somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হাসান জাকির ৭১৭১
আমি- হাসান জাকির। অজ পাড়াগাঁয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু জীবিকার তাগিদে শহুরে জীবনে আটকা পড়ে আছি। কাজ করছি- স্বাস্থ্য সেবা খাতে। ভালবাসি নিজেকে- নিজের পরিবারকে, দেশকে- দেশের মানুষকে। সারাদেশে ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা।

স্যালুট হে বিদেশী বন্ধু !!

২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলার মাটিতেই চিরনিদ্রায় মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগন।

এদেশের রুপ-রং, প্রকৃতি, মাটি ও মানুষের ভালবাসায় জড়িয়ে অনেক বিদেশীই নিজের উন্নত দেশের বিলাস বহুল জীবন ও আপনজনদের মায়া ভুলে আজীবন এদেশের সাধারণ গরীব, অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন।
চিরদিনের জন্য থেকে গেছেন এই সবুজ শ্যামল বাংলায়, এমনকি অনেকে মৃত্যুর পরে তার শেষ আশ্রয়টুকুও চেয়েছেন এদেশের মাটিতেই। তাইতো ভিন দেশী মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগন তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মৃত্যুর এক বছর পরেও শেষ আশ্রয় চেয়ে আবার ফিরে এসেছেন এই শ্যামল বাংলায়।

নিজের দেশকে আমরা ভালবাসতে পারিনি, কিন্তু বহু বিদেশী আমাদেরকে শিখিয়েছেন এদেশের মাটি ও মানুষের টান, তাদের ভালবাসার শক্তি।
স্যালুট সেই সব বিদেশী বন্ধুদের।।

একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালের রিপোর্ট থেকে ফাদার মারিনো রিগন সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হল:

জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারও মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন ভিনদেশি মুক্তিযোদ্ধা ফাদার মারিনো রিগন। অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী তাকে মোংলার শেলাবুনিয়া ক্যাথলিক মিশনে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে।

ইতালির নাগরিক হলেও এ দেশের মানুষের কাছে তিনি কতটুকু জনপ্রিয় ছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। এসব মানুষকেই ফাদার রিগন জানিয়েছিলেন অনন্তকাল তিনি বাংলাদেশের মাটিতে ঘুমাতে চান। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ মোংলার শেলাবুনিয়া ক্যাথলিক মিশনে আনা হয়। ধর্মীয় সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকাল ৩টায় গির্জার সামনে নির্ধারিত স্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তার ভক্তরা।



ফাদার মারিনো রিগন ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের কাছে ভিল্লভেরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে তিনি খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন। দেশের নানা জায়গা ঘুরে বাগেরহাটের মংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া গ্রামে দীর্ঘদিন বসবাস করেন তিনি।

ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষার প্রসার, চিকিৎসা সেবা ও দুঃস্থ নারীদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি অসুস্থ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সেবা দেওয়ার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে।



বাংলা শিল্প-সাহিত্য নিয়ে গবেষণার পর তা ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন ফাদার মারিনো রিগন। তার হাত দিয়ে ইতালীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলিসহ প্রায় ৪০টি কাব্যগ্রন্থ, লালন সাঁইয়ের ৩৫০টি গান, জসীম উদদীনের নকশীকাঁথার মাঠ, সোজন বাদিয়ার ঘাট ছাড়াও এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কবিদের অনেক কবিতা।

ফাদার রিগনের ইতালীয় ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রকাব্যের একাধিক গ্রন্থ ফ্রেঞ্চ, স্পেনিশ ও পুর্তগিজ ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯৯০ সালে তিনি ইতালিতে রবীন্দ্র অধ্যয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন।
ফাদার রিগন বাংলার নকশিকাঁথাকেও তুলে ধরেছেন ইতালির বিভিন্ন শহরে। তার প্রতিষ্ঠিত শেলাবুনিয়া সেলাই কেন্দ্রের উৎপাদিত নকশিকাঁথার চারটি প্রদর্শনী হয় ইতালির বিভিন্ন শহরে।



ফাদার রিগনের কর্মপরিধির বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে শিক্ষামূলক কার্যক্রম। তার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য তিনি বৃত্তির ব্যবস্থাও করেছিলেন।
১৯৮৬ সালে ফাদার রিগনের সহযোগিতায় বাংলাদেশের একটি নৃত্যনাট্যের দল ‘নকশীকাঁথার মাঠ’ মঞ্চায়ন করে ইতালির মঞ্চে।



২০০১ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে ইতালি নিয়ে যেতে চান। তখন তিনি তার স্বজনদের শর্ত দিয়েছিলেন যে, ইতালিতে তার যদি মৃত্যু হয় তাহলে মরদেহটি বাংলাদেশে পাঠাতে হবে। ইতালির স্বজনেরা মেনে নেন তার জুড়ে দেওয়া শর্ত।

এরপর ২০১৪ সালে উন্নত চিকিৎসায় মোংলার ক্যাথলিক মিশন থেকে ফাদার মারিনো রিগনকে তার পারিবার ইতালিতে নিয়ে যায়। সেখানেও অস্ত্রোপচারের আগে স্বজনদের কাছে তার শেষ মিনতি ছিল, 'আমার মৃত্যু হলে লাশটি বাংলাদেশে পাঠাবে।'

২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর সন্ধ্যায় ৯৩ বছর বয়সে জন্মস্থান ইতালির ভিল্লাভেরলা গ্রামে মারা যান তিনি। শেষ ইচ্ছানুযায়ীই মৃত্যুর এক বছর পর ফাদার মারিনো রিগনের মরদেহ মোংলায় আনা হয়।






সূত্র ও ছবি- বিডিনিউজ ও যুগান্তর অনলাইন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৫০
১৩টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×