somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

হাসান জাকির ৭১৭১
আমি- হাসান জাকির। অজ পাড়াগাঁয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু জীবিকার তাগিদে শহুরে জীবনে আটকা পড়ে আছি। কাজ করছি- স্বাস্থ্য সেবা খাতে। ভালবাসি নিজেকে- নিজের পরিবারকে, দেশকে- দেশের মানুষকে। সারাদেশে ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা।

মা চাইলেই কি তাকে বাবার আদর ও মায়ের ভালবাসা দুটোই দিতে পারত না?

২৪ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডাক্তার না হলেও যেহেতু অনেকদিন ধরে ডাক্তারদের পাশাপাশি চিকিৎসা পেশার সাথে জড়িত তাই অনেক সময় একটু জটিল কিংবা জরুরী রোগী হলে ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের ডাক্তার সাহেবরা অভিজ্ঞতার কারনে আমার সাথে পরামর্শ করেন। অনেকটা মিনি মেডিকেল বোর্ড এর মত। গতকাল এক বয়স্ক মহিলা এসেছেন একটা বাচ্চা রোগী নিয়ে, বয়স ৭/৮ বছর হবে। কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড জ্বর, সাথে আরো কিছু সমস্যা ও আছে। ডাক্তার সাহেব ভালভাবে দেখে পরামর্শের জন্য আমার কাছে আসলেন। আমি ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে গিয়ে বাচ্চাটাকে আবার ভালভাবে দেখলাম এবং তার ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি তাৎক্ষনিক জ্বর কমানোর জন্য সাপোজিটরী দেয়ার পরামর্শ দিলাম। দয়াকরে কেউ ভুল বুঝবেন না, চিকিৎসা পেশায় আমার ভাল অভিজ্ঞতা আছে এটা প্রচার করা আমার মোটেও কোন উদ্দেশ্য নয়।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল, কিন্তু আমার কাছে সমস্যাটা ধরা পড়ল এর পরেই। স্বাভাবিকভাবেই রোগীর তথ্য জানাটা চিকিৎসকের ধর্ম, যদিও বর্তমানে আমাদের সম্মানিত ডাক্তার সাহেবদের সেই সময় নেই। তারা রোগীর কাছ থেকে ফি এবং টেস্ট করানোর নামে টাকা বের করার জন্য যে সময়টুকু দিতে পারেন সেটা খুবই সামান্য, তবে সবার ক্ষেত্রে হয়ত এটা প্রযোজ্য নাও হতে পারে। যাহোক ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে কাজ নেই।
বাচ্চাটা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইতেই বয়স্ক মহিলা খুব আবেগআপ্লুত হয়ে পড়লেন। তিনি যা বললেন তার সারমর্ম এরকম- খুব ছোট বেলায় বাচ্চাটার বাবা অকালে মারা গেছে। মা ওকে ফেলে আরেকটা বিয়ে করে চলে গেছে। ওর কোন খোজখবর নেয় না। বাবার পক্ষের কেউ ওর দায়িত্ব নেয়নি। সেই থেকেই ও নানীর কাছে। বয়স্ক নানী ওকে নিয়ে কষ্টে আছে তাই একটা এতিমখানা কাম আবাসিক মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছে। কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ তাই আজ মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাকে খবর দিয়েছে। সে খবর পেয়ে কষ্ট করে ছুটে এসেছে এবং ওকে এখানে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছে।
বাচ্চাটার মুখের দিকে বারবার তাকালাম, একটু আগেই আমি ওর কপালে-গায়ে বারবার হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করেছি। খুব মায়াবী চেহারা, ভীষণ চটপটে, ঝটপট সব প্রশ্নের জবাব দেয়, দেখলেই যেকোন মানুষের ভাল না লেগে উপায় নেই। বাচ্চাটাকে দেখে, সব শুনে খুব খারাপ লাগল, কিছুটা ইমোশনাল হয়ে গেলাম। দুর্বলতা আড়াল করতে দ্রুত নিজের রুমে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে থাকলাম, তারপর থেকে মনের মধ্যে কতগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে-
১। বাবার অবর্তমানে একটা বাচ্চার অভিভাবক কে বা কারা?
২। ছোট বেলায় বাবা মারা গেছে, এতে বাচ্চাটির অপরাধ কি?
৩। তার মায়ের নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া অবশ্যই আছে, কিন্তু এই নিষ্পাপ বাচ্চাটির প্রতি কি তার কোন দায়িত্ব নেই?
৪। মা কেন তাকে সকল স্নেহ-ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করল?
৫। মা চাইলেই কি তাকে বাবার আদর ও মায়ের ভালবাসা দুটোই দিতে পারত না? ইত্যাদি....ইত্যাদি.........

কিছুদিন আগেই আমরা খুব ঘটা করে মা দিবস পালন করলাম, এটাই তাহলে আদর্শ মায়ের আরেক রুপ? দরিদ্র- মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, মেনে নিচ্ছি, কিন্তু এমনটা কখনও কাম্য নয়, মেনে নেয়ার মত তো নয়ই। সেদিন ফেসবুকে তামান্না সেতুর একটা পোষ্ট দেখলাম, তার ছেলেদের আবদার পূরণের জন্য তিনি বয়সে অনেক ছোট একজনকে বিয়ে করে ছেলেদের বাবার চাহিদা পূরণ করেছেন। বাবা-ছেলের ছবি পোষ্ট করার পরে "কে বাবা, কে ছেলে চেনাই যায়না" অনেকের এমন বিরুপ মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেছেন- তিনি গর্বিত যে, ছেলেদের আবদার পূরণ করতে পেরেছেন। সত্যিই গর্ব করার মত।
আমিও একজন বাবা, আমার দুটি সন্তান। সকল সীমাবদ্ধতা, দুঃখ-কষ্ট, হতাশার মাঝেও ওরাই আলোক বর্তিকা। দিনশেষে ঘরে ফিরলে সকল দুঃখ-কষ্ট মুহুর্তের মধ্যে ভুলিয়ে মনটাকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেয়ার জন্য ওরাই একমাত্র ম্যাজিক।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×