somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পথশিশুদের গল্প

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী (রনবী) তাদের নাম রেখেছিলেন টোকাই। তারা পথে পথে ফেলে দেয়া, পরে থাকা বিভিন্ন জিনিষ কুড়োয়। আসলে জীবন যাদের সাথে প্রতারণা করে ছুঁড়ে ফেলেছে জীবনের কণ্টকময় জটিল পথে তারাই পথশিশু। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যাদের নাম দিয়েছিলেন পথকলি।

এই শিশুদের জীবন কতটা যাতনাময় তা আমরা কয়জনা জানি?
যারা ফুটপাথ ধরে প্রায়ই হাঁটেন তারা দেখবেন ছোট্ট শিশু ফুতপাথের মাটিতে হামাগুড়ি দিচ্ছে। আমি এমনও দেখেছি ফুতপাথের মাটিতে ভাত ফেলে সেই ভাত অবলীলায় খাচ্ছে ছোট্ট ফুটফুটে শিশুটি। হয়ত তার পাশেই পরে আছে মানব বিষ্ঠা যা হয়ত কিছুক্ষণ আগে তারই ত্যাগ করা। এই পরিবেশে বেড়ে উঠছে এই পথশিশুরা। রোদ বৃষ্টি শীত গ্রীষ্ম সব যেখানে একাকার, সেখানে এদের বসবাস।

এই শিশুরা একটু বড় হলে জীবিকার তাড়নায় ছুটে চলে পথ থেকে পথে। আমাদের দৈনিক চলার পথে আমরা দেখি এদের কখনো ফুল, কখনো চকলেট অথবা অন্য কোন পণ্য হাতে ঘুরে বেড়াতে। জীবন এদের মৌলিক সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ন্যূনতম জৈবিক সুবিধা তারা পাচ্ছে না। এরা জড়িয়ে পরছে নেশার ভয়াল জগতে, জড়াচ্ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডর মাঠপর্যায়ের ৭০-৮০ শতাংশ উঠে এসেছে পথশিশুদের থেকে। মেয়ে পথশিশুরা শৈশব থেকেই যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে, পরবর্তীতে দেহব্যাবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে।

এখন আমি আমার কথায় আসি, কেন আজকের এই লেখা। দেখুন, আমি, আপনি যে কেউই কিন্তু হতে পারতাম এই পথশিশুদের একজন। ভাগ্যের কৃপায় আমাদের সেই ভয়াবহ জীবনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নাই। আমার দেখা অভিজ্ঞতায়, সবাই এই পথশিশুদের এড়িয়ে চলি। কিছুদিন আগে গুলশানে দেখি এক বিদেশিনীর পেছনে ২৫-৩০ জন পথশিশুর একটি দল। আগ্রহ নিয়ে আমিও তাদের পিছু নিলাম। এক সময় এক ফাস্টফুডের দোকানে তিনি থামলেন এবং ভেতরে ঢুকলেন। বাচ্চাগুলোও তার সাথে সাথে দোকানের ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করলে গার্ড তাদের আটকে দিল। বিদেশিনী আবার দোকান থেকে বের হয়ে তাদের কি একটা বলে ভেতরে ঢুকলেন এবং কিছুক্ষণ পর দুই হাত ভরে খাবারের প্যাকেট নিয়ে বের হয়ে আসলেন। তারপর তাদের সবাইকে সেগুলো বিতরণ করে ফুটপাথ দিয়ে তাদের সাথে গল্প করতে করতে হাঁটতে লাগলেন। যেন বিদেশ ফেরত এক বন্ধু, দেশে ফিরে সব বন্ধুদের নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছে।

আমরা কি পারি না তাদের জন্য কিছু করতে। অনেকে পথশিশুদের জন্য স্কুল খুলে তাদের প্রাথমিক শিক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানের এই কঠিন সময়ে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটধারীরাই চাকুরীর বাজারে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে এই শিক্ষা তাদের কতটা কাজে আসবে? স্কুল শেষে সেইত তারা আগের পরিবেশে ফিরে যাচ্ছে। আমরা যারা বিভিন্ন কর্পোরেট লেভেলে আছি তারা কি পার্টটাইম জব এর ব্যাবস্থা করতে পারি না এদের জন্য। অফিসের ছোটখাটো কাজ যা এদের দিয়ে করানো যেতে পারে, তেমন কাজের ব্যাবস্থা করা এবং এদের জন্য শিক্ষার ব্যাবস্থা করা। আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য থেকে আমরা কি একজন পথশিশুর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগী হতে পারিনা?

অনেকে আমার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন হয়ত, পক্ষে-বিপক্ষে নানান কথা বলবেন। কিন্তু এতে কি পথশিশুদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে? যদি আমরা একটু উদ্যোগী হই তবে হয়ত তাদের ভাগ্যাকাশে আশার আলো দেখা যেতে পারে। অন্যথায় তাদের আর কি হবে, যে তিমিরে আছে সেই তিমিরেই থাকবে। কেননা, “দুঃখে যাদের জীবন গড়া, তাদের আবার দুঃখ কি?”
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

পেহেলগাম, ছবি গুগল থেকে প্রাপ্ত।

কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসর্জনের ছাই

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৯




একদিন দগ্ধ ঘাসে ভালোবাসা পুড়িয়ে দেব।
সর্বাংগে ওর ছাই মেখে আমি বৈরাগ্য নেব।
রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ফেলব শ্রবন মেঘের জলে।
কায়াটা কে শুকতে দেব তোমার বাড়ির উঠনে।

পায়ের নখে গজিয়ে উঠবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু আশা, কিছু হতাশা, কিছু বাস্তবতা

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



বাংলাদেশ যেন একটা রোলার কোষ্টারে সওয়ার হয়ে চলছে এখন। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে; একটা সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সরকারের কর্মকান্ডে আশান্বিত যেমন হচ্ছি, তেমনি হতাশায়ও নিমজ্জিত হচ্ছি;... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১২


এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।

এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×