somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের জামা, একটি কিশোরের অর্ধ-মাসের বেতন এবং একটি আহবান - ‘আসুন ঈদটাকে প্রকৃত অর্থেই সার্বজনীন করে তুলি’

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বছরের পরিক্রমায় আবার নতুন আরেকটি ঈদ আসছে। এই ঈদে তাই সবাইকে অনুরোধ আপনার পরিচিত গণ্ডির বাইরে গিয়ে একটি সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে একটি জামা দিয়ে হলেও, হোক না সেটা খুবই অল্প দামের, তাদের ঈদের খুশীতে সামিল হন। ঈদ সার্বজনীন, আমার আপনার বিলাসিতায় একটু ছাড় দিলে হয়তো কারো ঈদটা হয়ে উঠবে রঙিন। কেউ কেউ যখন ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার, কুয়াকাটা হতে শুরু করে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, ভারত হয়ে ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে বেড়াই; তখন ঈদের দিন কিছু মানুষ যাকাত-ফিতরার দশটা টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। তাই অনুরোধ একটাই, ‘আসুন ঈদটাকে প্রকৃত অর্থেই সার্বজনীন করে তুলি’।
বছরের পরিক্রমায় আবার নতুন আরেকটি ঈদ আসছে। এই ঈদে তাই সবাইকে অনুরোধ আপনার পরিচিত গণ্ডির বাইরে গিয়ে একটি সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে একটি জামা দিয়ে হলেও, হোক না সেটা খুবই অল্প দামের, তাদের ঈদের খুশীতে সামিল হন। ঈদ সার্বজনীন, আমার আপনার বিলাসিতায় একটু ছাড় দিলে হয়তো কারো ঈদটা হয়ে উঠবে রঙিন। কেউ কেউ যখন ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার, কুয়াকাটা হতে শুরু করে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভুটান, ভারত হয়ে ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে বেড়াই; তখন ঈদের দিন কিছু মানুষ যাকাত-ফিতরার দশটা টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। তাই অনুরোধ একটাই, ‘আসুন ঈদটাকে প্রকৃত অর্থেই সার্বজনীন করে তুলি’।


ঈদ,,, বিশেষ করে রোজার ঈদ তথা ঈদুল ফিতর মানেই বাঙ্গালী মুসম্প্রদায়ের নিকট নতুন জামার ঈদ। একটু একটু করে জ্ঞান হওয়ার পর কেই আমাদের কজামার আহবান। এই ঈদে একটি টেলিকম ঢ়গঢ়কোম্পানির বিজ্ঞাপন (এক পথশিশু বড় ভাইয়ের ছোট ভাইকে জামা কিনে দেয়া) দেখে স্মৃতিকাতর হয়েম নিয়ে। আর সেই প্রেক্ষাপটেই এই আমার স্মৃতিবেলার প্যাচালি।

ঈদের জামা নিয়ে শৈশব বা কৈশোরে আমার তেমন কোন বিশেষ স্মৃতি খুঁজে পাই না। আমি প্রতি রমজানে ব্যাকুল থাকতাম কবে ঈদের জামা কিনতে মার্কেটে যাওয়া হবে। কারণ, আমি সেই বিশেষ দিনটিতে রোযা রাখবো না; কিন্তু কেন? কারণ, মার্কেটে রয়েছে মামা এবং খালুর দোকান, প্রতি রমজানে সেই দোকানে গেলে কোন আইসক্রিম আর লস্যি খেতে পারি। আর তাই রমজান এলে আমার নতুন জামার চাইতে যেন ঐ আইসক্রিম আর লস্যি’র জন্য বিশেষ প্রতীক্ষা থাকতো। কৈশোরের জামা নিয়ে যে কথাটা মনে পড়ে, একবার দাবা খেলার ছকের মত নকশাদার রুপালী এবং অ্যাশ কালারের মিশ্রনে এক ধরনের প্যান্ট পিস বের হয়। আমি খুব শখ করে সেই প্যান্ট পিসখানা কিনে হালের নিউ ফ্যাশনে প্যান্ট তৈরি করতে দেই। কিন্তু ঈদের দিন সেই প্যান্ট পরিধানপূর্বক নিজেই নিজেকে দেখে লজ্জায় হেসে উঠি, একি! পুরো সার্কাসের ক্লাউন মনে হচ্ছে নিজেকে।

