somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশাতবাগ - কাশ্মীরি মুঘল গার্ডেন (দ্বিতীয় পত্র) (কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ কাশ্মীরি মুঘল গার্ডেনস (প্রথম পত্র) - পরিমহল এবং চাশমেশাহী (মিশন কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)







সদ্য বৃষ্টিস্নাত মুঘল গার্ডেনগুলো সেদিন যেন অন্যরকম এক সৌন্দর্য লাভ করেছিল। শঙ্করাচার্য হিল আর চাশমেশাহী মুঘল গার্ডেন ভ্রমণ শেষে আমরা এলাম কাশ্মীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুঘল গার্ডেন ‘নিশাত বাগ’ ভ্রমণে। পীর পাঞ্জাল রেঞ্জের জাবারওয়ান পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত এই বাগান বিখ্যাত ডাল লেকের পূর্ব পাশে অবস্থিত; যার দরুন এখান হতে সূর্যাস্তের অপূর্ব একটা ভিউ পাওয়া যায়, আমরাও পেয়েছিলাম। এই বাগানের স্থাপত্যশৈলী, লোকেশন, রঙবেরঙের বাহারি সব ফুলের সমারোহ আর সম্মুখের ডাল লেক এবং পেছনে দাঁড়ানো পর্বতমালায় মেঘের লুকোচুরি আমাদের সত্যি বিমোহিত করেছিল।







উর্দু শব্দ নিশাতবাগের অর্থ আনন্দের বাগান বা উৎফুল্লতার বাগান। এই নিশাতবাগের নির্মাতা ছিলেন আসিফ খান। ইতিহাস বিখ্যাত সম্রাজ্ঞী নুরজাহানের বড় ভাই আসিফ খান ১৬৩৩ সালে নির্মাণ করেন। এই বাগানকে ঘিরে রয়েছে একটি চমৎকার ইতিহাস। এই বাগান নির্মাণ সম্পন্ন করে আসিফ খান তার জামাতা সম্রাট শাহজাহানকে আমন্ত্রণ জানান বাগান পরিদর্শনে। আসিফ খানের কন্যা আরজুমান্দ বানু বেগম'কে বিবাহ করেন সম্রাট শাহজাহান, যার মধ্যস্থতাকারী ছিলেন সম্রাজ্ঞী নুরজাহান। এই বাগানের নির্মাণশৈলী এবং সৌন্দর্য সম্রাট শাহজাহানকে এতোটাই বিমোহিত করে যে, উনি এটার প্রেমে পড়ে যান। তিনি মনে মনে আকাঙ্ক্ষা করেন এই বাগানটি নিজের করে পেতে এবং বারকয়েক তা প্রকাশও করেন শ্বশুরের সম্মুখে। সম্রাট আশা করেন তার ভালোলাগার কথা জানতে পেরে আসিফ খান এটা জামাতাকে উপহার দিবেন। কিন্তু সেরকম কিছু না ঘটায় সম্রাট মনঃক্ষুণ্ণ হন এবং পরবর্তীতে বাগানের পানি সরবারাহ বন্ধ করে দেন। এই বাগানের পানি সরবরাহ হত শালিমার বাগ হতে, যা এই বাগানের সন্নিকটে এবং সম্রাট শাহজাহানের মালিকানায় ছিল। পানির অভাবে ধীরে ধীরে এই নিশাত বাগের গাছগুলো সব শুকিয়ে যেতে থাকে, সাথে মর্মাহত আসিফ খান ভেঙ্গে পড়েন। এই রকম সময়ে একদিন শাহজাহানের এক ভৃত্য আসিফ খানের মনকষ্ট বুঝতে পেরে পানির সরবরাহ চালু করে দেন। কিন্তু আসিফ খান তা বন্ধ করে দিতে বলেন যেন সম্রাট শাহজাহান আরও বেশী মনঃক্ষুণ্ণ না হন। পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহান এই ঘটনা জানতে পেরে শালিমার বাগ হতে নিশাত বাগে পুনরায় পানির সরবরাহ চালু করে দেন।









কাশ্মীর ভ্যালীতে প্রায় ৪৬ একর জমির উপর সুসজ্জিত এই বাগানের সামনে ডাল লেকের স্বচ্ছ জল আর পেছনে নীল আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়; একে দিয়েছে অনবদ্য রূপ। শীতকালে যখন এই বাগানের পাহাড়ের পেছনে শ্বেতশুভ্র বরফে ঢাকা পীর পাঞ্জাল রেঞ্জ দেখা যায়, তখন তা হয়ে ওঠে অপার্থিব। অন্যান্য মুঘল গার্ডেনের মত এটিও একটি ভবনের ন্যায় কাঠামোর ছাদের উপর নির্মিত যাকে বলা হয়ে থাকে ‘Terraced Garden’। নির্মাণের শুরুতে ছিল ১২ ধাপের টেরেসের উপর এই বাগানটি; কিন্তু পরবর্তীতে রাস্তা নির্মাণ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বর্তমানে নয়টি টেরেসের উপর দাঁড়িয়ে আছে এই বাগানটি। পারস্য স্থাপত্যকলার আদলে তৈরি পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত চতুর্ভুজাকৃতির কাঠামোর এই বাগানের দু’পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে বাগানের গাছগুলো রোপিত হয়েছে।









