(গতকালের পোস্ট এর পরের অংশ)
অফিস থেকে বাসার দূরত্ব ৫-৭ মিনিটের, দূপুরে বাসায় খেতে যাই যাতে বউ-বাচ্চাদের একটু খোজ ও নেয়া যায়। এর বাইরে অফিসের কাজে খুব কমই বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পরে, মাঝে-মধ্যে ব্যাংকিং ছাড়া, তাও সিএনজি বা রিকসায় যাই। মোটর সাইকেলটা অফিসের নিচে গ্যারেজে আছে কিন্তু বের করার খুব একটা প্রয়োজন পড়েনা, মাঝে- মধ্যে ছুটির দিনে বউ-বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া ছাড়া।
সারাদেশে বেশ কিছুদিন ধরেই তীব্র তাপদাহ চলছে, গরমে সবাই অস্থির। আমার মত যাদের অফিস বা বাসায় এসি না থাকলেও মাথার উপরে অন্তত: দিনরাত ২৪ ঘন্টায় যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে ততক্ষণই ফ্যান ঘোরে তাদেরও অস্বস্তি বা সারাদিনের কষ্টের একটা বড় কারন তীব্র গরম। আর যাদের অফিস-গাড়ি-বাসা সবখানেই এসি তাদের কথাতো বলাই বাহুল্য। কারণ তাদের কাছে এটা একটা পরম সুযোগ, গরম যত বেশি- এসির বাতাস ততই উপভোগ্য। আহা কি শান্তি........!
গত পরশু দুপুরে অফিসের কাজে ব্যাংকে যেতে হবে, কিছু ব্যক্তিগত কাজও ছিল তাই ভাবলাম মোটর সাইকেলটা পড়ে আছে সেটা নিয়েই বের হই, এই গরমে হাটাহাটি, রিকশা বা সিএনজির চাইতে এটাই ভাল হবে। কাজ শেষে লাঞ্চটাও একবারে সেরে আসব। অল্প দূরত্বের মধ্যেই ঘোরাঘুরি তাই হেলমেট, সানগ্লাস এগুলোরও দরকার মনে হলনা। কিন্তু রাস্তায় বের হয়েই টের পেলাম আসল অবস্থা, রাস্তাতো নয় যেন চুলার উপর দিয়ে যাচ্ছি, প্রচন্ড তাপ ও রোদে শরীরের খোলা অংশটুকু যেন পুড়ে যাচ্ছে। মাথায় যেহেতু চুল নেই তাই টাক মাথায় যেটুকু রোদ পড়ছে তার তাপ যেন পা পর্যন্ত টের পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য সিগনালে পড়েছিলাম তাতেই রোদের তাপে বাধ্য হয়ে মোটর সাইকেল স্ট্যান্ড করে রেখে রাস্তার পাশের দোকানের ভিতর গিয়ে দাড়িয়েছিলাম। চরম অস্বস্তি নিয়ে অফিসে ফিরে এসে বারবার ভালভাবে মুখ-হাত-পা ধুয়ে ফ্যানের নিচে বসে ফ্রেশ হতে চাইলাম। কাজ-কর্ম পরে........
কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে পড়ে গেল গত ১২ বছরের মাঠ পর্যায়ের কর্মজীবনের কথা, এই প্রখর রোদ আর তীব্র গরমের মাঝে এখনও যেসব সহকর্মীরা মাঠে কাজ করছে তাদের কথা, মনে পড়ে গেল একটু আগেই ফেরার পথে যে সহকর্মীকে দেখলাম রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে মোটর সাইকেল স্ট্যান্ড করে দাড়িয়ে হয়ত একটু দম নিচ্ছে তার কথা, আমি যখন সিগনালে পড়ে মোটর সাইকেল রেখে পাশের দোকানে গিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম তখন যেসব রিকশাওয়ালারা বারবার আমার দিকে ঘুরে তাকাচ্ছিল ( হয়ত মনে মনে হাসছিল ) তাদের কথা, দেশের অধিকাংশ শ্রমজীবি মানুষ যারা শুধুমাত্র দু-বেলা দু-মুঠো খাবার আর জীবনের ন্যুনতম চাহিদাটুকু পূরনের জন্য সারাদিন এই প্রখর রোদ আর তীব্র গরমের মাঝেও কোন বিরতি আর বিরক্তি ছাড়াই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের কথা। এসব ভেবে মনটা কষ্টে ভারি হয়ে এল, কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে গেলাম।
কিন্তু পরক্ষণেই তাদের সাথে নিজেকে তুলনা করে সকল কষ্ট দূর হয়ে গেল, অনাবিল প্রশান্তিতে মনটা ভরে গেল। সৃস্টিকর্তার কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া আদায় করলাম।
গুরুজী বলেন, প্রতিদিন মনে মনে শতবার বলুন- শোকর আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভাল আছি।
সত্যিই আমি বেশ ভাল আছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