সরকারি বেসরকারি সংস্থা/কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের একদিনের বেতনের টাকা বন্যার্তদের দাণ করার প্রচার দেখে প্রশ্ন জাগে কোম্পানিগুলোর মালিকেরা কত টাকা প্রদান করছেন? আর সেই দাণের টাকা কোথায় কোন ফান্ডে দিয়ে কোন রকমের সুবিধা (সিএসআর, মার্কেটিং পাব্লিসিটি, সোশ্যাল মিডিয়ায় পাব্লিসিটি, ট্যাক্স রিবেট সহ আরও অনেক কিছুই হতে পারে) নিচ্ছে? কোন কোম্পানি ঘোষণা করুক আমার কোম্পানির নেট প্রফিটের এক শতাংশ বন্যার্তদের ত্রাণ ফান্ডে দাণ করলাম...
কর্মচারীদের বেতনের টাকায় প্রতিষ্ঠান এর প্রচারণা কতটুকু যৌক্তিক এবং নৈতিক?
এমপ্লয়িদের টাকার দাণে কোম্পানির প্রচারণা কেন হবে? এমন কি জনগণের দাণের টাকায় অনেক সংস্থারও পাব্লিসিটি হয় এসকল দূর্যোগের সময়ে। কিন্তু কোন সংস্থাকে এই মর্মে ঘোষণা দিতে দেখি না যে, "আমরা শুধু একটা প্লাটফর্ম হিসেবে সকলের জন্য কাজ করছি, মূল দাতা জনগণ, তাদের দাণের অর্থ দিয়ে আমাদের ব্যবস্থাপনায় ত্রান কার্যক্রম চলছে"। আসলে আমাদের চিন্তাধারায় সমস্যা, দৈন্যতা মানসিকতায়। ব্যক্তি লেভেলে অনেককে দেখেছি যাকাতের টাকা দিয়ে কোন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করে সেটা বড় গলায় সবাইকে জানাতে। আর কোম্পানিগুলো যেখানে সঠিক হারে ইনক্রিমেন্ট দেয়া, আর্নলিভ প্রদান, লিভ এনক্যাশমেন্ট, প্রফিট পার্টিসিপেশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড সহ অন্যান্য এমপ্লয়ি বেনিফিট যথাযথভাবে প্রদানে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই অনীহা প্রকাশ করে; সেখানে এমপ্লয়িদের একদিনের বেতনের টাকা দূর্যোগের সময় ত্রান ফান্ডে প্রদান করার বিষয়টা কোম্পানির পাব্লিসিটিতে ব্যবহার করাটা কোন মতেই যৌক্তিকতায় পড়ে না। কিন্তু এই বিষয়টা তাদের বলবে কে? বেশীরভাগ কর্পোরেট টপ লেভেলের এমপ্লয়ি দেখেছি এসব ইস্যুতে মুখে কুলুপ এঁটে রেখে নিজের আখের গোছাতে। তাদেরকেও দোষ দিয়ে লাভ কি? প্রাইভেট জবে " টার্মিনেশন" এ কোন আইন নাই কোনখানেই। জাতীয় এবং ধর্মীয় উৎসবে সরকারি ছুটিতে অফিস খোলা থাকার প্রতিবাদ করায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় টেলিকম কোম্পানিতে এক শীর্ষ কর্মকর্তার চাকুরী হারানোর ঘটনা নিজে প্রত্যক্ষ করেছি। যদিও তার সেই ঘটনার জেরেই পরবর্তীতে সেই ছুটি কোম্পানি প্রদান করেছিলো।
কর্পোরেট ভন্ডামি বন্ধ করে প্রকৃত "কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি"র চর্চা দেখতে চাই দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
সংযুক্তি ০১ঃ ঢাবিয়ান বলেছেন: কর্মচারীদের বেতন কেটে নিয়ে তা বন্যার্তদের ফান্ডে যাচ্ছে কিনা সেটাও খোজ নেয়া দরকার।
এই প্রসঙ্গে বলতে চাই, এমপ্লয়িদের বেতন থেকেই টাকা কাটা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে সমপরিমাণ টাকা কোম্পানির কন্ট্রিবিউট করার কথা থাকলেও এটা পালন পর্যন্ত হচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে আজকে পাওয়া ফিডব্যাক: ভাই কোম্পানিগুলা যা দান করতাছে মোস্ট অফ আমাদের বেতন এর টাকা কেটে। আমি প্রস্তাব দিসি আমাদের এক দিন এর যা হবে সমপরিমান কোম্পানি থেকে দেয়া হোক, পরে পে অর্ডার এ দেখলাম শুধু আমাদের থেকে কেটে রাখাটাই ত্রান তহবিলে প্রদান করেছে। এইটাই CSR।
সংযুক্তি ০২ঃ গতকাল টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে দেখি বিকাশে ৪,৫০০ টাকা কার্ড টু বিকাশ এডমানি করলে ২৫ টাকা বন্যার্তদের রিলিফ ফান্ডে প্রদান করবে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও একই অফারে ৫০ টাকা ক্যাশব্যাক অফার ছিলো। সেই পঞ্চাশ টাকা ক্যাশব্যাক অফার হতে পঁচিশ টাকা কমিয়ে সেটা বন্যার্তদের ফান্ডে প্রদান। এগুলোই হলো হিপোক্রেসির সিএসআর। পাব্লিকের টাকায় নিজেদের প্রচার। নীচের লিঙ্কে এরকম বিষয়ে লিখেছিলাম বছর দশেক আগে - কর্পোরেট মানবতায় না ঝাঁপিয়ে খুঁজে ফিরুন আশেপাশের মানুষের জন্য মানবতা
বাংলাদেশের কর্পোরেট সেক্টর এর পাব্লিক সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলার বিষয়ে বহু বছর আগে কিছু লেখা লিখেছিলাম এই সামু ব্লগেই:
* প্রিন্টেড এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন - ETHICS!!! আর মিথ্যার বেসাতী এবং নির্লজ্জ প্রদর্শন।
* সামলে রাখুন আপনার আবেগকে, ছিনতাই হতে পারে বেনিয়াদের হাতে
* কর্পোরেট মানবতায় না ঝাঁপিয়ে খুঁজে ফিরুন আশেপাশের মানুষের জন্য মানবতা
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:০৭