বয়স খুব বেশি হলে ১২ বা ১৩। নির্ভুল উচ্চারণে মেয়েটি ইংরেজিতে কথা বলছিল, সে কেন শাহবাগে এসেছে। লন্ডনে বসে বাংলাদেশের টেলিভিশনের নিউজে মেয়েটির কথা শুনে আনন্দে চোখে জল এসেছিল। এক নয়, একাধিক শিশু, কিশোর, তরুণ জানাচ্ছিল তাদের শাহবাগে আসার কারণ।
সংবাদকর্মীরা যখন তাদের সাক্ষাত্কার নিচ্ছিলেন, তখন আমি লক্ষ করছিলাম তাদের প্রত্যয়, স্মার্টনেস, চোয়াল শক্ত করে, মাথা উঁচু করে কথা বলার ধরন। আমার মনে হচ্ছিল, তারা যেন বিশ্বকে বলছে, ‘শোনো আমরা ধর্মান্ধ জাতি নই, আমরা দুর্যোগকবলিত সাহায্যপ্রার্থী দেশ নই—আমরা হলাম আইপডে গান শোনা, টুইট করা আধুনিক এক দেশের সন্তান। ফেসবুক দেখছি, আপডেট শেয়ার করছি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে।’ বারবার মনে হচ্ছে, একবার যদি আমার চার বছরের ছেলেকে নিয়ে দেখাতে পারতাম এই বাংলাদেশকে, দুরন্তগতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ।
বেশ কিছুদিন আগে লন্ডনে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল বিশ্ববিখ্যাত ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদ জিম ওনিলের সঙ্গে। নিল সেই ধারণার প্রবর্তক, যে ধারণা বলে, বিশ্বের ১১টি দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীনের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। অর্থনীতি, রাজনীতি, পুঁজি বিনিয়োগের পরিকাঠামো, শিক্ষা ইত্যাদি সূচক বিশ্লেষণ করে নিলের তৈরি ১১ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ আছে প্রথমে। এর সঙ্গে ভারত, চীনকে নিয়ে নিলের করা ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেছে হুবহু। নিল বলেছিলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হবে জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় অংশ, তরুণ প্রজন্ম। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ২০১২ সালে ভারতের থেকে বেশি। ২০০৯ থেকে প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের ওপরে।
গতকালের ‘প্রথম আলো’য় দেখলাম, গুগলের ক্যামেরা লাগানো বিশেষ গাড়ি ঢাকায়। উদ্দেশ্য, সারা বাংলাদেশের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে উচ্চপ্রযুক্তির ছবি নিয়ে গুগল ম্যাপে যুক্ত করা। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশে ইংরেজি সাহিত্যের বই নিয়ে যে উত্সব হলো, তা নিয়ে বিশ্বখ্যাত ইংরেজি সাময়িকী ‘নিউজউইক’ বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে।
ছেলেমেয়েরা ব্লগে লিখছে, টুইট করছে, রাজপথে নামছে রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে, টেস্ট ক্রিকেটে জিতছে, উঠছে এভারেস্টে। আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তৈরি পোশাকের কারখানা—আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে। গত বছর এক হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমান বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে এ শিল্প থেকে। তৈরি হচ্ছে গভীর সমুদ্রে চলাচলের জাহাজ। এ যেন এক নতুন বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।
শাহবাগসহ সব জায়গার সমমনা বন্ধুদের শুধু বলব, ‘আমরাও আছি তোমাদের সঙ্গে। মাগো তোমায় আর কাঁদতে দেব না।’
ড. সুব্রত বোস: সম্মানীয় রিসার্স ফেলো, ইমপেরিয়াল কলেজ, লন্ডন ও কিংস কলেজ লন্ডনView this link