১৫ বছর আগেও মগবাজারের কাজি গলিতে ছিল একটা টিনের ঘর। এখন সেখানে ৮ তালা ভবন, সেখানে ২১টা ফ্যাট। বাড়ির বাসিন্দা এক সময়ে রংপুরের একটি কলেজের প্রভাষক ছিলেন, যদিও লেখেন অধ্যাপক। তার ঘোষিত কোনো পেশা নেই। অথচ তার নামে এখন ৮ তলা বাড়ি।
তিনি নিজেকে সৎ লোক বলে দাবি করেন। তার দল সৎ লোকের শাসন চান। ইসলাম বহির্ভূত জীবন তাদের জন্য নয় বলে বক্তৃতা বিবৃতি দেন। এই লোকটার নাম গোলাম আযম। বলা হয় অধ্যাপক গোলাম আযম – যিনি এখন ৭১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারাধীন।
এই ৮ তলা বাড়ি বানাতে গৃহনির্মাণ ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। মোট অর্থের ৮০ শতাংশই দিয়েছে জামায়াতের এই ব্যাংকটি। আর বাকি ২০ শতাংশ অর্থ গোলাম আযম নিজের। ব্যাংক সাধারণত গ্রাহকের আয়ের উৎস হিসাব করে ঋণ দেয়। যার ঘোষিত কোনো আয় নেই তাকে কি করে ৮০ শতাংশ ঋণ দিল ইসলামী ব্যাংক?
সকল জামায়াত নেতা-কর্মীদের বলছি আপনারাও যান ইসলামী ব্যাংকের কাছে। ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেয় তারা। দেখেন আপনাদের দেয় কিনা।
১৯৪২ সালে জামাতে ইসলামী হিন্দের মজলিসে সুরার বৈঠকে আমীর মওদুদীর বিরুদ্ধেই ইসলাম পরিপন্থি বিলাসি জীবন যাপনের জন্য আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছিল। আবার ১৯৪৫ সালে ইসলাম পরিপন্থি বিলাসী জীবন যাপনের অভিযোগে জামায়াতের ৭৫০ জন সদস্যের মধ্যে ৪শ জনেরই সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছিল। যদিও বলা হয় এরা সবাই ছিল মওদুদী বিরোধী।
২১ ফ্যাটের ৮ তলায় থাকা বিলাসী জীবন কিনা সেটা দেশের সচেতন মানুষের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হল।
এখানে মনে করতে পারি নিজামি ও মুজাহিদের কথা। তাদের ঘোষিত কোনো পেশা নাই। অথচ নিজামীর নামে উঠছে বনানীতে ফ্যাট। মুজাহিদের ফ্লাট তৈরী হয়েছে উত্তরায়। দুইজনই এই জমি পেয়েছেন বিএনপি সরকারের কাছ থেকে – তাদের রাষ্ট্রীয় বিশেষ অবদানের জন্যে। বলাই বাহুল্য বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে সহায়তা করা এবং ক্ষমতায় থাকার সময় বিএনপির সকল কুর্কীতিকে মেনে নেওয়ার ঘুষ হিসাবেই ছিলো এই দুই খন্ড মূল্যবান জমি।
গত চার দলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন জামায়াতের সাবেক এমপির নামে কি কি বিলাশবহুল গাড়ি আনা হয়েছে তারও একটি হিসাব দেওয়া যেতে পারে।
বিএমডব্লিউ কার ও জীপ: জামায়াতে ইসলামীর মোহাম্মদ আজিজুর রহমান চৌধুরী (দিনাজপুর-৬) ও মুফতী মাওলানা আবদুস সাত্তার আকন্দ (বাগেরহাট-৪)।
