somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়্যার ইন ব্লগ এবং বাংলা ব্লগিং বাস্তবতা, মনের খোড়াকের বিপরীতে বস্তুবাদী প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা

০৮ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটা সময় ছিলো যখন মানুষেরা নিজেদের গোপন ডায়েরীতে দৈনন্দিন জীবনযাপনের টুকরো টুকরো স্মৃতি লিখে একান্ত গোপনে তুলে রাখতো, কেউ কেউ গোপন খাতায় লিখে চলতো নানান গল্প, কবিতা। গত দেড়যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্রম বিস্তারে এই মানবচরিত্র বদলে গেছে অনেকটাই। আর তাইতো, আজ শুধু গোপন ডায়েরীতে স্থান পাওয়ার মত ঘটনাগুলোই নয়, পুরো জীবনটাই উন্মুক্ত কিতাবের ন্যায় স্বেচ্ছায় সবাই মেলে ধরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারণ, মানসিক জগতের ব্যাপক পরিবর্তন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছি না। লাইক, শেয়ার, ফলোয়ার এর এক ভার্চুয়াল পুঁজির পেছনে ছুটছে সবাই। আর এতে করে সৃজনশীলতার জায়গাটুকু সংকীর্ণ হতে হতে এখন প্রায় কফিনে ঢুকিয়ে পেড়েক ঠোকাটাই বুঝি বাকী আছে। মানুষ তার আশেপাশের পরিবেশ দ্বারা অতিমাত্রায় প্রভাবিত হয়, এটা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। আজ থেকে বছর বিশেক আগেও এই প্রভাবিত হওয়ার অণুঘটক ছিলো নিজের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী এদের মাঝে থেকে নিজের মানসিক গঠনের সাথে সামঞ্জস্য আছে এমন হাতে গোনা কয়েকজনে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসারে এই গন্ডির বাঁধ ধীরে ধীরে খুলে গিয়ে বন্যার জলের মতো হু হু করে বেড়েছে প্রভাবক অণুঘটকগুলোর। আর তাইতো সৃজনশীলতা লোপ পেয়েছে, বৃদ্ধিপেয়েছে বস্তুবাদী প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা একান্ত অগোচরে। তাই আজ সবাই ছুটছে লাইক,শেয়ার আর ফলোয়ারের পেছনে। আর এই দৌড়েই পিছিয়ে পড়ছে সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রশীল্প’র মত কলাশিল্পের চর্চার মানসিকতা। আর এই একই কারণে পিছিয়ে পড়েছে ব্লগীয় চর্চার ক্ষেত্রটিও।