৫৪৮ মিটার লম্বা আর ৩৩৮ মিটার চওড়া কাঠামোটি অনিন্দ টপোগ্রাফি আর পানির প্রবাহধারা দিয়ে তৈরি অন্যতম একটি মোঘল স্থাপনা যার সৌন্দর্যে প্রতি বছর লাখো পর্যটক এখানে ছুটে আসে। এই বাগানের একেবারে উপরে, পাহাড়ের পাদদেশের প্রথম ধাপটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত, এখান হতে ক্রমান্বয়ে ধাপে ধাপে নীচে নেমে এসে শেষ ধাপটি মিলেছে ডাল লেকের সাথে। পলিশ করা পাথরে তৈরি বাগানের দুপাশে রয়েছে চিনার গাছের সারি। গোপী ঝর্ণা হতে প্রবাহিত পানির উৎস হতে এই বাগানের মাঝের তৈরি পথে পানি প্রবাহিত হয়ে ডাল লেকে গিয়ে মেশে। প্রতিটি ধাপের মাঝে পানির ফোয়ার তৈরি করা আছে, উঁচু ধাপ হতে ক্রমান্বয়ে নীচের ধাপে। বেলা সাড়ে নয়টা থেকে বেলা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এই বাগান খোলা থাকে সর্বসাধারণের জন্য; তবে বেলা সাড়ে চারটার পর প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়। জনপ্রতি দশ রুপী করে এখানে টিকেট কাটতে হবে আপনাকে।









নিশাত গার্ডেনে বিকেলের বেশ কিছুটা সময় কাঁটিয়ে আমরা রওনা হলাম শেষ গন্তব্য শালিমার গার্ডেনের উদ্দেশ্যে। এমন মায়াময় প্রতিটি বাগান আর সৌন্দর্যের ঝাঁপি যে মন চায় সারাদিন বসে থাকি। কিন্তু সময় স্বল্পতা বলে কথা। চোখের দেখা দেখে, মনে এক বুক তৃষ্ণা রেখে আমরা ছুটে চললাম পরের গন্তব্যে। এর মধ্যে সূর্য লাল বর্ণ ধারন করে জানান দিচ্ছে সন্ধ্যে হল বলে।










এই পর্বের ছবিঃ
রওশন আরা ইয়াসমিন
মিতা রায়
বোকা মানুষ বলতে চায়
ইউকিমিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২১
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চলছে শোঅফ ব্যাবসা ........ ;)

লিখেছেন সোহানী, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:০৮



হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মানব মনের ছয়টি সহজাত দোষ বা ষড়রিপু হলো কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য। বা সহজ ভাবে বলা যায়, কাম (lust) হলো লালসা, ক্রোধ (anger)... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার অপসারণ কি সমাধান ছিল, নাকি আরও বিপর্যয়ের শুরু?

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৫৪

শেখ হাসিনার অপসারণ কি সমাধান ছিল, নাকি আরও বিপর্যয়ের শুরু?
দেশজুড়ে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, তখন অনেকেই বিশ্বাস করেছিলেন শেখ হাসিনার সরকারই সমস্ত সমস্যার মূল। বলা হয়েছিল, তিনি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির পিতাকে অস্বীকার করে, স্বাধীনতার সংগ্রাম কে অস্বীকার করে রাজাকার রা আমাদের আওয়ামী লীগ সমর্থন করাতে বাধ্য করে বারং বার।

লিখেছেন আহসানের ব্লগ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৩


আমরা যারা কোন দলের পদ পদবি তে নাই। এমনকি আমার কলেজের রাজনীতি জড়িত বন্ধুর সাথেও মেশা বন্ধ করেছিলাম আমরা চার জনের সার্কেল। দলীয় রাজনীতি বড়ই খারাপ জিনিস। মাইর খাওয়া মাইর... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভিন্‌গ্রহে মিলল প্রাণের অস্তিত্ব! ১২৪ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহে কি প্রাণের স্পন্দন?

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪২



জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, তাঁরা পৃথিবীর বাইরে কে২-১৮ বি গ্রহে জীবনের সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন। ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে দু’টি রাসায়নিকের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ : দেশের উন্নয়নের জন্য আসন বাড়ানোর বিকল্প নেই

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৮


নারী অধিকার নিয়ে কথা উঠলেই কিছু ভদ্রলোকের ঘুম ভেঙে যায়। রাষ্ট্র নড়েচড়ে বসে—একটু যেন ‘স্মার্ট’ ভাব ধরে। সেই ভাবেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সুপারিশ করলো, সংসদের আসন সংখ্যা ৬০০ করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×