somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বামহাতটা কব্জির নীচ থেকে উড়ে গিয়েছিলো ...............

০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ সকাল ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার বামহাতটা কব্জির নীচ থেকে উড়ে গিয়েছিলো
দু দুটো বুলেটের আঘাতে পায়ের উরুতে অঙ্কিত হয়েছিল দুটো গভীর ক্ষতচিহ্ন --
দীর্ঘদিন অনাহারে ছিলাম বলে খুব বেশি রক্ত ঝরতে পারেনি ,
অথবা ঝরলেও আমি তা বুঝতে পারিনি;
অর্ধমৃত অবস্হায় সঙ্গাহীন পড়ে ছিলাম তিনদিন ........
অত:পর তিনদিন পর যখন জ্ঞান ফিরে আসে --
তখন বামহাতের কব্জির নীচের অংশটার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষন .......
আমার একবিন্দু আফসোস হয়নি , অনিরুদ্ধ বাষ্পে চোখের কোনাও ভিজে উঠেনি ............
বরং জানোয়ারের বাচ্চাগুলোর প্রতি এক দুর্নিবার ক্রোধে বুকের ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছিলো ........

ক্যাম্পে পর্যাপ্ত খাবার থাকতোনা বলে প্রায়ই না খেয়ে থাকতাম,
কখনো কখনো ক্ষুধার জ্বালা অসহ্য হয়ে উঠতো ।
তখন একটুকরো মাংসের জন্য নির্মম আকাশে উড়তে থাকা শকুনগুলোর সাথে নিজের কোন পার্থক্য খুজেঁ পেতাম না ..........
তখনও আমার তেমন একটা কষ্ট হয়নি ,
চোখদুটোও বরাবরের মতোই শুকনো ছিলো ..........
যেমন শুকনো ছিলো আমাদের ভবিষ্যত ............ ।

সবকিছু প্রায় গুছিয়ে এনেছিলাম
বর্ডার ক্রস করে নতুন একটা দল আগামীকাল এসে পৌছুবে --
সাথে নিয়ে আসবে সারি সারি আগ্নেয়াস্ত্র, তাজা গোখরো সাপের মতো বিষাক্ত গ্রেনেড ......মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের মতো দুর্বার সিক্সটি মিলিমিটার মর্টার .............. ।
প্রতিশোধের স্পৃহায় সারারাত আমার ঘুম হয়নি ..........
পশ্চিমা বাহিনীর পরাজয়ের স্বপ্নে চোখদুটো আমার অন্ধকারেও জ্বলজ্বল করে উঠেছিল ..........
কিন্তু ভোরে যখন খবর পেলাম কয়েকটা বিশ্বাসঘাতকের জন্য............
মাত্র কয়েকটা বিশ্বাসঘাতকের জন্য নতুন দলটা ধরা পড়ে গেছে তখনও খুব একটা অবাক হইনি ........
শুধু প্রচন্ড ক্রোধে আমার ডান হাতের একমাত্র মুষ্ঠিটা বজ্রের মতো শক্ত হয়ে উঠেছিলো .........

তারপর কয়েকটা দিন যেন দু:স্বপ্নের মতো পার হয়ে গেল'

দুদিন পর আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম হানাদার ক্যাম্পে
বেয়নেট দিয়ে খুচিঁয়ে ওরা আমার ডান চোখটা তুলে নিয়েছিলো
পায়ের আঙুলগুলো রাইফেলের বাঁটের আঘাতে থেঁতলে গিয়েছিলো বহু আগেই ........
ওরা আমাকে কষ্টের শেষ সীমানায় পৌছেঁ দিয়েছিলো যদিও ---
আমি তখনও কাদিঁনি ......... ............ ।
শুধু সামনে দাড়ানো শান্তিবাহিনীর লিডার শরাফত আলীকে দেখে ঘৃনায় আমার চোখের নীচটা দ্বিতীয়বারের মতো কুচকে উঠেছিলো ... ....

আমায় দেখে শরাফত দেতো হাসি দিয়ে শূকরের মতো চারপায়ে এগিয়ে আসে ---
''.............. খুব তো খেল দেখাইলা মুক্তির বাচ্চা !! বামহাতটা দেখি উড়াইয়া দিছে , চোখটাও তুইলা ফালাইছে ........ তোমার পরীবানু অবশ্য এতোটা কষ্ট পায় নাই , দুই রাইত স্যারের লগে কাটাইয়াই গলায় দড়ি দিছে ......... ........ ''


........... পরীবানু !! !!! .........তবে কী ওরা পরীকে ....... !!!!!! ????
আমি আর বাকিটুকু শুনতে পেলাম না ...... ....

----দীর্ঘ চারমাসের একটানা ক্লান্তিহীন যুদ্ধ ,
আহত সহযোদ্ধার আর্তনাদ !!
গ্রামকে গ্রাম উজাড় করা বধ্যভূমি,
বধ্যভূমিতে গলিত লাশের গন্ধ .......
বেয়নেটের আঘাতে থেতলে যাওয়া চোখ ------
এসব সবকিছু ছাপিয়ে আমার মুখের সামনে পরীর নিস্পাপ চেহারাটা ভেসে উঠে ........

তখন প্রথমবারের মতো ........ ......হ্যাঁ , প্রথমবারের মতো আমার একটিমাত্র চোখ বেয়ে টুপটাপ করে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে ......



আর আমি কব্জিহীন হাতটা দিয়ে সেই জল মোছার চেষ্টা করি , বারবার ---
বারবার ............. বারবার .....................
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০০৮ সকাল ৭:০৬
১১৯টি মন্তব্য ৯৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×