ঈদের জামা নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা শুরু হয় কলেজের গণ্ডিতে পা দেয়ার পর। আমার বিশেষ ঝোঁক ছিল টি-শার্ট আর পাঞ্জাবীর দিকে, এখনো আছে। তো সেই সময় ঢাকা শহরে ছেলেদের ভালো ব্র্যান্ডের দোকান বলতে ছিল ক্যাটস আই – মুনসুন রেইন, সীল, আড়ং এই হাতেগোনা দু’তিনটা। কে-ক্রাফট তখন টিচার্স ট্রেনিং কলেজের বিপরীতে ‘লাটিমী’র পাশের সরু গলির ভেতরে একটি একতলা বাসার একটা রুমে কয়েকজন উদ্যোগী এবং উদ্যমী তরুনের হাতে যাত্রা শুরুর পথে। যাই হোক তখন মূলত ক্যাটস আই থেকে টি-শার্ট আর আড়ং থেকে পাঞ্জাবী এই ছিল ঈদের জামা আমার জন্য। কলেজের গণ্ডি পেরুলে পছন্দ একটু খুতখুতে হল। একটু ভিন্নতা চাই। মজার ব্যাপার তখন আবার আমি ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’তে ফাইন আর্টসে আঁকাঝোঁকা শিখছি। দু’তিনবার মনের মত জামা না পেয়ে নিজেই নিজের মনের মত দিজাইনে ঈদের জামা বানিয়ে নিয়েছি। কি মজার সময় ছিল, ছিল কত স্বপ্নময় জীবন!

একবারের কথা মনে পড়ছে, ২০০১/২০০২ সাল হবে। রাত সাড়ে দশটায় হঠাৎ ঘোষণা হল আগামীকাল ঈদ। সেবার আড়ং, প্রবর্তনা আর মেলা; এই তিন দোকানে তিনটা পাঞ্জাবী পছন্দ করে রেখেছি। সারাদিনে দু’তিনবার ঢুঁ মেরে এসেও ডিসিশন নিতে পারি নাই কোনটা কিনবো। ভেবেছিলাম পরেরদিন যেহেতু চাঁদরাত, সেহেতু পরেরদিন কোন একটা কিনে নিলেই হল। মাত্র রাত দশটায় বন্ধদের সাথে মার্কেটে টো টো করে বাসায় ফিরেছি, এখন কি করি? আবার বন্ধুদের বাসায় গিয়ে তাদের নিয়ে ছুটলাম আসাদগেটের দিকে। কিন্তু গিয়ে দেখি তিনটা দোকানই বন্ধ! মনের দুঃখে সায়েন্সল্যাব থেকে একটা সাদা পাঞ্জাবী কিনে পুরাতন ঢাকার নিজের বাসায় ফিরে আসি।

এখনো প্রতি ঈদে কমপক্ষে একটা পাঞ্জাবী কিনি। এছাড়া তেমন কিছু নিজের জন্য কেনা হয় না। চেষ্টা থাকে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের কিছু উপহার দিতে। ঈদে গরীব দুঃখী কাউকে একটা জামা কিনে দেয়ার মাঝে যে আনন্দ থাকে তা অন্য কোন কিছুতেই বোধহয় থাকে না। এটা আমার ব্যাক্তিগত উপলব্ধি। আমাদের সমাজেতো ধর্মীয় ফরজ ‘যাকাত’ আদায় করতে ঢোল পিটিয়ে মানুষ জড়ো করা হয়ে, প্রচার এবং প্রসারের জন্য। এই গত বছর বা তার আগের বছরেও মতিঝিলের দিকে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে দু’তিনজন মারা গিয়েছিল। সত্যি আজব এক দেশেরর আমরা বাস করি। অথচ যাকাত দেয়ার বিধান মোতাবেক, যাকাতদাতা নিজে চলে যাকাতগ্রহীতার নিকট পৌঁছবে এবং বিনয়ের সাথে তাকে যাকাত গ্রহণের জন্য অনুরোধ করবে। আর আমাদের সমাজে হচ্ছেটা কি? ইসলাম ধর্মে বলা আছে, দান এমনভাবে কর, যেন ডান হাত দান করছে এটা বাম হাতও টের না পায়!

