মানব শিশু জন্মের পর ভাষা শিক্ষার সাথে সাথে যে বিষয়গুলি সবচেয়ে জরুরি তার মধ্যে অন্যতম হল- ভাষার প্রয়োগ বা কোথায় কি বলতে হবে তা জানা।
তবে কখন কিছুই না বলে শুধু নিরব বা চুপ করে থাকতে হবে সেটাও কম জরুরি নয়!
জীবনের অধিকাংশ সময়ে আমরা অনেক কিছুই বলতে চাই, কিন্তু বলতে পারিনা। তখন নিরবতাই একমাত্র অবলম্বন! তবে সব নিরবতাই কি সম্মতি?
শিক্ষা জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সুন্দরী/ লাভলী মেয়েটা 'পপি' হটাৎ করেই এসে জানালো লাভলী গ্রুপে কর্মরত কোন এক চাকুরিজীবি ছেলের সাথে আগামী মাসেই ওর বিয়ে। কথাবার্তা সব ঠিকঠাক, সবার দাওয়াত।
ওকে জিজ্ঞেস করলাম - কিরে বিয়ের জন্যে হঠাৎ এত উতলা হইলি কেন?
ও বলল - মা-বাবা ঠিক করেছে, সেটেল্ডল ম্যারেজ।
বললাম - তোর হবু বর কি খুব হ্যান্ডসাম?
ও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলল- তোর মত এতটা না।
বললাম - তাহলে বিয়েই যদি করবি, আমাদেরকে বলতে পারতি, আমাদের মাঝে কাউকেই কি তোর পছন্দ হল না?
ওর মুখের হাসিটা যেন থেমে গেল, শুস্ক মুখে বলল- পছন্দ হবে না কেন? তোকে তো আমার পছন্দ, কিন্তু তুই তো থাকিস মেসে, চলিস টিউশনি করে। বিয়ে করে তুই আমাকে খাওয়াবি কি? রাখবি কোথায়? মেয়েরা আগে পরে যাই করুক, বিয়ের সময় খাওয়া, পরা, থাকার নিশ্চয়তা চায়। বলেই সামনে থেকে চলে গেল।
সেদিন পপির কথার কোন জবাব ছিল না, তাই চুপ করে থাকতে হয়েছিল।
হ্যাঁ, জীবনের এই পর্যায়ে এসে আজও মাঝেমাঝেই চুপ করে থাকতে হয়। কারণ, অনেক প্রশ্নেরই জবাব নেই।
পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রযন্ত্র, মিডিয়া সবখানেই বিশেষ একশ্রেনীর মানুষ কথা বলে চলেছে অনর্গল! অর্থ, ক্ষমতা সব তাদের হাতে কুক্ষিগত! কথা তো তারাই বলবে! কোথাও সাধারণ, নির্যাতিত শ্রেনীর মন খুলে কথা বলার জো নেই।
নিঃসঙ্গতায় হাজারো প্রশ্ন জমা হয় বুকে, কখনো প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হয় নিজেকে, কিন্তু জবাব মেলেনা।
তখনও মন চুপ করেই থাকে, নিরব থাকে।
নাদের আলী আর কতকাল এভাবে চুপ করে থাকতে হবে? চুপ করে থাকতে থাকতেই কি একদিন শেষ হয়ে যাবে জীবনের সব রুপ-রং-গন্ধ? নাকি জীবনের সকল হিসেব মিলায়ে অনন্তকালের জন্য নিরব হয়ে ছোট্ট মাটির ঘরে শুয়ে পড়লেই কেবল এই দুঃসহ নিরবতার পরিসমাপ্তি ঘটবে?
আচ্ছা সেখানে কি প্রাণ খুলে কথা বলা যায়...................???
ছবি- গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৪