তবে আমাদের শিশুরা আমাদের মতোই উদ্বিগ্ন হয় যখন তারা মিডিয়া, খবরের কাগজে দেখে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, দূর্ঘটনায় মৃত্যু, এসিড দগ্ধ, আগুনে পুড়ে মৃত্যু এ জাতীয় লোমহর্ষক নানা ধরণের শিশু নির্যাতনের ঘটনা। তারা এইসব আর দেখতে চায়না, তারা এসবের প্রতিকার চায়, সরকার যাতে শিশু অধিকার আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করে।
বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে । শিশুদের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত তিন তিনটি জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে, সেই কর্ম পরিকল্পনার কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে মনিটরিং সেল, টাস্ক ফোর্সও গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতাগোষ্ঠী, দেশীয় উন্নয়ন সংস্থা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এই কমিটি ও টাস্ক ফোর্সগুলি গঠিত হয়। প্রতি তিনবছর অন্তর অন্তর সরকারকে জাতিসংঘের কাছে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হয় জবাবদিহিতার জন্য । কিন্তু তা স্বত্বেও প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় রিপোর্ট হচ্ছে নতুন নতুন আঙ্গিকে নতুন নতুন শিশু নির্যাতনের ঘটনা। দেশের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, দূর্ঘটনায় মৃত্যু, এসিড দগ্ধ, আগুনে পুড়ে মৃত্যু এ জাতীয় লোমহর্ষক নানা ধরণের শিশু নির্যাতনের ঘটনা আমাদেরকে করছে আতংকিত ও বিব্রত। তেমনি আতংকিত আমাদের শিশুরাও। আমরা তাহলে কোনদিকে এগুচ্ছি? আদৌ কি এগুচ্ছি না পিছাচ্ছি ? শিশু অধিকার কি শুধু জাতিসংঘ শিশু সনদের ৫৪ টি ধারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না কি তা এক তিল পরিমান হলেও আমাদের মনের মধ্যে রেখাপাত করছে, আমাদেরকে করছে দায়িত্ববান, খুলে দিচ্ছে আমাদের চোখ- কান, দায়িত্বহীনতার গ্লানি আমাদেরকে তাড়া করছে, এ জিজ্ঞাস্য আমার নিজের কাছে, সব সচেতন, বিবেকবান মানুষের কাছে এবং গোটা জাতির কাছে ।
আজকে বিশ্ব শিশু অধিকার দিবসেও আমাদের সবার দাবী - “শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন।” শিশুদের প্রতি সহিংসতা আর দেখতে চাইনা।
ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড স্পন্সরশীপ নেটওয়ার্ক অব বাংলাদেশ আজ ১৯ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয়ভাবে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের নিয়ে বিশ্ব শিশু অধিকার দিবস ২০১১ উদযাপন করলো। এই নেটওয়ার্কে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা রয়েছে:
১। ফুন্ডাসিয়ন ইন্টারভিডা, বাংলাদেশ
২। এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ
৩। সেভ দ্য চিলড্রেন
৪। ওয়াল্ড্ ভিশন বাংলাদেশ
৫। প্ল্যান বাংলাদেশ
৬। ফুড ফর দ্য হাঙ্গরী, বাংলাদেশ
প্রতিটি শিশুই পরিবার ও সমাজের একটি বিশেষ অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। মানবাধিকারের অংশ হিসাবে শিশুদের কিছু সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে যাতে করে তারা সমাজে ভবিষ্যতে আলোকিত এবং দায়িত্বশীল মানুষ হিসাবে গড়ে উঠে।

১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারন সভা অনুযায়ী ২০ শে নভেম্বরকে বিশ্ব শিশু দিবস হিসাবে পালন করার জন্য সুপারিশ করা হয়। এই বছরের এ দিনটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন।” এ উপলক্ষ্যে শিশুদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নেটওয়ার্কের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে “বাল্য বিবাহকে না বলুন।” । যা কিনা কন্যা শিশুদের উন্নয়নের জন্য মূল অন্তরায়।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শিশু স্পন্সরশীপ নেটওয়ার্ককে অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা জানায় ৬টি সংস্থার প্রধানরা এই সুন্দর আয়োজনের জন্য। সেই সাথে এই অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করেন।
সকাল সাড়ে আটটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি,এস,সি থেকে শুরু হয় র্যালী। এর আগে বেলুন উড়িয়ে দিনের কর্মসূচী উদ্বোধন করা হয়।
র্যালী গিয়ে শেষ হয় শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে।
সকালের নাস্তার বিরতির পর শিশুদের নিয়ে শুরু হয় প্রাণবন্ত ওপেন ডিসকাসন।
ছয়টি সংস্থার ডেলিগেট তাদের প্রতিনিধ শিশুদের নিয়ে মঞ্চে উঠেন। পুরো উন্মুক্ত আলোচনায় সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন'র এমদাদ ভাই।
তার যাদু মাখানো সঞ্চালনায় আরো বেশি অংশগ্রহণ মুলক হয়ে উঠে পুরো অনুষ্টানটি। শিশুদের বক্তব্যের পাশাপাশি শিশু অধিকার নিয়ে বক্তব্য দেন কান্ট্রি ডেলিগটরা।
উন্মুক্ত আলোচনার পর শুরু হয় শিশুদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। নাচে গানে দিনটিকে মাতিয়ে তোলে শিশুরা।
ফুন্ডাসিয়ন ইন্টারভিডার শিশুরা পরিবেশন করে খুব-ই মজার এক র্যাম্প শো এবং নাটক, যাতে তারা ফুটিয়ে তুলেছিল বাল্য বিবাহ ভালো নয়। "বাল্য বিবাহকে না বলুন।"
এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ থেকে বিটার সদস্যরা দারুন এক পাপেট শো পরিবেশন করে। পাপেট শো 'ম্যামনা" শিশুরা দারুন উপভোগ করে।
ওয়াল্ড্ ভিশন বাংলাদেশ ঢাকা কমলাপুর এডিপির শিশুরা দলীয় নাচ পরিবেশন করেন "নোঙর তোল তোল, সময় হলো হলো" গানের মাধ্যমে।
প্ল্যান বাংলাদেশের শিশুরা পরিবেশন করে শিশু অধিকার নিয়ে জারী গান। তাছাড়া তাদের আরেকটি দল পরিবেশন করে দলীয় সংগীতের মাধ্যমে দলীয় নাচ।
অনুষ্টানের খবর সম্পাদনা করে ওয়াল্ড্ ভিশন ও এটিএন বাংলার খুদে সাংবাদিকরা। এছাড়া বিভিন্ন মিডিয়ায় সাংবাদিকরাও উপস্থিত ছিলেন।
...............ভালোবাসা সকল সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:০৮