কমিউনিটি ব্লগিং ধারণাটি জনপ্রিয় হয় কারণ নিজের সৃজনশীল ভাবনাগুলো ব্যাপকতর গন্ডিতে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ ছিলো সেখানে। আর বাংলা কমিউনিটি ব্লগিং এর যাত্রা শুরু করা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সামহোয়্যার ইন ব্লগ ছিলো এগিয়ে। কিন্তু অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের আগমন, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার অনুপ্রবেশ, সেই সাথে নিজস্ব ভাবনাচিন্তার বিপরীত মতামতকে গ্রহণ করতে না পারা এবং সেই পথ ধরে বিকল্প প্ল্যাটফর্মের খোঁজ প্রথম বিভাজন শুরু করে লেখালেখির মৌলিক যাত্রার সেই কমিউনিটি ব্লগিংয়ে। ফলশ্রুতিতে প্রথম দিকে পজেটিভ ফলাফল দেখা গেল, এক থেকে একাধিক বাংলা ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম তৈরী হয়ে গেল। সমান্তরালে আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সংখ্যাও বাড়তে লাগলো, বাড়তে লাগলো এর জনপ্রিয়তা। যার বিপরীতে স্থানীয় ছোট ছোট প্ল্যাটফর্মগুলো নিজেদের পরিবর্তন করে এই বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মগুলোকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করলো না, অথবা হয়তো সেই সক্ষমতা সবার ছিলো না, থাকলেও বস্তুবাদী লাভক্ষতির হিসেবে পিছিয়ে গেল। এর ফলে মৌলিক লেখালেখির জায়গা অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্থ হলো, যা শুরুতে দেখা যায় নাই, কিন্তু ধীরে ধীরে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, একটা সময় ট্রাভেল ব্লগ ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও ভিডিও ব্লগিং তথা ভ্লগ এর জনপ্রিয়তার জোয়ারে এখন কেউ আর ট্রাভেল ব্লগে আগ্রহী নয়, সবাই ভিডিওর পেছনে ছুটলো। সেই যাত্রার ফলাফল এখন আর ভিডিও নয়, কয়েক সেকেন্ডের রিলে আটকে গেল সবাই। আগে একটি লেখা পড়ে কল্পনায় নিজের মত করে ভাবনার যে জায়গা ছিলো আজ তা আটকে গেল কয়েক সেকেন্ডের রিলে’র মাঝে। আর এতে করে হয় সৃজনশীলতার পেছনে ছুটে চলা মানুষগুলো নিজেকে গুটিয়ে নিলো অথবা কালের স্রোতে গা ভাসিয়ে নিজের সৃজনশীল মননকে মাটিচাপা দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সমসাময়িক জনপ্রিয় ধারাগুলোতে। পুঁজিবাদী বিশ্বের সোশ্যাল মিডিয়া আর সোশ্যাল রইলো না, বিজ্ঞাপনের চাঁদরে আষ্টেপৃষ্ঠে মুড়ে দিয়ে সোশ্যাল প্লাটফর্ম হয়ে গেল সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক। আর এই জায়গাতে বলি হয়ে গেল অনেক কমিউনিটি ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম। ট্রান্সকম গ্রুপের প্রথম আলো তার ব্লগ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কেন? তার বিপরীতে এই নিউজ মিডিয়াগুলো এখন তাদের ভিডিও চ্যানেলে বিনিয়োগ করছে, নানান তারকাদের লাইভ প্রোগ্রাম করছে; সবই পুঁজিবাদের বাণিজ্যের কেরামতি।

সামহোয়্যার ইন ব্লগ প্রথমত নিজেকে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন করতে পারে নাই এটাও মেনে নিতে হবে। আর এর বিপরীতে এর ব্লগাররাও সময়ের হাওয়ায় ভেসে গেছে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে। কমেছে নিয়মিত ব্লগারের সংখ্যা, পোস্টের সংখ্যা, আর এগুলোর পথ ধরে ভিউয়ের সংখ্যা। ফলে স্পন্সরশীপ প্রাপ্তি, বিজ্ঞাপন প্রাপ্তির পথও হয়েছে সঙ্কীর্ণ। তার সাথে রাষ্ট্রীয় নানান বাঁধার খড়গ তো ছিলোই। সামহোয়্যার ইন ব্লগের মত প্ল্যাটফর্মকে এককভাবে নিজ উদ্যোগে প্রায় দেড়যুগ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয় এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য এটিকে দীর্ঘ সময় টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে আরও কৌশলী হওয়া উচিত ছিলো কর্তৃপক্ষের। বিভিন্ন সময়ে ব্লগে নানান পোস্ট, কমেন্ট এর পথ ধরে জানা যায় যে, এই ব্লগ চালাতে বর্তমানে সার্ভার এবং অন্যান্য খাতে দুই আড়াই লাখ টাকা খরচ আছে। সব মিলিয়ে মাসে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হলেও বছরে ষাট লাখ, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এটা খুব বেশী নয়, মাসে পাঁচহাজার ডলার। যে প্ল্যাটফর্মের রেজিস্টার্ড ব্লগারের সংখ্যা লাখের উপরে, সেই প্ল্যাটফর্ম এই টাকা ম্যানেজ করে টিকে থাকতে পারছে না কেন এটা ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো কর্তৃপক্ষকে। যে সকল প্রতিবন্ধকতার কথা কারণ হিসেবে সামনে আসবে সেগুলো প্রতিহত করে সারা বিশ্বে এরকম অনেক প্ল্যাটফর্ম টিকে যাওয়ার ঘটনাও কিন্তু আছে।

তাই সবার কাছে অনুরোধ একটাই, বস্তুবাদী আকাঙ্ক্ষার কাছে যেন কোনভাবেই মনের খোড়াকটুকু পরাজিত না হয়।

ভালো থাকুন সবাই, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। হ্যাপী ব্লগিং, বাংলা কমিউনিটি ব্লগিং দীর্ঘজীবি হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৪:০৬
১০টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×