মার্সিডিজ বেঞ্জ: জামায়াতে ইসলামের মিয়া গোলাম পরওয়ার (খুলনা-৫),
টয়োটা ল্যান্ড ক্রুসার নিয়েছেন: জামায়াতে ইসলামীর মতিউর রহমান নিজামী (পাবনা-১), আবদুস সুবহান (পাবনা-৫), দেলোয়ার হোসেন সাঈদী (পিরোজপুর-১) ও আবদুল আজিজ (গাইবান্ধা-১)
মিটসুবিসু পাজেরো ভি-৬ নিয়েছেন: জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত মোঃ আবদুল্লাহ আল কাফি (দিনাজপুর-১) ও আবু সাঈদ মোঃ শাহাদাত হুসাইন (যশোর-২)।
৫৬ ইনফিনিটি গাড়ি নিয়েছেন: জামায়াতে ইসলামীর মিজানুর রহমান চৌধুরী (নীলফামারী-৩)।
ভলভো- ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
(২)
লক্ষ্যনীয় যে নির্বাচন কমিশনে দেওয়া নির্বাচনী মনোনয়ন পত্রে এই তাদের কারোই উল্লেখযোগ্য পেশার সাথে কোন সত্যতার সংশ্লেষ ছিলো না – এরা সেখানে নির্বিচারে মিথ্যাচার করেছে। নুতন নির্বাচনী আইনের সুবাদে আমরা আম জনতা রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্ন তথ্য জানতে পারছি। ব্যক্তিগত ভাবে আওয়ামীলীগ আর বিএনপির নেতাদের বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ পাইনি। কারন এরা কখনই বলেনা এরা সৎলোক বা সৎলোকের শাসন কায়েম করবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামাতী ইসলামী নামক একটা দল বিগত তিন দশক ধরে দেশ সৎলোকের শাসনের কথা বলে আসছে। "এই সৎলোকদের" বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বেশ কিছু মজার তথ্য পেয়েছি যাতে দেখা যাচ্ছে এরা আর্থিক বিষয়ে সবচেয়ে অসচ্ছ জীবনযাপন করে। হলফনামায় মিথ্যচার করে বিভিন্ন পেশার পরিচয় দিলেও এরা হলো পেইড রাজনীতিক নেতা। দল থেকে মাসিক বেতন আর অন্যান্য সুবিধা পায়। দল কোথা টাকা পায় সেইটা হয়তো ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন জানতে চাইবে। ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের দলে ম্যানুফেস্টো ভুলে নিজেদের বিলাস জীবন নিশ্চিত করেছে। উদাহরন হিসাবে দলীয় প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচন কমিশনের দেওয়া আয় ব্যয়ের হিসাব বিবরনীর দিকে নজর দেওয়া যাক।
মতিউর রহমান নিজামীর পেশা হলো – লেখক।
(যদিও রাজনীতিক হিসাবে জামায়াতের তহবিল থেকে মাসিক বেতন পায় – কিন্তু তা বলার মতো সৎসাহস নেই)
বার্ষিক আয়: ১.২ লাখ টাকা।
সম্পত্তির পরিমান – ৪৭ লাখ টাকা। ( ১.২ লাখ টাকা বেতনে কোন খরচ না করে এই সম্পত্তির মালিক হতে হলে লাগবে প্রায় ৪০ বছর অর্থৎ চল্লিশ বছর তার আয় সম্পূর্ন জমা করে রাখতে হবে – না খেয়েদেয়ে!)