আচ্ছা গরীবদের মাঝে ঈদের জামা বিতরণের একটা মজার ঘটনা শেয়ার করি, ২০০০ সালের দিকের ঘটনা। আমাদের ‘ঢাকা সাইক্লিং ক্লাব’ থেকে সেবার গরীবদের মাঝে কিছু জামা বিতরণের পরিকল্পনা নেই। আমরা লোক দেখান দান থেকে বাঁচতে সিদ্ধান্ত নেই, আমরা চাঁদরাতে ঢাকা শহরে ঘুরে ঘুরে গরীব মানুষকে জামা দিয়ে আসবো। যেই ভাবনা, সেইমত কাজ। চাঁদরাতে বের হলাম পাঁচ-সাতজনের দল। পুরো তিনঘণ্টা ঢাকা শহরের ফুটপাথ ধরে হেঁটে হেঁটে কোন গরীব মানুষ খুঁজে পাই নাই! আরে সব গেল কোথায়? আমরা সবাই পুরো বোকা বনে গেলাম। পরে বুঝেছিলাম চাঁদরাত শুধু আমাদের না, সবার জন্যই চাঁদরাত। যাই হোক ফেরার সময়, পলাশী মোড় হতে আজিমপুরের দিকে যাওয়ার ফুটপাথটিতে অনেকগুলো পলিথিনের ঘরের মত দেখতে পেয়ে একটাতে হাঁক দেই। একজন মধ্যবয়সী লোক বেড়িয়ে আসেন, তাকে জামা দেয়ার ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলতেই কম্মসারা। প্রায় জনা চল্লিশেক লোক ঐ পলিথিনগুলোর আড়াল থেকে বেড়িয়ে এল! শিশু, বৃদ্ধ, পুরুষ-মহিলা। আমাদের জামা নিমিষেই শেষ, কিন্তু সবাইকে দিতে পারি নাই। আমাদের সামর্থ্য ছিল কম, তাই জামাও ছিল অল্প। কি আর করা, আমরা হাঁটতে লাগলাম আমাদের এলাকার উদ্দেশ্যে। কিছু ছোট ছেলেপুলে আমাদের পিছু পিছু আসতে লাগলো আর বলতে লাগলো, ‘ও স্যার, আমি পাইনি। আমারে একখান জামা দেনগো স্যার...’।

শেষে যে ঘটনাটি শেয়ার করে লেখা শেষ করবো, যে ঘটনা মনে পড়ায় আজকের এই লেখা, ঘটনাটি ২০০৪ সালের দিকে। আমি সেই রমজানে আমার এক রিলেটিভের নিউমার্কেট এক নম্বর গেটের খুব নামকরা (তৎকালীন) ফাস্টফুডের দোকানে প্রায় দিনই যেতাম, ইফতারের পর। ঐ আত্মীয়ের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তখন। তো একদিন, শপিং শেষে তার দোকানে গেলাম, সেদিন একটা পাঞ্জাবী কিনেছিলাম। আমি উনার দোকানে গেলে উনার দোকানের একটা পিচ্চি ছেলে আমাকে ভালো কফি এনে খাওয়াতো। একবার কোথাও কফি না পেয়ে সে আমায় অপেক্ষা করতে বলে কোথায় যেন গেল। একটু পর গরম ধোঁয়া ওঠা ফেনায়িত গাঢ় ফ্লেভারের এক মগ কফি এনে হাজির করলো। আমি জিজ্ঞাসা করতে জানালো, কফির মেশিন নষ্টতো কি হইছে? ব্লেন্ডার আর ওভেন আছে না...। তো সেদিন পাঞ্জাবীটা আমার রিলেটিভ যখন প্যাকেট খুলে দেখে আমায় দাম জিজ্ঞাসা করল, আমি দাম বলতেই পাশে থাকা সেই কিশোর বালক খুব মৃদু স্বরে বলল, ‘আমার পনেরদিনের বেতন’। আমি কথাটা শুনে একবারে জমে গিয়েছিলাম। ঐ পাঞ্জাবীটা যতবার পড়েছি, কে যেন খুব চাপা স্বরে একটা কথাই বলত, ‘আমার পনের দিনের বেতন’। খুব কষ্ট লাগতো। আমার একটা জামা, তাও খুব বেশী দামী ছিল তেমন নয়; কিন্তু ঐ জামার মূল্যই কোন এক কিশোরের অর্ধ-মাসের বেতনের সমান!

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×