দেশ ছেড়ে আসার এক সপ্তাহ আগে থেকেই আমার মনে হচ্ছিল আমার জীবন বোধ হয় এখানেই শেষ। বার বার মনে হচ্ছিল যে জীবন ফেলে যাচ্ছি বাংলাদেশে, আবার কি কখনও ফিরে আসা হবে এই জীবনে।যে জীবন ফেলে যাচ্ছি দেশে সেই জীবনে ফিরে না আসতে পারা মানে তো আসলে জীবন শেষ হয়ে যাওয়াই।
বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার পথে মার কান্না দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।মায়ের কষ্টের বিনিময়ে মাকে কতটুকু সুখী করতে পেরেছি সেই চিন্তায় পুরো রাস্তায় আমার চোখ থেকে অশ্রু শুকায় নাই। মার কান্নামাখা মুখটা মনে পড়লে এখনও সব কিছু কেমন জানি ওলট পালট হয়ে যায়। ছেলে মাকে ছেড়ে দুড়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু উনি কিছুই করতে পারছেন না।এই ভয়াবহ অসহায়ত্তের ব্যাপারটা করুন কান্নার মাধ্যমে মা আমাকে মনে করিয়ে দিলেন। মনে হচ্ছিল কি হবে বাইরে গিয়ে, কি হবে এত বড় ডিগ্রি দিয়ে, সব ছেড়ে ছুড়ে মায়ের কাছেই থেকে যাই।আমি পারি নাই, অক্ষম অক্রিতজ্ঞ আমি মায়ের কাছে থাকি নাই, উন্নত জীবনের লোভে বাইরেই চলেই এসেছি।
আমার ফ্লাইট এর এক দিন আগে মা বড় মামাকে ফোনে বললেন,'ভাইসাব, ছেড়াডা বিদেশ যায় গা'। এই বলেই মা হাউমাউ করে কান্নাকাটি করতে থাকে। আরেকবার মায়ের ভয়াবহ অসহায়ত্তের তীব্রতা উপলব্ধি করলাম।আমি নিজেও আর চেষ্টা করি নি চোখের জল আটকাতে।মাকে ধরে আমিও কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম।
(চলবে)