভাবে বিবেচনা ও ফয়সালা করা প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ আগামী নির্বাচনের ব্যবস্থাপনার ষিবয়ে বিতর্ককেও সেরূপ পৃথকভাবেই বিবেচনা করা উচিত। এসব ইস্যুতে বিতর্ককে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। কি ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে ঐক্যমত্য গড়ে তুলতে অপারগতার কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়েত-শিবির নিষিদ্ধ করার কাজটিই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়েত-শিবির নিষিদ্ধ করার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়ে এবং এই বিষয়টি থেকে বিযুক্ত করে তত্তাবধায়ক সরকারসহ নির্বাচনের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অবিলম্বে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি ভাবে প্রয়োজন বলে সিপিবি মনে করে। অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে সে আলোচনা শুরু করার জন্য সিপিবির সভাপতিমন্ডলীর সভা থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সভায় গৃহীত প্রস্তাবে শাহবাগ চত্বরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্জের অগ্রসরমান আন্দোলনকে অভিনন্দন জানিয়ে তার নির্দলীয় চরিত্র বজায় রেখে এই আন্দোলনকে তৃণমূলসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। নবজাগ্রত তরুণ সমাজের প্রতি সিপিবি অভিনন্দন জানানোর সাথে সাথে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য দেশের গ্রাম ও শহরের মেহনতি মানুষের প্রতি বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হয়েছে।
উক্ত সভার প্রস্তাবে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা পরিচালনার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে হামলাকারীদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি জানানো হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা প্রতিহত করার জন্য এলাকায় এলাকায় নাগরিক প্রতিরোধ কমিটির গঠন করে প্রতিরোধ সংগঠিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভার প্রস্তাবে জামায়েত-শিবিরের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের বিরুদ্ধে গ্রামেগঞ্জে পাড়া-মহল্লায় বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দসহ দলমত নির্বিশেষে যুদ্ধাপরাধী জামায়েতবিরোধী সবাইকে নিয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে গণপ্রতিরোধ সংগঠিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভার প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে সিপিবি জনগণের রুটি রুজি, দৈনন্দিন জীবন সংকটের অবসান, জাতীয় সম্পদ রক্ষা, দূর্নীতি প্রতিরোধ, সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানো, সিপিবি-বাসদ ঐক্য অগ্রসর করা সহ বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য ও বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলা ইত্যাদি লক্ষ্যে তার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।
সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সভায় রিপোর্ট পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ এবং আলোচনা করেন হায়দার আকবর খান রনো, মো. শাহ আলম, সাজ্জাদ জহির চন্দন, আলতাফ হোসেন, সামসুজ্জামান সেলিম, আহসান হাবিব লাবলু, লক্ষ্মী চক্রবর্তী ও রফিকুজ্জামান লায়েক।