গাড়ীর দাম – ৪০ লক্ষ টাকা। ( যা কেনার জন্যে তাকে ৩৩ বছর না খেয়ে – বাড়ী ভাড়া না দিয়ে সমস্ত টাকা জমাতে হবে)
নির্বাচনী ব্যয় – ১৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ১.২ লাখ নিজের পকেট থেকে খরচ করা হবে। এখানে নির্বাচনের পর এক বছর না খেয়ে থাকার বিষয় ভাবতে হবে – কারন তার এক বছরের আয় ১.২ লাখ।
এখানে বনানীতে নির্মানাধীন বাড়ীর কথা উল্লেখ করা হয়নি।
(৩)
আমাদের সময় একটা প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ১/১১ সরকারের সময় চলমান দূর্নীতি বিরোধী অভিযানে মামলা ও অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দলগত অব্স্থানের একটা তুলনামুলক তথ্য প্রকাশ করেছিলো। প্রতিবেদন অনুসারে সংসদ সদস্য ( যারা ক্ষমতা অপব্যবহার করেছে) দলগত অবস্থান হলো:
১) জামায়াতে ইসলামী – ৫৮.৮২%
২) বিএনপি – ২৯.৮২%
৩) আওয়ামীলীগ – ১৪.২৯%
সহজ ভাবে বলতে গেলে বলা যায় – জামাতের অর্ধেকের বেশী, বিএনপির এক তৃতীয়াংশ আর আওয়ামী লীগের ৬ জনের একজন দূর্নীতিতে জড়িত ছিল।
বিস্তারিত অভিযোগের বিবরনে দেখা যায় -
১) জামাতে সংসদ সদস্য ছিল – ১৭ জন।
২) দূর্নীতি দমন কমিশনে এই যাবত ২ জন মন্ত্রী সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
৩) ৪ জন দুর্নীতির অভিযোগে কারাগারে রয়েছে : – ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, গাজী নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও শাহজাহান চৌধুরী।
৪) পলাতক ৪ জন ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুস সুবহান ও মিয়া গোলাম পরওয়ার।
৫)ডা. তাহেরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্নসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
৬) গাজী নজরুল ইসলামের নাম রয়েছে চিংড়ি ঘের, ২৫ বিঘা সম্পত্তিসহ অঢেল সম্পত্তি অর্জন এবং টিআর-এর পৌনে ২ কোটি টাকা আÍসাতের অভিযোগ রয়েছে।
৭) মিজানুর রহমান চৌধুরীর বাড়ি থেকে এবং মাওলানা আবদুস সুবহানের ব্যক্তিগত ক্লিনিক আল-আমানা থেকে ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়েছে।
৮) শাহজাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ৪টি মামলা রয়েছে।
৯) মিয়া গোলাম পরওয়ারের বিরুদ্ধে আসিফ জুট মিলের আড়াই কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগে খুলনার খানজাহান আলী থানায় মামলা রয়েছে।
১০) মাওলানা আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে ত্রাণের টিন আÍসাতের অভিযোগ রয়েছে।
১১) দলের প্রধান কান্ডারী ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় দুদক গত রোববার অভিযোগপত্র দায়ের করেছে।
১২) দলের অপর নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মুহম্মাদ মুজাহিদ চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা হয়েছে।
১৩) মাওলানা ফরিদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে কানাইঘাট থানায় মামলা হয়েছে।
এই হলো "সৎলোক"দের সামান্য ক্ষমতার সুযোগ পেয়ে যে চিত্র তৈরী করেছে তার নমুনা। জামায়াতসহ সবাই ১/১১ এর দূর্নীতির মামলাগুলো থেকে রক্ষা পেয়ে যায় তৎকালীন দূর্নীতি দমন কমিশনের একটা ভুলের কারনে। তাদের অনেকেই গ্রেফতার করে জেলে আটকে রেখে সম্পদে হিসাব দিতে বলা হয়েছিলো। তাদের অনেকেই সম্পদের হিসাব দিয়েছিলো – কিন্তু পরবর্তীতে হাইকোর্টের একটা রুলের কারনে মামলাগুলো বাতিল হয়ে যায়।
ধর্মের কথা বলে সাধারন ধর্মপ্রান জনতাকে বিভ্রান্ত করে যদি এই দলটি কোন দিন বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় পুরোপুরি আসীন হতে পারে তবে – তাদের শাসনের প্রকৃত রূপ কি হতে পারে তার কি কোন একটা অনুমান করে পারছি। ( ব্লগার এস্কিমো) View this link