তাজরীন ফ্যাশনের অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুতে বিশেষজ্ঞ মহল ২০১২ সালকে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য প্রাণঘাতী বছর হিসেবে আখ্যা দেন। অথচ ২০১৩ সালের মাত্র চার মাসে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মৃত্যুর মিছিল অতীতের সব হিসাবকে ছাড়িয়ে যায়। সামনে কী অপেক্ষা করছে, তা হয়ত সময়ই বলে দিবে। ১৯৯০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৪ বছরে গার্মেন্টস কারখানায় বিভিন্ন দূর্ঘটনায় সর্বমোট নিহতের সংখ্যা ২১২৯। মজার বিষয়, দূর্ঘটনার শিকার এই দুই সহস্রাধিক লাশের মধ্যে মালিকপক্ষের স্যুটেড বুটেড মোটা তাজা একটি লাশও নেই। এখন প্রশ্ন, দূর্ঘটনা কেন শুধু চিনে নেয় খেটে খাওয়া ঘামে ভেজা শ্রমিক সম্প্রদায়?
১৯৯০ ঢাকার সারাকা গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৩২ জন নিহত হয়, যার মধ্যে ২৫ জনই ছিল নারী ও শিশু।
১৯৯১ গার্মেন্টস কারখানা দূর্ঘটনায় মারা যায় ৫ জন।
১৯৯৩ এ বছর নিহতের সংখ্যা ১২।
১৯৯৪ এ বছর নিহত হয় ৫ জন।
১৯৯৫ গার্মেন্টস দূর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ আরো ৯ টি লাশ।
১৯৯৬ ঢাকাস্থ লুসাকা গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ২২ জন।
১৯৯৭ গার্মেন্টস দূর্ঘটনায় দশকের সর্বাধিক প্রাণহাণি হয় এ বছর। নারায়নগঞ্জের জাহানারা ফ্যাশন ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় ২০ জন এবং ঢাকাস্থ সাংহাই অ্যাপারাল্সে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ২৪ জন।
২০০০ ঢাকার ম্যাক্রো সোয়েটারে অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় ২৪ জন। কারখানাটিতে একই বছরে মোট তিনবার দূর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে রাজধানীর গ্লোব নিটিং এ মারা যায় ১২ জন এবং চৌধুরী নিটওয়্যারে ৫১ জন।
২০০৪ মিরপুরের একটি পোষাক কারখানায় ট্রান্সফরমার ব্লাস্টের শব্দে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে মারা যায় ৭ নারী শ্রমিক। নরসিংদীর চৌধুরী নিটওয়্যারে দূর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২৩ জনের।
২০০৫ নারায়নগঞ্জের শান নিটিংয়ে দূর্ঘটনায় মারা যায় ২৩ জন। স্পেকট্রাম ভবন ধ্বসে মৃত্যু হয় ৮০ জন শ্রমিকের।
২০০৬ গাজীপুরের যমুনা টেক্সটাইল মিলে অগ্নিকাণ্ডে ৬ জনের মৃত্যু হয় এবং চট্টগ্রামের কেটিএস কম্পসিটে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে মারা যায় ৬২ জন। এছাড়া সায়েম ফ্যাশনে দূর্ঘটনায় আরো ৩ জন মারা যায়।
২০১০ গাজীপুরের গরীব এন্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায় ২৫ জন। ভুল আগ্নি সংকেতের কারণে হুড়োহুড়িতে গাজীপুরের ম্যাট্রিক্স সোয়েটারসে মারা যায় ১ জন এবং ঢাকাস্থ হা-মীম গ্রুপের স্পোর্টসওয়্যার ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়ে মারা যায় ২৪ জন।
২০১২ তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ১১১ জন।
২০১৩ স্মার্ট এক্সপোর্ট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় ৭ জন। সাভারে ভবন ধ্বসে সরকারি হিসাবে ১,১২৭ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। এ ঘটনায় নিখোঁজের সংখ্যা ৩০০।
এছাড়া বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের দেয়া তথ্যমতে, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ২১৩ টি কারখানা দূর্ঘটনায় ৪১৪ জন গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্র:
১। Qurratul-Ain-Tahmina and Khadiza Khanam: Garment Fire Claiming Lives: Accidents or Murders?
২। Surendra Pratap: Bangladesh Garment Industry in Turmoil Workers No More Willing to Perish in the Profit Machine
৩। http://www.inesdouja...-couture-01-06/
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:৪০