জামিনের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতেই হবে?
জামিনের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতেই হবে, এমন বিধান কোনো আইনেই নেই। জামিনসংক্রান্ত যত আইন ফৌজদারি কার্যবিধি বা অন্য আইনে আছে, তার কোনোটিতেই জামিন দেওয়ার শর্ত হিসেবে ‘আইনজীবী নিয়োগ’ কিংবা ‘লিখিত আবেদন’ দাখিলকে শর্ত করা হয়নি। আসামি জামিনে মুক্তিযোগ্য কি না, সেটি দেখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিচারককে।
আসামি মৌখিকভাবে জামিনের আবেদন করতে পারবে?
এমন অনেক প্রতিকার আছে, যেখানে আবেদন দাখিল করাকে শর্ত হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আইন ‘On the application of ....’ ধরনের শব্দগুলো শর্ত হিসেবে যুক্ত করে দেয় [যেমন- ফৌকাবিধির ২৪৪(২), ৩৭১(১), ৪২২, ৪৭৫, ৫১০ক(২), ৫২৬(৩), ৫২৬খ(২) ধারা]। কিন্তু জামিনের বিধিবিধান সম্পর্কিত ফৌজদারি কার্যবিধির কোনো ধারায় (যেমন ফৌকাবিধির ৪৯৬, ৪৯৭, ৪৯৮, ১৬৭ ধারা) এ-ধরনের শর্ত যুক্ত করা হয়নি।
বিশেষ আইনগুলোতে (যেমন ২০১৮ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪৭ ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৯(২)(ক) ধারা) জামিন পেতে আসামির পক্ষ থেকে ‘আবেদনের’ কথা উল্লেখ করা থাকলেও এই আবেদন যে ‘লিখিত আবেদন’ই হতে হবে তেমন কোনো শর্ত সেখানে প্রদান করা হয়নি। এ আই আর ১৯৬৪ মাদ্রাজ ৩৯ মামলায় আদালত বলেছেন, জামিন আবেদন লিখিত হতে হবে- এমন কোনো কথা নেই। আসামি নিজে বা তার আইনজীবীর মাধ্যমে মৌখিকভাবেও জামিনের আবেদন করতে পারেন। লিখিত আবেদন নেওয়া হয় মূলত নথিতে এই তথ্য সংরক্ষণের জন্য যে, আসামি জামিনের চেষ্টা করেছে (মো. জহুরুল ইসলাম, দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ৪র্থ সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১১৩০ দ্রষ্টব্য)।
ফলে জামিনের লিখিত আবেদন ছাড়াও বিচারক যদি আসামির মৌখিক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মনে করেন যে, আসামি জামিনের প্রার্থনা করছেন এবং আসামিকে আটক রাখার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ নেই, সেক্ষেত্রে বিচারক নিজেই আসামির মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন।
আইনজীবী ছাড়া জামিন হলে বেলবন্ড কে দেবে?
এক্ষেত্রে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা হচ্ছে বেলবন্ড। আসামি বেলবন্ড কীভাবে দেবেন? আসামি কি আইনজীবী সমিতি থেকে নির্ধারিত বেলবন্ড কিনে এনে দাখিল করবেন? অবশ্যই নয়। যেক্ষেত্রে আসামি জামিন পান কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে, সেক্ষেত্রে উক্ত আইনজীবী তার আইনজীবী সমিতির নির্ধারিত বেলবন্ড কিনে এনে সেটি আদালতে দাখিল করে থাকেন। আইনজীবীগণ এটা করে থাকেন তাদের সমিতির নিয়ম মেনে চলার অংশ হিসেবে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে টিকে থাকতে হলে তাকে সমিতির নির্ধারিত বেলবন্ড কিনেই আদালতে দাখিল করতে হবে।
কিন্তু আসামি যখন আইনজীবী ছাড়াই জামিন পান, তখন আসামি কর্তৃক আইনজীবী সমিতির বেলবন্ড কেনার কোনো প্রশ্ন ওঠে না। কারণ আসামি তো আইনজীবী সমিতির সদস্য নন। সুতরাং জামিনপ্রাপ্ত আসামি এরকমক্ষেত্রে ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস-এর ফরম নং (পি) ৬১ অথবা সরকারের ছাপানো বাংলাদেশ ফরম নং ৩৯৯০ অনুসারে সাদা কাগজে বেলবন্ড দাখিল করে দেবেন মাত্র।
ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস-এর ফরম নং (পি) ৬১ এবং সরকারের ছাপানো বাংলাদেশ ফরম নং ৩৯৯০ এর ছবি এই পোস্টের সঙ্গে যুক্ত করা হলো। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিচারকগণ এই ফরম ব্যবহার করে অসহায় আসামিদের জামিন দিলে সেটি ভালো দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারে।
বেলবন্ডে কোর্ট ফি কীভাবে যুক্ত করবে আসামি?
ফৌজদারি মামলার বেলবন্ডে কোর্ট ফি দাখিলের কোনো প্রয়োজন আইনত নেই [Sec. 19(xv), the Court Fees Act]।
জামিনদার হিসেবে আইনজীবীর দরকার হবে না?
জিম্মাদার/ জামিনদার হিসেবে আইনজীবীর কোনো প্রয়োজন নেই, বরং ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস (সিআরআরও)-এর ১২৫ বিধি অনুসারে এডভোকেট তার নিজ মক্কেলের জিম্মাদার/ জামিনদার হতে পারেন
সুতরাং আদালত আসামিকে নিজ জিম্মায় বা যেকোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি বা আত্মীয়ের জিম্মায় জামিন দিতে পারবেন।
সোর্স- জামিনের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতেই হবে?